তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-১০ ১১

0
1100

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:10

ভীষন মন খারাপ নিয়ে বাগানে বসে আছে অপলা।কিছুই ভালো লাগছেনা তার।হাতে মোটে এক মাস সময়ও নেই এক্সাম শুরুর।আর এদিকে ওর পড়ায় মন নেই।নিজের অজান্তেই কিসব ভাবে।ভিতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তা ও নিজেও বুঝে।বুঝেই কি লাভ ও নিয়ম করে পড়তে বসে। কিন্তু মন বেশিক্ষণ পড়ায় ধরে রাখতে পারেনা,কি যে হয় বুঝেনা।

বাগানে বসে থাকতে থাকতে হটাৎ ওর মনে এক অদ্ভুদ কল্পনার উদয় হয়।

সূর্যটা ডুবি ডুবি করেছে।পৃথিবীটা লালচে আলো ভরে গেছে।এক সময় রক্তিম সূর্যটা নীল আকাশ এর বুকে লুকিয়ে গেলো।চারদিকে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে।নদীর পাড় ঘেঁষে বসে আছে ওরা দুজন।মাহিম অপলার হাতটা আলতো করে ছুয়ে দেওয়ার মতো করে ধরে আছে।একে অপরের দিকে গভীর ভালোবাসায় চেয়ে আছে।যেনো চোখ সরালেই সবটা হারিয়ে যাবে।মাহিম বলল,তুমি কাছে থাকলে যেনো পৃথিবীটাই বদলে যায়,সমস্ত ভালো লাগারা যেনো আমাকে ছুয়ে যায়।তোমার হয়না এমন……………………………….

আফা ও অপলা আফা।(রহিমার ডাকে অপলা বাস্তবে ফিরে এলো।কিসব ভাবছি আমি,তবে মন ভালো লাগছে।কিন্তু প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে এখন)।রহিমা হাপাতে হাপাতে এসে অপলার সামনে দাড়ালো।কোনো রকমে বললো,আফা আপনে এনে?পুরা বাড়ি খুঁজলাম আপনারে।অপলা বিরক্তি নিয়ে বললো,কেনো খুঁজছে?বড় সাব ফোন করেছিলো।আপনারে ফোনে না পাইয়া ল্যান্ড লাইনে ফোন করছিলো।বাবা ফোন করেছিলো ডাকোনি কেনো?সেই কখন থিকা ডাকতাছি,আপফানারে আর খুঁইজ্জা পাইনা।পড়ে কাইটা দিছে।কি বলেছে বাবা?কবে আসবে?কইলো তো আরো এক হপ্তা মতন থাকবো।আচ্ছা তুমি যাও।জি আফা।আর শোনো এক কাপ চা দিয়ে যাও। জে আফা আমি অহনই আফনার লাইগ্গা লাইগা এক কাপ ফাস কেলাছ চা লইয়া আইতাছি।বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি যাও। জে আফা।

সেদিনের পর আজ দুদিন কলেজ যাওয়া হয়নি।মৌনতার সামনে খুব লজ্জায় পড়েছিল।তবে এইভাবে তো বাসায় বসে থাকা যায়না।তাই কাল কলেজ যাবে বলে ঠিক করে।চা দিতে এলে রহিমাকে ওর ফোনটা দিয়ে যেতে বলে। ফোন টা দিয়ে যাওয়ার পর মৌনতাকে ফোন দিয়ে বলে কাল কলেজ যাবে।

এ কয়দিন মাহিমের খুব প্রেসার যায়।নতুন জায়গা নতুন ভার্সিটি।ভার্সিটির হাজারটা formalities সব আজ শেষ করে একটু ফ্রি হলো।এইবার তার স্বপ্নচারিণীর সামনে যাওয়ার সময়।চমকে দিবে তার স্বপ্নচারিণীকে।আচ্ছা আমি কী খুঁজে পাবো ওকে?আমি গেলেই কি আমার সাথে কথা বলবে?না বলুক আমি হার মানবো না। কালই যাবো কলেজে।আর দেরি করা যাবেনা।

পরদিন অপলা কলেজ যাওয়ার জন্য রেডী হয়ে বের হলো।আজ সকাল থেকেই ওর মনটা খুব ভালো।হালকা নাস্তা করে বের হলো।আজও রিক্সায় যাবে ঠিক করলো।আজ রিক্সায় উঠার পরও ওর চোখ দুটো যেনো কি খুঁজছে।তবে সেসব নিয়ে আজ বেশি ভাবলো না।ওইদিন খুব লজ্জা পেয়েছিল মৌনতার সামনে আর কেউ দেখা করবে বলেই যে আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করবে তাওতো না। আমিই বেশি ভাবছি।তাই চোখ দুটোও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

