তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব- ২৫

তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ২৫
#Jannnatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন আরহামের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো লোকটার এই হাসিমুখটাকে দেখে,যেকোন রমনী সারাটাজীবন পার করে দিতে পারবে। আচ্ছা অভ্রের আগে যদি আরহাম মেহেভীনের জীবনে আসতো,তাহলে হয়তো মেহেভীনের জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো। আরহামের ভালোবাসায় জীবনটা অন্যরকম সুন্দর হতে পারতো।
নিজের মাথায় এইরকম উদ্ভুট ভাবনা চলে আসায়, মেহেভীন নিজের মাথায় নিজেই টুকা মারে। এইসব কি ভাবছে সে? তার কি এতো ভাগ্য আছে যে, আরহামের মতো মানুষ তাকে ভালোবাসবে। আরহাম তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। সেই ভাগ্যবতী রমনীকে একটিবার চোখের দেখা দেখতে চায় মেহেভীন। আরহামের তো চমৎকার মানুষ যাকে ভালোবাসে, সে নিশ্চয় খুব বিশেষ কেউ হবে। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম বিঘ্ন ঘটিয়ে বলে,

‘ এইযে মেয়ে তখন থেকে কি এতো ভাবছে বলো তো? ‘

‘ আরহাম সাহেব আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কিছু কিছু মানুষ যদি আমাদের জীবন একটু আগে আসতো, তাহলে বোধহয় কিছু পরিনতি সুখময় হতো। ‘

মেহেভীনের কি হলো কে জানে মেহেভীন কথাটি বলেই উঠে বারান্দায় চলে গেলো। সে আরহামকে নিয়ে এতোক্ষন ধরে যা ভাবছিলো, যা ভাবতে গেলেই মেহেভীনের মুখে লজ্জা এসে ভীর করে। সে কীভাবে আরহামকে নিয়ে ভালোবাসার কথা ভাবলো? তার মনে কী নতুন কোন অনুভুতি উঁকি দিচ্ছে? যাকে বলে ভালোবাসার অনুভুতি। আরহাম মেহেভীনের পিছনে এসে বলে, ‘ কি হলো এইভাবে উঠে চলে এলে কেন?’

আরহামের সামনে মেহেভীনের কেন যেন দাড়াতে ইচ্ছে করছে না, মেহেভীন দৌড়ে রুমের বাইরে চলে যায়। আরহাম তাজ্জব বনে যায়। মেয়েটার হঠাৎ কি হলো?

আরিয়ান কাল রাতে একপ্রকার ঘুমায়নি বলতে গেলে। কিছুক্ষন পরেই, আরিয়ানকে হসপিটালে চলে যেতে হবে। আরিয়ান বাগানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছিলো, তখনি তার চোখ যায় বাগানে থাকা দুই প্রেমিক-প্রেমিকার দিকে। যারা আর কেউ নয় বাড়ির কাজের মহিলারাহেলা এবং ড্রাইভার মজনু। মজনু কিছুটা ভাব নিয়ে রাহেলাকে বলছে,

‘ বুঝছো নি রাহেলা? আমাগো গ্রেরামে মাইনষে আমারে আবার অনেক সম্মান করে। তোমার যখন আমার বউ কইরা গ্রেরামে লইয়া যামু। সবাই খালি তোমার দিকে চাইয়া থাকবো। তুমি তো চাইয়া থাকার মতোই সুন্দরী। ‘

রাহেলাকে ‘ সুন্দরী ‘ বলে সন্মোধন করায় লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয় রাহেলা। মজনু রাহেলার আরেকটু কাছে গিয়ে বলে,

‘ রাহেলা সুন্দরী তোমার হাত টা একটু দাও তো দেখি। ওইদিন তো কুদ্দুস আইসা পড়ছিলো। শালাডা আইসা সব শেষ করে দিছিলো। ‘

রাহেলা লজ্জা নিয়েই, মজনুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। আরিয়ান নিজের চোখ বন্ধ করে ধমকে বলে,

‘ এই তোমরা থামো ভাই। আমি এখনো সিংগাল। এইসব প্রেম-ভালোবাসা আমার সামনে একদমই এলাও না। ‘

