তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (১৫)

#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (১৫)
তামিম রুমে এসে নিতুকে বললো,”নিতু,তুমি যেই কাজটি করেছ তা ভীষণ খারাপ হয়েছে। নতুন বিয়ে হয়েছে বলে আমি কিছু বললাম না কারো সামনে। ভবিষ্যতে এরকম কাজ করবে না।উনি আমার মা,ওনাকে অসম্মান করার অধিকার তোমার নেই।”

নিতু বললো,”আমি ও তোমার বউ,ওনার কি অধিকার আছে আমাকে অসম্মান করার?”

তামিম অবাক হয়ে বললো,”মা তোমাকে অসম্মান করেছে কখন?”

নিতু বললো,”আমি এই বাসায় আসার পর থেকেই দেখছি উনি লুবনাকে যেমন চোখে দেখেন,দিশাকেও তেমন। সেটা আমার সমস্যা না,আমার বেলায় কেনো উনি এভাবে ট্রিট করেন?
তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে মাত্র দুই রাত গেলো,উনি কিভাবে নবদম্পতির রুমের দরজা নক করতে শুরু করেন সাত সকালে?এটা কি আমাকে অপমান করা নয়?
উনি আমাকে বলেছেন ওনার পা টিপে দিতে আমি দিয়েছি।কিন্তু ২০ মিনিট পরে যখন আমি চলে আসতে নিয়েছি উনি আমাকে বলছেন এখনো ওনার পা ব্যথা কমে নি,আরো টিপে দিতে।উনি কি এটুকু বুঝে না নতুন অবস্থায় সবাই একে অপরকে একটু সময় বেশি দেয়।এভাবে আমাকে আটকে রাখতে চাওয়া উচিত নয়।
সকালে উনি দিশা আর লুবনার জন্য নাশতা বানালেন,আমার জন্য তো কিছুই বানালেন না।কেনো বলো?”

তামিমের কাছে এসবের কোনো জবাব নেই।জবাব থেকে কি হবে,তামিম কি করতে পারবে?মা’কে কিছু সে বলতে পারে না।অথচ মা ও বুঝতে চাচ্ছে না এ নবনী নয়,সবাই নবনী হয় না যে পুতুলের মতো নাচাবে ইচ্ছে মতো।

তামিম গম্ভীরমুখে বললো,”নিতু,আমি তর্ক করতে চাচ্ছি না। আমি চাচ্ছি তুমি যেনো মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করো।মনে রেখো,মায়ের জন্যই তুমি এই বাসায় বউ হয়ে আসতে পেরেছ।নয়তো লুবনাকে বিয়ে না দিয়ে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব ছিলো না। ”

নিতু ফিক করে হেসে বললো,”হ্যাঁ তা ঠিক বলেছ।তোমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।কিন্তু তোমার ছোট ভাইয়ের পক্ষে ঠিকই সম্ভব ছিলো বড় ভাইয়ের আগে বিয়ে করে নেওয়া।”

তামিমের ভীষণ রাগ হলো। নিতুর এভাবে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা তামিমের ভালো লাগছে না।তামিম একটু শান্তি চায়।নিজেকে আজকাল ভীষণ একা লাগে।জীবন নদীতে সে যেনো গন্তব্যহীন এক নৌকার মাঝি।কোথায় যাবে কিছুই জানে না।যে যা বলে তাই করে।নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই।

তামিমের ভীষণ ইচ্ছে করে একটু সুখী হতে।সুখ কোথায় পাওয়া যায়?

নিতু বিছানায় শুয়ে বললো,”তামিম,আমি আগামীকাল অফিস থেকে বাসায় চলে যাবো।আমি বুঝতে পারছি তুমি আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারছ না।”

“তুমি কোথাও যাবে না নিতু,যদিও যাও তবে মনে রেখো আমি তোমাকে অনুমতি দেই নি।গেলে সেটা হবে তোমার ঔদ্ধত্য। ”
তামিম রুম থেকে বের হয়ে গেলো এই বলে। নিতু ভাবতে লাগলো আসলে সমস্যা কার?তার নাকি এদের সবার?
সে নিজেই কি শাশুড়ীকে ভিলেন ভাবছে?

