তুমি আছো তাই পর্ব – ০৬

গল্প – তুমি আছো তাই
পর্ব – ০৬
লেখিকা – নৌশিন আহমেদ রোদেলা

হঠাৎ কারো ডাকে ফিরে তাকালো নিশি,,,সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে আরো বিরক্ত লাগছে নিশির,,,সাইম,, নীরার বরের ফ্রেন্ড,,,রেস্টুরেন্টে জিজুর সাথে দেখা করতে গিয়ে এই ছেলের সাথে দেখা হয় নিশির।।সেইদিন থেকে নিশিকে জ্বালিয়ে মারছে।।সাইমকে দেখেই বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললো নিশি।।ব্যাটা ফাজিল,,ফ্রেন্ডের শশুড়বাড়ি আসছিস ভালো কথা,,আশেপাশে নজর দেস কেন??যত্তসব আবাল জনগন,,,

নিশু,,কেমন আছেন??

মহা ভালো আছি,,(যন্ত্রনায় বাঁচি না। বলে কি না কেমন আছি?আরে তোর গলা চেপে দিতে পারলে শান্তি পেতাম,,, মনে মনে)

আমাকে জিগ্যেস করলেন না তো,,, আমি কেমন আছি??

আপনাকে দেখে তো কোনো এংগেল থেকেই খারাপ মনে হচ্ছে না,,,শুধু শুধু জিগ্যেস করতে যাবো কেন??(বিরক্তি নিয়ে)

বাহ,,,আপনি আমাকে অনেক ভালো বুঝেন,,সত্যি আমি অনেক ভালো আছি,,,আপনাকে দেখার পর থেকে আরো বেশি ভালো,,,

তা ভালো কথা,,,শুধু ভালো কেন? মহা ভালো থাকেন তাতেও আমার আপত্তি নেই,,,আপনার যদি আর কিছু বলার থাকে তাহলে প্লিজ বলে ফেলুন নয়তো প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দেন।।।কিছু বলবেন?

হ্যা বলবো,,,

তো বলুন,,

আপনি অনেক সুন্দর নিশি।।

ওহ্ সেটা আমি জানি,,,আমি বাচ্চাকাল থেকেই সুন্দর এটা নতুন কিছু না,,,আমার জানা বিষয়ে কোনো ইন্টারেস্ট নেই,,,আমার জানার বাইরে কিছু থাকলে বলেন নয়তো ভাগেন।।।

নিশি আপনি এমন একটা মানুষ যাকে প্রথম দেখেই যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে,,,,আপনার মধ্যে অদ্ভুত এক শক্তি আছে,,,আপনি শরতের শিউলি ফুলের মতো,,,বড্ড স্নিগ্ধ কিন্তু সৌরবে সুরভিত,,,আপনার হাসিতে হাজার বার মরেও যেন তৃপ্তি মিটবে না।।আপনার চুলল,,,,(মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে)

এইযে রবীন্দ্রনাথ?? রবীন্দ্রসংগীত না শুনাইয়া,,, মেইন পয়েন্টে আসেন,,,কাহিনী কি??(বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে)

আসলে নিশি,,,আই থিংক আম লাভ ইউথ ইউ,,,(লাজুক চাহনিতে)

তারমানে আপনি শিউর না??নিশ্চয়তা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলাঝুলি করছেন??

আরে না না,,, তা হবে কেন??আমি খুব শিউর।।আমি তোমার জন্য জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি,,,একবার সুযোগ দাও,,,ট্রাস্ট মি,, ঠকবে না,,আমার জীবনটাও তোমার নামে লিখে দিবো(ইমোশনাল হয়ে)

নিশি এবার চরম রকম ক্ষেপে গেলো,,,প্রথমতো সে নিজেই এতো টেনশনের মধ্যে আছে তারমধ্যে এই ব্যাটার নেকা নেকা কথা,,,উফফফ।।।ইচ্ছা করছে মাথা ফাটিয়ে দিতে।।

তাই নাকি??জীবন দিতে পারবেন??

অবশ্যই,,, একবার বলেই দেখো।।(হেব্বি কনফিডেন্স নিয়ে)

নিশি আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলো,,,হঠাৎ ছাদের রেলিং এর পাশে একটা পাথর দেখতে পেলে,,,পাথরটা তুলে নিয়ে সাইমের দিকে তেড়ে এসে বললো,,,

ওক্কে,,,তাহলে দিয়ে দেন,,

কি??(অবাক হয়ে)

তোর জীবন,,,আমার ছোট বেলা থেকে খুব শখ,,, কেউকে ইচ্ছামতো পিটাইয়া মারবো,,,আপনি যেহেতু নিজেই রাজি তাহলে আমার উইশটা পূরন করেই নিই,,কি বলেন??(শয়তানী হাসি দিয়ে)

সাইম এবার ভয় পেয়ে গেলো,,,বেচারা ভাবে নি এমন কিছু হবে,,,সে তো বন্ধুর শিখিয়ে দেওয়া বুলি আওড়াচ্ছিলো,,,,ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,,

আ,,আপনি ম,,,মজা করছেন?

