তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৩৮ ৩৯

0
655

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:38

কী এত ভাবছিস? কিরে কানে কালা হলি কবে থেকে? আরে ব্যাটা তুই কি দিনে দুপুরে স্বপ্ন দেখছ?মাহিম একটার পর একটা বলেই চলেছে কিন্তু রিজভী সেতো এখন গভীর ভাবনায় মগ্ন।তার কান অব্দি মাহিমের কথা পৌঁছেচ্ছে না।মাহিমের এইবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙার উপায়।কিছু না ভেবেই খাটের পাশে রাখা পানির জগটা তুলে ওর মুখে এক জগ পানি ছুড়ে মারলো।রিজভীর মুখে পানি ছুড়ে মারতেই হকচকিয়ে উঠলো।কি করছিস মাহিম?তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো?আমার না তোর কানের মাথা গেছে।বাজে কথা ছাড়তো।আমি এখন ঘুমাবো?এএ তুই এখন ঘুমাবি?আর কি করবো? সত্যি কইরা ক তো তোর ব্যাপারটা কি?কি ব্যাপার থাকবে?খাবার টেবিলেও খেয়াল করলাম…. আরেরেরে না কিচ্ছু না। উহু কি হইছে কতো। কি আবার হবে!!আমার থেকে লুকাইয়া লাভ নাই,এখন বললেও বলতে হবে পরে বললেও আমাকেই বলতে হবে। আরে তেমন কিছু না।তাহলে কেমন কিছু??

লুবনা তুমি ঠিক আছ? হ্যা,আপু ঠিক আছি।তাহলে না খেয়ে চলে এলে কেন?পেট ভরে গেছে।পেট ভরে গেছে নাকি অন্য কিছু?অন্য কি হবে?সেটাইতো জানতে চাচ্ছি।আচ্ছা আপু তুমি খেয়াল করেছ?কি বলতো?লিপি আপুর ভাই কেমন করে যেনো তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। কেমন করে?জানিনা তবে আমার খুব অসস্তি বোধ হয়েছে। কই আমিতো তেমন কিছু খেয়াল করিনি।করবে কি করে তুমিতো মাহিম ভাইয়াকে ছাড়া আর কাওকেই দেখনা।অপলা লজ্জা পেলো,কি বলো না তুমি?ভুল কি বললাম শুনি?তোমরা দুজনই ঘুরতে যাও,কই আমাদেরতো নেও না?আমরাও তো বেড়াতেই এসেছি।ঠিক আছে আজকে তোমাকেও নিয়েও যাবো।বাব্বাহ,আজকে ঘুরার প্ল্যানও করে রেখেছ?hmm,তোমাকেও নিয়ে যাবো। সেটা তো আমি বলার পর,কিন্তু আপু আমিতো যাবনা। কেনো?বারে তোমাদের মাঝে আমি কাবাবের ,হাড্ডি হতে চাইনা।কি সব বল,কিছু হবেনা।আর আপু সবচেয়ে বড় কথা ভাইয়া কী ভাববে?ভাইয়া কিছু ভাববেনা। বলছো? হ্যা,বলছি। তা কোথায় যাওয়ার প্ল্যান?জীবন্ত স্বর্গে নিয়ে যাবে আজ।