নিতু সিদ্ধান্ত নিলো,এখন থেকে নিজেকে সামলে নিবে।শাশুড়ীর সাথে এভাবে কথা বলবে না।হয়তো মানুষটা ভালোই, স্বামী শোকে এরকম করছে।নিতু ভালো ব্যবহার করলে তিনিও ভালো ব্যবহার করবেন।

————–

গতরাতে বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাটে পানি জমে আছে। নবনী সকাল সকাল বের হয়েছে বাসা থেকে।গতকাল ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখে একটা বিজনেসের আইডিয়া মাথায় এসেছে।আজকাল মানুষ বাসায় বসেই ব্যবসায় করছে,নবনী ভাবছে তবে আমি ও একটু চেষ্টা করে দেখি।

মার্কেট থেকে বিভিন্ন রঙের দশটা শাড়ি কিনলো নবনী। প্লেইন শাড়ি,কোনো ডিজাইন ছাড়া কাঁথা সেলাই করার জন্য।সেই সাথে বেশ কিছু সুতা,লেইস,কিছু চুমকি,ফ্রেম,কলম,পেন্সিল,চক।

সব নিয়ে বাসার দিকে হাটা শুরু করলো। নিজের স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে গিয়ে এতোটাই নিমগ্ন হয়ে গেলো যে একটা পাজেরো কখন যে তার গায়ে কাঁদা ছিটিয়ে দিয়েছে খেয়াল করলো না। খেয়াল হতেই নবনীর ফর্সা মুখখানা রাগে লাল হয়ে গেলো।

গাড়ির চালক ও ততক্ষণে গাড়ি থামিয়ে নেমে এসেছে। নবনীর সামনে এসে বললো,”আমি খুবই দুঃখিত ম্যাডাম। আমি খেয়াল করি নি আপনাকে।”

নবনীর ভীষণ রাগ হলো।ভাগ্যিস প্লাস্টিকের ব্যাগে সব আলাদা করে প্যাকেট করায় ওসব নষ্ট হয় নি।নয়তো ব্যবসায় শুরু করার আগেই লস খেতে হতো।

গাড়ির চালক আবারও বললো,”আপনি কোথায় যাবেন ম্যাডাম আমাকে বলুন,আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।এভাবে তো হেটে যেতে পারবেন না।লোকজন হাসবে।আবারও সরি,প্লিজ অপরাধ ক্ষমা করবেন।”

নবনী একটা কথাও না বলে চোখ বড় করে তাকালো। নবনীর কপালে ও কাঁদার ছিটকা,গায়ের জামা কাঁদায় মাখামাখি।

লোকটা পকেট থেকে টিস্যু বের করে নবনীর কপালের কাঁদা মুছে দিতে গেলো,নবনী দুই পা পিছিয়ে গেলো সাথেসাথে।

বিরক্ত হয়ে হাটতে লাগলো বাসার উদ্দেশ্যে। মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে।
ইচ্ছে করছিলো বেশ কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে,তবুও কিছু বললো না।

রাবেয়া নবনীর গায়ে এতো কাঁদা দেখে অবাক হলো। জিজ্ঞেস করার আগেই নবনী বললো,”আর বলো না মা,আসার সময় একটা গাড়ি কাঁদা ছিটিয়ে দিলো। ভাগ্যিস যাওয়ার সময় এই কাজ হয় নি।নয়তো এতো পথ হেটে গিয়ে আবারও বাসায় আসতে হতো। ”

হাতের সব ব্যাগ রেখে আগে গোসল করে এলো। একটা হলুদ থ্রিপিস পরে বের হলো নবনী।রাবেয়া মুগ্ধ হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বললো,”মাশাল্লাহ,কারো নজর না লাগুক।”

গোসলের পর নবনীর কোমর পর্যন্ত ঘন লম্বা চুলগুলো যেনো কিছুটা মুক্তি পেলো।নবনী সবসময় চুল খোঁপা করে রাখে।রাবেয়ার মন খারাপ হয়ে গেলো আবার হঠাৎ করেই। এতো সুন্দর একটা মেয়েকে মানুষ কিভাবে এতো কষ্ট দিলো?
এর মুখের দিকে তাকালেই তো বুঝা যায় কতো মায়াবী এই মেয়েটা।

নবনী রাবেয়াকে ডেকে বললো,”মা,এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন পূরনের প্রথম ধাপ।তুমি না ভীষণ সুন্দর করে কাঁথা সেলাই করতে পারো।আমি তো বাসায় থাকি সারাক্ষণ। আমরা মা মেয়ে মিলে কাঁথা সেলাই করবো।আজকাল এসবের ভীষণ চাহিদা মা।আমাদের অলস সময় ও কাটবে,হয়তো কিছুটা আর্থিক সাপোর্ট ও পাবো।”

