তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৮ ৯

0
1399

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:8

মাহিম এর চোখ দুটো দ্বিধায় পড়ে গেলো।আমি আবার জেগে স্বপ্ন দেখছি নাকি?চোখ দুটো কটোর থেকে বের হয়ে যাবে যেভাবে ফোনের স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে আছে।তাকাবেই না কেনো?স্ক্রীনএ স্বপ্নচারিণী ভেসে উঠেছে।মানে তার স্বপ্নচারিণী কল করছে।সেকি কখনো ভেবেছিল তার স্বপ্নচারিণী তাকে কল করবে বা করতে পারে!!সে অবাক তো হবেই। এইসব ভাবতে ভাবতে ই তাড়াহুড়ো করে ফোনটা রিসিভ করল।

-আস্সালামুআলাইকুম!
-ওয়ালাইকুমুসালাম!
-মনে হচ্ছে ভুল করে দিয়ে ফেলেছেন।প্লিজ তবুও বলবেন না ভুল করে দিয়েছেন।
-একদম তা নয়।
-সত্যি!!
-হ্যা,কেনো আমি কি ডিস্টার্ব করলাম?
-কখনোই না।বরং করলে খুশী হতাম।
-(কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা,খুব অসস্তি হচ্ছে,কেনো যে কল করলাম?কি বলবো এখন?)
-কিছু বলছেন না……
-আসলে আপনি ঢাকায় আসবেন বলেছিলেন তাই আরকি খোঁজ নিতে…
-(অপলা কে কথা শেষ করতে না দিয়েই বলল)খোঁজ নিতে কল করেছেন।এই তো?
-হ্যা।
-এতে এত হেজিটেশন করার কিছু নেই তো।
-hmm.
-কেমন আছেন আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ,আপনি?
-আলহামদুিল্লাহ।
-আপনি ট্রান্সফার হয়েছেন?
-ওহো, বলাই হলো না।হ্যা,হয়েছি।আমি এখন ঢাকায়।
-কবে আসলেন?
-এইতো আজই।
-কোথায় উঠেছেন?(জিজ্ঞেস করেই লজ্জায় পরে গেলো।এইসব কি বলছি..কি ভাববে এখন)
-ইচ্ছে ছিলো হোস্টেল এ উঠবো।তবে আমার মায়ের এক কথা ঢাকায় থাকতে হলে বোনের বাড়িই থাকতে হবে।তাই আর কি করার বোনের বাড়িই উঠেছি।
-আচ্ছা।
-আপনার পড়াশুনা কেমন চলছে?
-চলছে একরকম।
-মন দিয়ে পরবেন।ভালো রেজাল্ট করতে হবে তো!
-জি অবশ্যই।
-আপনি কি সবার সাথে এইভাবেই কথা বলেন?
-কিভাবে??
-এই যে জি,অবশ্যই,hmm, আচ্ছা।
-(অপলা খুব লজ্জা পেলো)আসলে আমি কারো সাথে খুব একটা কথা বলি না তো তাই বুঝতে পারিনা কি বলবো?sorry.
-no,no it’s ok.sorry বলার মত কিছু হয় নি।বরং শুনে ভালো লাগলো আপনি কারো সাথে কথা বলেন না তবুও আমার খোঁজ নিলেন।সত্যিই খুব ভালো লাগছে।
-(আবারও লজ্জায় পড়লো,কি বলবে এখন?)
-সত্যি বলতে আপনার সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে।কেমন যেন ভালো বলে বুঝানো যাবেনা।
-(আমার ও তো ভালো লাগে।কেনো লাগে?)কেনো?
-তাতো জানিনা।কেনো আপনার কি বিরক্ত লাগে?
-না।
-একটা কথা বলবো?যদি কিছু মনে না করেন…
-(অবাক হয়ে) কি কথা?
-কিছু মনে করবেন না তো?
-বলুন।
-আমরা কি দেখা করতে পারি??
-কেনো?
-এমনি।ধরুন আমি আপনাকে হেল্প করেছি তার জন্য না হয় কৃতজ্ঞতা থেকেই।
-ভেবে দেখবো।
-ভাবতে হবেনা। আমিই আপনাকে খুঁজে নিবো।আমার জন্য আলাদা করে সময় বের করতে হবে না।
-বুজলাম না?
-simple,আপনার কলেজের সামনে বা আপনার আসার যাওয়ার পথে কোথাও আমাদের দেখা হলো তখন আপনি আমার সাথে এক কাপ কফি খেলেন।
-আমার ক্যাফে বা restaurant ভালো লাগে না।তারমানে দেখা হলেও কোথাও যাওয়া হবেনা।
-(মন খারাপ হয়ে গেলো)তাহলে খোলা আকাশের নিচে কোথাও একটা বসলাম বা একসাথে কিছুক্ষণ পাশাপাশি যদি হাটি?
-কথা দিতে পারছিনা।যেদিন দেখা হবে সেদিন ভেবে দেখবো।
-খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে।হয়তো এই week এ।
-সে তখন দেখা যাবে।
-দেখবে কাল থেকেই তুমি তোমার চারপাশে আমাকেই খুঁজবে এই বুঝি এলো।
-কখনই না।
-দেখা যাবে।খুব শীঘ্রই।see you soon.
-hmm. আজ রাখছি।
-এখনই?
-অনেকক্ষণ তো হল।আমি আমার সারাজীবনে ও এত কথা কারো সাথে বলিনি।
-I’m so lucky.
-(না আর কথা বলা যাবেনা)রাখছি।বলেই কেটে দিল।