তুই ওইভাবে তাকিয়ে ছিলি কেন? কই,কখন কার দিকে তাকিয়ে ছিলাম?মিথ্যা কথা বলবি না আমি কিন্তু সবই দেখেছি।অপরাধীর মতো কাচুমাচু করছে রিজভী। কি হলো বল?মামা আমিতো শেষ?কিরে রিজভী কি হইলো? মামা আমি মনে হয় ভালোবেসে ফেলেছি।কি আমার শালীকাকে?তোর শালী!তুই বিয়ে করলি কবে?করিনি করবো।কাকে? আরে ব্যাটা তোর সাথেতো পরিচয় করিয়ে দিতে ভুলে গেছি।বিকেলে পরিচয় করিয়ে দিব।মেয়েটা কে সেইটা আগে তুই বল। আরে খাবার টেবিলে দুইটা মেয়েকে দেখলিনা,আম্মুর পাশে…… রিজভী হকচকিয়ে,খাবার টেবিলে আন্টির পাশে মানে,এই একদম ওর দিকে নজর দিবি না।এই তুই কি আবার আমার স্বপ্নচারিণীর দিকে নজর দিচ্ছিস নাকি?তোর স্বপ্নচারিণী কে? ঐতো আম্মুর ডান পাশে যে মেয়েটা ছিল ঐটাই আমার স্বপ্নচারিণী।রিজভী সস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, বাচালি।মাহিম রেগে গিয়ে জানতাম কিছু একটা ব্যাপার আছে,খুঁজে খুঁজে তুই আমার শালিকাকে লাইন মারতে চাচ্ছিস।রিজভী এইবার একদম নরম হয়ে বলল,ওর নামটা কি?লুবনা। বাহ খুব সুন্দর নাম। হ্যা,এখন যা শুনবি সবই সুন্দর।এমন করছিস কেন?একটু হেল্প কর না….. আমি পারবোনা।এমন করিস না,আমি তোর একমাত্র বেয়াই,আমার কথাটা একবার ভাব।ঠিক আছে,বিকালে আমার সাথে যাবি?আমি আমার স্বপ্নচারিণীকে নিয়ে বের হবো।তোদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে?দূর ব্যাটা,তুই অপলাকে বলবি, ও ওর বোনকে বুঝাবে।ঠিক আছে যাবো।কিন্তু অপলা কে? আমার স্বপ্নচারিণী।

বিকেলে দুবোন রেডী হয়ে বের হবে তখন রেহনুমা আহমেদ ডাকলেন।কোথায় যাচ্ছিস তোরা?মা আমরা একটু ঘুরতে বের হচ্ছি।অচেনা জায়গা এত ঘুরাঘুরি করাটা কি ঠিক?মামী টেনশন করবেন না আমরা কাছাকাছি যাবো।টেনশন করবেন না বললেতো আর টেনশন চলে যায় না, তোরাতো কিছু চিনিস না। মা ভেবো না তো আমাদের সাথে মাহিম ভা..ই..ইয়া(প্রথমবার মাহিমকে ভাইয়া বলতে হেজিটেড হচ্ছে)সাথে যাচ্ছে।মাহিম সাইডেই ছিল।দাড়িয়ে সব দেখছে।অপলার হেজীটেশন দেখে খুব হাসি পাচ্ছে।হাসি চেপে এগিয়ে বলল,আণ্টি এত ভাবছেন কেনো?আমিতো আছি।আমার সাথেই যাবে।যাক বাবা নিশ্চিন্ত হলাম তুমি আছো।তবে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। সন্ধ্যার আগেই।জি আণ্টি অবশ্যই।আণ্টি আমরা বের হই? হ্যা,বাবা এসো।

ওরা বেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রিজভী আগের জায়গাতেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।সে অপলক দেখেই চলেছে লুবনাকে।মাহিম খেয়াল করলো রিজভী এখনো আগের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।তাই অপলা আর লুবনাকে এগিয়ে যেতে বলে সে রিজভীর কাছে গেলো।রিজভীর মাথায় চাটি মেরে বলল,বলদের মত দাড়িয়ে থাকবি নাকি যাবি? ও এত সুন্দর কেন?চোখই ফেরাতে পারি না।এইখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কল্পনা কর আর আমরা চলে যাই।মাহিম শোন তোরা যা,তুই ভাবীকে সব গুছিয়ে বলিস।তোদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তুই যাবিনা?নারে ওতো বাসায় থাকবে আমি ওকে দেখার সুযোগ ছাড়ছি না।আচ্ছা তাই বুঝি? হ্যা,তাই তুই যা।ঠিক আছে আমি না হয় শালী আর বউকে নিয়ে ঘুরে আসি। হ্যা,যা… কি শালী মানে? হ্যা, লুবনাও যাচ্ছে।তুই থাক আমরা গেলাম, টাটা। এইই না না দাড়া আমিও যাবো বলেই ছুটলো।