হাশেম আলী ডাইনিং রুমের চেয়ারে বসে আছেন।তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।মেয়েটা শুধু পরিবারের কথা ভেবে যাচ্ছে। অথচ তিনি কিছুই করতে পারছেন না পরিবারের জন্য।নবনী তাকে কিছু করতে দিচ্ছে না।
নবনীর এক কথা,আমাকে ভাবতে দাও এসব নিয়ে। তুমি বিশ্রাম নাও।

সারাদিন গেলো মা মেয়ের কাঁথার বেজ তৈরি করতে।ভেতরে রাবেয়ার একটা শাড়ি দিয়ে দুই পাশে দুটো খয়েরী রঙের শাড়ি দিয়ে বেজ তৈরি করলো।তারপর মনের মাধুরি মিশিয়ে নবনী একটা সহজ ডিজাইন আঁকলো পুরো কাঁথায়।

রাবেয়া বেগম বসে বসে কাঁথার পাঁড় সেলাই করে নিলেন সাদা লেইস লাগিয়ে।
এসব করতে করতেই নবনীর বিকেল হয়ে গেলো। নবনীর মনে পড়লো টিউশনিতে যেতে হবে।টিউশনির কথা মনে পড়তেই নবনীর গলা শুকিয়ে গেলো। কে জানে আজকে গেলে নীড়ের কিসব কথা শোনা লাগে।

মনে মনে আল্লাহকে বললো নবনী,”রহম করো খোদা,অবুঝ শিশুর মনকে অবুঝ করে দাও।”

আজও শিমলা নবনীর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো।নবনী ভেতরে যেতে যেতে শুনতে পেলো ভেতরে ভীষণ হুটোপুটি হচ্ছে। নবনী আতঙ্কিত হয়ে তাকালো।শিমলা হেসে বললো,”না না,ভয় পেও না।নীড়ের মামা এসেছে,মামার সাথে বক্সিং খেলছে।”

নবনী বললো, “আজকে পড়বে না?”

শিমলা হেসে বললো, “কে জানে ভাই,তুমি দেখো পড়াতে পারো কি-না। ”

নবনী ভেতরে ঢুকতে গিয়ে কিছুটা বিব্রত হলো।খালি গায়ে নীড় আর নীড়ের মামা বক্সিং করছে।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নবনী দরজা নক করলো।

নীড় বললো,”মিস এসেছেন আপনি? ভালো হয়েছে,তাড়াতাড়ি আসুন।মামা আমার মিস এসেছেন”

মেঘ বুঝতে পারলো বাহিরে অন্য কেউ।তাই তাড়াতাড়ি নিজের টিশার্ট গায়ে দিয়ে নিলো।তারপর গলা খাকারি দিয়ে বের হলো।

নবনী ভেতর থেকে আওয়াজ পেয়ে অন্য দিকে আড়াল হয়ে দাঁড়ালো। চেয়ারে বসতেই নীড় বললো, “মিস আজকে তো আমি একা পড়বো না।আজকে আমি আর মেঘ একসাথে পড়বো।মেঘ না পড়লে আমিও পড়বো না”

নবনী জিজ্ঞেস করলো, “মেঘ কে?”

নবনীর কথা শেষ না হতেই নীড় চিৎকার করতে লাগলো মেঘ মেঘ বলে। নীড়ের চিৎকার শুনে মেঘ ও ছুটে এলো।

মেঘকে দেখে নবনী যেনো শক খেলো।মেঘ নবনীকে দেখে বললো,”আরে ম্যাডাম আপনি যে!আবারও দেখা হয়ে গেলো। ”

নবনী চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলো মেঘের দিকে।মেঘ আত্মসমর্পনের ভঙ্গি করে বললো,”আমি তো আপনাকে শুরুতেই সরি বলেছি ম্যাডাম নবনীতা। আপনি তো আমাকে ক্ষমা করলেন না,একটা কথা ও বললেন না। উল্টো চোখ রাঙিয়ে চলে গেলেন।আমি তো ভাবলাম আপনি হয়তো বোবাকালা। কথা বলতে বা শুনতে পান না।আমি ইচ্ছে করে আপনার গায়ে কাঁদা ছিটাই নি,বিশ্বাস করেন।সকালে ওটা একটা এক্সিডেন্ট মাত্র।”

নবনী ভীষণ বিরক্ত হলো। তবুও চুপ হয়ে বসে রইলো।

মেঘ বুঝতে পারলো না মেয়েটার এভাবে স্ট্যাচুর মতো বসে থাকার মানে কি!
মনে হচ্ছে যেনো কোনো কথাই জানে না।অবাক হলো মেঘ,যেখানে মেঘের সাথে একটু কথা বলার জন্য মেয়েরা উতলা হয়ে যায়, একটু চান্স পেলেই কথা বলতে আসে সেখানে মেঘ সেধে সেধে কথা বলছে তাও এই মেয়ে কথা বলছে না!

