🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ২১
🍁🌼🍁
মায়ের কথা শুনার পরে নিজের রুমে আসার জন্যও ইচ্ছের পা চলছিলো না। ইচ্ছের মনে হলো দুনিয়ার সব টুকু কষ্ট হতাশা তার ভেতর টাকে ছেয়ে দিয়েছে।গলায় দলা পাকিয়ে আসছে তীব্র কান্নারা।এভাবে সপ্ন ভাঙে?এভাবে শেষ হয়ে যায় সব কিছু?সব কিছু শেষ হওয়ার জন্য কয়েক সেকেন্ড দরকার হয় মাত্র? কই গড়তে তো বছর খানিক লেগে গেছিলো। একটাই কথা মাথায় বাজছে আহানের ভবিষ্যৎ আমার জন্য নষ্ট হতে পারে না।একটা মেয়ে হিসেবে সে আহানের জন্য একদমই উপযুক্ত না। আহানকে ঠকানো সম্ভব না তার দাড়া।মনে মনে কথাগুলো আওরাতে আওরাতে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরল। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে কিচ্ছু না।
রাতে সেভাবেই ঘুমিয়ে গেলো।নিধি একবার খাবার জন্য ডেকে গেলো। ইচ্ছে ঘুমের মধ্যেই বললো খাবে না সে।নিধিও আর জোর করে নি। যতই হোক সেও ভালোবেসে বিয়ে করেছে।ভালোবাসা হারানোর কষ্ট সে বুঝে।কেন যে তার মেয়েটারই এমন কষ্ট পেতে হবে বুঝতে পারে না সে।আহান যা করেছিলো ভুল করে করেছিলো। জানতো না তাই করেছিলো। তাই বলে নিজের মেয়ে বলে নিধি কিছুতেই সুযোগ নেবে না।
আহান ইচ্ছেকে অনেক বার ফোন করেছে।কিন্তু ইচ্ছে ধরছে না।মেয়েটার এতো ঘুম কেন ভেবে পায় না সে।রাতে কি খুব জালিয়েছে মেয়েটাকে?ঘুমাতে পারে নি তেমন হয়তো। এই মেয়েকে নিয়ে কয়দিন পরে আহান সংসার কি করে করবে তাই ই ভাবনার।কতো টা বাচ্চামো।দেখা গেলো বিয়ের পরে সে বলল ইচ্ছু পাখি রেডি হতে থাক খেলা হবে আমি দুই মিনিটে বাথরুম থেকে আসছি। আর এসে কিনা দেখলো তাহার বধু ঘুম।আর নিজের রাত কেটে যাবে নির্ঘুমে। ছটফট করতে করতে।আহান ভেবেই নিলো এই পাগলকে বিয়ে করে আগে আহান বড় করবে না সে।বাচ্চাই ভালো । প্রিটি একটা বাচ্চা।বিড়াল ছানার মতো নিশ্চুপ বাচ্চামি।যার কোনো অভিমান নেই অভিযোগ নেই রাগ নেই।শুধু আছে ভয় কাপাকাপি আর ভালোবাসা।
রাত একটায় আহান পড়া শেষ করে।তারপর ইচ্ছের রুমে গিয়ে ইচ্ছেকে কতক্ষণ ঠেলাঠেলি করলো। কিন্তু ইচ্ছেকে উঠানো গেলো না।আহানের একবার মনে হলো ইচ্ছে মাথায় কোনো কিছুর প্রেসার না পরলে তো ইচ্ছে সহজে এভাবে সন্ধ্যা থেকে ঘুমায় না।আবার মনে হলো কি ই বা হবে? হলে তো সে জানতই।মেয়েদের তো আবার বিয়ের আগে ঘুম বাড়ে সেই প্রতিক্রিয়াই হয়তো ইচ্ছের পরেছে।এটা
ভেবেই হেসে উঠে আহান।
ইচ্ছের ঠোঁটের উপর ঠোঁট মিলিয়ে বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে ।দু চোখ ভরে ইচ্ছের মুখ খানা দেখে।নাকে নাক ঘষে। গলায় নাক ঘষে। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।
সকালে ইচ্ছে নিজেকে আহানের বাহুবন্ধনে আবিষ্কার করে।ইচ্ছে একটু নড়ে উঠতেই আহান
— গুড মর্নিং পাখি
ইচ্ছে জবাব না দিয়ে আহানের বুকের মধ্যে ঢুকতে থাকে।আর ঢুকতে না পেরে খিচিয়ে ওঠে। আর কেন ঢুকে যাওয়া যাচ্ছে না।সে যে এই আহানেই লুকিয়ে পরতে চায়।আহান শব্দ করেই হেসে দেয়।
— কি হয়েছে ইচ্ছুপাখি।এভাবে নিশপিশ করছিস কেন?
