তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৩৬ ৩৭

0
780

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:36

মোমেনা চৌধুরীর রোজকার অভ্যাস সকালে নাস্তা করে বাগানে বসে থাকা।প্রতিদিনের মত আজও তাই করছেন।আর সাথে আজ মনমতো একজন সঙ্গী পেয়েছেন।রেহনুমা আহমেদকে পুরো বাগানটা ঘুরিয়ে দেখালেন।ছোট বাগান তবে বেশ পরিপাটি আর গুছানো।রেহনুমা আহমেদ এর খুব পছন্দ হল বাগানটা।ভাবী আপনাদের বাগানটা বেশ গুছানো।মোমেনা চৌধুরী হাসলেন,এইটা আমার ছোট ছেলের শখের বাগান,ওই সব করে।মাহিমতো ঢাকায় থাকে তাহলে বাগান দেখাশুনা করে কিভাবে?ঢাকায় গেল কয়েকমাস হল,এখন আর তেমন সুন্দর কই?আগে আরো সুন্দর ছিল।ভাবী আপনার দুই ছেলেই মাশাআল্লাহ খুব আর কাজেরও।সবই আল্লাহর ইচ্ছা।দুজনেই এখন খোশ গল্পে মেতে উঠেছেন।

একটু দূরে ঘাসের উপর বসে খেলছে তুর্য রুনু ঝুনু। তূর্য এত ভালো খেলার সঙ্গী পেয়ে ভুলেই গেছে চাচ্চুর সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা।প্রথম দিকে ওদের চিনতে অসুবিধা হচ্ছিল ওর।কোনটা কে বুঝাই যায় না?দুজনইতো একইরকম।তবে এখন আর হচ্ছে না। ও এখন চিনতে পারে।যে বেশি কথা বলে আর হাসলে গালে গর্ত মত হয়না ঐটা রুনু আন্নি আর যে কম কথা বলে আর হাসলে গালে গর্ত মত হয় ঐটা ঝুনু আন্নি। তূর্যর থেকে ওরা একটু বড় তাই আম্মু আন্নি বলতে বলেছে।আর রুনু ঝুনুও খুব ভালো সময় কাটাচ্ছে।টুকটুক করে কথা বলে তূর্য যেটা আরও ভালো লাগছে ওদের।ওদের বাড়িতে যদি এমন এটা baby থাকতো কতই না ভালো হতো!!

মাহিম সারাবাড়িময় অপলাকে খুঁজছে কিন্তু কোথায় নেই। বাগানেও নেই।ওকে নিয়ে নদীর পাড়ে যাওয়ার কথা কি ভুলে গেলো?মন খারাপ নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে,তখন কিচেন থেকে হাসির শব্দ পেলো।তাই ঘুরে সেদিকেই গেলো।ঐতো ওর স্বপ্নচারিণী।খুব হাসছে।হাসলে কত মিষ্টি লাগে অথচ ওকে হাসতেই দেখিনা।তবে এখন আগের চেয়ে একটু বেশি হাসে।কিন্তু লজ্জাটা একটু বেশিই পায়।যেটা ওর প্রতি আরো মাতাল করে তুলে।

লিপি ভাবী,অপলা,লুবনা,রহিমা,সজিনা(মাহিমদের বাড়িতে কাজ করে)সবাই একসাথে বসে হাতে হাতে কাজ করছে।তবে কাজ কম হাসাহাসিই বেশি হচ্ছে।লিপি ভাবী কিছু একটা বলছে আর সবাই হেসে লুটপুটি খাচ্ছে।মাহিম একটু এগিয়ে কিচেনের সামনে দাড়ালো।লিপি ভাবী তো বলেই চলেছে।কি বলছে শুনতে আরেকটু সামনে এগিয়ে দাড়ালো।এইতো শুনা যাচ্ছে ভাবির কথা। শোনো অপলা এক বুড়ো বুড়ির সংসার।দুজনেই খুব সুখেই আছে।তো বুড়ো সবকিছু বউকে ডেকে বলবে দিতে।হেগো গিন্নি শুনছো আমার মানিব্যাগ কোথায়,আমার ঘড়িটা খুজে পাচ্ছিনা,আমার চশমাটা দেওতো।হাতের সামনে থাকলেও নিবেনা।গিন্নিকে সারাক্ষণ ডাকবে।একদিন বুড়ির খুব অভিমান হলো।স্বামীকে বললো,ওগো তুমি সব সময় শুধু আমার আমার করো কেনো, আমাদের এইটা আমাদের ঐটা বলতে পারতো?বুড়ো গিন্নিকে সম্মতি দিয়ে বলল,ঠিক আছে এখন থেকে সেভাবেই বলবো।পরদিন সকালে বুড়ো আবার ডাকছে,হেগো গিন্নি আমাদের দাড়ি কামানোর বাক্স আর আমাদের লুঙ্গিটা নিয়ে আসত।

