তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (০৮)

#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (০৮)

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফাল্গুনী আর চৈতালী নবনীকে তাদের পাশে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে হেঁড়ে গলায় চিৎকার করে উঠলো। সাব্বির নিজের রুমে নামাজ পড়ে সবেমাত্র বিছানা ভাঁজ করে রাখছে এমন সময় বোনদের এমন চিৎকার শুনে আতঙ্কিত হয়ে ছুটলো তাদের রুমে।
দুই বোনের চিৎকারে নবনী ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলো।

রাবেয়া বেগম উঠান ঝাড়ু দিচ্ছে। মেয়েদের চিৎকার শুনে ঝাড়ু ফেলে ছুটে আসলেন।

সাব্বির বড় আপাকে দেখে ফাল্গুনী আর চৈতালীর চাইতে জোরে চিৎকার দিলো।সাব্বিরের সাথে তাল মিলিয়ে ফাল্গুনী আর চৈতালী ও চিৎকার দিলো আবার।
নবনী দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বসে আছে। রাবেয়া বেগম হাঁফাতে হাঁফাতে ঘরে এলেন।এসে দেখেন ভাইবোন তিনজন মিলে নবনীকে ঝাপটে ধরে আছে।

বিছানার এক পাশ থেকে শলার মুঠো নিয়ে রাবেয়া তিনজনকে মারতে মারতে বললো,”ছাড় আমার মেয়েটাকে,একটু আগে ও ঘুমিয়েছে। তোদের তিনজনের চাপে ও মরে যাবে।”

রাবেয়ার কথাকে কেউ পাত্তা দিলো না।নিজেদের মতো হৈহল্লা করতে লাগলো।
রাবেয়া বেগমের চোখের কোণে জল জমতে লাগলো। কতোদিন পরে নিজের চার ছেলেমেয়েকে একইসাথে দেখতে পাচ্ছেন তিনি।বুকটা আজকে ভীষণ শান্ত লাগছে।নবনীর জন্য এতোদিন মন উচাটন থাকতো তার।
নিজের চোখের সামনে সব ছেলেমেয়েদের একসাথে দেখার মতো সুখ মায়েদের কাছে আর কি হতে পারে!

হাশেম আলী নামাজ পড়ে বাসায় আসার সময় আজকে হোটেল থেকে পরোটা,দুইটা ডিম ভাজি,সবজি এনেছেন। পকেটে যদিও তেমন একটা টাকা ছিলো না তবুও আজকে তার বড় মেয়ে বাড়ি এসেছে।এই আনন্দে তিনি পকেটে কি আছে না আছে তা নিয়ে মাথা ঘামালেন না।প্রতিদিন তো আর ভালো খাওয়াতে পারেন না ছেলেমেয়েদের। আজ না হয় সবাই মিলে একসাথে আনন্দ করে খাবে।

বাড়ি এসে দেখে ছেলেমেয়েরা সবাই বারান্দায় পাটিতে বসে আছে। হাসাহাসি করছে সবাই মিলে।হাসতে হাসতে একে অন্যের গায়ের উপর ঢলে পড়ছে।অনেক দিন পর হাশেম আলীর বুকটা খুশিতে ভরে উঠলো। নয়ন জুড়িয়ে গেলো তার।নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে এলো।

গলা পরিস্কার করে হাশেম আলী নবনীকে ডেকে বললো,”তোরা সব কই,আয় সবাই মিলে নাশতা করবো।”

রাবেয়া রান্নাঘর থেকে প্লেট বাটি নিয়ে এলো। গতরাতে নবনীর জন্য ভেজে রাখা ডিমটাও নিয়ে এলো।
গোল হয়ে সবাই মিলে খেতে বসলো।
হাশেম আলীর একটু পর পর চোখ ভিজে উঠছে আনন্দে।খেতে পারছেন না তিনি কিছুতেই। এতো আনন্দ কেনো লাগছে তার কে জানে!

খেতে খেতে নবনীর মনে হলো,ওই বাড়িতে সবাই না জানি এখন কি করছে!
দিশার টাইম টু টাইম নাশতা কে রেডি করে রাখছে?
লুবনার জন্য তার পছন্দের খাবার কে বানিয়েছে আজ?
তাহেরা বেগম মনে করে ইনসুলিন নিয়েছেন তো আজকে?
নামাজ পড়ে আসার পর হামিদুর রহমান আজকে চা খেয়েছেন কি?
তামিমের শার্ট প্যান্ট সব কি আয়রন করে রাখা আছে?
কে জানে!