ইচ্ছে আহানের বুকে নাক ঘষে। আহানের কাছে এই হয়তো তার শেষ ছোয়া।তাই সে একদম ছাড়তে চাচ্ছে না। একদম না
— উঠে পর পাখি। অলরেডি আটটা ত্রিশ বাজে।
ইচ্ছে তবুও কথা বলছে না।চোখের কোঠর দিয়ে পানির ফোটা বেড়িয়ে এলো। ইচ্ছে খুব সাবধানেই মুখে নিলো।আহান আবার দেখে না ফেলে।
ইচ্ছে বুকের মধ্যে খুসখুস করছে এতে আহান আবার হেসে দিলো।মাথায় একটা চুমু আঁকল।তখনই আহানের ফোন টা বেজে উঠলো।
— হ্যা বল
(ওপাশের শব্দ শোনা যাচ্ছে না।)
— এখনই আসতে হবে? কেন যে ঝামেলা করিস তোরা,,, আমার মাথায় আসে না।রাখ আসছি ৩০/৪০ মিনিটের মধ্যে।
আহান ফোন কেটে দিলো।
–পাখি আমার ক্যাম্পাসে যেতে হবে। ঝামেলা করেছে ওরা। আমি না গেলে মিটমাট হবে না।আমার উঠতে হবে।
আহান উঠে বসে।ইচ্ছে বাচ্চাদের মতো আহানের কোলের উপর দুই পাশে দুই পা ছড়িয়ে বসে পা দিয়ে আহানের কোমর পেচিয়ে ধরে। দুই হাতে গলা পেচিয়ে খুব শক্ত ভাবে জরিয়ে ধরে।
–কি হয়েছে যেতে দিবি না? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।বাচ্চাদের মতো করে না।তোর সাথে থাকার ব্যবস্থা করে ফেলেছি আর তো,, আর মাত্র কয়দিন।তারপর তুই আমার রুমে পারমানেন্ট।হিহি
ইচ্ছের বলতে মনে চাইলো আহান আপনার আমার সপ্ন যে সপ্নই থেকে যাবে।আপনার রুমটা যে আমার পারমানেন্ট হবে না।হবে না।ভাবতেই ইচ্ছের চোখ আবার পানিতে ভরে গেলো।
আহান জোর করেই ইচ্ছের দুই হাত গলা থেকে ছাড়িয়ে নিলো।একি তুই কাদছিস কেন আজব? একটু পরে এসে তোকে কলেজ পৌঁছে দেবো তো বাবা।
আহান ইচ্ছের সারা মুখ চুমুতে ভরিয়ে দিলো।ঠোঁটের উপরে টাইট করে একটা চুমু দিলো।
— এবার তো যাই মহারাণী।
আহান একপ্রকার খুব কষ্টেই ইচ্ছেকে ছাড়িয়ে চলে গেলো। মেয়েটার মাঝে মাঝে কি যে হয় আহান এক্কেবারে বুঝতে পারে না।
—————–
ঘন্টা খানেক বাদে আহান ইচ্ছেকে ফোন দিয়ে জানালো সে আসতে পারবে না।ইচ্ছে যেন কষ্ট করে একা একা ভার্সিটি চলে যায়।
বিকেলে ইচ্ছেকে রুমে পাওয়া গেলো না।যে মেয়ে বিকাল হলেই ব্যালকুনির দোলনায় আহানের জন্য অপেক্ষা করে আজ সে বসে নেই।আহান বেশ কিছুক্ষণ বসে চলে গেলো নিজের রুমে।
রাত নয়টা তখনও ইচ্ছে রুমে আসে নি।আহান জালনা বরাবর চেয়ার টেবিলেই পড়ছিল।আয়ান কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলে আয়ান জানালো “ইচ্ছের নাকি সখ হয়েছে বাবা মায়ের কাছে ঘুমাবে।”আহান ভাবছে সেটা তো তাকে বললেই হতো। ফোন না ধরার মানে কি?
