তুমি একমাত্র আমার অধিকার পর্ব-১০ ১১

0
1630

#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১০_11
আমরা সবাই টেবিলে বসে আছি।আর ব্রেকফাস্ট করছি।তো বাবা বলল,আমার কিছু কথা বলার আছে।আমরা সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
বাবা বলল, আমি চাই আমাদের কোম্পানির সিইও হিসেবে শুভ্র জয়েন্ট করুক।আর ২য় ব্যাঞ্চটা ও সামলাক।কারন এই ব্যাঞ্চ সামলিয়ে আর ওইটা ভিজিট করা হয়না।তাই আমি চাই। তোমরা ওখানে শিফট হয়ে যাও।আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।তোমরা দুজন ওখানে গেলে হ্যাপি থাকবে।কোনো সমস্যা হবে না।

বাবার কথা শুনে আমিতো পুরো অবাক।কারন সবাইকে ছেড়ে আমি কখনোই থাকিনি।তাই আমি বললাম, তোমরা!

চাচ্চু বলল,চিন্তা করো না।আমরা কদিন পর পরই যাব তোমাদের দেখতে।তোমার মা,চাচিমা,বাবা সবাই যাবে।কারন শুভ্র এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে।ওর দায়িত্ব নেয়া উচিত।
চাচ্চুর কথার মাঝেই বাবা বলল,শুভ্র আমাদের একমাত্র ছেলে।আমরা না থাকলে সব দায়িত্ব তো ওকেই নিতে হবে।আর সামনে অরিনের বিয়ে।তখন এসে আবার অনেকদিন থাকতে পরবে।

___________ ___________
দুপুরের দিকে অয়ন আর ফুপ্পি বাসায় এসেছে।আজকে আমাদের পরিবার পরিপূর্ণ হয়েছে যেমনটা গত ৫ বছর আগে ছিল।সবাই মিলে প্ল্যান করছে ফ্যামিলি ট্যুর করার।যেহেতু অনেক বছর পর সবাই একত্রিত হয়েছে আবার অরিন আপুও চলে যাবে, আমি আর শুভ্র ও চলে যাব তাই একটা ট্যুর খারাপ হবে না।আর ঘুরতে যেতে আমার অনেক ভালো লাগে।আর এখন শুভ্র ও বেশি ধমক দেয়না ।তাই আশা করা যায় ট্যুরটা ইনজয় করতে পারব।অনেক তর্কাতর্কির পর ঠিক হলো একটা রিসোর্টে ভাড়া নিয়ে থাকা হবে আর নিজেরা রান্না করা হবে।পিকনিকের মতো আরকি।

আমি ব্যাগ গুছাতে বসছি।কিন্তু আমার তো কোনো ড্রেসই নাই।আমার সারা জীবনকার অভ্যাস কোনো জায়গায় যাওয়ার আগে কি ড্রেস নিব খুঁজে পাই না।মনে হয় আমার কোনো ড্রেসই নাই নেয়ার মতো।আচ্ছা শুভ্রকে জিজ্ঞেস করে নেয়া যাক।শুভ্রের পছন্দ আবার 1st ক্লাস কিন্তু একটু আল্লাদী সুরে না ডাকলে ওনি সাহায্য করবে না উল্টো বকা দিবে আমি যানি।তাই একটু পটানো চেষ্টা করা যাক যদি কাজ হয়।

শুভ্র অয়নের সাথে কথা বলছে। হঠাৎ অয়নের ফোন আসায় ওঠে কথা বলতে চলে গেল।এখনই সুযোক শুভ্রকে ডাক দেয়ার।ওগো শোনছো,একটু এইদিকে আসবে প্লিজ।
তুই আমাকে ডাকছিস! আসলে মনে হয় আমার এমন উদ্ভট ডাকের কারনে উনি একটু অবাক।
হুম।আপনাকেই ডাকছি, আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম।
তুই ঠিক আছিস? তোর শরীর ঠিক আছে?জ্বর আসছে নাকি আবার!বলে ওনি আমার কপাল চেক করলেন।
কেন? আমি ঠিক আছি।
তোর ভাব আমার বেশি সুবিধার ঠেকছে না।কি সমস্যা! কিছু মনে হচ্ছে তোর দরকার। নয়তো এভাবে ডাকার কথা না।তুই কি কিছু কিনবি?বলে সন্দিহান দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল শুভ্র
না মানে একটু রুমে আসবে!(নিরা)
কেন রে,বরকে মিস করছিলি বুঝি?
মিস করার কি আছে,আমি বললাম
তাহলে?
না এমনি আরকি।
ওকে বেবি আমি আসছি শুভ্র বলল।

