তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব- ২৬

তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ২৬
#Jannnatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহাম মেহেভীনের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে। মেয়েটার মুখে এখনো খাবার লেগে আছে। সত্যিই পুরো বাচ্ছা মেয়েটা। ঠিক করে খেতেও পারেনা। আরহাম মেহেভীনকে খায়িয়ে বাইরে গিয়েছিলো, মেহেভীন খাবারটুকু খেয়েই,ঘুমিয়ে পড়েছে। আরহাম টিস্যু বের করে, মেহেভীনের মুখটা পরিষ্কার করে দেয় যত্ন করে। আরহাম কি হলো কে জানে, কিছুক্ষন মেহেভীনের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো। হয়তো সেই চাহনীতে ছিলো, শুধুই মুগ্ধতা।
অতঃপর মেহেভীনের পাশেই বসে,ল্যাপটপ হাতে নিয়ে, অফিসের কিছু কাজ করতে লাগলো। মেহেভীনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। মেহেভীন নিজের চোখ খুলে দেখে, আরহাম তার পাশেই বসে ল্যাপটপ হাতে নিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। মেহেভীন কোনরকম উঠে,আরহামের থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে, আরহামকে ভালো করে শুয়িয়ে দেয় বিছানায়। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আরহাম সাহেব এই স্টুপিড মেয়েটার খেয়াল রাখতে রাখতে আপনি নিজের খেয়াল রাখাটাই ভূলে গেছেন। ‘

কথাটা বলে মেহেভীন উঠতে নিলে, তার হাত টান পড়ে। সে তাকিয়ে দেখে আরহাম তার হাতজোড়া আকড়ে ধরে, ঘুমাচ্ছে। মেহেভীন বিছানায় বসে পড়ে। আরহামের পাশেই বসে,হেলান দিয়ে বসে থাকে।মেহেভীন আপাতত চাইছে না নিজের হাত টা সরিয়ে, আরহামের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে। মেহেভীন চোখে পুনরায় একরাশ ঘুম এসে ধরা দিচ্ছে। মেহেভীন নিজের চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে আস্তে আস্তে।সে জানে সে সবসময়ই নিরাপদ আরহামের কাছে। আরহাম মানুষটাই এতোটা ভরসার। আরহাম ও মেহেভীন উভয়েই গভীর ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।

_________
আরিয়ান নিজের পায়ে গরম শেক দিচ্ছে। আজ আচ্ছা দৌড়ানি খেয়েছে সে। আরিয়ানের মা ছেলের জন্যে কফি নিয়ে আসতেই, তার ছেলে মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে অভিমানে। কিছুক্ষন আগে মজনুর কথা শুনে, আরিয়ানের মা আরিয়ানকে ঝাড়ুর বাড়ি দেওয়ার জন্যে, আরিয়ানের পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে। এমনকি দুই তিনটে ঝাড়ুর বাড়ি দিয়েও ফেলে। হঠাৎ এইরকম ঝাড়ুর বাড়ি দেওয়ার কারণ আরিয়ান জানতে চাইলে, তার মা বলে দেয় মজনুর বলা কথাগুলো। অতঃপর আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবাইকে বলে সে শুধু তার কলিগের সাথে অপারেশন এর ব্যাপারে ভিডিও কলে কথা বলছিলো,সেইটা না বুঝে মজনু সবাইকে উল্টো কথা বলেছে। যদিও আরিয়ান সত্যি কথাটা বলেনি। আরিয়ানের কথা শুনে, আরিয়ানের মাসহ সকলের ভূল ধারণা ভেঙ্গে যায়। এমনকি মজনু নিজের বোকামির জন্যে, যথেষ্ট বকাও খায়।
ছেলেকে চুপ থাকতে দেখে, আরিয়ানের মা বললেন,

‘ আমি তো বুঝিনি রে। তুই এভাবে রাগ করে থাকিস না বাবা। ‘

আরিয়ান মুখ ফুলিয়ে থাকে। আরিয়ান মা আবারোও বলে,

‘ কেউ যদি এইভাবে রাগ করে থাকে, তাহলে আমি ভেবেছিলাম আজকে আলুর পরোটা করবো। তা আমি করবো না। ‘

‘ আলুর পরোটা’ আরিয়ানের সবসময়ই পছন্দ। তার পছন্দের খাবার হবে শুনে, আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে তার মাকে বললো,

‘ মা আমি একদম রেগে নেই। আমি সব ভূলে গিয়েছি। এখন তাড়াতাড়ি গিয়ে পরোটা বানাও। ‘

ছেলের কান্ড দেখে আরিয়ানের মা মুচকি হেসে বললেন,

‘ পাগল ছেলে আমার। আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি আসছি। ‘

কথাটি বলেই আরিয়ানের মা রান্নাঘরে চলে যায়। আরিয়ানের মা চলে যেতেই, আরিয়ানের ফোনটা বেজে উঠে। আরিয়ান দেখে ফারিয়ার ফোন। আরিয়ান ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথেই, ফারিয়া উৎকন্ঠি হয়ে বলে,

‘ ডক্টর সাহেব আপনি ওইসময় ফোন কেটে দিলেন কেন? আমার কি কোথাও ভূল হয়েছে?’