চলবে……………

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:39

অপলা আর মাহিম পাশাপাশি হাঁটছে আর লুবনা ইচ্ছে করে ওদের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে হাঁটছে।ওর খালি মনে হচ্ছে পিছনে কেউ আছে যে ওর পিছন পিছন আসছে।কিন্তু এইখানে কে আমাকে চেনে আমিতো এই প্রথম বের হলাম।তাহলে কে আমাকে ফলো করবে?প্রচন্ড ভয়ে পিছন ফিরে দেখতেও পারছে না কে ওকে ফলো করছে।তাই অনিচ্ছা স্বত্বেও সামনে এগিয়ে গেলো অপলার পাশাপাশি কিছুটা দূরত্ব রেখে হাঁটছে।কিন্তু তাতেও অসস্তি কমছে।

মাহিম কথা বলেই চলেছে।ওর যেনো কোনো ক্লান্তি নেই।অপলার ভালো লাগে ওর কথা শুনতে।সেই প্রথম দিন থেকেই ওর কথা শুনার জন্যইতো মরিয়া হয়ে থাকতো।কিন্তু ওর বারবার মনে হচ্ছে লুবনা কোনো কারণে disturbed,কেমন একটা জড়োসড়ো হয়ে আছে। তাই মাহিমকে থামিয়ে বললো লুবনার কিছু একটা হয়েছে,একটু দেখে আসি।অপলা লুবনার দিকে যাচ্ছে।সাথে মাহিমও।

অপলা লুবনার কাধে হাত রাখতেই চমকে গেলো।মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছে।লুবনা কি হয়েছে তোমার?অপলার দিকে তাকিয়ে সস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,আপু কেউ মনে হয় পিছন থেকে ফলো করছে।অপলা পিছনে তাকালো। কই পিছনেতো কেউ নেই। লুবনাও তাকালো।আসলেইতো কেউ নেই।তাহলে এইরকম কেনো মনে হলো?হটাৎ লুবনা সামনে তাকাতেই মাহিমের পাশে একটা উদ্বিগ্ন মুখ দেখতে পেলো।সে আর কেউ না লিপি আপুর ভাই।লুবনা আস্তে করে বলল,আপু ওই ছেলেটা এইখানে?অপলা হাসলো।মাহিমতো এতক্ষণ রিজভী ভাইয়ার কথাই বলছিলো,তুমি শুননি?আমি তোমাদের থেকে দূরত্ব রেখে হাঁটছিলাম তোমাদের কথা যাতে না শুনতে পাই।মাহিম কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই রিজভী ওকে থামিয়ে বললো,sorry আমি লেট করে বের হয়েছিতো তাই পিছন পিছন আসছিলাম।আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতটা ভয় পেয়ে যাবেন।লুবনা কিছু বললো না।ওর অসস্তি বোধ আরও বেড়ে গেলো।মাহিম বলল,কি শালীকা এখন ভয়টা কমেছে?এইটা আমার বন্ধুর মত বেয়াই।so tension এর কিছু নেই কেমন?লুবনা মাথা ঝাঁকাল ঠিক আছে।

ওরা ক্লাবের কাছাকাছি চলে এসেছে।মাহিম হাতে ইশারা করে বললো,ঐটাই আমাদের ক্লাব। অপলা বুঝে পাচ্ছে না এইটা কেমন সংগঠন।কয়েক জন বসে আছে।মনে হচ্ছে কোনো পরিত্যক্ত বাড়ি না হয় কোনো পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ।তবে জায়গাটা বেশ গুছানো আর পরিষ্কার।উপরে ট্রিপাল টাইপ কিছু দেওয়া আছে সম্ভবত রোদ বৃষ্টি থেকে বাঁচার ক্ষুদ্র প্রয়াস।তার পাশেই একটা টং দোকান।দোকানটা ছোট তবে বেশ লোকজনের আসা যাওয়া লেগে আছে বুঝাই যাচ্ছে।অপলা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে জায়গাটা।পুড়ে যাওয়া দেয়ালের একটা অংশে ছোট একটা বোর্ড টাঙানো।তাতে লিখা জীবন্ত স্বর্গ।চলো ভিতরে।অপলা হাসলো,hmm চলো।