সঙ্গে সঙ্গে রাহেলা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তার ইচ্ছে করছে মাটি ফাক করে ঢুকে যেতে। ছোট সাহেব তাকে এখন কি ভাব্বে? মজনু তো পারলে এখন চিৎকার করে কাঁদতো। তার রোমান্সের সময়েই শুধু সবাই এসে বাঁধা দেয়। রাহেলা লজ্জায় দৌড় দেয়।
মেহেভীন দৌড়ে নীচে নেমে বাগানে আসতেই, রাহেলার সাথে ধাক্কা খায়। মেহেভীন কোনরকম ‘সরি’ বলে। রাহেলাকে পায় কে? সে তো দৌড়। মজনুও দুঃখে বাগান থেকে চলে গেলো। আরহাম বারান্দায় দাড়িয়ে সব কান্ড দেখছে। আরহাম বললো,

‘ বুঝলাম না। সবার হচ্ছে টা কি? সবাই এতো লজ্জা পাচ্ছে কেন?’

আরহামের মা এইসব দেখে বললেন,

‘ কিরে আরিয়ান রাহেলার আবার কি হলো? ‘

আরিয়ান হাসতে হাসতে এসে বললো,

‘ লজ্জা পেয়েছে মা। প্রেম করতে গিয়ে, লজ্জা পেয়েছে। তুমি বরং এইবার রাহেলা মজনুর বিয়েটা দিয়েই দাও। ‘

আরহামের মা হাসেন। আরিয়ান খেয়াল করলো, মেহেভীনের মুখেও লজ্জায় ভাব। আরিয়ান মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘রাহেলার লজ্জার কারণটা বুঝলাম,কিন্তু তুই এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন বইন? ‘

আরিয়ানের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় মেহেভীন। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো, আরহামের দৃষ্টি মেহেভীনের মাঝেই সীমাবদ্ধ। আরহামের এমন দৃষ্টিতে আরেকদফা লজ্জা পেলো মেহেভীন। মেহেভীনর আচরণ সব কিছুই আরিয়ানের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

________________
ইশরা বেগম মায়রার ঘরে এসে দেখে,মায়রা ঘরের এক কোনে চুপটি মেরে বসে আছে। ইশরা বেগম মায়রার দিকে এগিয়ে গিয়ে, মায়রার পাশে বসে বললেন,
‘ তোমার মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন মায়রা? ‘
মায়রা চুপ হয়ে রইলো। ইশরা বেগম জানেন মায়রার কি হয়েছে। অভ্রের আওয়াজ তিনি নীচ থেকেই শুনেছেন। অভ্রের মাথায় মেহেভীনের ভূত খুব ভালো করেই ঢুকেছে,তিনি তা বুঝতে পারছেন। মায়রা নিরবতা ভেঙ্গে বললো,
‘ আমি বোধহয় অভ্রকে ধরে রাখতে পারলাম না। অভ্র মেহেভীনকে ভূলতেই পারছে না। ‘

ইশরা বেগম মায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ মায়রা তুমি এইভাবে ভেঙ্গে পড়ো না। তুমি তো এখন একা নও। তোমার সাথে এখন আমার বংশের প্রদীপ আমার অভ্রের সন্তান ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। তাই বলছি একটু শান্ত হও। চট্টগ্রামে ট্রিপে তো পরশু যাচ্ছো। সেখানে তুমি এবং অভ্র থাকবে শুধু। সেখানে মেহেভীন নামক কোন ছায়া থাকবে না তোমাদের জীবনে। দেখবে অভ্র আবারো তোমাকে ভালোবাসবে। ‘