আজ খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলো।সকাল থেকেই খুব তোড়জোড় শুরু করেছে।কি পড়বে,কিভাবে খুঁজবে,কি বলবে,কয়টায় যাবে,আজ যদি না আসে?এইরকম হাজার রকম চিন্তা করছে আর প্রিপারেশন নিচ্ছে সব কিভাবে ম্যানেজ করবে।সকাল থেকে এইসব দেখছে অহনা।কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগই পাচ্ছেনা।খুবই ব্যস্ত তার ছোট ভাই।বেশ বুঝতে পারছে কিছু একটা হতে চলেছে।ঢাকায় আসা,এখন এই তোড়জোড় কিছুতো একটা আছে।কথা বলতে হবে মাহিম এর সাথে।তার ছোট ভাইটা যে বড় হয়ে যাচ্ছে।মিটমিটিয়ে হাসলো অহনা।তবে এ ব্যস্ততা কার জন্য?মনে মনে বললো, “আল্লাহ আমার ভাইটা যেনো কষ্ট না পায়।যা করো ভালোই করো।”

চলবে……

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:11

মাহিম ওর স্বপ্নচারিণীর কলেজের সামনে চলে এসেছে।অনেকক্ষণ ধরে এসেছে।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আশেপাশে হাঁটাহাটি করছে।ওর মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে এখানে অপেক্ষা করছে।মনের মধ্যে অশান্ত ঢেউ বইছে।তার স্বপ্নচারিণী কলেজে এসেছে তো?ও আর এই অপেক্ষার প্রহর গুনতে পারছেনা।তবুও ওর মন প্রাণ,প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গরা বলছে সে পারবে।সে যে ভালোবাসে।এত অধৈর্য্য হলে হবেনা।

কলেজ ছুটি হয়ে গেল।ঐতো সবাই বের হচ্ছে।কখন বের হবে ওর স্বপ্নচারিণী?হটাৎ ওর চোখ দ্বিধায় পড়ে গেলো। ও কি ঠিক দেখছে?ঐতো ওর স্বপ্নচারিণী বের হচ্ছে।কিন্তু সে এদিকওদিক কি খুঁজছে? আমাকে?কিসব ভাবছি!হয়তো ওর কোনো ফ্রেন্ড কে খুঁজছে। আমার কি আর সে ভাগ্য আছে আমাকে খুঁজবে!!কিভাবে ওর সামনে যাই?কি বলবো ওকে??

অপলা দুচোখ বিরামহীন ভাবে খুজেই চলেছে।কেনো যেনো মনে হচ্ছে আজ সেই ছেলেটার সাথে দেখা হবে।মৌনতার ডাকে গেটের দিকে দ্রুত যাচ্ছে ও।তবুও চোখ দুটো খুঁজেই চলেছে।আনমনে হয়ে দ্রুত যাওয়ার ফলস্বরূপ ধাক্কা খেল কারও সাথে। কার সাথে ধাক্কা লাগল না দেখেই sorry বলে মুখের দিকে তাকাতেই চমকে গেলো।মনের ভুল ভেবে সামনে এগুতে নিল।আমাকেই কি খুঁজছিলেন?মাহিম বললো।অপলা বুঝলো মনের ভুল না সত্যিই।আবার পিছনে ফিরে তাকালো।
– এইখানে কেনো?
– ভুলে গেলেন কি বলেছিলাম?
– তাই বলে কলেজে?কেউ দেখলে কি ভাববে?
– কি ভাববে?
– সে যাই ভাবুক আপনাকে বলতে পারবোনা।
– লজ্জা পেলেন?
– না তো।
– তো মেম আপনার একটু সময় হবে আমার জন্য?
– (চোখ ছোট ছোট করে) মানে?
– বলেছিলাম দেখা হলে আমার সাথে কিছুক্ষণ সময় বের একসাথে……
– (কথা শেষ হতে না দিয়েই)কেনো যাবো?
– কৃতজ্ঞতা থেকেই না হয় গেলেন।(মন খারাপ করে)
মৌনতা ক্ষানিক তফতেই দাড়িয়ে শুনছিল।এখন কিছুটা বুঝতে পারছে অপলার হটাৎ পরিবর্তনের কারণ।মৌনতা এগিয়ে গেলো ওদের কাছে।
– আরে ভাইয়া আপনি এইখানে?
– এইতো এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোমাদের সাথে দেখা করে যাই (মিথ্যা বলল)।
– আমাদের সাথে নাকি আমার বান্ধবীর সাথে!!
– কি যা তা বলছিস?(অপলা কিছুটা রেগে গিয়ে)
– আসলে আপু চলেন কোথাও একটা বসে কথা বলি?
– না না আমি কোথাও যাব না।(অপলা)
– চুপ কর তুই।এত দূর থেকে ভাইয়া আসছে যাবিনা কেনো?অবশ্যই যাবি।
এইবার মাহিমের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া আমার একটু তাড়া আছে।আজ আপনারা যান।অন্য কোনোদিন আমিও যাবো।(মৌনতা)
– ধন্যবাদ আপু।
– ওকে আমি তবে যাই।অপলা টাটা।ভাইয়া টাটা।
– টাটা।(শুকনো মুখে অপলা বলল)
– টাটা।(এক গাল হেসে)
মৌনতা চলে যাওয়ার দিকে অপলা এখনো তাকিয়ে আছে।
– মেম চলুন।
– কোথায় যাবো?
– আপনি তো restaurant এ যাবেন না।তাহলে চলুন হাটি।এইখানে আসার পথে দেখেছিলাম কাছেই একটা পার্ক আছে চলুন ঐখানেই।
– (ইতস্তত করে অপলা)চলুন তবে।

