তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:16
মা- বাবা
আমার মা বাবা তারা আমায় খুব ভালোবাসে।বোঝেও আমাকে।আমি কি করছি না বললেও জেনে যায়।আমি কি ভাবছি ,কি করতে চাইছি আমি ঠিক করে বুঝার আগেই মা বাবা কেমন করে যেনো বুঝে যায়।খুব বেশি ভালোবাসে বলেই হয়তো এতটা বুঝে।পৃথিবীর শুদ্ধতম ভালোবাসা হয়তো একেই বলে।
এত ভালোবাসা পেয়েও আমি কেনো যেনো পরিতৃপ্তি পাইনা।মনে হয় এরা আমার নিজের কেউ না।কেনো মনে হয় তা আমি জানিনা।এইরকম মনে হওয়ার মতো কোনো কারণও আমি আজও খুঁজে পাইনি।তখন নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হয়।মনে হয় এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই আমি ।
অপলা আর লিখতে পারলো না।ওর চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।পরক্ষনেই মাহিমের কথা মনে পড়ে গেলো। আস্তে আস্তে ওর ভাবনায় সমগ্র মন দখল করে নিল।যেনো কারো চিন্তাকে ডুকতে দিবেনা।আপন মনেই হেসে উঠলো।মাহিমকে নিয়ে কিছু লিখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।কি লিখবে ওকে নিয়ে?কি হয় ও আমার!!কি দিয়ে শুরু করবো?মাহিম লিখবো?না অন্য কিছু। হ্যা,অদ্ভুদ ছেলেটি।অপলা হেসে উঠলো।
অদ্ভুদ ছেলেটি
অদ্ভুদ সে ছেলেটির নাম মাহিম।ওর সাথে আমার পরিচয়ও অদ্ভুদ ভাবে।পিকনিকে গিয়ে পথ হারিয়ে হেল্প নিয়েছি।যেখানে দেখা হয় জায়গাটা খুব সুন্দর ছিল। ভোরবেলা নদীর পাড়ে।ওর সাথে আমি লুকিয়ে একবার দেখা করেছি।ঠিক লুকিয়ে না সে এসেছিল।আর লুকিয়ে বলছি কেনো বাবাতো জেনেই গেছে।
ওর আরেকটা পরিচয়ও আছে। ও আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।সেটা আজই জানলাম আমার birthday তে।
ও খুব ভালো গানও করে।ওর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে।যখনই কথা বলি মনে হয় পৃথিবীর সব ভালো লাগার অনুভূতিরা আমাকে ঘিরে ধরে।এই অনুভূতিগুলোর সাথে মোটেও আমি পরিচিত নই।
ডাইরিটা বন্ধ করে অপলা হাসছে।ছেলেটা আজ আমার ডাইরির পাতায়ও জায়গা করে নিল।কিছু একটা ব্যাপারতো ওর মধ্যে আছে।একবার ভাবছে লিখাটা ছিঁড়ে ফেলবে পড়ে ভাবলো লিখে ফেলেছি ছিঁড়ে আর কি হবে।জায়গাটা তো সে করেই নিয়েছে।
আজ দুদিন এহসান চৌধুরী মেয়ের বাড়িতে আছেন।আজ চলে যাবেন।অহনা কিছুতেই যেতে দিতে দিবে না।তার হাসব্যান্ড নিয়নকে দিয়েও বলিয়েছে।কিন্তু উনি আজ যাবেনই তার কত কাজ পড়ে আছে।
অহনার ভারী মন খারাপ হচ্ছে।ওর বাবা সবে বের হলো।সারাদিন একা বাসায় থাকে।নিয়ন সারাদিন ব্যাবসায় নিয়ে ব্যস্ত থাকে।রাতে আসতে আসতে ঘুমের সময় হয়ে যায়। ভোরে উঠতে হয় তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ে। নিঝুম এর ভার্সিটি থাকে।সকালে যায় বিকালে আসে।আর মাহিম সেও ব্যস্ত।নতুন ভার্সিটি।সব মিলিয়ে ওর সারাদিন খুব একা একা লাগে।বাবা আসায় দুটো দিন ওর ভালোই কাটল। আর কয়েকটা দিন থেকে যেতে পারতো।
