তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:18
মাহিম সকাল থেকে প্রেজেন্টেশন নিয়ে বসেছে।লাস্ট ফিনিশিং দিবে।হাতে সময়ও কম।পরশু সাবমিট করতে হবে।লেপটপ এর মধ্যেই সব মনোযোগ এখন।ভেজানো দরজায় নিঝুম হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল।সে দাড়িয়ে দেখছে।ওর মনটা খারাপ লাগছে।কালতো বলল ওরা আজ ঘুরতে যাবে।এদিকে ও রেডী হয়ে বসে আছে আর মাহিমের হেলদোল নেই।নিঝুম হালকা ভাবে ঝাড়ল।মাহিম এর কানে শব্দ যেতেই ও পিছন ফিরল।নিঝুম বাইরে কেনো ভিতরে এসে বসো।নিঝুম যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,বসতে আসিনি।এবার মাহিম লেপটপ থেকে মুখ ঘুরিয়ে ভালো করে তাকালো। পিংক ড্রেস,ম্যাচিং এ্যারিং,খোলা চুল পিঠে ছড়ানো, খুব সাজগোজ করেছে নিঝুম।এবার চোখটা সরিয়ে বললো,সকাল সকাল এত সাজগোজ করে আবার গাল ফুলিয়ে কোথায় যাচ্ছ। এবার তো নিঝুম পারেনা কেঁদে ফেলে।ভাইয়া সব ভুলে গেলেন?আজ আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন।মাহিম কিছুটা উদাস হয়ে বলল,যাওয়াই লাগবে?নিঝুম প্রায় কেদেই ফেললো।কত খুশি হয়ে ছিল মনের আনন্দে সাজলো আর এখন….যেতে হবে না আপনার।বলে নিঝুম বের হয়ে যেতে নিল।
মাহিম বুঝতে পারলো নিঝুম অনেক কষ্ট পেয়েছে।তাই পিছন থেকে ডাকলো।তুমি কি মজাও বুঝোনা?নিঝুম চোখের পানি মুছে পিছন ঘুরল।আরে তুমিতো আমার বেয়ান হও তাই একটু দুষ্টুমি করছিলাম। নাহ আর যার সাথেই দুষ্টুমি করি না কেনো তোমার সাথে করবনা।নিঝুম এখনো চুপ করে আছে।এইবার তো বের হও চেঞ্জ করবো।নিজেতো সেজেগুজে ফুলটুশি হয়ে আছো।আমি কি এইভাবে যাবো?নিঝুম খুব লজ্জা পেয়ে বের হয়ে এলো মনে মনে ভাবছে ওকি বেশি সেজেছে?ওর ভাবনার মাঝেই অহনা এসে জিজ্ঞেস করবে তখনই মাহিম বের হয়ে বললো, চল।অহনা কিছু একটা ভাবলো আর মিটমিট করে হাসছে।সেদিকে তাকিয়ে মাহিম বলল,কি আপু মাথা কি পুরা গেছে!একা একা হাসছো?আমার হাসির কারণ না জানলেও চলবে।তোরা কোথায় যাচ্ছিস?মাহিম বলার আগেই নিঝুম বলে উঠলো,ভাবী মাহিম ভাইয়াকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি উনিতো কোথাও যায়না।ভাবী আমার কি যাবো?অহনা হেসেই চলেছে। ও মনে মনে ভাবছে এই জন্যই তো মাহিম এইখানে এসে অতি happy।অহনা বলল, যাও,তবে তাড়াতাড়ি ফিরো।মাহিমতো পুরাই টাস্কি। এ মেয়ে শর্ত করিয়ে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে আর বলে কিনা….