পরের দিন সকালে ভার্সিটি যাবে বলে বার বার বাইকের হর্ণ বাজাচ্ছে কিন্তু ইচ্ছের কোনো পাত্তাই নেই।ফোন করতেই ফোন ধরে বললো সে ভার্সিটি চলে গেছে।তারপর আহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিয়েছে।আহান এই অদ্ভুত ব্যবহারের কোনো কারণ খুজে পেলো না।
বিকালে কাজ থাকায় বাসায় ফিরতে পারে নি আহান। সন্ধ্যা নাগাদ রুমে এসে দেখে ইচ্ছের রুমের থাইগ্লাস বন্ধ করা।ব্যালকুনিতে এসে দেখে ইচ্ছের রুমের ব্যালকুনির দরজাও অফ করা।আহান অবাক হলো। তবুও মাথায় কোনো খারাপ চিন্তা আনল না।
আহান ফ্রেস হয়ে কিছু খেয়ে ইচ্ছের বাসায় চলে যায়।গিয়ে দেখে তার মা শিরিনও বসে আছে।
শিরিন আসার পর থেকে শিরিনের সাথে নিধি একেবারে সাভাবিক ভাবে কথা বলছে।শিরিন যখনই বিয়ের কথা তুলছে তখনই কথা ঘুরিয়ে বলছে যখন হবে দেখা যাবে।
ইচ্ছেও শিরিন নিধির সাথে যোগ দিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ। আহান এসে ইচ্ছেকে সবার সাথে বসা দেখে।
ইচ্ছের মাথায় চাটি মেরে ইচ্ছের পাশে বসে পরে।
— কিরে মহারানী দুইদিন ধরে বিলুপ্ত প্রাণী হয়ে যাচ্ছিস যে? বিলুপ্ত হওয়ার চিন্তা ভাবনা আছে নাকি?
ইচ্ছে গম্ভিরভাবে হাসে।শিরিন ছেলের কথা শুনে কিছুটা আন্দাজ করছে।
আহান চট করে বলে উঠে ভালো মা আমি ইচ্ছেকে নিয়ে একটু উপরের রুমে যাই?
আহান পারমিশনের অপেক্ষা না করেই ইচ্ছের হাত টানতে টানতেই রুমে এসে দরজা অফ করে দিল।তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ইচ্ছে ভাবছে সে নিজেকে একদম নরম হতে দেবে না।এই প্রতিজ্ঞায় যে সে অনড়।শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ইচ্ছে
— কিরে আমার মতো জড়িয়ে ধর। মনে হচ্ছে কতো বছর দেখিনি তোকে।
— কি হলো। এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস মনে হচ্ছে যেনো খাম্বা ধরে আছি।মেয়েরা মোরামোরি না করলে ভালো লাগে নাকি।।জানলা গুলো অফ করে দিয়েছিস কেন?তোকে না দেখে আমার ঘুম হয় না জানিস না? সেখানে দেড় দিন দেখি নি তোকে বুঝিস বুঝস( ভ্রু নাচিয়ে)
— ওই পিচকু হয়েছে কি তোর আজ যে লজ্জাও পাচ্ছিস না।সেদিন কি লজ্জা কাটাকুটি করে দিয়েছিলাম নাকি?
