তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-১২ ১৩

0
918

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part :12

মাহিমের সাথে সারাদিন ঘুরে ওর যেনো মন খুব ফুরফুরে লাগছে।লুবনার সাথে একসাথে বসে খেলো অনেক গল্প করলো।লুবনারও ভালো লাগছে অপলা ওর সাথে এত গল্প করছে।মৌনতা ফোন করেও অনেক আম্বারাসিং কথা বললো।অন্য সময় হলে হয়তো খুব লজ্জা পেতো।তবে আজ খারাপ লাগছে না।ওর মা বাবা কেও কল করলো অনেকক্ষণ কথা বলল।সবাই অপলার পরিবর্তনে খুব খুশি।

আজ কতদিন পর ওর পড়তেও ভালো লাগছে।মন যেনো আজ তার সায়।অনেকক্ষণ ধরে পড়লো।কিন্তু হটাৎ মনে হলো মাহিম তো বলেছিল মাঝেমাঝে কল করবে।তবে কি আবারও কথা হবে?দেখাও কি হবে?আবার মাহিমের ভাবনা ঘিরে ফেলেছে।না এইভাবে চললে হবেনা।তাই কিছুক্ষণ বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করে আবার টেবিলে বসলো।জোরে জোরে দুবার শ্বাস নিয়ে ছেড়ে দিল।এইবার পড়ায় মন দিল।

মাহিম সকালে যতটা উচ্ছ্বাস নিয়ে বের হয়েছিল তার চেয়ে দ্বিগুণ উচ্ছ্বাস নিয়ে ফিরলো।সে কি ভাবতে পেরেছিল তার স্বপ্নচারিণীর সাথে অতটা সময় কাটাবে!!ওর গান শুনে প্রশংসা করেছে।একসাথে হেঁটেছে।সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে।ঘুম ভাঙলেই হারিয়ে যাবে।না আর হারানোর কথা ভাববোই না।সে আমার স্বপ্ন ছিল।এখন সে বাস্তবেও আছে।তবে স্বপ্ন আর বাস্তবে অনেক তফাৎ।স্বপ্ন সেতো নেহাৎই মনের কল্পনা।বাস্তবতা অনেক কঠিন।স্বপ্নকে জয় করা খুব সহজ মন নিয়ন্ত্রণ করে।কিন্তু বাস্তবতা তাকে কিভাবে জয় করবে?তাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?

সকালে অহনা একা এইসব দেখেছে।এখন তার সাথে বসে এইসব দেখছে নিঝুম।অহনার একমাত্র ননদ।hon’s 1st year এ পড়ে।মাহিমের উচ্ছ্বাস অহনাকে আনন্দ দিলেও নিঝুমকে খুব ভাবাচ্ছে। এ আনন্দ কি ওর মনে কষ্টের কারণ হবে। হ্যাঁ,আমি মাহিম ভাইয়াকে পছন্দ করি।সেই প্রথম দিন থেকেই।কত কত প্রপোজাল পেয়েছি।কোনোদিন কাউকে মনে ধরেনি।ভাইয়া ভাবির বিয়ের সময় যখন মাহিম ভাইয়ার সাথে দেখা হয় তখন থেকেই মাহিম ভাইয়াকে ভালো লাগে খুব ভালো লাগে তাকে।যখন ভাবী বলেছিল মাহিম ভাইয়া ঢাকায় আসবে ওদের বাড়িতে থাকবে।ওর যে কি আনন্দ হয়েছিল। তা শুধু ওই জানে।কিন্তু মাহিম ভাইয়ের এই আনন্দ খুব ভাবাচ্ছে ওকে।

মাহিম অপলার টুকটাক কথা হলো।এই দুদিনে অপলা আগের থেকে অনেক স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে।ওর মা বাবা ফ্যামিলি নিয়ে কথা বলেছে।সারাদিন কি করে না করে। ওর কথা এইসব বলে।ওদের সম্পর্ক এখন আপনি থেকে তুমিতে এসেছে।ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে একে ওপরের।

রাত ১১.৫৯।অপলা পড়ছে।হটাৎ ওর ফোন টা বেজে উঠল। ও জানে কে ফোন করেছে।তাই তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোন ধরলো। হ্যাঁ,অপলার বাবা ফোন করেছে।রিসিভ করার সাথে সাথেই ওর মা বাবা বলে উঠলো,
-happy birthday মা!
-thank you baba,thank you ma.
-মা তোমার কি চাই বল আসার সময় নিয়ে আসবো।
-বাবা আমার কিছু চাইনা।তোমার চলে এসো।তোমাদের ছাড়া এইদিন টা আমার মোটেও ভালো যাবেনা।(খুব মন খারাপ হচ্ছে)
-এই তো মা আর দুটো দিন।তারপরই আমরা চলে আসবো।মন খারাপ করিস না।(পাশ থেকে ওর মা মুখ টিপে হাসছে।)
-hmm, করবনা।তাড়াতাড়ি ফিরে এসো তোমরা।
-হ্যাঁ, মা আসব।
-বাবা মা তো পাশেই মাকে ফোনটা দেও।
-তোর মা তো রুনুঝুনু কে দেখতে গেলো।সকালে কথা বলিস।(ওর মা যদি মুখ ফস্কে কিছু বলে দেয়,তাই আর দিলনা)এখন রাখছি ঘুমিয়ে পরো । কেমন?
-আচ্ছা এখনই শুয়ে পড়ব।
-ওকে মা,good night.
-good night বাবা।