নিজের শাশুড়ির কথায় নিশ্চিন্ত হয় মায়রা।

___________

অভ্র প্রতিদিনই অফিস থেকে এসেই প্রথমে মেহেভীনের রুমে ঢুকে। একটু শান্তির জন্যে। মেহেভীনের ঘরে প্রতিটা কোণায় কোণায় মেহেভীনের স্মৃতি জমে আছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অভ্র আজকেও অফিস থেকে এসে,প্র‍থমে মেহেভীনের রুমে ঢুকে,কিন্তু রুমে ঢুকেই সে হতবাক। মেহেভীনের জিনিস সব ফেলে দিচ্ছে জবেদা। জবেদা হচ্ছে অভ্রদের বাড়ির কাজের লোক। এইভাবে মেহেভীনের জিনিস ফেলে দেওয়ায়, অভ্রের মাথায় আগুন ধরে যায়। অভ্র জবেদার থেকে জিনিসগুলো নিয়ে বলে,

‘ হাও ডেয়ার ইউ? কার পারমিশনে তুমি মেহুর জিনিসে হাত দিয়েছো? ‘

‘ আমার পারমিশনে। ‘

ইশরা বেগম কথাটি বলে রুমে ঢুকেন। অভ্র অবাক হয়ে বলে,

‘ মা তুমি এইসব কেন করতে বলেছো? ‘

‘ কেন আবার? শুধু শুধু এইসব জিনিস রেখে কি লাভ? ঘরটা খালি করে দেওয়ায় ভালো। ‘

অভ্র ক্ষিপ্ত গলায় বললো,

‘ ব্যাস মা। তোমার অনেক কথা শুনেছি আমি। এই কথাটি আমি শুনতে পারবো না। এখান থেকে মেহুর একটা জিনিসও সরানো হবে না। যদি তা করা হয়,তাহলে এর ফল খারাপ হবে। ‘

অভ্র গটগট করে রুমে চলে গেলো। ইশরা বেগম হতভম্ভ হয়ে গেলেন। যে ছেলে তার মুখের উপর কথা বলতে সাহস দেখাতো না,সে ছেলে কিনা তাকে একপ্রকার শাসিয়ে চলে গেলো। এইসব হচ্ছে টা কি?
___________________ [লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
ড্রইং রুমে আরিয়ান ও আরহামের বাবা বসে আছেন। আরহামের মা বার বার মেহেভীনকে খেতে বলছে, কিন্তু মেহেভীন কী খাওয়ার মতো মেয়ে? সে কিছুতেই খেতে চাচ্ছে না। আরিয়ান টিভি দেখতে দেখতে বলে,

‘ ভাবি তুমি এখন ভালোমতো খেয়ে নাও, নাহলে ভাই এসে ধমকে তোমাকে খাওয়াবে। ‘

আরিয়ান বলতে দেরী হলেও,আরহাম তা কাজে করে দেখাতে দেরী করালো না। আরহাম অফিস থেকে এসেই মেহেভীনের কান্ড দেখে রামধমক দিয়ে বললো,

‘ এই স্টুপিড! তুমি খাচ্ছো না কেন? তোমাকে ঠিক কি বললে তুমি একটু ঠিক হবে?’

মেহেভীন ঠোট উল্টিয়ে বলে,

‘ আমার খেতে ইচ্ছে না করলে কি করবো আমি? ‘

আরহামের মা বললেন,

‘ আহা আরহাম মেয়েটাকে এইভাবে বকিস না। ‘

আরহামের বাবা খবরের কাগজ ভাজ করে বললেন,

‘ আমার মেয়েটাকে একদম বকবে না এইভাবে আরহাম। প্রেগন্যান্সির সময় মেয়েদের রুচি থাকে না। একটু ভালো করে বুঝিয়ে খাওয়াতে হয়। ‘

আরহাম তার কাঁধের ব্যাগটা রেখে, বললো,

‘ তোমাদের কি মনে হয়? আমি বলেনি? এই স্টুপিড মেয়ে ভালো কথা শুনার মেয়ে না। ওকে ধমকিয়েই খাওয়াতে হবে। আমি যে কি করবো আমি জানি না।
পরশু আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি কাজে। এই কয়দিন তো এই স্টুপিড টা তার সব আজগুবি কাজ করবে। ‘

আরিয়ান কিছু একটা ভেবে বললো,

‘ ভাই আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে? ‘

‘কি? ‘

‘ আমি, ভাবি আর তুই একসাথে চট্টগ্রাম যাই। তুই কাজ করবি আর আমরা ঘুড়বো। তুই ভাবির উপর নজর ও রাখতে পারবি। ‘

