তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-১৪ ১৫

0
1018

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:14

Almost 8 টা বাজে।সবাই প্রায় চলে এসেছে।তবুও বাবা এখনো কেনো পার্টি শুরু করেছে না?অপলা এগিয়ে গিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো।হিশাম আহমেদ(অপলার বাবা)বললেন,একটু অপেক্ষা কর আমার একটা বন্ধু আসবে।অপলা ক্ষানিক ব্রু কুচকে বলল,বাবা তোমার সব বন্ধুরা তো সেই কখনই এসেছে। নারে মা আসেনি। আমার এক বন্ধু তুই ছোটবেলায় দেখেছিস এখন হয়তো মনে নেই ব্যাবসার সুবিধার জন্য রাজশাহী চলে গিয়েছিল।অপলা বিড়বিড় করতে থাকলো রাজশাহী!!রাজশাহী!!তখনি অপলার বাবা বলে উঠলো ঐতো ওরা চলে এসেছে।অপলা ঠিক ভাবে শুনতে পেল না। ও আপন বিড়বিড় করে চলে গেল কেক কাটার জায়গায়।

হিশাম আহমেদ বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলেন।বহু বছর পর দুই বন্ধুর দেখা। কিছুক্ষণ কথা বলে বন্ধুর সাথে ছেলের পরিচয় করিয়ে দিলেন এহসান চৌধুরী।রেহনুমা আহমেদ এগিয়ে এলেন।সকলের কুশলাদি বিনিময়ের পর বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অপলাকে ডাকতে নিলেন হিশাম আহমেদ।তখন এহসান চৌধুরী বললেন,আগে কেক কাটা হোক।পড়েই পরিচয় করিয়ে দিস।তাই আর ডাকলেন না।সকলেই কেক কাটার জায়গায় জড়ো হলো।

কেক কাটা শেষ।অপলা ওর মা বাবা কে কেক খাওয়ালো। রুনু ঝুনুর কে কেক খাইয়ে যখন লুবনাকে কেক খাইয়ে ঘুরবে তখনি ওর মনে হলো ভিড়ের মধ্যে দুই জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখ পড়া মাত্রই সরে গেল।হয়তো মনের ভুল হবে।তবু বার কয়েক এদিক ওদিক তাকালো না সেরকম কিছুতো চোখে পড়ছেনা।মনের ভুলই
হবে। তখনই কিছু বুঝে উঠার আগেই মৌনতা ওর মুখে কেক পুড়ে দিল। কিরে তোর মন কোথায় থাকে?কোথায় হারিয়ে যাস বলতো?অপলা বিব্রতবোধ করলো।কি যে হচ্ছে ওর বারবার লজ্জায় পড়ে যাচ্ছে।সব হচ্ছে তারই জন্য।

অপলার বাবা অপলাকে ডাকলেন।এই হচ্ছে আমার সেই বন্ধু যার জন্য এতক্ষণ wait করলাম।অপলা সালাম দিয়ে তার সাথে কুশল বিনিময় করলো।হিশাম আহমেদ আবার বললেন,ওর ছোট ছেলে এসেছে।কত করে বললাম সবাইকে নিয়ে আয় না আনলো না।ওর ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।আশেপাশে না দেখে বললো,এহসান তোর ছেলে কই?আশেপাশে তাকিয়ে বলল,এইখানেই তো ছিল বলল কার ফোন আসছে ।কাছেই আছে চলে আসবে।অপলা বলল,ঠিক আছে আংকেল আমরা না হয় পড়ে আলাপ করবো। হ্যাঁ মা তাতো বলবেই।অপলা আলতো হেসে বলল,বাবা আমি ওইদিকটায় যাই? হ্যাঁ যা।

অপলা ওর মায়ের কাছে গিয়ে টেনে নিয়ে সাইডে গিয়ে বলল,মা বাবা আমাকে কি সারপ্রাইজ দিবে বলতো?ওর মা মুচকি হেসে বলল,এত অধৈর্য্য হলে হবে?কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝে যাবে।বলে রেহনুমা আহমেদ সেখান থেকে সরে গেলেন।অপলার মাথায় কিছু আসছেনা।পিছন ফিরে যেই হাঁটতে নিল মনে হলো ভিড়ের মধ্যে দুই জোড়া চোখ আবার মিলিয়ে গেলো।বারবার একই ভুল হচ্ছে কি তার নাকি সত্যিই কেউ লুকিয়ে তাকে দেখছে!!কেই বা তাকে লুকিয়ে দেখবে?কেনোই বা দেখবে?মাথায় কিছু আসছে না তার।