পাশাপাশি দুজন হাঁটছে।কারো মুখেই যেনো কথা নেই।মাহিমের চোখে মুখে উপচে পড়ছে কথারা।কত কথা জমে আছে।তবে আজ কিভাবে বলবে খুজেই পাচ্ছে না।আর অপলার মনে হাজারটা প্রশ্ন উকি দিচ্ছে।তার মনের মধ্যে যে এত অদ্ভুদ প্রশ্নের উদয় হচ্ছে তার উত্তর কি উনারও জানা?উনারও কি আমার মত এমন হয়?গতকালের সেই অদ্ভুদ কল্পনার কথা ভেবে যেনো লজ্জায় পড়ে যাচ্ছে।

দুজন পার্কে প্রবেশ করলো।তবুও কারো মুখে কথা নেই।মাহিম দেখলো তার স্বপ্নচারিণী খুব মন দিয়ে কিছু একটা ভাবছে।ভারী মিষ্টি লাগছে তার স্বপ্নচারিণীকে।অপলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মাহিম।নিরবতা ভেঙ্গে মাহিম মৃদু স্বরে যাতে কেউ না শুনে এমন ভেবে গেয়ে উঠলো

যে কথা শুনিবেনা কেহ আর
নিভৃত নির্জন চারিদার।
দুজনে মুখোমুখি,গভীর দুঃখে দুঃখী
আকাশে জল ঝরে অনিবার……………
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখি সুধা নিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব
আঁধারে মিশে গেলো সব।

মাহিমের গানের সুরে ভাবনার ঘোর কেটে সেখানে জড়ো হয়েছে মুগ্ধতারা।মানুষটা যেমনই হোক গলাটা তো সুন্দর খুব!!

আপনার গলাতো বেশ ভালো।গান করেন কি?সেভাবে না নিজের মনে গাই।আর ফ্রেন্ডদের সাথে যখন আড্ডা দেই তখন গাওয়া হয়।আপনার ভালো লেগেছে?hmm, খুব সুন্দর গান করেন।এখন তো কেউ খুব একটা রবীন্দ্র সংগীতে আগ্রহী না।ভালো লাগলো অনেক দিন পর রবীন্দ্র সংগীত শুনে।আপনার ভালো লেগেছে মানে আমি ধন্য।অপলা অবাক হয়ে,কেনো?সে আপনি বুঝবেন না। বুঝালে ঠিক বুঝবো।সময় হোক ঠিক বুঝবো।অপলা হালকা হেসে বলল,আচ্ছা।

ওরা আরো কিছুক্ষণ পার্কে হাঁটল।তারপর পার্ক থেকে বের হয়ে পার্কের পাশে ফুচকার দোকানে গেলো। রোড সাইড দাড়িয়ে ফুচকা খেলো।অপলার সত্যি আজকের গোটা দিন টা ভালো কাটল।যেনো যা কিছু ভালো সব তার সাথেই হলো।

অনেকক্ষণ ঘুরার পর প্রায় বিকেল গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো।ঠিক যেনো অপলার গতকালের কল্পনার মতো।কল্পনার কথা মনে হতেই ও আবার লজ্জা পেলো।মাহিম তাকিয়ে দেখে অপলা লজ্জা পাচ্ছে।কিন্তু কেনো?জিজ্ঞেস করলো না যদি রাগ করে।তাই বলল,কিছু ভাবছেন?কই নাতো।আসলে আমাকে যেতে হবে।অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।ওহ হ্যাঁ, তাইতো আমার খেয়ালই ছিলনা।চলুন আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।না না আমি যেতে পারব।প্লিজ এইটা করতে যাবেন না।মাহিম মন খারাপ করে বললো,ঠিক আছে।তবে একটা কথা রাখতে হবে।অপলা চোখ ছোট করে বললো,আবারও কি কথা রাখতে হবে?বেশি কিছুনা,মাঝেমাঝে আমরা ফোনে কথা বলতে পারি?অপলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে(আবার হয়তো দেখা করতে চাইবে),hmm মাঝেমাঝে পারি।মাহিম এর মুখে কিছুটা হাসি ফুটলো। এবার তবে আসি।মাহিমের মুখটা আবার শুকনো হয়ে গেল,মাথা নাড়িয়ে hmm বললো।

অপলার রিক্সা যতদূর দেখা যায় চেয়েই রইলো মাহিম।তারপর সে বাড়ির দিকে রওনা হলো।

চলবে…….

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here