______________ ______________

দেখ বাবা,অতীত ভুলে যা।অনেক ভালো একটা পাত্রি পেয়েছি।দেখ তোর পছন্দ হয় নাকি!দেখলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না,অয়নের মা বলল।
কিন্তু মা আমি আসলে..
দেখ বাবা,আমি জাস্ট দেখা করার কথা বলেছি।যদি তোর ও পছন্দ হয় আর ওই মেয়ের ও পছন্দ হয় তাহলেই কথা বলব।আমার তোর কাছে এটা আবদার।এবার অন্ত্যত বিয়ে করে আমাকে নিশ্চিন্ত কর।
আচ্ছা মা,ট্যুর থেকে আগে আসি তারপর দেখা করি।শুধু তুমি জোড়াজুড়ি করলে তাই দেখা করব।
__________ __________
হঠাৎ করে শুভ্র রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল।
কি ব্যাপার!দরজা আটকালে কেন?আমি মিনমিনিয়ে বললাম।
কেন আবার,তুই জানিস না নাকি!তুই ডাকলে আমি না এসে থাকতে পারি।একমাত্র বউ বলে কথা শুভ্র দাঁত কেলিয়ে বলল।
দেখো ভালো হবে না।আর এক পা ও এগুবে না।
হুম দেখছিই তো তোকে।আর কিভাবে দেখব।আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে শুভ্র বলল।
আমি কিন্তু চিৎকার করব এবার।আমি কিছুটা সাহস নিয়ে শুভ্র কে বললাম।
হুম,তুই চিৎকার কর।আমি তোর মুখ ধরে রেখেছি নাকি!তুই ভুলে গেছিস যে আমার রুম সাউন্ড প্রুফ।
এই মুহূর্তে কথা না ঘুরালে বিপদ নিশ্চিত। ভাইয়া ও ভাইয়া আমি তোমার একমাত্র কাকাতো বোন।তাই ভালোই ভালোই যেতে দেও।নয়তো কিন্তু এলাকায় তোমার নামে বদনাম রটাবো।
তাই নাকি! তো আমি তো আমার বোনকে আমার রুমে আনিনি।আমি আমার বউ এর সাথে রোমাঞ্চ করব।তোর কি?অবশ্য আমার মতো স্নার্ট,হট ছেলে দেখা ভুলেও কোনো সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করিস না।আমি পিউর মেরিড।আমার বউ আছে।ওকে।

___________ ____________
আর কতক্ষন লাগবে নিরাপাখি তোমার রেডি হতে?লেট হয়ে যাচ্ছে।

#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১১(Special)
আর কতক্ষন লাগবে নিরাপাখি তোমার রেডি হতে?লেট হয়ে যাচ্ছে।আর অবশ্যই মেকাপ কম করবে।আমার বউ ন্যাচারাল ভাবেই অনেক সুন্দর

আমি রেডি।চলুন আমি বললাম।
ওয়েট।এই নাও হাত মোজা আর পা মোজা।এগুলো পরে নাও।আর এইযে জ্যাকেট আর মাথার টুপি এগুলো ও পরে নাও।আর মাফলারটা গলায় পেচিয়ে নাও।
হুয়াট!এখন অতটা ও শীত না যে এতকিছু পড়তে হবে,আমি বললাম।
লিসেন,যদি তুমি এগুলো না পড়ো তাহলে তোমার যাওয়া ক্যানসেল।আর তুমি জানোই আমি এক কথার মানুষ। এখন তোমার ইচ্ছে,মন চাইলে যাবে, মন চাইলে থাকবে।সিম্পল হিসাব।কথাগুলো শুভ্র বেশ ভাব নিয়ে বলল।
ওকে ওকে।আমি রাজি।আমি এক্ষুনি এগুলো পড়ে নিচ্ছি।আসলে চাচাতো ভাই বর হলে যা হয় আরকি।সবই আমার কপাল।কথায় কথায় থ্রেড দেয়।আর আমাকে সহ্য করতে হয়।আমি কথাগুলো ওনাকে শোনানোর জন্য একটু জোড়ে জোড়ে বললাম।আর আমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে তো আপনাকে বিয়ের পরেরদিনই ডিভোর্স দিয়ে দিতো।আমি ভালো বিধায় এখনো ডিভোর্স দেয়নি।

