তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৫৬ শেষ পর্ব

2
4050

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:56(শেষ পর্ব)

কাধের উপর কারো হাতের ছোঁয়া পেল মাহিম।পিছন ফিরে তাকালো।ওর সময়টা যেনো থেমে গেছে।অপলা ওর পাশে বসল।কিন্তু মাহিমের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সত্যিই ওর চোখ দুটো থমকে গেছে।মাহিমের চোখ যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না এ কাকে দেখছে ও!!মনে হচ্ছে স্বর্গের কোনো অপ্সরা ভুল করে মর্তে নেমে এসেছে।আলতো করে অপলার একটা হাত স্পর্শ করলো।অপলা বার কয়েক ওর দিকে তাকালো।মাহিম যেনো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে।অপলা জানে মাহিম কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু অপলা চায় না মাহিম আর ওর মধ্যে হারিয়ে যাক।এতে দুজনেরই কষ্ট বাড়বে।অপলা পানির দিকে তাকালো।সূর্যের লালচে আভা পানিতে পড়ছে।ওর ঠিক সেই কল্পনার মত।

সূর্যটা ডুবি ডুবি করেছে।পৃথিবীটা লালচে আলোয় ভরে গেছে।এক সময় রক্তিম সূর্যটা নীল আকাশ এর বুকে লুকিয়ে গেলো।চারদিকে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে।নদীর পাড় ঘেঁষে বসে আছে ওরা দুজন।মাহিম অপলার হাতটা আলতো করে ছুয়ে দেওয়ার মতো করে ধরে আছে।একে অপরের দিকে গভীর ভালোবাসায় চেয়ে আছে।যেনো চোখ সরালেই সবটা হারিয়ে যাবে।

না এইটা ওর কল্পনা না সত্যিই ঘটছে।সত্যি সত্যি আজ চোখ সরানোর পর হয়তো সবটা হারিয়ে যাবে।অপলা আর ভাবতে চায় না।অপলা হাতটা সরিয়ে নিল।মাহিম এইবার যেনো বাস্তবে ফিরে এলো কিন্তু কিছু বলছে না।কথা শুরু করল অপলা,
– কি বলার জন্যে ডেকেছো?
– (অপলার দিকে তাকিয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না)
– কিছু বলছো না কেনো?
– তোমার থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না কী বলবো?
– (খানিকটা লজ্জা আর বিব্রত হলেও সামলে নিল)কাল থেকে খাওনি কেনো?
– তোমার এই কষ্ট আমি দেখতে পারছি না আর তার মধ্যে বাবা…
– কি??
– তেমন কিছু না।
– বলবে না?
– আসলে বাবা একটু বেশি ভাবছে…
– কিরকম বেশি?
– তেমন কিছুনা ছাড়ো।কয়েকদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।
– না ঠিক হবে না।
– কি বলছ?
– আংকেল কি বলেছে আমি সবটা জানি।আংকেল তো ভুল কিছু বলেনি।
– তুমি কি জানো?
– যা তুমি জানো।
– (অবাক হওয়ার চেয়ে শক বেশি হলো,নিশ্বাস যেনো আটকে আসছে)তুমি কি জানো আমি জানিনা।কে কি জানে আমি তাও জানতে চাই না।শুধু জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর এইটাই সত্যি।
– (অপলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো)আমি জানি তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো।
– (ভিতরে আটকে যাওয়া নিশ্বাস ফেলল)অপলার হাতের উপর আলতো করে হাতটা রাখল।
– আমার একটা কথা রাখবে?
– কি কথা একবার বল,তোমার জন্য সব করতে পারি।
– (যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো)আমাকে ভুলে যাও আর তোমার বাবা যাকে বলবে তাকে বিয়ে করবে কথা দেও!!
– (কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।ওর জীবনে এর চেয়ে বড় ধাক্কা আর কিছু হতেই পারে না)
– কথা দাও….
– আমি পারবো না।
– তুমি যদি আমাকে সত্যি ভালোবাসো তবে তোমাকে আজ এই কথা দিতে হবে।
– (অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)আমি পারবো না।আমি কখনোই তোমাকে ভুলতে পারবো না।
– না পারলেও তোমাকে পারতে হবে আর অবশ্যই আংকেলের কথা মেনে নিতে হবে।
– (অপলার হাত আরো শক্ত করে ধরলো)আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে মানতে পারবো না।
– (নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছে)আমার জন্য তোমাকে পারতে হবে।
– অপলা তুমি আমার শুধু আমার,তুমি আমার স্বপ্নচারিণী।
– আজকের পর তো আর কখনো আমাদের দেখা হবে না একটা গান শুনাবে শেষবারের মত।
– (দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল,ছেলেদের কাদতে নেই তাই খুব গোপনে চোখের পানিটুকু মুছে নিলো)ধরে আসা গলায় গান ধরলো,
আমার আঁধার রাতের স্বপ্নচারিণী নাই বা প্রিয়
আমার বিনিদ্র রাতের পাথেয় স্বরূপ অঙ্গীকারটুকু হেয়ো….