ক্লাবের সামনে মাহিম দাড়িয়ে আছে দেখলো রুদ্র। ও খুব অবাক হলো মাহিমের পাশে একটা মেয়ে,সে মেয়েটার পাশে আরো একটা মেয়ে।রিজভীকেও দেখা যাচ্ছে।মাহিম তো মেয়েদের সাথে কথাও বলে না আর সেখানে সাথে দুইটা মেয়েকে নিয়ে এলো??এলো যখন তখন বাহিরে এমন করে দাড়িয়েই বা আছে কেনো?রুদ্র সজিবকে ডাকলো,ইশারায় মাহিমকে দেখলো।রুদ্রর মত সজীবও খুব অবাক হল।মাহিমকে ভিতরে আসতে দেখে দুজনই চুপ করে আছে।দেখার জন্যে মাহিম কি করে।আর ক্লাবে এখনও সবাই এসেওনি।ওরা দুজনই আছে।

মাহিম ওদেরকে নিয়ে ভিতরে গেলো।রুদ্র আর সজীব খুব অবাক হল মুখে যেনো কথা আটকে গেছে,কারণ মাহিম একটা মেয়ের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে আসছে।মাহিম ওদেরকে ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও অবাক হলো।কিন্তু অবাক হওয়ার কারণ বুঝতে বেশিক্ষণ লাগলোনা ।অপলা আলতো করে হাতটা ছাড়িয়ে নিল।তখনই বুঝলো রুদ্র আর সজীব এর অবাক হওয়ার কারণ।নিজেকে সামলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলল,সবাইকে বিকালে আসতে বললাম শুধু তোরা দুজন বাকিরা কোথায়?ওরাও এসেছে তুই হয়তো মিন্টু ভাইয়ের দোকানে খেয়াল করিসনি,রুদ্র বলল।খেয়াল করবে কেমনে বুঝিস না?সজীব বলল।অপলার খুব লজ্জা লাগছে।মাহিম খেয়াল করল সেটা।

এরমধ্যেই অন্তর,সাগর,অর্পণ,সবাই একসাথে ঢুকলো ক্লাবে।কি বন্ধু এতদিনে আমাদের কথা মনে পড়লো?সাগর বললো।মাহিমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অন্তর বলতে শুরু করল,আরেরে বন্ধু আমাদেরকে যে মনে করেছে এই অনেক। বুঝতেছ না ব্যাপারটা!!সজীব পাশ থেকে বলে উঠলো, বন্ধু এখন ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে। সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো ।অপলা প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছে।খুব এমব্রেসিং লাগছে।মাহিম কিছুটা জোর গলায় বললো,আমার সাথে দুজন গেস্ট আছে।যাদের তোরা চিনিস না আর তাদের সাথেই তোরা এমন শুরু করলি?রুদ্র এগিয়ে এসে বলল,বন্ধু রাগ করছিস কেন?কতদিন পর তুই ক্লাবে এলি তাই একটু মজা করছিলাম।এইবার রুদ্র অপলা আর লুবনার দিকে তাকিয়ে sorry বলল।ওরা দুজনই আলতো হেসে বলল, it’s ok।এতক্ষণ অর্পণ চুপ ছিল এইবার সে বলল, মামুর বেটা তুই একটু বেশীই বুঝিস।ওনারা ঠিকই বুঝলো আর তুই কিনা রেগে যাচ্ছিস।আর রিজভীকে দেখ সেতো এইখানেই নেই কি এত দেখছে? মাহিম সত্যিই রেগে গেছে।তাই মাহিমকে স্বাভাবিক করতে অপলা বলল,জীবন্ত স্বর্গে যদি আনন্দ হাসি ঠাট্টা নাই থাকে তাহলে সেটা কি আর স্বর্গ থাকে??
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here