তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ২৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন তাল সামলাতে না পেরে,আরহামের বুকে গিয়ে পড়লো। আরহামও শক্ত করে মেহেভীনকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। মেহেভীন ‘সরি ‘ বলে উঠতে চাইলে, আরহাম মেহেভীনকে আরো শক্ত করে মিশিয়ে বলে,
‘ স্টুপিড মেয়ে যদি নিজেকে সামলাতে না পারে, তাহলে তো আমাকেই আগলে রাখতে হবে তাইনা? তুমি বরং আমার বুকেই ঘুমিয়ে পড়ো। সামনে আরো পিচঢালা রাস্তা আছে। এই অবস্হায় বার বার ঝাক্কি খাওয়াটা ঠিক নয়। ‘
মেহেভীন কিছুটা সংকোচ নিয়ে বললো,
‘ কি করছেন কি? আরিয়ান দেখছে তো? কি ভাব্বে ছাড়ুন। ‘
আরহাম কন্ঠে মধুরতার সুর এনে বললো,
‘ ছাড়বো না। আরহাম হাসান তালুকদার এতো তোমাকে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। হোক সেটা দায়িত্ব কিংবা ভালো…’
আরহাম বাকি কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে রইলো অদ্ভুদ দৃষ্টিতে। আরহাম কি যেন বলতে চাইছিলো। কিন্তু বললো না। মেহেভীনের জানতে ইচ্ছে করলো আরহামের মুখে সেই অব্যক্ত বাণী।
আরিয়ান পিছনে না ঘুড়েই বললো,
‘ আমি কিছুই দেখছি না। আমি তো ছবি তুলতে ব্যস্ত। এতো কিছু দেখার সময় নাই আমার। ‘
‘ দেখলে তো কিছুই দেখছে না আরিয়ান। তুমি বরং আমার বুকেই নিশ্চিন্তেই ঘুমিয়ে পড়ো। তাহলে এতো ঝাক্কি খেতে হবে না। ‘
আরহামের কথা শুনে মেহেভীন লজ্জা পেয়ে গেলো। আরহাম স্মিত হাসলো। মেহেভীন আরহামের বুকেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। এই বুক হয়তো তার জন্যে সব থেকে নিরাপদ। আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকিয়েই রইলো। এইরকম মনোমুগ্ধকর মুহুর্তটিকে
ক্যামেরাবন্দী করতে একদমই ভূললো না আরিয়ান।
মজনু গাড়ি চালাতে চালাতেই হাসলো।
___________
দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অবশেষে আরহাম, আরিয়ান ও মেহেভীন চট্টগ্রামে পৌঁছে গেলো বেশ সকালেই। আরহাম একটা ফাইভ স্টার হোটেল বুক করে ফেললো,যেখানে তাদের সব অফিসের কলিগরা উঠেছে। রুশা,তা্হসানসহ বাকি সকল কলিগরা আপাতত চট্টগ্রাম শহরটাকে একটু ঘুড়ে দেখতে গিয়েছে। আরহাম এখনো তাদের সাথে দেখা করিনি। ভেবেছে একেবারে রাতের মিটিংয়েই সকলের সাথে দেখা করে ফেলবে। যদিও আরহাম তাহসানকে ফোন করে বলে দিয়েছে সে পৌঁছে গেছে। যেহুতু এখানে আরহামের বাবা-মা কেউ নেই। তাই আরহাম মেহেভীনের জন্যে আলাদা রুম বুক করে ফেলে,যদিও রুমটা আরহামের রুমের পাশের রুমটি।
মেহেভীন, আরহাম, আরিয়ান এবং মেহেভীন সকালের নাস্তা করতে লাগলো ফাইভ স্টার হোটেলের ব্রেকফাস্ট টেবিলে। মেহেভীন খেতে গিয়েও পারছে না। এতো পথ জার্নির করার ফলে, সে যথেষ্ট ক্লান্ত। আরহাম মেহেভীনের অবস্হা বুঝতে পেরে বললো,
‘ মেহেভীন তুমি বরং রুমে চলো। আমি বরং কোন স্টাফকে দিয়ে তোমার খাবার টা রুমে আনিয়ে নিচ্ছি। আর আরিয়ান তোরা খেয়ে না। ‘
মেহেভীন ও আরিয়ান সম্মতি জানায়। আরহাম নিজের খাবার টা না খেয়েই, মেহেভীনের হাত ধরে আস্তে আস্তে করে মেহেভীনের রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। মজনু দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আমাগো বড় ভাইজান আমাগো ভাবিরে কত্ত ভালোবাসে। আহা উনাগো দেখলে আমার খালি দেখতেই ইচ্ছা করে। ‘
আরিয়ান কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
‘ দোয়া করিও মজনু। সবসময় যেন এইরকম থাকে। ‘
‘ আমি আর রাহেলা তো সবসময় দোয়া করি। আমাগো বড় ভাইজান আর বড় ভাবি যেন সবসময় এমই থাকুক। এদের ভালোবাসার উপরে যেন কারো শয়তানের বদ নজর না পড়ে। ‘
আরিয়ান স্মিত হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
________
অভ্র গাড়িটা ফাইভ স্টারে হোটেলের সামনে রাখলো। মায়রা এবং গাড়ি থেকে নেমে গেলো। হোটেলটার দিকে তাকিয়ে অভ্রের কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হচ্ছে।মনে হচ্ছে এখানেই সে তার কাঙ্খিত কিছু পেয়ে যাবে। অভ্র বুঝতে পারছে না, তার এমন অদ্ভুদ অনুভুতির কারণ কী? মায়রা এগিয়ে এসে, অভ্রের কাধে হাত রেখে বলে,
‘ অভ্র….’