ফোন রেখে অপলা ভাবছে এই প্রথম আমার birthday তে সবাই এতদূরে।ওর খুব মন খারাপ হচ্ছে।আজ সারাদিনে মাহিম একবারও কল করেনি।ওর সাথে কথা বলতে না পারলে এত কষ্ট হয় কেনো? ও কে হয় আমার?আচ্ছা ও কি জানে আজ আমার জন্মদিন? ও কি করে জানবে?জানলে কি আমাকে উইশ করতো?এমন সময় মেসেজ টিউন বেজে উঠল।তাড়াহুড়ো করে অপলা ফোন হাতে নিল।হয়তো মাহিম মেসেজ করেছে।কিন্তু না মৌনতা মেসেজ করেছে। বার্থডে উইশ করেছে।অপলা ছোট করে রিপ্লাই করে শুয়ে পড়লো।ওর ঘুম আসছেই না।আচ্ছা আমি কী মাহিম কে একবার কল করবো? না না আজ আমি কাওকেই কল করবনা।সে যদি কথা বলতে না চায় আমিও বলবো না।একদমই না।

লুবনার ডাকে খুব ভোর ভোর ঘুম ভাঙলো অপলার। এত সকালে ঘুম ভাঙ্গায় না তো কখনো?ফজরের নামাজ পড়ে সবেই চোখটা লেগেছিল।আপু তাড়াতাড়ি উঠ।ঘুম ঘুম চোখে অপলা বললো,কিছু হয়েছে?এত সকালে ডাকলে যে।আহা তুমি আগে উঠেই তো দেখো।তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।ওকে তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু।লুবনা চলে যাওয়ার পর ফ্রেশ হয়ে ভাবলো বাসায় যারা আছে তাদের নিয়েই আজকের দিন টা কাটাবে।এই ভেবেই ও রুম থেকে বের হলো।

চলবে…….

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:13

নিচে নেমে তো অবাক।মা,বাবা,রুনু,ঝুনু,লুবনা,রহিমা সবাই দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখা মাত্রই একসাথে বলে উঠলো happy birthday toyou.অপলা দুহাতে মুখ চেপে ধরে।ও কি করবে বুঝতে পারছে না।রুনু ঝুনু এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।অপলাও খুশিতে জড়িয়ে ধরলো।এগিয়ে গিয়ে মা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। কান্নাই করে দিলো অপলা।কখন এলে তোমরা?রাতে তো বললে দুদিন পর আসবে।সেতো মা তোকে সারপ্রাইজ দিতে বলেছিলাম।আমরা এয়ারপোর্ট এসে কল করেছি তোকে।আমারতো রাতেই এসেছি।তাহলে ডাকো নি কেনো?তুই সবে ঘুমিয়েছিস তাই আর ডাকতে বারণ করেছি।সকালে সারপ্রাইজ দিলাম। জানো মা তোমরা থাকবেনা বলে আমার এত মন খারাপ হচ্ছিল।আমরা জানিতো আমার মেয়েটা কষ্ট পাবে তাই চলে এলাম।

আজ আর কলেজে গেলো না অপলা।সারাদিন সবার সাথে একসাথেই কাটল।বিকালে বারান্দায় বসে আছে।মাহিমের কথা মনে পড়ছে।আজও সে ফোন করেনি।আমি কি একবার কল করবো?না সেটা কেমন হবে।তার যদি আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে না হয়,তাহলেতো সে বিরক্ত হবে।নাকি সে অসুস্থ?না মাথায় কিছু আসছে না।সবার মাঝে থেকেও একজনের একটা ফোনকলের জন্য ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।অসহ্যকর এক অনুভূতি । এ অনুভূতির নাম কি?অপলার অজানা তার উত্তর।সে এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয়।

এমন সময় রুনু আর ঝুনু দৌড়ে এলো।রুমের গেট ভেজানোই। ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখে রুমে নেই।ছুটে বারান্দায় গিয়ে দেখে অপলা চুপচাপ বসে আছে ।ওরা এসেছে টেরও পায়নি।কিছু ভাবছে হয়তো। কাছে গিয়ে ডাকলো, অপাপু।ওদের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল।এক চিলতে হাসি নিয়ে ফিরে তাকালো ওদের দিকে।ওরা হড়বড় করে বলছে,আপু তুমি এইভাবে বসে আছো কেন?তুমি ready হবেনা?কেনো সোনা এখন কেনো রেডী হবো?এ মা আপু তুমিতো কিছুই জানো না।আজকে বাসায় পার্টি আছে।অপলা চোখ ছোট ছোট করে বললো,কি বলিস? হ্যাঁ আপু আজ পার্টি।তুমি নীচে গিয়ে দেখো সব arrangement করা হচ্ছে।