আজ সারাদিন বরের সাথে থাকবে।কত কথা বলার আছে বলার আর সুযোগ কই।আমার বরটাতো কাজ ছাড়া কিছুই বুঝে না। তাও অহনা তার রুমের দিকে পা বাড়ালো।যা ভেবেছিল,নিয়ন কাজ করছে।অহনা পাশে গিয়ে বসল।নিয়ন চোখ তুলে একবার তাকিয়ে আবার কাজ করতে করতে বলল,কিছু বলবে?অহনা চুপ করে রইলো।নিয়ন এবার ঘুরে তাকালো,কিছু হয়েছে?অহনা চুপ।নিয়ন বুঝতে পারলো তার বউয়ের অভিমান হয়েছে কোনো কারণে।আলতো করে অহনার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিল।আমার বউটার আজ কি হলো?অহনা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,কিছুর বলার না থাকলে তোমার কাছে আসা যাবেনা?আচ্ছা এই হলো ব্যাপার আর তাই আমার বউয়ের ওমন চাঁদ মুখটা মেঘে ঢেকে গেছে?অহনা এখনও মুখ ভার করে আছে।নিয়ন দুহাতে অহনাকে বুকে নিয়ে বলল,আজকের গোটাটা দিন আমার মিষ্টি বউটার।আর কিচ্ছু করবো।অহনা নিয়নের বুকে মুখ লুকালো।এই জায়গায়ই তো তার সুখ।
আমরা কোথায় যাচ্ছি আপু?কোথায় যাবো তাইতো ভাবছি আমিও,অপলা বলল।লুবনা গাড়িতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।অপলা বলল,এক কাজ করা যেতে পারে।লুবনা কৌতূহলে তাকালো।কি আপু?পুরো ঢাকা শহরটাই আজ ঘুরবো।লুবনা হা হয়ে গেলো,কিভাবে আপু?সিম্পল গাড়ি করে সারাদিন ঘুরবো,স্ট্রিট ফুড খাবো,খুব এনজয় করবো আর সবশেষে তোমাকে একটা স্পেশাল ফুচকা খাওয়াবো আমার কলেজের কাছেই।ওয়ার্ল্ড বেস্ট ফুচকা বুঝলে।লুবনার কাছে ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে। ও রাজি হয়ে গেল।ড্রাইভারও সেভাবেই যাচ্ছে।
মাহিমের পুরো নাজেহাল অবস্থা।এই মেয়ে কি পুরো ঢাকা শহরটাই আজ ঘুরবে নাকি?no way একে আর নিতে পারছে না।সারাটা দিন ওকে এদিক ওদিক ছুটিয়ে শেষ করে দিচ্ছে আর না।নিঝুম আর কত ঘুরবো আজ?একদিনেই সব ঘুরাঘুড়ি শেষ করে নিবে নাকি?ভাইয়া আপনার কি খারাপ লাগছে?না তবে খুব tried লাগছে।নিঝুম মন খারাপ করে বললো,তাহলে কি এখনই বাসায় ফিরে যাবেন?নিঝুম এর মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হলো।আচ্ছা সারাদিনতো তোমার ইচ্ছেতেই ঘুরলাম এখন আমার একটা প্রিয় জায়গায় নিয়ে যাই।নিঝুমতো মহা খুশি মাহিমের প্রিয় জায়গায় ওকে নিতে চাইছে। ও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল।
চলবে…….
তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:19
পার্কের গেট দিয়ে ঢুকছে।অপলার সেদিনটার কথা খুব মনে পড়ছে।ও আর মাহিম এই পার্কে একসাথে অনেকক্ষণ ছিল।কি সুন্দর একটা দিন ছিল সেদিন।সারাদিনের সব ক্লান্তিরা যেনো ছুটি দিয়ে দিল অপলাকে।লুবনা দেখছে প্রকৃতিকে না অপলাকে।এইখানে পা রাখতেই অন্যরকম লাগছে।যেনো কোনো ক্লান্তিই নেই তার।চনমনে লাগছে।খুব ভালো লাগছে এইভাবে দেখতে।লুবনা আপন মনে হাসলো।ওরা সামনে এগুতে লাগলো।
মাহিম আর নিঝুম পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে।এইতো সেদিন সে আর তার স্বপ্নচারিণী এইখানটাতেই বসে ছিল।কি সুন্দর ছিল সেদিনটা।নিঝুম বায়না ধরলো বাদাম খাবে।মাহিম এনেও দিল।কিন্তু তাতেই নিঝুম থামলো না।নিজে হাতে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে মাহিমের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে।মাহিম বারণ করলেও শুনলো।
