তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ২৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
প্রেগ্ন্যাসির সময়টায় মায়রার মতো কোনো মেয়েই চাইবে না, নিজের স্বামী তার প্রাক্তনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। অভ্র এখন মায়রাকে নিয়ে চিন্তা করার সময়, তা না করে অভ্র তার প্রাক্তন স্ত্রীর চিন্তায় চিন্তিত। মায়রা আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। তাই অভ্রের হাত ধরে, অভ্রের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বলে, ‘ আচ্ছা অভ্র কিসের এতো দরদ তোমার মেহেভীনের উপর? তুমিই তো একদিন বলেছিলে মেহেভীন শুধুমাত্র তোমার ব্যবহারের বস্তু মাত্র। তাহলে কেন তার জন্যে আজ তোমার এতো চিন্তা। আমি প্রেগন্যান্ট অভ্র। আমার গর্ভে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন বেড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। তুমি তাকে নিয়ে, চিন্তা না করে মেহেভীনকে নিয়ে পড়ে আছো? তুমি ঠিক কি চাইছো বলো তো অভ্র? ‘
অভ্র মায়রার হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে, মায়রার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে। এতে মায়রা ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো। অভ্র তেজি গলায় বলে উঠলো,
‘ শুনতে চাও সত্যি কথা? তাহলে শুনে নাও। আমার পক্ষে তোমাকে কিংবা তোমার ন্যাকামি গুলো সহ্য করা পসিবল হচ্ছে না। আমি আমার প্রাক্তন স্ত্রীর চিন্তা করবো। কেননা একদিনের জন্যে হলেও, আমি তাকে নিজের বউ হিসেবে কবুল করে নিয়েছিলাম। তাই সে কোথায় থাকছে কিংবা কার সাথে থাকছে আমাকে তা জানতেই হবে। তুমি আমার সন্তানের মা হতে চলেছো তাই চুপচাপ তোমার কথামতো চট্টগ্রাম যাচ্ছি, কিন্তু ভূলেও ভাব্বে না আমি তোমার জন্যে যাচ্ছি।আমি আমার মায়ের অনুরোধ ফেলতে পারিনা,তাই যাচ্ছি।তুমি শুধু ততটুকুই অধিকার বিস্তার করবে আমার উপর,যতটুকু অধিকার আমি তোমাকে দিবো। ‘
অভ্র মায়রা একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই, নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। মায়রা হাত শক্ত করে দাড়িয়ে থাকে তা পাশে থাকা ফুলের টবটা হাতে নিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেলে। যা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায়। যেমনটা আজ মায়রার মনটা অভ্র টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে দিয়েছে। মায়রার ইচ্ছে করছে এখন গিয়ে মেহেভীন নামক কাটাটাকে মেরে ফেলতে। মায়রার মনে হচ্ছে মেহেভীন হচ্ছে এখন তার জীবনের সবথেকে বড় কাটা। যাকে উপড়ে ফেলতে পারলে বোধহয় তার এবং অভ্রের জীবনটা আবারো সুখময় হয়ে উঠবে। মায়রা নীচে ধপ করে বসে পড়ে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার।
__________
মেহেভীনকে সম্পুর্ন সুপটা খায়িয়ে, আরহাম নিজের খাবারটুকুও শেষ করে ফেলে। অতঃপর আরহাম মেহেভীনকে আস্তে করে ধরে নিয়ে গিয়ে, খাটে শুয়িয়ে দেয়। আরহাম নরম কন্ঠে বলে,
‘ তুমি আপাতত ঘুমাও। আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি। সমস্যা হলে আমাকে ডেকে তুলবে, স্টুপিডের মতো নিজে নিজে কিছু করতে যাবে না। ‘
মেহেভীন বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়। আরহাম তার বালিশটা নিয়ে, সোফায় ঘুমাতে চলে গেলো। আরহাম দেখলো আরহামের ফোন বেজে উঠছে।রুশা ফোন করেছে। আরহাম ফোনটা হাতে নিয়ে, সোফায় বসেই রিসিভ করলো। আরহাম বললো,
‘ এনিথিং রং রুশা? ‘
‘রুশা ‘ নামটি শুনে মেহেভীন তার চোখ খুলে ফেললো। কে এই রুশা? আরহামের সেই প্রেয়সী নয়তো? ফোনের অপরপাশ থেকে রুশা ক্লান্ত গলায় বললো,