আরিয়ান বিড়বিড় করে বললো,

‘ ওইসময় তো আমি ঝাড়ু বাড়ি খেতে ব্যস্ত ছিলাম, তাও তোমার জন্যে। ‘

‘কি বললেন? ‘

‘ না মানে, বলছিলাম কি আসলে আমার নেট প্রব্লেম হয়ে গিয়েছিলো তাই কেটে দিয়েছিলাম। ‘

‘ওহ আচ্ছা। যে কারনে আপনাকে ফোন দিলাম। সেইটাই তো বলা হলো না। ‘

‘কিসের জন্যে? ‘

ফারিয়া ফিসফিস করে বললো,

‘ আমি না আমার বন্ধু-বান্ধুবীদের সাথে ট্যাুরে যাচ্ছি। তাই এই কয়দিন আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো নাম তাই চিকিৎসাও নিতে পারবো না। আমি বরং ট্যাুর থেকে এসে, আপনার সাথে যোগাযোগ করবো ওকে? ‘

ফারিয়ার সাথে কয়দিন আরিয়ানের যোগাযোগ থাকবে না, কথাটি ভেবে আরিয়ানের মনটা কেন যেন খারাপ হয়ে গেলো। আরিয়ানের ভাবনার মাঝেই ফারিয়া বলে,

‘ ডক্টর সাহেব আমি রাখছি আল্লাহ হাফেজ। ‘

‘ আল্লাহ হাফেজ। ‘

ফারিয়া ফোনটা কেটে দিলো। তার ও মনটা খারাপ হয়ে গেলো হঠাৎ করে।

__________________

আরহাম সকালে উঠেই দেখে মাথাটা তার ভিষন ধরেছে। এই সময় চা হলে মন্দ হতো না। আরহাম উঠতে নিলে, তার চোখ যায় পাশে থাকা চায়ের কাপে। আরহাম চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে দেখে তার পাশে ছোট্ট চিরকুট। তাতে লিখা,

‘ শুভ সকাল আরহাম সাহেব। এইবার একটু নিজের খেয়াল টাও রাখুন। ‘

আরহাম জানে এইসব মেহেভীনের কাজ। আরহাম মুচকি হেসে চায়ে চুমুক দিলো।

_____

আরহাম এয়ারপোার্টে দাড়িয়ে আছে তাহসান, রুশা ও বাকি অফিস কলিগদের সাথে। কিছুক্ষন পরেই তাদের চট্টগ্রামে যাওয়ার ফ্লাইট। আরহাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। তাহসান আরহামের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ তুই নাকি গাড়িতে করে আসবি আরহাম? তুই তো আমাদের সাথে প্লেনে করেই চলে আসতে পারিস। ‘

আরহাম চাইলে আরিয়ান এবং মেহেভীনকে নিয়ে
প্লেনে করেই যেতে পারতো, কিন্তু এখন মেহেভীন প্রেগনেন্ট। এই অবস্হায় মেহেভীনের প্লেনে উঠা ঠিক হবে না। আরহাম ভেবেছে মেহেভীনকে নিয়ে গাড়ি করেই নিয়ে যাবে। আরহাম বললো,

‘ আমি গাড়ি করেই যাবো। তোরা যা। আমি ঠিক পৌঁছে যাবো। ‘

রুশা বুঝতে পারলো না আরহাম কেন তাদের সাথে যাচ্ছে না? জানার আগ্রহ থাকলেও, সে মুখে তা প্রকাশ করলো না। রুশা ঠিক করেছে, চট্টগ্রামে গিয়েই সে তার মনের কথা খুলে বলবে আরহামকে।

আরহামের থেকে বিদায় নিয়ে, সকলের প্লেনে উঠে গেলো। আরহাম গাড়ি করে বাড়ির ফিরে আসার পথে, তার মাকে ফোন করলো। আরহামের মা এবং মেহেভীন একসাথে মিলে কাপড় গুজাচ্ছে। আজকে রাতেই আরহাম, মেহেভীন ও আরহাম বেড়িয়ে পড়বে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। আরহামের মায়ের ফোন বেজে উঠতেই, তিনি তা রিসিভ করার সাথে সাথেই আরহাম বললো,

‘ হ্যালো মা? তোমাদের প্যাকিং করা সব শেষ? ‘

‘ হয়ে গেছে প্রায়।’

‘ আচ্ছা শুনো তুমি মেহেভীনের সব ওষুধগুলো একটু দেখে নিও। ও যা স্টুপিড ওষুধ গুলোও ঠিকমতো নিতে পারবে না। ‘