অপলা ফোনটা হাতে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে এখনও ভাবছে কি হচ্ছে আমার সাথে?আমিতো এমন না।তাহলে হটাৎ এ পরিবর্তনের মানে কি?আমি কি কোনো ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছি?না দুদিনের আলাপে কারো প্রতি দূর্বল হওয়া যায় নাকি?সত্যিই যদি দেখা হয়ে যায় কি করবে ও? ধেত এত কেনো ভাবছি আমি?কে ওই ছেলেটা?না না এত ভাবা যাবেনা।এইসব আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল নিজেও জানেনা।

কি হলো?সত্যিই কেটে দিল? ফোনের দিকে তাকিয়ে নিজেই বলছে কাটবে নাই বা কেনো,আমারতো সারাদিন কথা বললেও কথা শেষ হবেনা।আমার স্বপ্নচারিণীর নাম টা যেমন অদ্ভুদ মানুষটাও তেমন।তবে খুব মিষ্টি।আমার ভালোবাসা দিয়ে সবটা বদলে দিবো।খুব বেশি দেরি নেই সেদিন আসতে।তুমি তো আমার শুধুই আমার। আমার স্বপ্নচারিণী। খুব ভালোবাসি তোমায় স্বপ্নচারিণী ।

চলবে…….

 

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:9

লুবনা এই প্রথম ঢাকায় এসেছে।সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে।তবে সেটা কাউকে বুঝতে দিচ্ছেনা।বেশ সহজেই সব কিছু বুঝে নিচ্ছে।না বুঝলেও সামলে নিচ্ছে।কথার মাঝে কিছু গ্রাম্য টান চলে আসে ওর।চেষ্টা করে সেটাও যেনো না আসে।খুব গুছানো চটপটে মেয়ে বটে লুবনা।

লুবনা সারাদিন করার মতো কিছু থাকেনা।ওর খুব বিরক্ত লাগে।কিছু একটা করতে পারলে ভালো হতো।তাই ভেবে রান্নাঘরে গেলো।কিন্তু করবেটা কি? ও ভালো পিঠা বানাতে পারে।তাই ও ভাবলো তাই করি।রহিমাকে(কাজের মেয়ে)বলল চালের গুঁড়ো আছে কিনা?
রহিমা বললো আছে, আছে, তয় আফনে কি করবেন?কিছু খাইলে কন আমি কইরা দেই।না না রহিমা তোমাকে কিছু করতে হবে না।আসলে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হচ্ছি।তাই ভাবলাম কিছু একটা করি।রহিমা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,আফা ভুলেও কিছু করতে যাইয়েন না।আফায় হুনলে আমারে বকবো।লুবনা আশ্বাস দিলো,ভয় পেয়েও না,আপু তোমাকে কিছু বলবেনা।তুমি চালের গুঁড়ো টা বের করে দেও।

লুবনা পিঠা বানাচ্ছে।নকশী পিঠা।রহিমা পাশে দাড়িয়ে দেখছে।হাতে হাতে সাহায্যও করছে।কি নিখুঁত নকশা,কি সুন্দর নকশা করছে।রহিমার লুবনাকে খুব মনে ধরেছে। ও মাঝেমাঝে এখন ভাবে একই বয়সের দুইটা মেয়ে অথচ কতো আলাদা দুজনে!

অপলা কলেজ যাওয়ার জন্য বের হলো।গাড়িতে উঠার আগে নিজের অজান্তেই চারপাশে এলোমেলো চোখে তাকাচ্ছে যেনো কিছু খুঁজছে।ড্রাইভার ডাকে ঘোর কাটে।আপা গাড়িতে উঠেন।অপলা কিছু একটা ভাবলো।তারপর বলল আমি গাড়িতে যাবেনা আজ।ড্রাইভার এর কন্ঠে উৎকণ্ঠা,আপা sir জানলে রাগ করবেন।আমি যখন বলেছি যাবনা তখন তোমাকে কেউই কিছু বলবেনা।বলে সামনের দিকে পা বাড়ালো। উদ্দেশ্য রিকশা খোঁজা।সামনে এগুতেই রিকশা পেয়েও গেলো।রিক্সায় উঠার পরও ওর চোখ দুটো যেনো কিছু একটা খুজেই চলেছে।কি খুঁজছে ও?