নবনী সিদ্ধান্ত নিলো খাবার পর হামিদুর রহমানের এনে দেওয়া ব্যাগটা খুলে দেখবে সবাই মিলে।তারপর সে বাবা মা’কে নিজে থেকেই সবকিছু খুলে বলবে।

মুহুর্তেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলো,সাথে ঠান্ডা বাতাস। নবনী বললো,”মা,বৃষ্টির পানি নাও,আজ বৃষ্টির পানি খাবো।”

রাবেয়া প্লাস্টিকের জগটা টিনের চালের নিচে ধরতেই মুহুর্তে জগ ভর্তি হয়ে গেলো।
নবনী এক গ্লস পানি খেলো।সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো নবনীর।বিয়ের পর বৃষ্টি উপভোগ করার সময় হয় নি তার আর।অথচ বৃষ্টি দেখলেই আগে ভিজতে ছুটে যেতো ভাইবোন সবাই মিলে।
কে বলে বিয়ের পর মেয়েদের জীবনে পরিবর্তন আসে না?

খাবার পর নবনী সাব্বির কে বললো,”যা তো,রুমে গেলে দেখবি একটা বড় ব্যাগ আছে।নিয়ে আয়।”

সাব্বির তড়িৎ গতিতে ছুটে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে এলো। ফাল্গুনী দেখে জিজ্ঞেস করলো,”কি রে আপা এটাতে?”

নবনী বললো,”আমি নিজেও জানি না।এখন খুললে দেখবো।”

নবনী ব্যাগের চেইন খুলতেই দেখলো কতোগুলো শপিং ব্যাগ। সাথেসাথে নবনী বুঝে গেলো এখানে বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করে দিয়েছেন হামিদুর রহমান।
নবনীর ধারণা ভুল হলো না।প্রথমে বের হলো একই ব্যাগে সাদা ও খয়েরী রঙের দুটো পাঞ্জাবি,পাজামা,এক জোড়া লুঙ্গি। ব্যাগের উপরে লিখা,”প্রিয় বেয়াই সাহেবের জন্য”

পরের ব্যাগের উপরে লিখা,”শ্রদ্ধেয় বেয়াইন সাহেবার জন্য।”

ভেতর থেকে বের হলো আরামদায়ক কটনের দুই জোড়া শাড়ি। হাত দিয়ে ধরতেই কেমন আরাম আরাম লাগছে নবনীর।

রাবেয়া বেগম কিছুটা বিব্রত হয়ে বললো,”আমার জন্য এসব নেয়ার কি দরকার ছিলো?”

নবনী বললো,”মা,আমি কি জানতাম নাকি এই ব্যাগের ভেতর কি আছে।আমাকে কাউন্টারে বসিয়ে রেখে আব্বা গিয়ে এসব কিনে এনেছেন।”

পরের ব্যাগের ভেতর একটা আকাশীরং পাঞ্জাবি,দুটো শার্ট একটা লেমন কালার অন্যটি ল্যাভেন্ডার কালার। সাথে নীল দুটো জিন্সের প্যান্ট।একটা হাতের ঘড়ি,একটা ওয়ালেট, দুটো বডি স্প্রে।একটা স্মার্টফোন। ব্যাগের উপরে লিখা আদরের সাব্বির।

সাব্বির আবেগে আপ্লূত হয়ে বললো,”আমার জন্য এতো কিছু আপা!আমার কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে।কালার দেখেছিস আপা,এতো স্নিগ্ধ কালার!ফোনটা দেখ,অনেক দামী ফোন মনে হচ্ছে। ”

নবনী এরপরে একটা বড় ব্যাগ বের করলো।ব্যাগের উপরে সুন্দর করে লিখা,”দুটো ছোট্ট পরীর জন্য।যাদের দিকে তাকালে মনে হয় এই বুঝি উড়াল দিয়ে পরীরাজ্যে চলে যাবে।”