অপলা মৌনতা আর লুবনার সাথে কথা বলছে।তবে সারাক্ষণই ওর মনে হচ্ছে কেউ আড়াল থেকে ওকে দেখছে।খুব গভীর সে দৃষ্টি।দূর থেকে সে দৃষ্টি জানান দেয় তার উপস্থিতি।এই যে এখন জানান দিচ্ছে অপলাকে।এক করে গেস্ট রা খাওয়া দাওয়া করে চলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে ভীর কমে আসছে।তবুও অপলা খুঁজে পাচ্ছে না কে তাকে এইভাবে দেখছে?কে হতে পারে?

মৌনতা চলে যাবে তাড়া দিচ্ছে।রাত হয়ে যাচ্ছে।তাই ওকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলো অপলা।অপলা যখন গেট থেকে ঘুরে বাড়ির ভিতর ডুকবে তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেল। কার সাথে ধাক্কা খেল দেখার আগেই সামনে থেকে সরে গেল।অপলা কিছুটা ভরকে গেল।কেমন মানুষ রে বাবা একটা sorry বলার সুযোগও দিলনা?ভারী অদ্ভুদ।

তখনই ওর বাবা ওকে ডাকলো।অপলা তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।বাবা মায়ের মুখে শুনেছি সারপ্রাইজ এর কথা।তোর মা এত মুখ পাতলা কিচ্ছু পেটে রাখতে পারেনা।সব বলে দিয়েছে?না বাবা শুধু বলছে সারপ্রাইজ দিবে।আচ্ছা তাও ভাল এটুকু পেটে রাখতে পেরেছিল।বাবা মাকে নিয়ে এইভাবে বলনা শুনলে কষ্ট পাবে।তুমি বরং সারপ্রাইজ টা কি বলো। ও হ্যাঁ শোন,তার আগে বল তুই কি এই কদিনে কোনো ছেলের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলি?অপলা 480ভোল্ট এ শকড হলো।বাবা জানলো কি করে?কোনো রকমে মাথা নিচু করে বললো,বাবা sorry তোমাদেরকে বলা হয়নি। হ্যা গিয়েছিলাম আসলো বাবা ছেলেটি……….

কথা শেষ হওয়ার আগেই এহসান চৌধুরী এগিয়ে এসে বললেন,এই হচ্ছে আমার ছোট ছেলে।

চলবে…..

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:15

-hi!
-(অপলা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল যেনো কেউ ওর গলা চেপে ধরেছে)
-আমি মাহিম।(মিটমিটিয়ে হাসছে)
-hmm.

অপলা কিছু না বলে চলে গেল।ওর খুব রাগ হচ্ছে।দুদিন একটা ফোনও করলনা আর এখন আমার বাসায় এসেছে সেই কখন আমার সাথে কথা বলল এখন?একটা উইশও করলনা। ও কি জানতো আজ আমার জন্মদিন?আচ্ছা ওই কি এতক্ষণ লুকিয়ে দেখছিল?ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।মাহিম পিছন যাচ্ছে আর দেখছে তার স্বপ্নচারিণী খুব রেগে গেছে।তাই সামনে গিয়ে বলল,রাগলে তোমাকে খুব বাজে দেখায়।অপলা কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে নিল।আচ্ছা রাগটা কি আমার উপর হচ্ছে?দেখো আমার কিন্তু দোষ নেই।যা হয়েছে আংকেল এর কথাতেই হয়েছে। মানে?কি বলতে চাইছো?