কলেজে পৌঁছেও তার চোখ দুটো স্থির নেই।বিরামহীন ভাবে এদিক সেদিক খুজেই চলেছে।কখন থেকে মৌনতা এইসব দেখছে।কিন্তু অপলাতো মৌনতাকে দেখেইনি।দেখবে কি করে ওর চোখ তো আর মৌনতাকে খুঁজছে না।খুঁজছে অন্যকাউকে!!মৌনতা অনেকক্ষণ দেখলো না এই মেয়েতো এইখানেই নেই।ডাকলো উহু খবরই নেই ও ওর মতো এদিক সেদিক দেখছে আর হাঁটছে।এইবার গিয়ে হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বললো,কি খুঁজিস তুই?কখন থেকে ডাকছি?অপলা পর পর কয়েকবার পলক ফেলে যেনো সবেই ঘোর কাটল।এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?তুই আমাকে কখন ডাকলি?হুহ সেই তোকে কখন ডাকবো?অপলা কি বলবে ভেবে পায়না।তাই বলল, চল ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে অকারণে দাড়িয়ে না থেকে ক্লাস এ চল।মৌনতা হা করে তাকিয়ে আছে,আমি কখন অকারণে দাড়িয়ে এ ছিলাম ছিল তো নিজে এখন আমার দোষ?এইভাবে হা করে থাকলে মাছি ডুকবে চল ক্লাসে।মৌনতা এইবার আর হজম করতে পারলো না।বললো,তোর তো দেখি মুখে বুলি ফুটছে,এত উন্নতি কি করে?অপলা লজ্জা পেয়ে গেল।আসলেইতো ওর এত change কি করে?কথা না বাড়িয়ে ক্লাসে ঢুকলো।ক্লাসেও তার আজ মন নেই।বড্ড আনমনা হয়ে গেছে ও।সব ওই ছেলেটার জন্য।না এইভাবে চলতে পারে না।

কোনো রকমে ক্লাসটা শেষ করে বের হয়ে আবার সেই একই অবস্থা।তার চোখ দুটো যেনো কিছু খুজেই চলেছে।কিন্তু কেন খুঁজছে? কাকেই বা খুঁজছে?মৌনতা শুধু দেখছে। ও বুঝছে না হলো কি এর?প্রেমে টেমে পড়লো নাকি? নাহ কিছু একটা তো ঘটেছে।

অপলা বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ভাবলো একটু বাগানে যাবে।ওখানে বসে চা খাবে।রহিমাকে চা দিতে বলে বাগানে গেলো।বাগানে ছোট একটা টেবিল আর চেয়ার পাতা আছে।ওখানে বসে ওর মা বাবা বসে চা খায়।বিকালে বসে সময় কাটায়। আপলাও বসে প্রায়ই।তবে সেটা সন্ধ্যার কিছু আগে।ওই সময়টা ওর খুব প্রিয়।না অন্ধকার না আলো।চারপাশে এক লালাভ ভাব থাকে।কেমন যেন একটা মিল আছে ওর সাথে।ওর জীবনটাও তো কিছুটা আলো আর আঁধারের মাঝেই।

ও টেবিল এ তাকিয়ে খুব সুন্দর নকশা করা পিঠা জাতীয় কিছু পাতলা কাপড় দিয়ে ডেকে রাখা।রহিমা চা নিয়ে এলো।রহিমা ভয়ে কয়েকবার ঢোক গিলল,না জানি আফায় কত রাগ করছে।চা টেবিল এ রেখে আমতা আমতা করে নিজেই বলল,এইগুলান লুবনা আফায় বানায়ছে।আমি তারে অনেক……..।কথা শেষ করতে না দিয়ে অপলা বলল,তুমি লুবনাকে এইখানে আসতে বল।আর এক কাপ চা দিয়ে যেও।জি আফা।

অপলা আপু ডেকেছো?লুবনার দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে বলল,দাড়িয়ে কেনো বসো।লুবনা বসলো। এর মধ্যেই রহিমা চা দিয়ে গেলো।অপলা বলল,তুমি এইগুলো বানিয়েছো?লুবনা বলল, হ্যা আপু।তুমি কি রাগ করেছো?না রাগ করিনি। মা বাবা শুনলে কষ্ট পাবে। তোমাকে কোনো কাজ করতে হবে না।পড়াশুনা শুরু করো।বাবা এসেই তোমাকে কলেজে ভর্তি করে দিবে।লুবনা বিমর্ষ মুখে বলল,আমি গ্রামে বড় হয়েছি,কাজ না করলে ভালো লাগে না।তোমার কি পছন্দ হয়নি? পছন্দ হয়েছে আর সত্যিই খুব সুন্দর হয়েছে।তোমাকে হয়তো ওভাবে বলা ঠিক হয় নি,sorry. আপু কিসের sorry? sorry বলার মত কিছু হয় নি।আচ্ছা শোন তুমি তোমার মত করেই থাকো।যা করতে ভালো লাগে করো তবে হ্যা পড়াশুনাটা যেনো ঠিক থাকে।না হয় বাবা কষ্ট পাবে।লুবনা খুব খুশি হয়ে বলল,আচ্ছা আপু তাই হবে।এখন আমি যাই?hmm যাও।

চলবে……..

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here