লিপির জোকস শুনে সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।মাহিম আড়ালে দাড়িয়ে তার স্বপ্নচারিণীকে দেখছিল এতক্ষণ।কিন্তু লিপি ভাবির জোকস শুনে সেও উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। যার ফলস্বরূপ সকলে হাসি থামিয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে।মাহিমের কিছুক্ষণ সময় লাগলো বুঝতে যে সকলে থেমে গেছে এবং তাকে দেখেও ফেলেছে।কি ব্যাপার দেবরজি লুকিয়ে লুকিয়ে এইখানে কি করা হচ্ছিল?আসলে আমিতো আমার স্বপ্নচারিণীকে…….(অর্ধেক বলেই জিভ কাটল,অপলা ভরকে গেছে কি বলছে এসব),না আ.. আ.. স.. ও… ও… ল… ল… ল…. এএএ……..।থাক আর তোতলাতে হবে না বলতো ঘটনা কি?ঘটনা কি হবে?কিছুনাতো ভাবী।ঠিক তো? 100বার ঠিক ভাবী।তাহলে এইখানে লুকিয়ে কি করছিলে?আসলে ভাবী স্বপ্নচা..না মানে অপলাকে আণ্টি ডাকছে তাই বলতে এসেছিলাম।লিপি ব্রু নাচিয়ে ঘটনা তো কিছু আছেই দেবরজি,সে আমি ঠিক খুঁজে বের করবো।লুবনা বলে উঠলো,আপু ছাড়োতো,ওদের যেতে দেও।অপলা আপু তুমি যাও এখন।অপলা লিপির দিকে তাকিয়ে আছে। শোনো বোন এইভাবে আর তাকিয়ে থেকো না।আমার সুস্থ দেবরটা already তোতলা হয়ে গেছে এরপর আরো কিছু হওয়ার আগে জলদি যাও।অপলা খুব লজ্জা পেয়ে বের হয়ে গেল।অপলা বের হতেই মাহিম লিপির দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসার চেষ্টা করে সেও ছুট।দুজন চলে যাওয়ার সেখানের সকলে হেসে উঠলো।লিপিও ব্যাপারটা বুঝে গেছে।দুটোকে বেশ মানবে তাইনা লুবনা?অম্লান হেসে লুবনা বললো,একদম ঠিক বলেছো আপু।

অপলা নিজের রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে আর মাহিম বাগানের দিকে।অপলাকে বারবার মেসেজ করছে,যাতে তাড়াতাড়ি আসে।অপলা কোনরকমে চেঞ্জ করল।ওর খুব ইচ্ছে করছে নিল শাড়ি পড়তে।প্রথম দেখা হওয়ার দিনের মত সাজতে।কিন্তু সেতো নিল শাড়ি আনেনি।লিপি আপুর কাছে চাইতে পারতো কিন্তু এমনিতেই উনার সামনে খুব লজ্জায় পড়তে হয়েছে।এখন আর সে লজ্জায় পড়তে চায় না।তাই নিল একটা ড্রেস পরে হালকা সাজলো।ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক,চোখে হালকা করে কাজল লেপ্টে দিলো,আর খোলা চুল।