অপলার চোখ জোড়া একটা জায়গায় এসে আটকে গেল।সে কোনোভাবেই সেখান থেকে নিজের দৃষ্টি সরাতে পারছে না।বিস্ময়ে তার চোখ দুটো ফেটে পড়ছে।নোনা জলগুলো চোখে জ্বালা করছে।লুবনা খেয়াল করলো হটাৎ আপুর কি হলো?মনে হচ্ছে খুব কষ্ট পাচ্ছে কোনো কারণে।কিন্তু এইখানে কষ্ট পাওয়ার মতো কি কিছু ঘটেছে?লুবনা অপলাকে স্বাভাবিক করতে বলল,আপু তোমার ওয়ার্ল্ড বেস্ট ফুচকা কি খাওয়াবে না?অপলা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,hmm যাবোতো(লুবনাকে কিছু বুঝতে দিলনা)।তাহলে চলো। চলো।
মাহিম চারপাশটা ভালোভাবে দেখছে।কোথায় গেলো?এইতো এইখানে ছিল,হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো নাকি?স্বপ্ন দেখিনিত!!না তা দেখিনি।ওর কাজিনও তো সাথে ছিল।কিন্তু গেলো কোথায়?এই নিঝুমের যন্ত্রনায় একটুর জন্য হারিয়ে ফেললাম।ইসস তখনই গেলে ওর সাথে আজ আবার সামনাসামনি কথা হতো।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো মাহিমের।নিঝুম আবার এসে জোরাজুরি শুরু করলো সে ফুচকা খাবে।আচ্ছা ওরা ফুচকা খেতে যায়নি তো?যেতেই পারে। হ্যা,ফুচকার দোকানেই যাই।নিঝুমকে নিয়ে ফুচকার দোকানের দিকে যাচ্ছে ঠিকই ওর চোখ দুটো তার স্বপ্নচারিণীকেই খুঁজছে।
ফুচকার অর্ডার দিয়ে বসলো।অপলা আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজেকে সামলাতে।ওর কষ্ট পাওয়ারতো কোনো কারণই নেই।তাহলে কেনো কষ্ট পাচ্ছে?কে হয় ওর?কেউতো না।আমিই মনে মনে বেশি ভেবে ফেলেছিলাম কি?কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে আমার।লুবনা ফুচকা খাচ্ছে।আসলেই আপু ওয়ার্ল্ড বেস্ট ফুচকা।অপলা শুনছেই না কি বলছে।লুবনা অপলার কাধে হাত রাখলো।অপলা চমকে উঠলো। হ্যা,বলো।তুমি খাচ্ছো না কেনো?এইতো খাচ্ছি।বলে ফুচকা মুখে দিবে ঠিক তখনই আবার মাহিমকে দেখলো।সেই মেয়েটা ওর মুখের সামনে ফুচকা ধরে আছে।মাহিমকে ওকে বারণ করেছে।কিন্তু মেয়েটা জোর করেই যেনো মুখে পুরে দিলো।অপলা ওর চোখ ফিরিয়ে নিলো।
মাহিম নিঝুমের হাত থেকে বাঁচতে বলল,নিঝুম আমি বিল টা দিয়ে আসি?নিঝুমের উত্তরের অপেক্ষা না করেই উঠে দাড়ালো।বিল দেওয়ার আগে এদিক ওদিক ভালো করে তাকালো।হটাৎ একটা টেবিলে ওর দৃষ্টি থামলো।ঐতো ওর স্বপ্নচারিণী।আগে বিলটা দেই তারপর যাবো।বিল দেওয়ার সময় অপলাদের বিলটাও দিয়ে দিল।
অপলা কোনোভাবেই খেতে পারছেনা।আর লুবনাকেও কিছু বুঝতে দেওয়া যাবেনা।তাই সেখান থেকে উঠে যাওয়াই ভালো। লুবনা তুমি খাও আমি বিলটা দিয়ে আসি।বিল কাউন্টারে গিয়ে আবার দেখা মিলল মাহিমের ।মাহিম ওকে দেখেনি।তাই ও কিছুটা আড়াল হয়ে দাড়ালো।মাহিম বিল দিয়ে অপলাদের টেবিলের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিল।কিন্তু সেখানেতো তার স্বপ্নচারিণী নেই।অপলা বিল দিতে গিয়ে দেখে ওর বিল already দেওয়া হয়ে গেছে।যখন জানতে চাইলো কে দিয়েছে?লোকটা বলল,আপনার শুকনা মতন লম্বা একটা ছেলে দিয়ে গেলো।অপলা আর কথা বাড়ালো না।ও বুঝতে পেরেছে কে বিলটা দিয়েছে।তার মানে মাহিম ওকে দেখছে কিন্তু কথা বলতে চায়না।তাই সেখান থেকে চলে যেতে নিল।
কিন্তু না তার পথ আটকে দাড়িয়ে আছে মাহিম।ওকে কোনদিকেই যেতে দিচ্ছে না। ঠায় দাড়িয়ে আছে।অপলার ওর উপর রাগটা রাও দ্বিগুণ হয়ে গেলো।একেতো আজ কিছু বলতেই হবে।মনে মনে ভেবে নিল।
চলবে……