— ওমা আমার পাখিটা কি রাগ করছে? রাগ করতেও পারে নাকি? মুখ বাংলার পাচের মতো যে? সেদিন রেখে চলে গেছিলাম তাই? আর কক্ষনও যাবো না পাখি এই প্রমিজ। এইবার হাস দেখি,,, ( ইচ্ছের ঠোঁটের দুইপাশ টেনে বড় করে দেখালো)
— এখনও কথা বলবি না।জন্মের পর থেকে এই প্রথম তোর এতো রাগ দেখলাম বুঝলি।অবশ্য এখন তর রাগ করার অধিকার আছে।যতই হোক আম ইউর উড বি,,,,, ( চোখ টিপে)
–একটা লিপকিস করে দি আর পেটে কামড় দিয়ে দেই তাহলেই লাজুকলতা হয়ে যাবিনে।দাড়া
আহান কামিজ গলিয়ে ইচ্ছের পেটে হাত রাখলো।ঠোঁট জোরা এক করে দেবে ঠিক তখনই
ইচ্ছে এতক্ষণ চুপ চাপ শুনলেও এবার চুপ করে থাকলো না।এটাই সুযোগ তার কাছে
— আহান আপনি কি আপনার প্রত্যেক মেয়ে বান্ধবীর রাগ এভাবে ভাঙান নাকি বুকেও হাত………
আহান যেনো অবাকের চূরান্ত পর্যায় পৌছে গেছে। ইচ্ছে কি বলেছে আবারও নিজে বুঝার চেষ্টা করলো। হ্যা ইচ্ছে সত্যিই তাকে বাজে কথা বলেছে।
আহান সাথে সাথে ইচ্ছে গাল বরাবর থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।ইচ্ছে যেনো এটারই অপেক্ষা করছিলো। তার মুখের ভংগীতে বুঝা যাচ্ছে তার প্লান সাকসেসফুল।
— আমি তোকে দেখে অবাক হচ্ছি তোর এই দুই দিনের কাজে।আর আজ তুই কিভাবে বললি এটা? ওয়েট ওয়েট তোকে আমার নামে কেউ কিছু বলেছে?
ইচ্ছে নিশ্চুপ। পরক্ষণেই বলে ওঠে না কেউ কিছু বলে নি।ইচ্ছের গম্ভীর গম্ভীর জবাবে আহান সত্যিই অবাকের চূড়ান্ত।
ইচ্ছেকে ঝাকিয়ে বললো
–এই তুই কি আমার ইচ্ছে নাকি অদল বদল হয়ে গেছে বল তো।
আহান নিজেকে শান্ত করে বললো
— ওকে ওকে ফাইন।বুঝেছি আমার পাখি অনেক রাগ করছে তাই না।থাপ্পড় মেয়েছি সরি আয় আয় আদর করে দি।
ইচ্ছে আবারও মুখ খুললো।বেশ জোরেই চিৎকার করে বলে ওঠে
— আহান আপনার কি গায় পরা ছাড়া কোনো ওয়ে মাথায় আসে না? কয়টা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন বলবেন?কি এসব কি? আদর করে দি,,,,,কেন আমি কি ছোট বাচ্চা যে আদর করে দিতে হবে? হা? আর আমি একটা মেয়ে মানুষ কেনো আমি আমার দরজা জানলা খুলে রাখবো হ্যা।আমার কি নিজের প্রাইভেসি বলতে কিছু নেই নাকি?