মাহিম কিছু বলার আগেই হিশাম আহমেদ বলল,যা হয়েছে সবটাই তোকে বলছি।আমি মাহিম কে বারণ করেছি তোর সাথে যোগাযোগ করতে।অপলা কপাল কুচকে ওর বাবার দিকে তাকালো।ওর বাবা আবার বলতে শুরু করল,আমার মেয়েটার হটাৎ এই পরিবর্তন যেমন আমার ভালো লাগছিল তেমনি ভাবাছিল এর পিছনের কারণ টা কি তখনই জানতে পারি মাহিম এর কথা।আর মাহিমের খোঁজ করতে গিয়ে খুঁজে পাই আমার পুরোনো বন্ধুকে।তোকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আমিও সারপ্রাইজড হই।এহসান চৌধুরী হাসি মুখে বলল, হ্যা, মা তোমাদের জন্যই আমাদের আবার যোগাযোগ হলো। অপলা হা হয়ে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর মা এসে পাশে দাড়ালো।ওর মা ও হাসছে।রেহনুমা আহমেদ মেয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো এখন সবাই চল খেয়ে নিবে।

সবাই চলে গেল মাহিম কানের কাছে এসে বললো,happy birthday স্বপ্নচারিণী।অপলা তাকাতেই মাহিম সবার দিকে হাঁটা শুরু করলো।অপলার খুব লজ্জা লাগছে।কি হচ্ছে ওর সাথে সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।তারউপর স্বপ্নচারিণীর কি মানে?এত কিছুর মধ্যেও ওর মাহিমের উপর খুব রাগ হচ্ছে।যেদিন থেকে দেখা হয়েছে সব কেমন যেন হয়ে গেছে।দ্বিধা,অসস্তি বেড়েই চলছে।এখন বাবা মাকে কি বলবে তারা না জানি কি ভাবছে?খুব লজ্জা লাগছে ওর।

মাহিম আর ওর বাবা এখন চলে যাবে।সবার থেকে বিদায় নিচ্ছে।হাশিম আহমেদ আর রেহনুমা আহমেদ বারবার বলছে আজ থেকে যেতে।কিন্তু উনি ওনার মেয়ের বাড়ি যাবেন না হয় খুব রাগ করবে মেয়ে।তবে এহসান চৌধুরী বলে গেলেন অপলার এক্সাম শেষ হওয়ার পর যেনো অবশ্যই রাজশাহী যায়।হিশাম আহমেদও পুরোনো বন্ধুর কথা ফেলতে পারলেন না একপ্রকার কথা দিয়েই দিলেন যাবার।

অপলা মাহিমের দিকে তাকাচ্ছেও না।যেটা মাহিমকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। বার বার অপলার দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু না অপলা মাথা কিছুটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।যেনো এখনই কেঁদে দিবে।যা মাহিমের বুকে খুব পীড়া দিচ্ছে।ওরা চলে আসার সময়ও কিছু বলল না।শুধু এহসান চৌধুরীকে বলল,আবার আসবেন আংকেল।

সে কি তার স্বপ্নচারিণীকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললো?সে তো ইচ্ছে করে করেনি।আর ওতো এতকিছু জানতো না।সে চেয়েছিল তার স্বপ্নচারিণীকে সারপ্রাইজ দিতে।তাকে দেখলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে।আমি কী তবে বেশি ভেবে ফেললাম?আমাকে হয়তো অতটা জায়গা দেয়নি ওর মনে।গাড়িতে বসে ভেবেই চলেছে।ওর বাবা খেয়াল করছে ছেলে খুব গভীর চিন্তায় মগ্ন তাই আর কিছু বললেন না।ওর এখন ভাবা দরকার তিনি মনে করেন।বাসায় পৌছে বললেন এইবার বাপ নাম।তখন মাহিম এর হুস ফিরল।কিছুটা লজ্জা পেয়ে গাড়ি থেকে নামলো।

অপলা কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে tried লাগছে বলে রুমের গেট লক করে দিল।মাহিমের সাথে দেখা হওয়ার প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত যা যা হল সব মিলিয়ে ওর মধ্যে একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।এই আজকে।ওর খুব ভালো লাগছে মাহিমের সাথে দেখা হওয়ায় আবার রাগও হচ্ছে কেনো মাহিম ওর থেকে লুকালো?আবার এইটা ভেবেও লজ্জা লাগছে মা বাবা কি যেনো ভাবছে?তার চেয়েও বেশি ভাবাচ্ছে মাহিমের উপর কি ওর অতটা অধিকার আছে যে ও কিছু আড়াল করায় আমার রাগ হবে কষ্ট পাবো?

অপলা আজ অনেকদিন পর ডাইরিটা নিয়ে বসলো।ডাইরি কলম নিয়ে ভাবছে কি লিখবে?কি দিয়ে শুরু করবে?আজ কি সে মাহিমকে নিয়ে লিখবে?তবে কি লিখবে…….

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here