🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ২
🍁🌼🍁
খাবার টেবিলে বসলাম। তখনই আব্বু জিজ্ঞেস করল
—মামুনি আহান এর এক্সাম গুলো কেমন হচ্ছে রে? ব্যস্ততায় খোজ খবরই নেয়া হলো না ছেলেটার।ওর এক্সাম অবশ্য খারাপ হবে না। তবুও খবর তো নিতে হয় জানিস তো ছেলেটা কতো অভিমানী। এখনও বাচ্চাই রয়ে গেছে।। (কথাগুলো বলে আব্বু হাসল খানিকটা)
—না আব্বু তার এক্সাম এর খবর আমি জানি না।
(জানব কি করে একবারও কি ফোনটা তুলেছে আমার???যতবার ফোন দিয়েছি কেটে দিয়েছে। মেসেজ করলে ব্লক করে রেখেছে এইভাবে প্রত্যেকটা দিন এভয়েড করেই গেছে।মাঝে মধ্যে তার সুন্দরী বান্ধবী দের নিয়ে ছবি আমাকে পাঠিয়েছে। এই ২০ দিনে কিছু পিকচার আর একটাই বাক্য =তোকে খুব জালাবো আমি খুব যেমনটা আমায় জালাচ্ছিস। কিন্তু আমার মাথায়ই আসে না তাকে আমি কিভাবে জালাচ্ছি।এভাবে ১৫দিন চলার পরে আমি একদমই দমে গেছিলাম। কল মেসেজ দেয়া কমিয়ে দিলাম। হাতে গুনে গুনে দিনে ১০ বার কল আর ৩০ টা মেসেজ দিতাম।কিন্তু নো রিপ্লাই ২/৩ দিন পর পর নাইকাদের ছবি)
—একটু খবর তো নিতে পারতি মামুনি। ছেলেটা তোর সব দিকের খেয়াল রাখে তুই এইটুকুন রাখতেই পারিস।
— আম সরি আব্বু আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আজই জিজ্ঞেস করে তোমাকে জানাবো কেমন?
তখনি আম্মু বলে উঠল
–ক্লান্ত থাকলে তোমার যাওয়ার দরকার নেই। আমি আর তোমার আব্বু এখনই যাব। কতদিন হলো শিরিনকে দেখি না।
–আচ্ছা তুমি যাও আমি কেন?আই নিড রেস্ট। তোমার মতো স্ট্রং নেই আমার শরীর।আমার বয়স হয়েছে।
— কতো আর হয়েছে ৫০ ই তো।এতেই বুড়ো হয়ে গেছ নাকি বুঝি না।আমার সালমান খান শারুখ খান এর বয়স জানো? ওরা এখনও কচি কচি নাইকার সাথে ১৮ বছর বয়সি যুবক দের মতো রোম্যান্স করে আর তুমি কিনা দুই ঠ্যাং ফেলে পাশের বাসায় যেতে পারবে না?
–আম্মু আব্বুর হয়তো সত্যি খারাপ লাগছে জোর কেন করছ? আর তুমি তো ভালো মায়ের সাথে গল্প করবে আব্বু কি করবে ওখানে গিয়ে ভালো বাবাও হয়তো অফিসে। ছেড়ে দাও আম্মু।
— আচ্ছা আমি গেলাম।ময়নাকে বল সব গুছিয়ে রাখতে
আসলে আম্মু যা ই করুক আর বলুক আব্বুকে ছাড়া সে চলতে পারে না দু কদমও।
🌼🍁🌼
বেলকুনির দোলনাটায় বসলাম।মেঘলা আকাশ, হালকা বাতাস তার তালে তালে গাছপালার দোল,নিশ্চুপ নিরিবিলি পরিবেশ মন ভালো হতে, শরীরকে সতেজ করতে আর কি চাই।
কিছু একটা ভাবতেই মনে আবার বিষাদ ছেয়ে গেলো। মনের অজান্তেই গুংগুনিয়ে গান ধরলাম
🎶আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাই নি তোমায়
এইটুক গাইলাম এরমধ্যেই
–কে তোর হিয়ার মাঝে রে তোর হিয়া আছে নাকি? কই দেখি তো
হ্যা এটা আহান। পাশে আর একটা মেয়েও আছে। চিনি আমি মেয়েটাকে নিশুতি নাম।আহানের ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সবটাই বলা চলে। আমাদের বাসা থেকে ১৫ মিনিট দূরে নিশুতির বাসা।
–দেখবেন কি? আমি তো যাস্ট গান গাইতে ছিলাম।
— নাহ গান শুধু গলা দিয়ে গাইছিলি না তুই ভিতর থেকেই গাইছিস।কেউ মনে আছে নাকি তোর?
–থাকলে আপনি জানতেন না? কেউ নেই আমার মনে
— আচ্ছা তোর গান গাইতে হবে না। কানে কাকের আওয়াজ এর মতো বাজে।এই যে দ্যাখ আমি নিশুতি পড়ছিলাম। আর তুই এমন ক্যা ক্যা শুরু করলি যে উঠে আসতে হলো বেলকুনিতে শুধু তোকে থামানোর জন্য
—সরি আহান।আমি বুঝতে পারি নি আপনার পড়ায় সমস্যা হবে বুঝলে আমি গাইতাম না।আর হ্যা আপনার এক্সাম গুলো কেমন হচ্ছে?