আরহামের বাবা সঙ্গে সঙ্গে বললেন,

‘ ইহা সত্যিই উত্তম প্রস্তাব। আমার মনে হয় মেহু মায়ের এইসময় একটু ঘুড়াঘুড়ি করলে,মনটাও ভালো থাকবে। তুই কি বলিস আরহাম? ‘

আরহাম মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘ আমার কোন আপত্তি নেই।’

মেহেভীনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো এতোদিন পর সে কোথাও ঘুড়তে যাবে।

তৎক্ষনাক আরিয়ানের ফোনটা বেজে উঠলো। আরিয়ান তাকিয়ে দেখে ফারিয়া ভিডিও কল করেছে। আরিয়ান উঠে বাগানের দিকে চলে যায়।

আরিয়ান ফোন রিসিভ করতেই তার চোখ যায় ক্লান্তিতে মিয়ি যাওয়া মেয়েটার দিকে। চোখ-মুখে একরাশ ক্লান্তি তবুও মেয়েটাকে ভালো দেখাচ্ছে।

ফারিয়া ক্লান্তিমাখা গলায় বললো,

‘ এইযে ডাক্তার সাহেব আপনার কথামতো এক কিলোমিটার রাস্তা আমি দৌড়িয়েছি। আমার তো অবস্হা বেহাল। এখন একটু ঘিলু আসবে তো মাথায়? ‘

আরিয়ান মুচকি হেসে বললো,

‘ সবে তো শুরু মাত্র। এখনো আর কিছু করতে হবে আপনাকে তবেই আপনার বুদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। ‘

আরিয়ানের কান্ড পিছন থেকে মজনু দেখে ফেললো। আরিয়ান ভিডিও কলে একটা মেয়ের সাথে মুচকি মুচকি হাসছে। নিশ্চই এই মেয়েটা আরিয়ানের প্রেমিকা হবে। তাহলে তো কথাটা জানাতে হবে সবাইকে। আজ আরিয়ান মজনুর সাধের রোমান্সের বারোটা বাজিয়েছে, সেও আজকে দেখাবে মজা। কথাটি ভেবে, মজনু দৌড়ে বাড়িতে এসে হাপাতে হাপাতে বললো,

‘ আপনারা এহানে খাড়াইয়া আছেন? ওইদিকে আরিয়ান ভাইজানতো প্রেম- পেরেতি করতাছে। ‘

কথাটি শুনার সাথে সাথেই আরহাম কেঁশে উঠে। আরহাম বাবার মুখ থেকে চা বেড়িয়ে যায়। আরিয়ানের মা দাড়িয়ে পড়ে। মেহেভীনের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। আরহামের বাবা ধমক দিয়ে বলে,

‘ কি বললি? আমার হাদারাম টা কি করছে? ‘

‘ আরিয়ান ভাইজান প্রেম-ভালোবাসা করতাছে হাইসা হাইসা একটা মাইয়ার লগে। ‘

আরিয়ান যা করেছে তার থেকেও দ্বিগুন বানিয়ে বানিয়ে মজনু বলছে সবাইকে। আরহামের মা ঝাটা হাতে নিয়ে বলে,

‘ হতচ্ছাড়া। কই সে? আজ ওর খবর আমি নিচ্ছি। ‘

কথাটি বলেই আরহামের মা বাগানে চলে যায়। আরহামের মায়ের পিছন পিছন বাকি সবাইও যায়। আরিয়ান আর কিছু বলতে চাচ্ছিলো ফারিয়াকে, তখনি সে খেয়াল করে তার মা ঝাড়ু হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে। আরিয়ান কি বুঝলো কে জানে? সে কট করে ফোনটা কেটে দৌড়ানো শুরু করলো। ফারিয়াও বুঝতে পারলো না আরিয়ান হঠাৎ এইভাবে কেটে দাওয়ার মানে কি?

চলবে…….ইনশা-আল্লাহ 😁

[আরিয়ান ওইদিকে ঝাড়ুর বাড়ি খেতে থাকুক আপ্নারা কমেন্ত করে জানান কেমন হয়েছে 🥰]

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here