শুভ্র হালকা হেসে বলল,রিয়েলি!শোন আমি ভালো ছেলে তাই তোমার মতো বাদরের সাথে এখনো এক ছাদের নিচে থাকছি।অবশ্য আমার বাড়িতেই আমি থাকছি।আর শোন তোমার সমস্যা হলে তোমার বাপের বাড়ি চলে যেতে পারো।আর ভুলে ও আমার কিংবা আমার কাকাই এর বাড়ি আসবে না কিন্তু।
আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম,বাহ!আপনি কতো বুদ্ধিমান! ত সুন্দর করে আমাকে ঠান্ডা মাথায় বাঁশ দিলেন।তা কবে থেকে নিজের কাকাই এর প্রতি এতো দরদ জন্মেছে?আর কাকাতো বোনের জন্য ও একটু দরদ তো দেখাতেই পারেন।বাই দা ওয়ে কামারের দোকানে কোরআন পড়ে কোনো লাভ নাই।এবার ঝগড়া বন্ধ করে নিচে চলুন।

দুটি গাড়ি যাবে রিসোর্টে।একটা শুভ্র ড্রাইভ করছে আর আমি পাশে বসেছি।পিছনে অরিন আপু আর আবির ভাইয়া। আর এর পিছনের ছিটে অয়ন আর একটা মেয়ে। ফুপ্পি বলল ওই মেয়েটা নাকি ফুপ্পুির আত্মাীয়।আর আরেকটাতে সব বড়রা বসেছে।

আমি জানালা খোলে মুখ বাহিরে দিয়ে প্রকৃতি অনুভব করতে লাগলাম।আসলে রিসোর্টটা শহর থেকে অনেকটা দুরে।এজন্য পরিবেশ খুব সুন্দর। শুভ্র ড্রাইভ করার পাশাপাশি আড় চোখে আমাকে দেখছে।আর পিছনে অরিন আপুরা সবাই গল্প করছে শুভ্র ও মাঝে মাঝে রেসপন্স দিচ্ছে ।দেখতে দেখতে রিসোর্টে আমরা চলে এসেছি।রিসোর্টটা খুব সুন্দর। রুম গুলো কুঁড়েঘর টাইপ।আর সাথেই একটা লেক আছে।জাস্ট নাইস একটা প্লেস।