‘ আজকে খুব ক্লান্ত লাগছিলো স্যার। তাই আপনাকে ফোন দিলাম। আপনার গলাটা শুনতে বড্ড শুনতে ইচ্ছে করলো।
জানেন স্যার? আমরা যখন আমাদের খুব কাছের কারো গলা একটু শুনি, তখন আমাদের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আপনি হয়তো নিজেই জানেন না আপনি আমার কতটা কাছের। কতটা আপন। স্যার কিছু বলছেন না কেন? একটু কথা বলুন না। ‘
আরহাম আর শুনলো না রুশার না বলা ব্যক্ত বানীগুলো। সঙ্গে সঙ্গে কেটে দিলো রুশার ফোন। রুশা তাতে বিন্দুমাত্র অবাক হলো না। আরহাম সবসময় রুশার অনুভুতিগুলো বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকে। রুশা মুচকি হেসে বললো,
‘স্যার আপনাকে অনুভুতি সম্পর্কে আর কি বলবো আমি? যে নিজেই অনুভুতিগুলো বুঝতে চায়না, তাকে বুঝানো শুধুমাত্র বৃথা ছাড়া আর কিছু না। ‘
আরহাম বারান্দায় চলে যায়। আরহাম জানে রুশার মনে আরহামের জন্যে অন্যরকম অনুভুতি আছে, যা আরহাম কখনো চায়না। এক তরফা তো সবকিছু হয়না।রাত বেশ গভীর হয়ে উঠেছে। শহরে রয়েছে একপ্রকার নিস্তব্ধতা। আরহাম এই মুহুর্তে খুব করে চায় কেউ তার পাশে থাকুক। নিজের পাশে কারো উপস্হিতি টের পেয়ে, আরহাম ঘাড় কাত করে দেখে মেহেভীন। মেহেভীনের দিকে তাকাতেই মেহেভীন নিচু গলায় বললো,
‘ আপনিই তো বলেছিলেন অনুভুতিগুলো সুন্দর হয়। তাহলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন ভালোবাসার অনুভুতি থেকে। ‘
‘ রুশার অনুভুতি থেকে পালাচ্ছি। রুশার আমাকে পছন্দ করে আমি নয়। আমার কাছে তো অনুভুতি সর্বদা সুন্দর। ‘
আরহামের কথায় মেহেভীন আরহামের দিকে তাকায়। আরহাম মৃদ্যু হেসে বলে,
‘ জানো মেহেভীন? আমরা যখন অন্য কারো ভালোবাসার মায়াজালে নিজেদের জড়িয়ে ফেলি, তখন পৃথিবীর অন্য কোন অনুভুতি আমাদের মনটাকে স্পর্শ করতে পারেনা। আমিও হয়তো এমনই একজনের মায়াতে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে,সেই মায়া কাটিয়ে, অন্য কারো অনুভুতি অনুভব করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কাটাতেও চাইনা সেই মায়া। ‘
মেহেভীনের বুকটা কেন যেন কেপে উঠে কথাগুলো শুনে। তারমানে তার ধারণা সঠিক। আরহামের জীবনেও কেউ আছে। কিন্তু কে সেই ভাগ্যবতী? বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে মেহেভীনের।
‘ শুয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। ‘
মেহেভীন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
ফারিয়া আরিয়ানকে ফোন দিয়েই বললো,
‘এইযে মিঃ ডক্টর সকালে যে এতো ভাষন ছাড়লেন কই গেলো আপনার সেই ভাষন? চিকিৎসা শুরু না করে আপনি ঘুমাচ্ছেন? এদিকে আমার মা আমার জন্যে জুতো নিয়ে বসে আছে। আজকে যদি আমি জুতোর বাড়ি খায় আই প্রমিস এর দায়ে আপনাকে আমি জেলে ঢুকাবো। ‘
আরিয়ান এইবার নড়েচড়ে বসলো। অতঃপর গলাটা পরিষ্কার করে বললো,
‘ আর ইউ সিরিয়াস? মানে এখানে আমার দোষটা কোথায়? নিজে ফেল করবেন আবার তার জন্যে জুতার পেটানো খেলে সেই দোষ আমার? এখানে তো বলা যায় যত দোষ নন্দ ঘোষ। ‘
ফারিয়া সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিয়ে বললো, ‘চুপ করুন আপনি। আপনার প্রবাদ বাক্য শুনতে আমার ফোনের টাকা খরচ করে আপনাকে ফোন দেইনি।
আগে বলুন কী করলে আমার মাথায় একটু ঘিলু হবে? ‘
আরিয়ান কিছু একটা ভাবলো। এই বজ্জাত মেয়েকে উচিৎ শিক্ষা দিবে সে। তার রাতের ঘুম হারাম করেছে। আরহাম কিছুক্ষন পরে বললো,
‘আমাকে এখন ভিডিও কল করুন। ‘
‘ ওয়াট? ‘
‘ ওয়াট ফোয়াট না করে, ভিডিও কল করুন। চিকিৎসা করবো আপনার। ‘