মাহিমের গলাটা ধরে এলো।মাহিম আর গান গাইতে পারবে না।ছেলেদের কান্না করা বারণ সে নিয়ম ভেঙ্গে অসহায়ের মতো অপলার দুহাত ঝাপটে ধরে কাদছে।অপলার চোখেও পানি।দুজন দুজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কিন্তু মুখে কারো কোনো কথা নেই।

৬বছর পর….
আজ অপলার অনার্স এর রেজাল্ট বের হয়েছে।ওর রেজাল্ট বরাবরই ভালো।1st class পেয়েছে।বাসায় ফোন করে জানিয়েছে,সবাই খুব খুশি।অনেকদিন পর আজ সবাই ভার্সিটি ক্যাম্পাসে এলো ভালোই লাগছে অপলার।সবই আজকে ভালো হল।কিন্তু হঠাৎই মৌনতা বলে বসলো সেই পার্কে যাওয়ার কথা।এই পার্কে যে মাহিমের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।সব ভালোর মাঝেও কেমন উদাস হয়ে গেলো অপলা।এত বছর পরও যে মাহিমের শূন্যতা তার ভিতর হাহাকার করে উঠছে।ওর মাথা ঝিমঝিম করছে।কাওকে কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল অপলা।সে চায়না মাহিমের কোনো স্মৃতি নিয়ে ভাবতে।এতগুলো বছরে একবারও মাহিমের সাথে দেখা হয়নি কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্য ভুলে থাকতে পারেনি মাহিমকে।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বাগানে চলে গেল।বড্ড বেশি শূন্য শূন্য লাগছে।এক কাপ চা হলে ভালো হতো মাথাটাও ধরে আছে খুব।কিন্তু অপলা উঠলো না।কারণ দীর্ঘ ৬বছর পর ওদের বাড়ির গেট দিয়ে দুটো চেনা মুখকে ডুকতে দেখলো।লিপি আপু আর মোহন ভাইয়া।ভাইয়ার হাতে অনেকগুলো কার্ড।অপলা থমকে গেল।নিজেকে আড়াল করে বাগানে বসে রইলো।প্রায় মিনিট বিশেক পর উনারা বেরিয়েও গেলেন।

তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লুবনা ছুটে এলো ওর হাতে একটা কার্ড।অপলা লুবনার দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।লুবনা কিছুটা হুংকার দেওয়ার মত করে বলল,আপু জানো কারা এসেছিল?অপলা ছোট করে বলল,না।লিপি আপু আর মোহন ভাইয়া।অপলা আবার ছোট করে ওহ বলল।আপু তাকাও আমার দিকে।অপলা তাকালো।জানো কেনো এসেছিল জানো?মাহিম ভাইয়ার বিয়ের কার্ড দিতে।অপলা এইবার ওহ বলল।লুবনা নিরাশ হওয়ার মত করে বলল,আপু তোমার কষ্ট হচ্ছে খুব আমি জানি,ভাইয়া মোটেও এইটা ঠিক করছে না।অপলা কার্ডটা একবার বের করে দেখে আবার রেখে দিল।সবটাই ঠিক আছে লুবনা আমাকে একটু একা থাকতে দিবে!অপলার এই অনুনয়ের সুর শুনে লুবনার চোখ ভিজে গেল সাথে সাথেই চলে গেল সে।অপলা টেবিলে মুখ গুঁজে ডুকরে কেদে উঠল।