আহান অবাক চোখে আহত গলায় বললো
— তোর প্রাইভেসি আমার সামনে? কথাটা কি একেবারে নতুন না?তোর মনে হচ্ছে না তুই নতুন নতুন কথা বলছিস? যা তোর কাছ থেকে আহান আশা করে না,,,
— কে কি আশা করে তা ভেবে আমার জীবন থেমে থাকবে নাকি?আমি প্রাইভেসি চাই ব্যাস।
যখন তখন আমাকে ফোন দিবেন না।আমার রুমে আসবেন না ইভেন আমাদের বাসায় না আসলেও আমি যথেষ্ট খুশি হবো।
আহান বেশ অপমান বোধ করলো। একরাশ অবাক চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে? এটা কি তার ভীতু লজ্জা পাওয়া ইচ্ছুটা?আহানের মনে হলো ইচ্ছে হয়তো মজা করছে এখনই হেসে দেবে বা সব ঠিক করে নেবে।কিন্তু না
–আমাদের বিয়ে কয়দিন পর ইচ্ছে এসব কি শুরু করেছিস?
— কিসের বিয়ে? কিসের? আপনার মতো ক্যারেক্টারের মানুষের সাথে বিয়ে?
আহান অবাক চোখে তাকিয়ে বললো
— ইচ্ছু তুই আমার সাথে মজা করছিস তাই না?
— কেন আহান আপনার সাথে কি আমার হাসি ঠাট্টার সম্পর্ক? আজব তো
— তোর কথা বার্তা আমার চিনতে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে।পিলিজ বি নরমাল।থাপ্পড় মেরেছি বলে বেশি খেপেছিস? এই দ্যাখ কান ধরে মাফ চাইছি।
আহান সত্যিই কান ধরলো।
কিন্তু ইচ্ছে যেনো আজ পাথর হয়ে গেছে।তার হৃদয় গলছেই না কিছুতে।
— আহান আপনার এইসব মিডলক্লাস ড্রামা গুলো বন্ধ করলেই খুশি হবো।আপনি এখান থেকে এখনই বেড়িয়ে যাবেন এখনই। এই সেইড রাইট নাও।
আহান দরজার সাথে একটা লাথি মেরে বেড়িয়ে গেল।আর পিছনে তাকালো না।যে মেয়ে কিনা তার মুখের উপর কথা বলে না সে আজ চরম রুডলি বিহ্যাভ করল । আহান সামনে যা পাচ্ছে তা ই ভেঙে ফেলতে ফেলতে যাচ্ছে।পিছনে তাকালে হয়তো দেখতে পেত ইচ্ছের দরজা ধরে কান্নার দৃশ্যটা।
আহানের মা শিরিন ছেলের অবস্থা দেখে হা হয়ে গেলো। নিধি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে যে কি হয়েছে। আহানের ভাঙাচুরার শব্দে আয়ান ইশালও বেড়িয়ে এলো। সবাই হতভম্ব। আব্দুর রাহমানও বাসায় নেই।
শিরিন নিধির দিকে একবার তাকিয়ে ছেলের পিছু পিছু বেড়িয়ে গেল। ঘরে চোখের সামনে যা পেয়েছে সব ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে আহান।ব্যালকুনিতে এসে ইচ্ছেকে যা ইচ্ছে তাই বলল।নিধি কিছুতেই ফেরাতে পারছে না।আহান এক পর্যায় মায়ের পা জড়িয়ে কেদে ফেলে।
বার বার আর্তনাদ করতে থাকে
— মা আমার ইচ্ছু পাখিটা পাল্টে গেছে।মা ওকে ঠিক হয়ে যেতে বলো।ও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে না।কিন্তু আজ করেছে।আমার মুখের উপর প্রথম বার কথা বলেছে।মা ও বলেছে আমাকে বিয়ে করবে না মা।আমি মরে যাবো…মা,,,
আহানের আর্তনাদ দরজা ফাঁকা করে ইচ্ছে সবই শুনেছে।কিন্তু সে যে নিরুপায়।নিজের কারণে অন্য কারো জীবন নষ্ট করার রাইট তার নেই একেবারে নেই।
ছেলে ঘুমিয়ে পরার পর শিরিন নিধির কাছে চলে এলো।
— ইচ্ছেকে বলে দিয়েছিস তাই না?