ফাল্গুনী চৈতালী দুজনেই লজ্জা পেলো এরকম লিখা দেখে।হামিদ আংকেল তাদের ভীষণ আদর করে,সবসময় তাদের পরী বলে ডাকেন।

ব্যাগের ভেতর দুটো শাড়ি,চারটি থ্রিপিস,দুটো স্টাইলিশ সাইড ব্যাগ,১২টি হিজাব।হিজাবের ভেতর হিজাবে লাগানোর জন্য নানা রকম,নানা সাইজের পাথরের সেফটিপিন,কাঁটা।

দুইবোনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো এসব দেখে।তাদের কে কেউ কখনো এতোকিছু উপহার দেয় নি।এই প্রথম এতো উপহার দেখে দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে আছে।

এরপর নবনী তার ব্যাগ বের করলো। ব্যাগের ভেতর নবনীর জন্য অনেকগুলো জামা আছে।গুনে দেখলো নবনী ১২টা থ্রিপিস। নবনীর ভীষণ কান্না এলো।নবনী এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হয়েছে,হামিদুর রহমান বুঝতে পেরেছেন বাবার বাড়িতে এলে নবনীকে জামা কাপড়ের সমস্যায় পড়তে হবে। নবনীর জন্য একটা সাইড ব্যাগ আছে।নবনী কি ভেবে যেনো ব্যাগটা খুললো।খুলতেই দেখতে পেলো ২ বান্ডিল ১হাজার টাকার নোট ব্যাগের ভেতর। আর সবগুলো গহনা।

নবনী বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

হাশেম আলী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।কান্না থামিয়ে নবনী বললো,”বাবা,আমি ওই বাড়ি থেকে একেবারে চলে এসেছি। বিশ্বাস করো বাবা তার জন্য আমার খারাপ লাগছে না।আমার শুধু খারাপ লাগছে বাবার জন্য।ওই বাড়িতে যে আমার আরেকজন বাবা আছেন যিনি আমাকে তোমার মতো করে বুঝতো।আমার সব বিপদে ঢাল হয়ে থাকতো। ”

হাশেম আলী বললেন,”কেঁদে কি হবে মা।কাঁদিস না।”

নবনী একটু জিরিয়ে বললো,”বাবা,আমি জানি আমি না বললে তোমরা কখনোই জানতে চাইবে না কি হয়েছে। তাই আমি নিজেই বলছি সব।তোমাদের যদি মনে হয় আমার সিদ্ধান্ত ভুল তবে যা ভালো মনে করো তা বলো তোমরা।
আমার শাশুড়ী মা কেমন তা তো তোমরা জানোই সবাই।ওসব আমি সহ্য করে গেছি এতোদিন। কিন্তু বাবা,তামিম একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছে।আমার শাশুড়ী বদ্ধপরিকর ওই মেয়ের সাথে তামিমকে বিয়ে দিবে।আমার বাবার বাড়ি গরীব বলে বাবা ওরা কেউই আমাকে দাম দেয় না।ওদের কাছে রাস্তার কুকুরের দাম আছে কিন্তু আমার দাম নেই।কতোদিন গেছে বাবা,সবার নাশতার পর আমি খেতে গিয়ে দেখতাম খাবার মতো কিছু নেই।অথচ আমার শাশুড়ি ননদ খাবার নষ্ট করে রাখতো ওদের এঁটো খেতেও আমার আপত্তি ছিলো না কিন্তু ওরা প্লেটে পানি ঢেলে রাখতো।
শুক্রবারে সবাই ঘুরতে যেতো শুধু আমি ছাড়া। অথচ আমার যে কি ভীষণ ইচ্ছে করতো ঘুরতে যেতে। কেউ একবার জিজ্ঞেস ও করতো না আমাকে।
জানো বাবা,৩ বছর আমি ঢাকায় ছিলাম,এরমধ্যে মনে হয় ৪ বার আমি বাসা থেকে বের হতে পেরেছি।দুই বার গেছি ইন্টারভিউ দিতে,আর দুইবার বাসার নিচে ফার্মেসীতে নিজের ঔষধ আনার জন্য।
এসব নিয়ে ও আমার কোনো আপত্তি ছিলো না।কিন্তু এতো কিছুর মধ্যে তামিম মাঝেমাঝে আমার গায়ে হাত তোলে,পান থেকে চুন খসলে আমার শাশুড়ী ও আমার গায়ে হাত তোলে।গালাগালির কথা বাদ দিলাম।