‘ হুম বাবা। বুঝেছি আর কিছু? ‘

‘ মেহেভীনের পথে বমি হতে পারে, তাই ব্যাগেও কিছু আচার দিয়ে দাও। ‘

আরহামের মা হেসে বললেন,৷ ‘ সব রেখেছি আমি। বউকে নিয়ে তোর এতো চিন্তা বাপ রে বাপ। ‘

আরহাম বললো, ‘ চিন্তা করবো না? যা স্টুপিড মেয়ে একটা। নিজের একটুও খেয়াল রাখবে না। আমি তো পারলে এইরকম জার্নির জায়গায় মেহেভীনকে নিতাম না,কিন্তু মেহেভীন তো মেহেভীনই। সারাদিন শুধু স্টুপিড কাজ করে বেড়াবে। আমি তো ওকে রেখে গেলেও ওখানে গিয়ে, শান্তিমতো কাজ করতে পারবো না। আমার মাথায় শুধু এইটাই ঘুড়পাক খেতো স্টুপিড মেয়েটা নিজের খেয়াল না রেখে,সব স্টুপিডের কাজ করছে। ‘

কথাগুলো একদমে বলে কেটে দিলো আরহাম। ফোনটা স্পিকারে ছিলো যার কারনে আরহামের কথা মেহেভীন ও শুনেছে। যদিও তাকে স্টুপিড বলেছে, তবুও তার কেন যেন এই স্টুপিড ডাকটাকেই বড্ড আপন মনে হচ্ছে। এই মানুষটার কত চিন্তা তাকে নিয়ে। মেহেভীন তো তার কেউ না। তাহলে শুধু দায়িত্ববোধের জন্যে একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে নিয়ে এতোটা চিন্তা করে? আরহামের মা মেহেভীনের ললাটে ধরে বললেন,

‘ মেহু মা দেখলি? আমার ছেলেটার ঠিক কতটা চিন্তা তোকে নিয়ে। আমার ছেলেটা এতোটা ভালোবাসো ফেললো কি করে রে? আমার ছেলেটা কতটা বেখায়ালি ছিলো, আজ সে কতটা খেয়াল রাখে তোর। কতটা ভালোবাসলে,মানুষ এইভাবে চেঞ্জ হতে পারে। ‘

‘ভালোবাসার ‘ কথা শুনে মেহেভীনের বুকটা ধক করে উঠে। আরহাম তাকে ভালোবাসে? এইসব কি ভাবছে সে। সে তো জানে আরহাম শুধু দায়িত্ব পালন করছে। তবুও মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়। সবটাই কি দায়িত্ব?

_________

অভ্রের মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে,মায়রা এবং অভ্র গাড়িতে বসে পড়ে। মায়রার মনে তো অনেক খুশি। এইবার সে সবকিছু ঠিক করে ফেলবে। যদিও অভ্রের মুখে হাঁসির বিন্দুমাত্র ছিঁটেফোটাও নেই। তার মন শুধু মেহেভীনের মাঝে সীমাবদ্ধ। মায়রা অভ্রকে বললো,

‘ অভ্র কি ভাবছো? ‘

‘ তেমন কিছু না। ‘

অভ্র গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দিলো। দুজনের মাঝে পিন পিন নিরবতা। দুজন একসাথে থেকেও আজ কতটা আলাদা!

_________

আরহাম, আরিয়ান ও মেহেভীন গাড়ি দিয়ে রওনা হয়েছে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। সামনের সিটে ড্রাইভার মজনু এবং তার পাশে আরিয়ান। পিছনের সিটে মেহেভীন এবং আরহাম। আরহাম ল্যাপটপে কাজ করছে, এবং আড়চোখে মেহেভীনের দিকে তাকাচ্ছে। মেহেভীনে জানালার কাছে ঘেষে বসে আছে। মেহেভীনের মনটা হুট করেই আজ খারাপ হয়ে গেলো। কেন যেন তার মনে হচ্ছে সামনে যা হবে, তা ভালো হবে না। নিশ্চই কিছু একটা খারাপ হবে।
এখন বেশ রাত। নিস্তব্ধ রয়েছে শহরটা। রাতের শহর দেখতে বেশ ভালো লাগে।
আরিয়ান তার ক্যামেরা দিয়ে রাস্তায় বসে থাকা বিভিন্ন মানুষের মুহুর্তে ক্যামেরাবন্দী করে রাখছে।
সামনে পিচঢালা রাস্তা, তাই মজনু কিছুটা ঘুড়িয়ে গাড়িটা চালায়,যার ফলে তাল সামলাতে না পেরে মেহেভীন………..

চলবে…ইনশা-আল্লাহ।

[আজকে অনেক ব্যস্ততার মাঝে গল্পটা লিখিছি 🥱তাই কিছুটা এলেমেলো করে ফেলেছি 😅]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here