–ভালোই সুপার। তুই ছিলি না তাই আর আমার এক্সাম ভালো না হয়ে পারে?
–হ্যা হয়তো।
আহান বেলকুনির র্যালিং এর খুব কাছে এসে খপাত করে চুল টেনে ধরল।চোখএর ইশারায় নিশুতিকে যেতে বলল। আমার চুল লম্বা হওয়ায় আর দুই বেলকুনির দুরত্ব কম হওয়ায় চুল টেনে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।আমি ব্যাথা পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। আর সে চুল আঙুলে পেচাতে পেচাতে পিছনের দিকে যাচ্ছিলো এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে
— আহান আমার লাগছে খুব লাগছে
( বলতেই চুল ছেড়ে দিল)
ব্যাথায় চোখে পানি চলে এলো দৌড়ে রুম এ এলাম ।খাটে বসলাম। আমি আহানকে আমার চোখের পানি দেখাতে চাই না।
–কিরে দৌড়ে এলি যে চোখ এর জল লুকাতে? আমি তর কান্না দেখার জন্য এত কিছু করলাম আর তুই
— আপনি বেলকুনি টপকে আবার এসেছেন পরে যান যদি?
–তা নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।আজ নতুন আসছি না আমি।
কথাটা বলতে বলতে আমার চোখেরজলের ফোঁটা টা আঙুল দিয়ে ধরল।কিছুক্ষণ তাকিয়ে মুখে নিলো।
–হ্যা রে তোর চোখের পানি এত তিতা কেন?
থমকে গেলাম ওর কাজ দেখে কান্না ভুলে গেলাম তার উপর এমন কথা।
–আমি জানতাম চোখের পানি নোনা হয়।
— হ্যা আমিও জানতাম কিন্তু তোর চোখ এর পানি খেয়ে ধারণা পালটাতে বাধ্য আমি।ওই তুই নিম বা এলোভেরা খাও নাকি?
— কই না তো
— আচ্ছা বলতে বলতে আমার মাথাটা ওর বুকে নিয়ে নিলো পরম আবেশে।
মনে হয় যেন আমি ছোট আর সে বড়। তার বাধনটা শক্ত হচ্ছিলো ক্রমশ।।আমিও বাধা দিলাম না কারণ আমার অস্থির বুকের পাথর গলছিল যেন।
–ইচ্ছে ভালো বাবা কোথায়। ঘুমিয়েছে?
–হহুম
–ভালো মা তো আমাদের বাসায় দুই তিন ঘন্টায় বাসায় যাবে না তাই না?
— হুম।
–তুই কি করবি এখন?
–আপনি গেলে ঘুমাবো।জার্নি করেছিতো। টায়ার্ড লাগছে।
— আচ্ছা ঘুমিয়ে পর।
–আপনি যাবেন না?
— কেন আমি আছি বলে তোর ভালো লাগছেনা তাই না?
বলেই আমায় ছেড়ে উঠে গেলো । আমি টলমল চোখে তাকিয়ে আছি যার অর্থ আমি এখনই যেতে বলি নি।এভাবে আমি কিছুক্ষণ থাকতে চাই।
কি ভেবে পিছনে দিকে তাকালো।আমার চোখ এর দিকে তাকিয়ে আবার এসে আমার পাশে বসল মাথাটা বুকে নিলো হাত দিয়ে চোখ মুছে দিলেন।
–ঘুমিয়ে পর
–এভাবে?
কথাটা বলার সাথে সাথে আমায় বুকে নিয়ে শুয়ে পরল। আমি অবাক হলাম এমন করে নি কখনও ।কিন্তু কিছু বল্লাম না।আমার শরীর কেপে উঠছিল।
— উশখুশ কেন করছিস ইচ্ছে?
–না মানে আমার আনইজি লাগছে
কিছু না বলে তার শরীর এর উপর থেকে আমাকে নামিয়ে তার হাতের উপর সোয়ালো।
তার দিকে এক নাগারে তাকিয়ে আছি। আর সে আমার দিকে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল কি?
আমি মাথা নেড়ে বললাম কিছু না।মনের বিষাদ টা সরে গেছে কেমন সুখ সুখ লাগছে সব কিছু
–আপনাকে উষ্কখুষ্ক লাগছে আহান
–তোকেও
কিছুক্ষণ থেমে বলল
— তুই অনেক দিন দূরে ছিলি টুকি অনেক দিন
আমার কিছুই বলার নেই আসলেই তাকে ছেড়ে দুইটা দিন দূরে থাকা হয় নি।বেড়াতে গেলে তাকে নিয়ে যেতাম বা তার সাথে আমি যেতাম।
হটাৎ আমার গলায় মুখ ডুবালো,,,,,,,,,,,,,
চলবে,