অপলা ওদের সাথে নিচে নামলো।নেমে দেখলো ওর মা সব ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে কিনা দেখছে।ওর মা খুব ব্যস্ত।বাবাকে তো দেখছে না। লুবনাও ব্যস্ত।অপলা মা এর কাছে গেলো।মা তোমরা এইসব কখন করলে?অপলার মা রেহনুমা আহমেদ মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, তোর বাবা সিঙ্গাপুর বসেই সব প্ল্যান করেছে।ওখানে বসেই সব arrangement ও করেছে ।অপলা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,তোমরা আমাকে খুব ভালোবাসো?ওর মা মুখে প্রসন্নো একটা হাসি দিয়ে বলল,সব মা বাবাই তার সন্তানকে ভালোবাসে।তুই তাড়াতাড়ি যা রেডী হয়ে আয়।তোর জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ আছে।আরো সারপ্রাইজ আছে?কি সারপ্রাইজ আছে?বলে দিলে আর কি সারপ্রাইজ থাকবে?তুই যা রেডী হয়ে আয়।আমার এইদিকে অনেক কাজ আছে।অপলা চলে গেল।রেহনুমা আহমেদ লুবনাকে কাজ করতে দেখে রেগে গেলেন।

লুবনার কাছে গিয়ে রাগী রাগী গলায় বলল,তোমাকে এত কাজ করতে কে বলছে?আসলে মামী আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।তাই আরকি………কথা শেষ করতে না দিয়ে তিনি বলা শুরু করলেন,না বুঝতে না পারার কি আছে?তুমি রেডী হতে যাও।বাচ্চা মেয়ে সেজেগুজে পার্টিতে আসবে তা না কাজ করতে লেগে গেছে।খুব বকবো কিন্তু যাও রেডি হও।জি মামী।শোনো লুবনা সব সময় মনে রাখবে তুমিও আমার মেয়ে।সেভাবেই থাকবে।কেমন?জি মামী।আর শোনো তোমার মামা সবার জন্যই পার্টিতে পড়ার ড্রেস নিয়ে আসছে।তুমি পরো সেখান। থেকেই।জি মামী।তাড়াতাড়ি যাও।

অপলা রুমে গেলো।ওর বাবা এতগুলো ড্রেস এনেছে সবগুলোই সুন্দর ।কোনটা পড়বে বুঝতে পারছে না। ও দুটো গাউন chosse করলো।তবে কোনটা পড়বে ভাবছে।এমন সময় লুবনা এলো।আপু আমি কোনটা পড়ব বুঝতে পারছিনা।আমিও তো বুঝছিনা কি পড়ব।wait লুবনা আমি তোমাকে chosse করে দেই আর তুমি আমাকে chosse করে দেও।লুবনা এটা সাদা রঙের গাউন এর সাথে আকাশী রঙের ওড়না ড্রেস chosse করে দিলো।অপলা ড্রেসটা হাতে নিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,বাহ এইটাতো এতক্ষণ আমি দেখিইনি।তারপর অপলা লুবনার জন্য chosse করলো কালো আর লালের মিশ্রণে একটা ড্রেস।আপু তাহলে এইটা পড়ে আমি রেডী হয়ে আসি। হ্যা,যাও।আমিও রেডী হচ্ছি।

সবাই রেডী হয়ে নিচে আসলো।সন্ধ্যা 7.30 মত বাজছে ঘড়িতে।এক এক করে সবাই আসছে অতিথিরা।মৌনতাও এসেছে।অপলার বাবাই সবাইকে invite করেছে।মৌনতা এসেই অপলাকে খুঁজছে।অপলার খোঁজ ই নেই।তাই মৌনতা অপলার রুমে গেলো।গিয়ে দেখে সে ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।আসলে অপলার মন বারবার চাইছে মাহিমের সাথে কথা বলতে।কিন্তু তা করছেও না।দ্বিধায় ভুগছে কি করবে?মৌনতার ডাকে ঘোর কাটল।তাকিয়ে দেখে মৌনতা।তুই কখন এলি? আমাকে ডাকলি না কেনো,কখন এসেছিস? একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিল মৌনতার দিকে।মৌনতা খুব অবাক হল যে মেয়ে কথাই বলে না সে এতকিছু জানতে চাইছে তাও হড়বড় করে ঘটনা তো কিছু ঘটেছেই।এসেছি অনেকক্ষণ।এখন নিচে চল।সবাই wait করছে।

অপলা উঠে দাড়ালো।মৌনতা বোকার মতো তাকিয়ে আছে ওর দিকে।অপলা লজ্জা পেয়ে গেল।এইভাবে কি দেখিস? সত্যি বলছি দোস্ত আমি যদি ছেলে হতাম তবে এক্ষুনি তোকে তুলে নিয়ে যেতাম। যাহ!তুই কেনো যে এত বাজে বকিস। সত্যি বলছি তোকে খুব সুন্দর লাগছে।তার উপর সাদা আর আকাশী রঙটাতে মনে হচ্ছে সমস্ত পবিত্র রা জড়ো হয়েছে।অপলা খুব লজ্জা পেলো। আস্তে করে বললো নিচে চল।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here