একটু লং জার্নি হওয়ার কারনে সবাই যার যার রুমে রেস্ট নিচ্ছি।অরিন আপু আর ওই মেয়েটা মানে আনায়া আর ফুপ্পি এক রুমে।আর অয়ন আর আবির ভাইয়া এক রুমে।আর সব কাপোলরা যার যার আলাদা রুমে।আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি।শরীর যেন আর চলছে না। শুভ্র বলল,
হেই ল্যাজি গার্ল,এতটুকু জার্নি করেই এই অবস্থা।আমি আরো চিন্তা করছিলাম আমরা হানিমুনে কক্স-বাজার যাবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যাওয়ার আগে ওখানে তোর জন্য ট্রলি ভাড়া করতে হবে। তোকে হোটেলের বেড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আচ্ছা তোমার কি সমস্যা?আমাকে খোঁচা না নিয়ে কথা না বললে কি ভালো লাগে না তোমার?আর একবার তুমি একবার তুই বলো কেন?
আরে বুঝিস না কেন?যখন রোমান্টিক মুডে থাকি তখন তুমি ডাকি,আর যখন সাধারণ মুডে বা ফাইজলামির মুডে থাকি তখন তুই ডাকি।চিন্তা করছি এখন থেকে আপনি বলে ডাকা ও শুরু করব বলে শুভ্র দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল।
আমার ইচ্ছে করছে তোমার মাথায় বারি দিতে।কখনো তো কোনো পার্কেই নিয়ে যাও নি।আবার হানিমুন!বুড়ো লোক কোথাকার।
আমি বুড়ো! এখনো হাজার হাজার মেয়ে লাইন দিয়ে আছে।জাস্ট রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলেই হয়।আমি বিবাহিত জেনেও অনেক মেয়ে প্রপোজ করেছে আর বলেছে তাদের কোনো সমস্যা নেই।
কথাগুলো শুভ্র মুখের চোটে বলে বলে ফেলেছে।
হুয়াট?তাই নাকি!আমাকে তো আগে বলোনি।ও আচ্ছা আমাকে বলবেই বা কি করে!আমি তো পুরোনো হয়ে গিয়েছি।এটাই বুঝি আমার কপালে ছিল যে সতীনের সংসার করতে হবে।চুল টানাটানি করে সংসার করতে হবে
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো,হুয়াট ননসেন্স! এগুলো তুই কি বলছিস?আর এভাবে বিলাপ করে কথা বলছিস কেনো?
আমি ঠিকই বলছি বলে আমি রেগে চলে গেলাম আর শুভ্রকে বললাম আমার সাথে যেন কথা না বলে।

এদিকে শুভ্র এখন হারে হারে বুঝতে পারছে যে সে কত বড় ভুল করে ফেলেছে।ধুর কে বলেছিল যে এত বেশি কথা বলতে!আমার নিরাপাখি সাংঘাতিক রাগী। এখন কি করি!ভাবতে ভাবতে দেখি নিরাপাখি আমার সামনে। আর ওর মুখ রাগে লাল হয়ে আছে।

কি ব্যাপার৷ শুভ্র? আনিকা কে!আমি জিজ্ঞেস করলাম
আমার কথা শুনে যেন শুভ্র আকাশ থেকে পড়েছে।
কে আনিকা শুভ্র আমাকে জিজ্ঞেস করল।
ওহ তুমি আনিকাকে চিনো না।লাইক সিরিয়াসলি!নাকি না চেনার ভান করছ?
সত্যি বলছি কে আনিকা?
আনিকা হচ্ছে সে যে তোমার প্রতিটি ফেসবুক পোস্টে লাইক,কমেন্ট করে আর ৩ মাস আগের ওর একটা কমেন্টে খুব সুন্দর ভাবে রিপ্লাই ও দিয়েছো।এই ছিল তোমার মনে?
ওহহ ওই আনিকা।ও তো আমরা ছোটবেলার ফ্রেন্ড। অনেক কিউট দেখতে। হাসলে গালে টোল পড়ে।পুরো পুতুল।অনেক ভালো মেয়ে।

আমার রাগ ক্রমগত বাড়তেই আছে।ও আচ্ছা। আনিকার অনেক কিউট না!ওর হাসলে গালে টোল পড়ে।আমার ও তো হাসলে গালে টোল পড়ে। কই আমাকে তো তুমি কোনো দিন বললে না।আর আমি কোন দিক দিয়ে ওর চেয়ে কম?বলে কেঁদে দিলাম।এটা আমার অভ্যাস।বেশি রাগলে কেঁদে দেই।আমাকে কাদতে দেখে শুভ্র আমাকে কাছে টেনে নিল আর বলল,আমার নিরাপাখি এতটা জেলাস? আমি তো আগে জানতাম না।এমন একটা কিউট বউ থাকতে আমি অন্য মেয়েকে ভালো কেন বাসবো!বলে আমাকে কাছে টেনে নিলো আর আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিল।আমি তো পুরো অবাক।আমার হার্টবিট যেন ডাবল হয়ে গেছে।

____________ _____________

আজকে রাতে বারবিকিউ পার্টি।ছেলেরা রান্না করবে।আর মেয়েদের ছুটি।কিন্তু বোর হয়ে যাচ্ছি বসে থাকতে থাকতে।তখনই অয়ন বলল…

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here