আজ মাহিম আর আমি নিঝুমের বিয়ে।হয়তো এতক্ষণে বিয়েটাও হয়ে গেছে।অপলা নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে ডাইরিটা নিয়ে বসলো প্রায় ৬বছর পর।

আমার জীবন

“জীবনের শুরু হয় নানারকম ঘটনার
ঘনঘটা নিয়ে,
জীবনের পরিণতি ব্যাথা আর বেদনার
শোধ তাপ দিয়ে।”

মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী।মানুষ পৃথিবীতে আসে,অল্প কিছুদিন বাঁচে।এর মাঝে ঘর সংসার করে।কত স্বপ্ন দেখে।আবার কারও কারও সেসবের সুযোগও হয়না।হয়তো আমার জীবনটাও তেমনই।এইসব স্বপ্ন দেখা বারণ বা ভুল।আমার জীবনের শুরুই হয়েছিল দুঃখ দিয়ে।আমি জীবনে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।কিন্তু সুখ পাইনি।জীবনের ক্ষানিকটা সময়ের জন্য হলেও মাহিম সুখের বার্তা নিয়ে এসেছিল।কিন্তু সুখ যে আমার জন্য না।আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের এবং সুখের দিনে আমি মাহিমকে পেয়েছি।আমার জীবনটাকে আমি নতুন করে ভাবতে পেরেছি শুধু মাত্র মাহিমের জন্য।ওর সেদিনের সেই শেষ কথাটুকুই আমার বেচেঁ থাকার অবলম্বন হয়ে রইলো।অপলা তুমি আমার শুধু আমার,তুমি আমার স্বপ্নচারিণী।

অপলা আর লিখতে পারছে না।ওর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখ দুটো বন্ধ করে জড়ানো গলায় বললো,হ্যাঁ,হ্যাঁ,হ্যাঁ আমিই মাহিমের স্বপ্নচারিণী,ছিলাম,আছি আর থাকবোও।হোক কল্পনায় তবুও তো মাহিম আমার।
………সমাপ্ত……….

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3

2 COMMENTS

  1. এই গল্পটা খুবই সুন্দর ছিল খুব সুন্দর একটা এন্ডিং আসা করেছিলাম কিন্তু হুট করে সব বদলে গেলো ,এমনটা আশা করিনি আমি ঘরে একা থাকি তাই গল্পঃ আমার নেশাতে পরিণত হয়েছে ।যেহেতু গল্পঃ গুলো লেখই আমাদের দারুন কিছু অনুভূতি দেওয়ার জন্য তাহলে এমন বিচ্ছেদ কেনো?আমি কাল থেকে ঘুমাতে পারিনি খুব কষ্ট হচ্ছে জানিনা কেনো, ও ওকে স্বপ্নে দেখতো আর বাস্তবেও পেয়েছে এর অর্থ ওদের বন্ধন ওপর থেকে ঠিক ছিল তাহলে এভাবে বিচ্ছেদ কেনো আমি সহ্য করতে পারছিনা এটা আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলাম তাই বোধয় মেনে নিতে পারলাম না ।ভালোবাসা মানেই কি বিচ্ছেদ জরুরি? আসা করি সেশন 2দেবে সাথে কোনো মিরাকেল ।plz অপেক্ষায় আছি ।কেমন দম বন্ধ অনুভুতি 😣😣

Leave a Reply to Titikkha saha Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here