মাহিম রেডী হয়ে ভার্সিটির জন্য বের হচ্ছে।তখন পেছন থেকে নিঝুম ডাকলো।মাহিম ভাইয়া একটু দাড়াও।একরাশ বিরক্তি নিয়ে মাহিম দাড়ালো। ও বুঝে নিঝুমের মধ্যে কিছু একটা চলছে।তাই ইগনোর করে চলে।ভার্সিটি যাচ্ছেন তো? হ্যা,যাচ্ছি।আমিও যাচ্ছি,চলুন একসাথেই যাই।মাহিম কিছু বলবে তার আগেই অহনা বলল,ভালোই তো হয় দুজন একসাথে গেলে।মাহিম আর কিছু বলল না।একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল, চল।
আজ কতদিন স্বপ্নচারিণীর সাথে কথা হয়না।এমনিতেই রেগে আছে।তাই আর ভয়ে কল করে না।যদি আরও রেগে যায়।তাই ভাবছে তার স্বপ্নচারিণীর কলেজে যাবে।সামনাসামনি দেখা করে কথা বলবে।রাগ করলেও সামলে নিতে হবে।তখনই অহনা এলো রাতের খাবার জন্য ডাকতে।এসে দেখে তার ভাই গভীর ভাবনায় ডুবে আছে।কি যে এত ভাবে সারাদিন কে জানে।কাছে গিয়ে জোরে ধাক্কা দিলো।
চলবে………
তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:17
মাহিম খাবার টেবিলে গেলো।গিয়ে তো অবাক।দেখে নিয়ন ভাইয়া বসে আছে। এসে থেকে উনার নাগালই পায়নি শুক্রবার ছাড়া।আজ উনি খাবার টেবিলে।হালকা হেসে নিয়ন বলল,দাড়িয়ে কেনো বস মাহিম।মাহিম বসলো।মাহিম জিজ্ঞেস করার আগেই বলল,তোমার আপুর খুব মন খারাপ তাই আগে আগেই চলে এলাম।মাহিম বোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।বুঝলো ঠিকঠাক একজন বর পেয়েছে তার বোন।এইতো ভাইয়ের আনন্দ।তার বোনকে বুঝে।
টুকটাক কথা হলো খাবার টেবিলে।হটাৎ নিয়ন বলল,বেশ কিছু দিন হল তুমি ঢাকায় এসেছ,তো কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি?আসলে ভাইয়া এসে থেকেই অনেক কাজ ছিল।নতুন ভার্সিটি নতুন পরিবেশ গুছিয়ে নিতে একটু সময় তো লাগবেই।ফ্রী হই আগে পরে যাবো।নিঝুম এতক্ষণ শুনছিল।এবার সে বলল,ভাইয়া ঠিক ই বলেছ মাহিম ভাইয়া সারাক্ষণ নিজের মনেই থাকে আর কিসব ভাবে।ঘুরতে যাওয়া তো দূর কথাই বলে না ঠিকমতো।এটাতো ঠিক না মাহিম।এরপর যেদিন ফ্রী থাকবে অবশ্যই ঘুরতে যাবে।অহনা আর নিঝুমকেও নিয়ে যাবে।তোমার বোন বাসায় বসে বোর হয় সারাক্ষণ ঘুরতে গেলে ওরও ভালো লাগবে তোমারও আশপাশটা চেনা হলো।জি ভাইয়া ঠিক বলেছেন।নিঝুম মিটমিট করে হাসছে।এই মুহূর্তে ওর ভাইয়াকে মনে হচ্ছে best এর চেয়ে best একদম ওর মনের কথা বুঝে গেলো।
মাহিম রুমে এসে ফোনটা হাতে নিল।স্বপ্নচারিণীর সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু সাহস পাচ্ছে না।যদি রেগে যায়। বার্থডের দিন কয়েকটা ছবি তুলেছিল সেগুলোই দেখছে।এতকিছুর মধ্যে এইটুকুও সেদিন বলতে পারেনি,স্বপ্নচারিণী তোমাকে অপ্সরার মতন লাগছে।হুমায়ূন স্যার যদি তোমাকে দেখতেন তবে তোমাকেই হেলেন এর সাথে তুলনা করতেন না হয় মায়াবতী ট্যাগ তো দিতেনই।মাহিমের চোখে মুখে যেনো হাসি।ভালো লাগার হাসি।সুখী মানুষ এর হাসি জ্বলজ্বল করছে।