অপলা দ্রুত বাগানের দিকে যাচ্ছে।আর মাহিম সে যে আবারও হারিয়ে যাচ্ছে তার স্বপ্নচারিণীর মাঝে।অপলা বুঝতে পারছে মাহিম এখনই এমন কিছু বলে বসবে যার ফলে সে খুব লজ্জায় পড়বে।তাই মাহিমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উল্টে তারা দিচ্ছে কখন বের হবে?এইখানেই কি দাড়িয়ে থাকবে?যাবেনা নাকি?মাহিম পলকহীন ভাবে তাকিয়েই আছে কোনো হেলদোলই নেই।এইবার অপলা মাহিমের চোখের সামনে তুরি বাজালো।মাহিমের পলক পড়তেই ওকে কিছু বলতে না দিয়েই নিজেই বলা শুরু করলো, চলো চলো দুপুর হয়ে যাবেতো এইখানেই।মাহিম মুচকি হেসে বলল,hmm চলো।অপলার দিকেই তাকিয়ে হাঁটছে সে।যেনো অন্যদিকে তাকালে হারিয়ে যাবে।এর মাঝে হচোট খেতে নিলে অপলা সামলে নিয়ে বলল,সামনে তাকিয়ে হাটো।সামনে তাকাবো কি করে বলতো পাশে যদি এমন মায়াবতী থাকে।অপলা খুব লজ্জা পেলো।এই ছেলের আমাকে লজ্জায় না ফেললে চলেই না যেনো,বিড়বিড় করলো।

চলবে………………

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা এ
Part:37

মাহিমের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এইটা।এইখানে বসেই সে তার স্বপ্নচারিণীকে নিয়ে ভাবতো।এইখানেই তার স্বপ্নচারিণীকে প্রথম খুঁজে পায়।স্বপ্নচারিণীর সাথে প্রথম কথাও এইখানেই হয়েছিল।তার স্বপ্নচারিণীকে ঘিরে সবকিছুই যেন এইখান থেকেই শুরু।আর আজ সেখানেই ওরা দুজন পাশাপাশি বসে আছে।সেদিনের মতো আজ অবশ্য ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে না।আজ এইখানে খুব রোদ।যেনো সূর্যি মামার ওদের উপর খুব রাগ।কিন্তু ওরা দুজন সব উপেক্ষা করে সেখানে বসে আছে।অদ্ভুদ এক অনুভূতি হচ্ছে।শুরু ব্যাপারটা হয়তো বেশিরভাগ সময়ই সুন্দর হয়।আর প্রেম এর শুরুর সময়টা একটু বেশীই সুন্দর হয়।

মাহিম তার স্বপ্নচারিণীকেই দেখছে এখনো।আর টুকটাক কথা বলছে।অপলা বুঝে উঠতে পারছে না কি বলবে।আর মাহিমের চোখের তৃষ্ণা মিটাতে পারছেনা।

– এত সুন্দর একটা place এ থাকো তুমি আর সেসব ছেড়ে ঢাকায় কেনো গেলে?
– তোমার জন্যে।
– আমার জন্য?
– অবাক হওয়ার কিছু নেই।ঢাকায় না গেলে তোমাকে খুঁজে পেতাম কি করে?
– তাই বলে সব ছেড়ে চলে যাবে?
– সব তো ছেড়ে যাইনি।সব কিছুর মাঝে যে একটা অপূর্ণতা ছিল সেটা পূরণ করতেই যাওয়া।
– মানে?
– (অপলার দিকে তাকিয়ে) মানে আমার মা বাবার জন্য তাদের ছোট ছেলের বউকে আনতে হবে না।
– (লজ্জা পেয়ে)তার জন্য এতদূর যাওয়া লাগে বুঝি?কাছেপিঠে খুঁজে নিলেই হয়।
– তাদের বউমাতো আর কাছে থাকে না,তাইতো যাওয়া লাগে।
– আচ্ছা।
– থেকে যাওনা এখনই,সারাজীবনের জন্য …..
– ধ্যত, তা হয় নাকি?
– হয় না কেনো?আমরা এখনই বিয়ে করে ফেলি।
– hmm তারপর বাসায় গিয়ে সবার বকা খাই?
– কেউ বকবে না উল্টে খুশি হবে।আর তুমি না বুঝলেও সবাই বুঝে আমরা একে অপরকে কত ভালোবাসি ।
– (আড় চোখে তাকিয়ে)আচ্ছা তাই….
– জি তাই।
– এরপর কোথায় নিয়ে যাবে?
– এরপর বাসায়।
– আজকের মত এখানেই শেষ তোমার ঘুরার পর্ব?
– তাই বলেছি নাকি?
– তাহলে?
– বিকেলে তোমাকে জীবন্ত স্বর্গে নিয়ে যাবো।
– সেটা কোথায়?
– তোমাকে বলেছিলাম না আমাদের একটা ছোট সংঘঠন আছে।
– হ্যা,বলেছিলে একবার মনে হয়।
– তার নামই জীবন্ত স্বর্গ।
– নামটা তো সুন্দর।
– hmm এইখানে একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে তার নামেই।
– বৃদ্ধাশ্রম!!
– hmm,তোমাকে ই, একদিন নিয়ে যাবো।
– (অন্যমনস্কভাবে)hmm
– কি হলো?
– কিছুনা।বাসায় যাবো।
– এখনই?
– অনেক রোদ।
– ঠিক আছে চলো।