কিন্ত আমার শাশুড়ী গতরাতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আমি ওই বাসায় থাকলে তিনি ওই বাসায় থাকবেন না আর।
আমার কিছু করার ছিলো না বাবা।স্বামীকে দিয়ে মানুষের শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান শক্ত হয়।স্বামী থাকে স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় খুঁটি।আমার সেই খুঁটিতেই ঘুণপোকা ধরেছে বাবা।আমার মাথার উপর স্বামীর ছায়া নেই আমার শ্বশুর ১২-১৩ দিন পরে কানাডা চলে যাবেন।তোমরাই বলো বাবা,উনি চলে গেলে আমাকে ওখানে ওরা কি করতো?
বাবা তো সারাবছর দেশে থাকেন না।আমি ও সবসময় অভিযোগ করতে পারি না।”

রাবেয়া বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। ভাইবোন সবার চোখে পানি।ভাই-বোনেরা আগে থেকেই আঁচ করেছে এসব।তাদের আপা যে ওই বাড়িতে ভালো নেই তা তারা বুঝতো।কিন্তু এতো বছর আপার নিষেধ থাকার কারণে কিছু বলে নি বাবা মা’কে। তবে তিন ভাইবোন এক সাথে হলে বোনের কষ্টের কথা ভেবে আড়ালে চোখ মুছতো।

হাশেম আলী নিজেকে সংযত করে বললো,”তুই কোনো চিন্তাই করবি না মা।তোর যেটা ভালো মনে হইবো সেইটাই করবি।মনে রাখিস,যেই সম্পর্কে থাকলে নিজের আত্মসম্মানে ঘা লাগে,সেই সম্পর্কে থাকনের কোনো প্রয়োজন নেই।কে কি ভাবলো তাতে কিছু আসে যায় না।নিজের মন এবং বিবেক যা কয় তাই শুনবি।তুই যে সিদ্ধান্ত নেস না কেনো আমাগো কোনো আপত্তি নাই।আমার মাইয়ারে আমি যদি এতো বছর নুন ভাত খাইয়ে রাখতে পারি তো বাকী জীবন ও পারমু।তারপরও আমার মাইয়ার অসম্মান কইরা যারা কথা কইবো তাদের কাছে দিমু না।এসব লইয়া কোনো চিন্তা করবি না।”

নবনী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”আমি তামিমকে ডিভোর্স দিতে চাই বাবা।”

হাশেম আলী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”দরকার হলে দিবি,আমরা সবসময় তোর পাশে থাকমু মা।”

নবনী বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,”কেনো এমন হলো বাবা,আমার ভাগ্য কেনো এতো খারাপ হলো বলোতো? আমি কি কখনো ভেবেছি তিন কবুল বলে যাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি তার কাছ থেকে এতো বড় আঘাত পাবো?আমি কি কখনো চেয়েছি স্বামী সংসার ছেড়ে চলে আসতে?
গায়ে ডিভোর্সি তকমা লাগিয়ে ঘুরতে তো আমার কখনোই ইচ্ছে ছিলো না।দু-চোখ ভরে কতো স্বপ্ন নিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসেছি,কেনো এভাবে আমার কপাল পুড়লো?”

হাশেম আলী মেয়েকে বললেন,”কপালের দোষ দিস না রে মা।আমার আল্লাহ কপালে যা লিখেছেন তাই হবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোর জন্য এর চাইতে ভালো কিছু রাখছে,তার লাইগাই এসব হইছে।এরকম কইরা ভাইঙ্গা পরিস না।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।যেই কপাল আল্লাহরে সেজদা দেওনের লাইগা বানাইছে সেই কপাল জীবনে খারাপ হইতে পারে না।”

————–

হামিদুর রহমানের দাফন কাজ সমাধা হতে হতে বিকেল হয়ে গেলো। তামিম এখনো বিশ্বাস করতে পরছে না তার বাবা নেই এই দুনিয়ায়। সকালেও তো বাবাকে দেখলো।ভয়ে,লজ্জায় তখন বাবার দিকে তাকাতে পারে নি সে।আহা,যদি ভয় না পেয়ে একটা বার বাবাকে মন ভরে দেখে নিতো!
তাহলে তো আজ আর মনে বাবাকে দেখার এতো আফসোস থাকতো না।