হটাৎ নিঝুম রুমে ঢুকলো।দেখলো মাহিম কিছু একটা দেখছে।ওর চোখে মুখে উচ্ছ্বাস।কেউ যে রুমে ঢুকেছে সে টের ও পায়নি।তাই ডাকলো,মাহিম ভাইয়া আসবো?মাহিম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কোনো রকমে ফোনটা আড়াল করে বললো, হ্যা, আসো আসো।নিঝুম চেয়ার টেনে বসে বলল,এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিলেন?কই কিছুনা তো।উহু কিছুতো অবশ্যই।আমাকে দেখে লুকালেন কেনো hmm? আমি যাই দেখিনা কেনো তোমার জানার প্রয়োজন নেই।প্রয়োজন আছে কি নেই সেটা এখনই কি করে বলি বলেন তো।সেটা তো সময় হলেই জানতে পারবেন।মাহিম খুব বিরক্ত হচ্ছে।নিঝুম এখন যাও প্লিজ,আমি পড়াশুনা করবো,একটু একা থাকতে দেও।ওকে ভাইয়া যাবো তবে একটা শর্তে!মাহিম ব্রু কুচকে এতে আবার শর্ত এলো কই থেকে?আছে আছে আগে বলেন আমার শর্তে রাজি??আগে শুনি কি শর্ত?বেশি কিছুনা কাল আমার সাথে ঘুরতে যেতে হবে। হুহ যাও তো তুমি।যতক্ষণ না রাজি হবেন আমিতো যাবনা।মাহিম চূড়ান্ত পর্যায়ের বিরক্ত হয়ে বলল,ঠিক আছে।এখন বিদায় হও তো।নিঝুম এর খুশি দেখেকে।আহ্লাদে আটখানা হয়ে নিজের রুমে গেলো।এখনতো তার অনেক কাজ।কি পড়বে,কিভাবে সাজবে,কত কি?ওকে তো মাহিমের চোখে ওকে ঘিরে ভালো লাগাটা তৈরি করতে হবে।
অপলা আজ কদিন ধরে নিজের মনেই থাকে।সবটাই খেয়াল করছে রেহনুমা আহমেদ।তিনি এইটা নিয়ে হিশাম আহমেদ এর সাথে কথাও বলেছেন।তাদের মেয়ে আবার আগের মত চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে।যা মোটেও তাদের ভালো লাগছে না।তাই তো হিশাম আহমেদ চাইছে অপলা যদি একটু ঘুরে আসে খোলামেলা পরিবেশে ভালো লাগবে।তবে ও তো যেতে চাইবে না তাই কায়দা করে পাঠাবে।রেহনুমা আহমেদ তার স্বামীর খেয়ালী কথা বুঝেন না।ভেবেই চলেছেন কি কায়দা করা যায়। তখন হিশাম আহমেদ বললেন,তোমার মাথায় কিচ্ছু নেই বুঝলে সহজ ব্যাপারটা বুঝ না।রেহনুমা আহমেদ কিছুটা বিরক্ত হলেন,এত যখন বুঝ তবে বলেই দেও তুমি।তোমাকে কেনো বলবো?অপলাকে ডাকো ওকেই বলি।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। কথায় কথায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।সেইতো আমাকে নিয়েই থাকতে হয়।বলতে বলতে অপলার রুমে এলো।অপলা দেখছে মা বিড়বিড় করেই চলেছে।কে তোমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলো মা?কে আবার তোর বাবা।অপলা হাসলো,সে তো মা বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে তাই ওমন করে।রেহনুমা আহমেদ মেয়ের এমন কথায় লজ্জা পেলেন।ইতস্তত করে কথা ঘুরিয়ে বললো,তোর বাবা তোকে ডাকছে।এখনই কি যেতে হবে? হ্যাঁ,এক্ষুনি।ঠিক আছে মা আমি যাচ্ছি।
বাবা আসবো?হেরে মা আয়।ডেকেছিলে বাবা? হ্যা,শুন লুবনাতো কতদিন হলো এলো।এসে থেকেই বাসায়ই থাকে।তাই ভাবছিলাম কালতো শুক্রবার তোর কলেজ ও নেই যদি লুবনাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরিস লুবনার ভালো লাগবে তোরও ভালো লাগবে।অপলা কিছু একটা ভাবলো, তারও রিফ্রেশমেন্ট দরকার।তাই বলে দিলো কাল ও লুবনাকে নিয়ে বের হবে।হিশাম আহমেদ ভাবছিল মেয়েকে রাজি করাতে তার অনেক যক্কি যাবে।কিন্তু না তেমন কিছুই হলো না।মেয়েটা তাদের বড় হয়ে যাচ্ছে এইটাই হলো কষ্টের বিষয়।
চলবে………