নিধি সাভাবিক কন্ঠেই জবাব দিল
— প্রয়োজন পরেছে বলেছি।
— এতো ভালো মানুষি ভালো না নিধি। আমাদের যেখানে সমস্যা নেই তোর সেখানে কিসের সমস্যা?
— শিরিন তোকে আমি ছোট বেলা থেকে চিনি।আহান ইচ্ছেকে বিয়ের কথা বলায় তুই যতটা না খুশি হয়েছিস তার থেকে বেশি সস্তির নিশ্বাস ফেলেছিস।নিজেকে দায় মুক্ত করতে পারবি এটা ভেবে খুশি হয়েছিস তুই আর রাকিব ভাই(আহানের বাবা)।আহানকে আমিই নিজের ছেলে মেয়ের থেকে কম ভালোবাসি না।আর না তোকে আমার বোনের থেকে কম দেখেছি।বরং বেশিই দেখেছি।তাই বলছি যেটা হচ্ছে হতে দে
— দ্যাখ তোর ধারনা ঠিক মানছি। কিন্তু ব্যাপারটায় সত্যিই আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা আছে।।অন্তত আমাদের নেই তোর আর রাহমান ভাইয়ের কিসের সমস্যা? আর মেয়েটার মাথাও খেয়েছিস।বাচ্চা মেয়ে নিজেকে সামলাবে কিভাবে ভেবেছিস?
— দ্যাখ শিরিন আমি জানি তুই ছোট বেলা থেকে আমার বিপদে আপদে ঝাপিয়ে পরেছিস।সে বিপদে তোর সাহায্যের প্রয়োজন ছিলো আমার । কিন্তু এই ব্যাপারে নেই তাই সাহায্য না করলেও চলবে।আমি দয়া চাই না
— দয়া?এই তোর বন্ধুত্ব? ভালো বললি। আমার ছেলের ভালো চেয়েছিস তাই না? যদি হিতে বিপরীত হয় তুই দায়ী থাকবি বলে দিলাম।
শিরিনের নিধির প্রতি চাপা অভিমান হলো। তার মনে হলো তার বান্ধবী তাকে পর করে দিয়েছে ।
সেদিনের পর থেকে রাগের বশীভূত হয়ে আহান ইচ্ছের সাথে পাঁচ দিন যোগাযোগ করে নি। মনের কোথাও একটা আশা ছিল ইচ্ছে মিথ্যা বলছে সে নিজেই ফিরে আসবে।তখন আহান তাকে একটুও বকবে না বুকে টেনে নিবে।কিন্তু আহানের ধারণা ভুল করে দিয়ে ইচ্ছে এলো না।জানলা দরজা অব্দিও খুললো না। আহানের প্রত্যেকটা রাত ইচ্ছের ব্যালকুনির দোলনায় নয়তো নিজের রুমের জানলায় চেয়ার টেবিলে কেটেসে।তার উৎসুক চোখ এই আশায় ছিলো একটা বার হলেও ইচ্ছে জানলা খুলবে।।। কিন্তু না,,,খুলেনি।
এদিকে ইচ্ছে সারা দিনরাত জালনায়ই বসে থাকে।এখন সে থাইগ্লাসের চরম উপকারিতা টের পাচ্ছে।সে যে সারা দিনরাত আহানকেই দেখে তা আহান দেখতে পায় না।আগে ইচ্ছের থাইগ্লাসের উপর খুব রাগ হতো কারণ আহান জানলা খুলতো না।আহানের রুমের ভিতর দেখা যেত না।ভাবতো থাইগ্লাসের সভাব এমন কেন?ওপর পাশ দিয়ে দেখা গেলে কি হতো? এখন আহানের জানালা খোলাই থাকে চোখ ভরে আহানকে দেখে।কিন্তু আহান দেখে না ইচ্ছে তাকে দেখছে।কয় দিনেই ইচ্ছের চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে। সে ভালো নেই। একদম ভালো নেই।
চলবে,
বি.দ্রঃ ইচ্ছের সমস্যা আস্তে আস্তে ক্লিয়ার হয়ে যাবে সবার কাছে