সামিম বাবাকে দাফন করে এসে ড্রয়িং রুমে ফ্লোরে বসে পড়লো।নিজেকে কেমন তার পাগলের মতো লাগছে।কি করবে সে এখন?সামিম চেয়েছিলো নবনীকে ফোন করে জানাতে কিন্তু তাহেরা বেগম রেগে গেলেন শুনে।কিছুতেই তিনি চান না নবনী এই বাড়িতে আসার আর কোনো সুযোগ পাক।কড়াকড়িভাবে সবাইকে নিষেধ করলেন কেউ যেনো নবনীকে এসব না জানায়।

সামিমের অবাক লাগলো আজকেও মায়ের এরকম ব্যবহার দেখে।বাবা মরে গেছে অথচ মা তার ভেতরে নবনীর জন্য এখনো রাগ ফুঁসে রেখেছে।মানুষ এমন হয় কেনো?সামিম ভেবে পায় না।

কার কাছে গেলে সান্ত্বনা পাবে?
আহা,বাবা হারিয়ে গেলে পৃথিবীতে কে সান্ত্বনা দিতে পারে?এসব ভাবতেই সামিমের দুচোখ বেয়ে জল গড়াতে লাগলো।

তাহেরা বেগম,লুবনা,দিশা সবাই লুবনার রুমে চুপ করে বসে আছে। দিশার কিছুটা বিরক্ত লাগছে এভাবে মন খারাপের অভিনয় করতে। শ্বশুর মারা যাওয়ায় কিছুটা ব্যথিত হয়েছে সে।কিন্তু তাই বলে এতোটাও শোকে মুহ্যমান হয় নি।বাসা ভর্তি আত্মীয় স্বজন। তাদের জন্য এখন মন খারাপের একটিং করতে হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর তাহেরা বেগমের মনে হলো হামিদুর রহমানের মানিব্যাগের কথা।সামিমকে ডাক দিলেন তিনি,সামিম আসতেই জিজ্ঞেস করলেন,”তোর বাবার মানিব্যাগ কার কাছে,ওটা তো দেখতে পেলাম না।”

সামিমের এতো শোকের ভেতর ও হাসি এলো মায়ের এখনো এতো লোভ দেখে।আজকেও তার টাকাপয়সার চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছে না।

সামিম বললো,”আমার কাছে আছে,আমি ড্রয়ারে তালা মেরে রেখেছি।”

তাহেরা বেগম গলার স্বর নিচু করে বললো,”আমার কাছে দিয়ে যা।বাসা ভর্তি মানুষ। কে কখন তালা ভেঙে চুরি করে নিয়ে যায়!
তোর বাবার মানিব্যাগ কখনো খালি থাকে না।আজকেও নিশ্চয় অনেক টাকা রেখেছে মানিব্যাগে।নিয়ে আয় যা।”

সামিম মানিব্যাগ এনে দিতেই তাহেরা বেগম লুবনার রুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন।তারপর মানিব্যাগ খুলে দেখতে বসলেন কতো টাকা আছে।

যতো উৎসাহ নিয়ে তিনি মানিব্যাগ খুললেন,ততটাই হতাশ হলেন।মানিব্যাগে তার ব্যাংকের কার্ড আছে,আর প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা আছে।অথচ সবসময় এই মানিব্যাগ ভর্তি থাকে টাকায়।

কার্ডের পিনকোড তিনি জানেন না।তাহলে টাকা তোলার উপায় কি?

পরমুহূর্তে আবার তার মনে পড়লো,আজকে তার স্বামী মারা গেছেন অথচ এসব ভাবছেন কেনো তিনি?
এসব দুদিন পরে ভাবলেও চলবে।

বাহিরে থেকে দরজায় নক করলো কেউ।তাহেরা বেগম মানিব্যাগের টাকায়ার কার্ড ব্লাউজের ভেতর লুকিয়ে রেখে দরজা খুললেন।দেখলেন তার খালাতো ননদেরা এসেছে।হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি তাদের জড়িয়ে ধরে।

চলবে………

রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here