দাড়া প্র্যাকটিকেলি বুঝিয়ে দিচ্ছি মজা না রিয়েলিটি,,,(সাইমের চেহারা দেখে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে নিশির,,,অনেক কষ্টে হাসিটা চেপে রেখে সাইমের দিকে তেড়ে এলো)
।।
এদিকে নিলয় নিশিকে খুঁজছে,,রাগে ফুঁসছে নিলয়,,,নিশির একটা ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে,,,,ওর সাহস কি করে হয়,, কারো সাথে রিলেশনে যাওয়ার,,,,আবার বেবি,,সোনা,,,রিডিকিউলাস,,,আজকে ওকে বুঝাতে হবে নিলয় কি জিনিস।।।নিশিকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদের দরজায় দাড়িয়েই নিলয়ের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম,,,,এসব কি দেখছে সে??দুই মিনিট স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে,,,দৌড়ে গিয়ে নিশিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলে,,,কিন্তু্ু নিশি তখনো ছুটাছুটি করেই চলেছে,,,তার মুখের ভাব এমন যে,,সে আজ সাইমকে মারবেই এট এনি কস্ট,,,,,এবার নিলয়ও রেগে গেলো,,,নিশিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দুই বাহু ধরে ঝাকি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো,,,,

স্টপ ননসেন্স,,, হোয়াট আর ইউ ডুয়িং,,,আর ইউ লস্টটেট??

আরে ছাড়ুন আমায়৷৷(বিরক্তি নিয়ে)উনি বলেছেন,, উনি আমার জন্য জীবন দিতে পারেন,,,সো এবার উনি আমাকে উনার জীবন গিফ্ট করবেন,,,তাই না সাইম বেবি??(ভ্রু নাচিয়ে)

হোয়াট??(ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)ও তোমার জন্য জীবন দিবে কেন??

বিকজ হি সেইড দেট হি লাভ মি,,,,

হোয়য়য়াটটট??(এবার নিলয়ের মাথায়,রক্ত উঠে গেলো,,তবু নিজেকে শান্ত রেখে,,,নিশিকে ছেড়ে একপাশে দাড় করিয়ে,,, সাইমের দিকে এগিয়ে গেলো)

সাইম বেচারা তো এমনি ভয়ে শেষ,,,নিলয়ের রাগ মাখানো চোখ দেখে এবার তো তার যায় যায় অবস্থা,,,মেয়ে পটানোর শখ তার জন্মের মতো মিটে গেছে,,কি ডেঞ্জারাস মাইয়া,,,মাই গড।।।সাইমের গলা শুকিয়ে গেছে,,বার বার ঢোক গিলেও লাভ হচ্ছে না।।।নিলয় ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সাইমের কাঁধে হাত রেখে,,নিশি থেকে একটু দূরে সরিয়ে এনে দাড় করালো,,,

দেখ ভাই,,বুকিং জিনিসে নজর দেওয়াটা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়,,,তারপরও যদি,,নজর বেশি আকুপাকু করে(দাঁতে দাঁত চেপে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে)তাহলে,,,,ইউ নো হোয়াট??আমি ভার্সিটিতে ফুটবল চ্যাম্পিয়ন ছিলাম।।বলের সাথে মানুষকেও উড়াতে পারি বেশ ভালোভাবেই,,,নাও ডিসিশন ইজ ইউরস,,,,আই থিংক ইউ আর আ সেনসিটিভ পারসন,,,,(বা্ঁকা হাসি দিয়ে)

সাইম তো রীতিমতো ঘামছিলো,,,একহাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে,,মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো,,,

গুড,,,, গো নাও,,(মুচকে হেসে)

সাইম আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না,,,দ্রুত ছাঁদ থেকে নেমে গেলো,,,এতোক্ষণ উঁকিঝুকি মেরে,,কান খাড়া করে ওদের কনভারসেশন শুনার সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে
নিশি,,,কিন্তু সাইমকে চলে যেতে দেখেই তেড়ে এলো নিশি,,

আরে আরে উনাকে যেতে দিলেন কেন???উনা,,,

আর কিছু বলতে পারলো না নিশি তার আগেই নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো নিলয়,,,

কই যাও??আগে তো তোমার ক্লাস নেওয়ার পালা,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)

ম,,,মানে??(নিলয়ের হঠাৎ জরিয়ে ধরা আর এমন কথায় ভয় পেয়ে গেলো নিশি)

বেবি,,সোনা,,,জান,,,

ম,,মানে??এ,,এসব কি ব,,,বলছেন??