ফারিয়া আরিয়ানের নাম্বারে ভিডিও কল করে। ভিডিও কল করার সঙ্গে সঙ্গে আরিয়ান তাকিয়ে দেখে, ফারিয়া বাইরে আছে। আরিয়ান বললো,
‘ আপনি বাইরে কেন এতো রাতে? বাসায় যাননি এখনো? ‘
‘ আরে ভাই বললাম না? বাসায় গেলেই আজ মায়ের জুতোর বাড়ি খেতে হবে। তাইতো রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। ‘
আরিয়ান কিছু একটা ভেবে বাকা হেসে বললো,
‘ পারফেক্ট। এখানেই হবে। ‘
‘কি হবে? ‘
‘ আপনার চিকিৎসা। এখুনি একশোবার কান ধরে উঠবশ করুন। ‘
ফারিয়া চিৎকার করে বলো, ‘ এমা! একদম না। আমি কিছুতেই করবো না। ‘
আরিয়ান মুখে হাত দিয়ে বলে,
‘ ওকে তাহলে রাখছি। আমি আপনার চিকিৎসা করবো না। যান বাড়ি গিয়ে মায়ের জুতোর বাড়ি খান। ‘
আরিয়ান ফোনটা কাটতে নিলে, ফারিয়া তাতে বাঁধা দিয়ে বলো,
‘ এমা! না প্লিয কাটবেন না। আচ্ছা আপনি যা বলছেন। সেইটাই করবো আমি। ‘
কথাটি বলে ফারিয়া ফোনটার ক্যামেরায় বেঞ্চে সেট করে, কান ধরে উঠবশ করতে থাকে। আরিয়ান তো বেশ মজা নিচ্ছে ভিডিও কল দিয়ে। মেয়েটা সত্যি খুব বোকা।ফারিয়া কানে ধরে উঠবশ করছে আর আরিয়ানের পুরো গোষ্টি ধুয়ে দিচ্ছে। ফারিয়া বিড়বিড় করে বলে,
‘ব্যাটা খাটাশ ডাক্তারের ঘরে ডাক্তার যদি আমার মাথায় ঘিলু না আসে, তাইলে তোর আমি পিন্ডি চটকামো। আমারে দিয়া কান ধরে উঠবশ করানোর শখ জন্মের মতো মিটিয়ে দিবো। ‘
°__________
মেহেভীন ঘুম থেকে উঠে দেখে পুরো রুমটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আরহাম সত্যি পুরো ঘরটাকে অনাগত বাচ্ছার জন্যে সুন্দর করে সাজিয়েছে। যেমনটি মেহেভীন চেয়েছিলো। মেহেভীন উঠে গিয়ে, বাচ্ছার জন্যে নিয়ে আসা ছোট্ট বিছানায় হাত বুলায়। এই ছোট্ট বিছানায় যখন তার ছোট্ট সোনা ঘুমিয়ে থাকবে, তখন কিন্তু বেশ লাগবে। মেহেভীন মুচকি হাসে। তখনি আরহাম অনেকগুলো প্যাকেট হাতে নিয়ে, রুমে ঢুকে। এতোগুলো প্যাকেট দেখে ভ্রু কুচকায় মেহেভীন। আরহাম প্যাকেটগুলো রেখে বলে, ‘ দেখো তো কেমন হয়েছে?’
মেহেভীন প্যাকেটগুলো খুলে দেখে প্যাকেটে সব ছোট্ট ছোট্ট বাচ্ছাদের পোষাক। প্রায় দশটার মতো প্যাকেট আছে। মেহেভীন এইসব দেখে বলে,
‘ এইগুলো কার জন্যে? ‘
আরহাম হাসিমুখে বিছানায় বসে বলে,
‘ কেন? নিউ বেবীর জন্যে। যে আসছে। আর মাত্র ছয়টা মাস তারপরই নিউ বেবী চলে আসবে। পছন্দ হয়েছে? আমি শুধু আপাতত কিছু কিনে রাখলাম। আমি ভাবছি বেবীর জন্যে আরো ড্রেস কিনবো এবং একটা ছোট্ট মিনি সাইজের কাবার্ডও কিনবো। যেখান শুধু নিউ বেবীর সব ড্রেস থাকবে। ‘
আরহাম বেবীর জন্যে নিয়ে আসা ড্রেসগুলো বের করে, মেহেভীনকে দেখাচ্ছে। মেহেভীন শুধু আরহামকে দেখেই যাচ্ছে মানুষটা কতটা খুশি। মানুষটা কি ভূলে গেলো বাচ্ছাটার জন্ম হয়ে গেলেই মেহেভীন ও তার সন্তান এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। হয়তো ভূলে গেছে। মেহেভীন একবার ভাবলো আরহামকে এইসব করতে মানা করবে, কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলো মানুষটা কত খুশি। শুধু শুধু মানা করে ,মানুষটার মুখের হাসিটাকে বিলপ্ত করার কোন মানেই হয়। মানুষটা হাসছে হাসুক একটু। বড্ড সুন্দর লাগে মানুষটাকে হাসলে। আরহামের হাসি দেখে মেহেভীন নিজেও হাসলো।
চলবে….ইনশা-আল্লাহ।
[নীচের লেখা পড়বেন প্লিয]
[🐸চমলক্কমার্কা ধামাকা আসবে গল্পে । দয়া করিয়া সবাই দুই একদিন ওয়েট করিয়েন😙। সবাইকে থ্যাংকু গল্পটাকে এতো ভালোবাসার জন্যে। দুঃখের কথা হলো অনেকে তুমি আছো মনের গহীনে গল্পটা পড়েন,, 🥺কিন্তু আসল লেখিকাকে মানে জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমিকেই কেউ চিনেন না।
গল্পের সাথে সাথে লেখিকারেও একটু ভালোবাসা দিয়েন। লেখিকা খুশি হবে আর কি 😅]