মেঘের ইগোতে লাগলো। মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগে নবনী উঠে গেলো। তারপর হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।শিমলা নবনীকে বের হতে দেখে এগিয়ে এলো। নবনী বললো,”আপু আজ মনে হয় নীড় পড়বে না।আমি বরং আসি এখন।”

শিমলা কিছু বলার আগেই নীড় এসে নবনীর হাত টেনে ধরলো। টানতে টানতে পড়ার টেবিলে নিয়ে গেলো।নবনী গিয়ে দেখলো মেঘ নেই। নবনী কিছুটা স্বস্তি পেলো।

তারপর ইংরেজি বর্ণমালা লিখে দেওয়া গতকালের সেই খাতাটা নিয়ে বললো,”আসো,মিসের সাথে এগুলো পড়ো।”

নীড় মাথা নাড়িয়ে বললো,”এগুলো তো গতকাল পড়েছি মিস,আজকে অন্য কিছু পড়বো।”

নবনী ছোট হাতের ইংরেজি বর্ণমালা লিখে দিয়ে বললো, “এগুলো হচ্ছে ছোট হাতের a b c d। আজকে আমরা এগুলো পড়বো।”

নীড় বিরক্ত হয়ে বললো,”উফ মিস,আমি তো দেখেছি আপনি এগুলো আপনার বড় হাত দিয়ে লিখেছেন ছোট হাতের কিভাবে হলো? ”

নবনী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”বড় হাত ছোট হাত যেই হাত দিয়েই লিখি না কেনো,এটার নাম ছোট হাতেরই হবে নীড়।দুষ্টুমি করো না।”

নীড় কিছুক্ষণ নবনীর সাথে পড়লো। তারপর m পর্যন্ত পড়ে বললো,”মিস আচ্ছা এগুলো কে আবিষ্কার করেছে?সে এতো বোকা কেনো?ছোট হাতের অ আ ক খ এসব বানায় নি কেনো মিস?আমি এখন আর পড়বো না।আমি ছোট হাতের অ আ ক খ নিয়ে ভাবতে বসবো।আমি এগুলো আবিষ্কার করবো এখন।”

নবনী চোখ রাঙিয়ে বললো,”দুষ্টুমি করে না নীড়।আসো পড়বো।”

নীড় নবনীর কথা শেষ হবার আগেই ছুটে বের হয়ে গেলো। নবনী ভেবে পাচ্ছে না একে কিভাবে পড়াবে।

শিমলা এসে নবনীকে ডেকে নিয়ে গেলো চা খাবার জন্য।যদিও শিমলা বুঝতে পেরেছে নবনী আজ ও গতকালের মতো এক গ্লাস পানি খাবে,শিমলার কথা শুনবে বসে বসে।
শিমলার সাথে কথা বলতে বলতে নবনী ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো। দেখলো মেঘ একটা সোফায় বসে চা’য়ে বিস্কিট ডুবিয়ে খাচ্ছে।

নবনীকে দেখে বললো,”উনি কে রে আপা?তোর নবনী মিস?”

শিমলা হেসে বললো,”হ্যাঁ উনি ই সেই মিস।”

মেঘ বললো,”উনি কথা বলতে পারে? দাঁতে পোকা নেই তো আবার?”

শিমলা আশ্চর্য হয়ে বললো,”কি বলিস এসব?”

মেঘ বললো,”আমি কতোক্ষণ ধরে ওনার সাথে কথা বললাম,উনি কোনো জবাব দিলো না। তাই ভাবলাম দাঁতে হয়তো পোকা হয়েছে।”

নবনীর ভীষণ বিরক্ত লাগলো এসব ফালতু আলাপ শুনে।উঠে দাঁড়িয়ে বললো,”আমি আজ আসি আপা।”

অনুমতির অপেক্ষা না করেই বের হয়ে গেলো।

শিমলা আর মেঘ মামাতো ফুফাতো ভাই বোন,দুজনের মধ্যে ভাইবোনের মতো সম্পর্ক। বিশেষ করে মেঘের সাথে নীড়ের সম্পর্ক ভীষণ ভালো। গতকাল নীড়ের দুর্ঘটনা ঘটার কথা শুনে মেঘ চলে এসেছে নীড়কে দেখতে।