কিছুই বুঝতে পারছো না??আমাকে কি বোকা মনে হয়??(আরো জোড়ে চেপে ধরে)তোমার সাহস কি করে হয় অন্য কারো সাথে রিলেশনে যাওয়ার??

কি সব ফা,,,ফালতু কথা বলছেন??

ফালতু কথা না??এখন ফালতু কথা??তখন কি বলছিলে??তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে হ্যা??(রাগী চোখে)

তো?থাকতেই পারে,,,বয়ফ্রেন্ড থাকুক বা হাজবেন্ড থাকুক তাতে আপনার কি??আপনার তো এসবে যায় আসার কথা না,,(বলেই নিলয়কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে আসতে নিলো কিন্তু সাথে সাথেই হেচঁকা টানে নিশিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো নিলয়,,,

আমার যায় আসে কি আসে না,,,তা তোমার জানতে হবে না,,,কিন্তু আই ওয়ার্ন ইউ,,যদি কেউ তোমার দিকে নজর দেয় তাকে যেমন মাটিতে পুঁতে ফেলবো,,,ঠিক তেমনি তুমি যদি কাউকে চাও তাকেও কেটে রেখে দিবো,,সো মাইন্ড ইট,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)

আপনার এই গোন্ডামী ভার্সিটিতে দেখাবেন,,,আমার সামনে না হুহ,,,(বলেই ঝাড়ি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো,,,নিলয় এবারো নিশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।।।ঘাড়ের চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো,,,নিলয়ের স্পর্শে নিশি কেঁপে কেঁপে উঠছে,,,শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে,,দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না,,,পা যেনো ভেঙে আসছে।।নিশির এতো কাপাঁকাঁপি দেখে নিলয় মুচকি হেসে নিশিকে ছেড়ে দিয়ে নিচে নেমে গেলো,,, যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলো,,,কেবল তো গোন্ডামী শুরু,,,,কত প্রকার ও কি কি,,,সেটা দেখাবো এবার তোমায়,,,গেট রেডি ফর দেট।।।নিশি তখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।।।


নিশি সন্ধ্যা থেকে প্রিপারেশন নিচ্ছে কিভাবে বাবাকে বিয়ে ভাঙার কথাটা বলবে,,,কিন্তু প্রতিবারই বাবার সামনে গিয়ে সব গুলিয়ে ফেলেছে সে,,,এখন প্রায় রাত ১১ঃ৩০,,নিশি তার বাবার রুমের বাইরে দাড়িঁয়ে আছে,,ঢুকবে কি ঢুকবে না ভাবছে,,,,অবশেষে অসীম সাহস নিয়ে ঢুকেই পড়লো,,,

বাবা??

আরে,,নিশু,,আয় মা আয়,,,কিছু বলবি মা?

হ্যা বাবা,,বলছিলাম কি বিয়েটা,,,(মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন)

আমি জানি তুই কি বলবি,,,,(নিশি অবাক হয়ে তাকালো)বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলার কথাটা তো??তুই একদম চিন্তা করিস না,,আমি আর তোর ফাহাদ আংকেল বিয়ের কার্ড ছাপাতে দিয়ে এসেছি,,,,কালকেই দিয়ে দিবে,,,একদম চাপ নিস না,,, চটপট গিয়ে ঘুমিয়ে পড়,,,রাত জাগলে পড়ে আবার,,,তোরা কি জানি বলিস???ওই তো হ্যা,,,চোখের নিচে ডার্কসার্কেল পড়ে যাবে,,,হাহাহা,,যা মা যা,,,

নিশি বাবার রুম থেকে বেরিয়ে এলো,,,,নিশি তার বাবাকে যতো ফাস্ট ভেবেছিলেন,,, তিনি তো তার চেয়েও দ্রুত বেগে ছুটছেন,,,,টেনশনে নিশির এবার কান্না পাচ্ছে,,,নিলয়কে বললে সে নিশ্চয় ফাহিনকে খুন করবে কিন্তু তার আগে নিশিকে তান্দুরী বানিয়ে ছাড়বে।।এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো,,,,

ফোনের ভাইব্রেশনে নিশির ঘুম ভেঙে গেল,,হাত বাড়িয়ে ফোন নিতে গিয়েই বুঝতে পারলো নিশি,, সে তার বিছানায় নেই,,কিন্তু নিশির স্পষ্ট মনে আছে,,সে রাতে বিছানায় ঘুমিয়েছিলো,,,অনেক কষ্টে চোখ খুলে নিজেকে একটা গাড়িতে আবিষ্কার করলো,,কিন্তু গাড়িতে সে ব্যতীত দ্বিতীয় কাউকে খুজে পেলো না নিশি।।।গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে বুঝতে পারলো যে গাড়ির দরজা লক করা,,,,
…………..
………………..
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……]

#তুমি_আছো_তাই #নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা #গল্পের_ডায়েরি #রোদেলা #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here