দুপুরে খাওয়ার সময় টেবিলে একটা অচেনা মুখ দেখা যাচ্ছে।সবই ঠিক আছে তবে লুবনা খুব অসস্তি বোধ করছে। করবেই না কেনো?অচেনা একটা ছেলে বারবার আড় চোখে ওকে দেখছে। যার ফলে ওর খুব অসস্তি হচ্ছে।রেহনুমা আহমেদও চিনলেন না বাসায় গেস্ট আসলেতো বলতো।তাহলে কে?লিপি ওকেতো ঠিক চিনলাম না?দেখেছেন আণ্টি পরিচয় করিয়ে দিতেই ভুলেই গেছি।আমার ভাই এইখানে থেকে পড়াশুনা করে।রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে।ওহ আচ্ছা।আণ্টি খাওয়ার সময়তো সালাম দিতে হয়না তাই দিতে পারছিনা ।না বাবা ঠিক আছে,তোমার নামটাইতো জানা হলো না।আণ্টি আমার নাম রিজভী।রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে একাউন্টিং এ hon’s করছি এইবার 3rd year.মাশাআল্লাহ। এতদিনতো তোমাকে দেখিনি?আমি বাড়িতে গিয়েছিলাম।ভার্সিটি অফ ভেবেছিলাম কয়েকদিন থাকবো।কিন্তু মাহিম এসেছে শুনে চলে এলাম।বেশ করেছো বাবা এসে।ঠিকই বলেছেন আণ্টি এইখানে না এলেতো আর এমন পরির দেখা মিলত না।মনে মনে ভাবছে।

লুবনার অসস্তি বোধ বেড়েই চলছে।আর কারো দিকে এইভাবে তাকাচ্ছে না তো তাহলে আমার দিকে কেনো তাকিয়ে আছে?কিছু বুঝতে পারছিনা।লুবনা খাবার নাড়াচাড়া করছে কিন্তু কিছু খেতে পারছেনা।এইখানে আর বসে থাকতেও পারছেনা।তাই উঠে গেলো।অপলা জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?বলল,পেট ভরে গেছে।তাই আর কেউ কিছু বললো না।কিন্তু রিজভীর খুব মন খারাপ হয়ে গেল।বেশতো লাগছিল এতক্ষণ।পেট ভরে গেছে বলে সেও উঠে গেলো।মাহিম বাঁকা হেসে বলল,মামা আসছি আমি যাও।

রিজভী ঘরে এসে চুপ করে বসে আছে।মেয়েটা কে?নাম কি? তাও জানি না। আগেতো এইখানে দেখিনি?মাহিমদের আত্মীয় হবে হয়তো। তবে মেয়েটাকে বেশ লেগেছে তার।ভালো লেগেছে বললে ভুল হবে একদম হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।প্রথম দেখায় এতটা টাচ করে গেছে ভাবতেও শিহরণ খেলে যাচ্ছে।একেই বোধহয় love at first sight বলে।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here