নবনী বের হতেই মেঘ বললো,”এ মেয়ে না-কি অন্য কিছু আপা?এতো হ্যান্ডসাম একজন যুবক তার সামনে, এভাবে ফ্ল্যার্ট করার চেষ্টা করছে তার সাথে। অথচ কোনো পাত্তাই দিলো না।দেখ,তোর নবনীতার জন্য আমি পরনের টিশার্ট চেঞ্জ করে শার্ট পরে বসেছি।তাও তাকালো না আমার দিকে!আমার এই শ্রমের মর্যাদা এই নবনীতা দিলো না।”

শিমলা বললো,”তুই এতো পাত্তা পেতে চাচ্ছিস কেনো?তোকে পাত্তা দেয়ার মানুষের কি অভাব নাকি?”

মেঘ সোফায় শুয়ে পরে বললো,”তুই বুঝবি না আপা,এটাই তো মজা।পাথরে ফুল ফোটাবার অন্য রকম এক আনন্দ।”

শিমলা হেসে বললো,”ডুবলি অবশেষে? ”

মেঘ হেসে বললো,”সে তো সকালেই তোর নবনীতা আমাকে ডুবিয়ে দিয়েছে রে আপা।”

তারপর সকালে ঘটে যাওয়া কাহিনি খুলে বললো।শুনে শিমলা বললো,”বাবা রে বাবা,এতো দেখছি সিনেমা।নায়কের গাড়ি থেকে নায়িকার গায়ে কাঁদা ছিটকে যাওয়া। তারপর ঝগড়া,তারপর প্রেম। ”

মেঘ বললো,”না রে আপা,তোর মিস তো কথাই বললো না আমার সাথে। জানিস আমি না কিছুতেই গাড়ি থেকে নামতাম না।বৃষ্টির সময় এরকম হয় একটু আধটু।কিন্তু লুকিং গ্লাসে যখন দেখলাম আকাশি রঙ জামা গায়ে একখণ্ড আকাশ এসে দাঁড়িয়েছে রাস্তায়, আমার পৃথিবী থেমে গেলো। আমি গাড়ি রেখে পিছু নিয়ে বাসা পর্যন্ত দেখে এসেছি আপা।”

শিমলা হাসলো শুনে।তারপর বললো,”মেয়েটা ভীষণ ভালো মেঘ।ওর সাথে মজা নেয়ার চেষ্টা করিস না।ওর কথা শুনে যতোটা বুঝেছি ফ্যামিলির অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। মেয়েটা চাকরি খুঁজছে।বাসায় বাবা মা ভাই বোন আছে,ভাই বোন সবাই ওর ছোট। সব চাপ মেয়েটার মাথায়।আমার এতো ভালো লেগেছে ওর সাথে কথা বলে যে নীড় এর টিচার হবার জন্য এক প্রকার জোর করতে লাগলাম।”

মেঘ হেসে বললো,”তোর ভাই আছে না আপা,ভাবনা কিসের।আমার অফিসে ওকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিবো।”

শিমলা বললো,”মেয়েটার প্রবল আত্মসম্মানবোধ মেঘ,গতকাল আমি এতো কিছু নাশতা দিলাম,এতো ইমোশনাল কথা বললাম তবুও সে পানি ছাড়া আর কিছুই খায় নি।যদি বুঝতে পারে তুই দয়া দেখিয়ে চাকরি দিচ্ছিস তবে কিছুতেই করবে বলে মনে হয় না।”

মেঘ বললো,”আপা,আমি সিরিয়াসলি বলছি,আমার অফিসে একজন পিএ লাগবে আমার। আমি বিজ্ঞাপন ও দিয়েছি।ও যেহেতু ট্রাই করছে চাকরির জন্য, ওকে বল না আমার অফিসে ও আবেদন করতে।ইন্টারভিউ নিবে বাবা।তোর মামাকে তো তুই জানিস,উনি নিশ্চয় স্বজনপ্রীতি করার লোক নয়।যদি টিকে যায় আমার জন্য গুড লাক।না টিকলেও অসুবিধা নেই,আমি অন্য ভাবে নবনীতাকে দেখার ব্যবস্থা করে নিব।তবুও এই নবনীতার গম্ভীর চেহারা আমি দেখবো।কতোদিন এভাবে গম্ভীর হয়ে থাকতে পারে আমি দেখবো সেটা। ”

চলবে……

রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here