মায়রার ডাকে হুশ ফিরে অভ্রের। মায়রা বললো,
‘ অভ্র ভিতরে যাবে না? এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে। ‘
‘ হুম যাচ্ছি চলো। ‘
মায়রা ও অভ্র তাদের লাগেজ নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। মেহেভীনকে নিয়ে এসে, আরহাম কাউন্টার থেকে তাদের রুমের কার্ড নিয়ে, তাদের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। আরহাম ও মেহেভীন চলে যেতেই, কাউন্টারে অভ্র ও মায়রা কাউন্টারে চলে এলো। কাউন্টারে বসে থাকা স্টাফ অভ্রদের উদ্দেশ্য বললেন,
‘ স্যার আপনাদের কয়টা রুম লাগবে? ‘
‘ জ্বী আমাদের জন্যে একটা রুম বুক করে দিন। ‘
মেহেভীনের কানে অভ্রের কন্ঠের প্রতিধ্বনি আসে। মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে দেখে কেউ নেই। মেহেভীনের মনে হচ্ছে অভ্র এখানেই আছে। কিন্তু অভ্র এখানে কি করে থাকতে পারে? মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম বলে উঠে,
‘ এখানে দাড়িয়ে কি করছো? ভিতরে চলো। ‘
আরহামের কথা শুনে আর কিছু না ভেবে, মেহেভীন নিজের রুমে চলে যায়। আরহাম মেহেভীনকে ঘরে খায়িয়ে দিয়ে, নিজের রুমে এসে, শুয়ে পড়ে। কালকে মজনু নিজের হাতে ব্যাথা পাওয়ায়, আরহামই নিজে ড্রাইভ করে এসেছে। আরহাম তার ব্যাগটা রেখে, বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়। মেহেভীন টিপ টিপ করে আরহামের রুমে ঢুকে। মেহেভীনের ধারণাতমতে, আরহাম এখন গভীর ঘুমে আচ্ছান্ন। এইটাই সুযোগ! মেহেভীন আস্তে আস্তে আরহামের কাছে গিয়ে, আরহামের কাছে গিয়ে বসে পড়ে। আরহামের কপালে লেপ্টে থাকা সিল্কি চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে, কপালে মালিশ করে দিতে থাকে। মেহেভীন জানে আরহামের মাথা প্রচন্ড ধরেছে তাই সে মালিশ করে দিতে এসেছি। আরহাম যদি জানে এই অবস্হায় মেহেভীন এসেছে, তাহলে রামধমক দিবে। কথাটি ভেবে মেহেভীন মুচকি হাসে।
আরহাম ঘুমের মাঝেই মুচকি হাসে,যা মেহেভীনের অগোচর হয়ে থাকে।
_________
অভ্র লাগেজ টা রেখে, ওয়াশরুমে চল যায়। মায়রার মনে তো অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করছে। আরহাম ওয়াশরুম থেকে বেড়োতেই, মায়রা অভ্রের কাছে আবদারের সুরে বলে,
‘ অভ্র আজ ডিনারের পরে, আমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে? আগের মতো? ‘
অভ্রের কথাটি শুনেই চোখ-মুখে ধরা দিলো একরাশ বিরক্তি। সে বিরক্তির সুরে বললো,
‘ দেখো মায়রা আমি আজকে যথেষ্ট টায়ার্ড। এতো রংঢং করার ইচ্ছে নেই আমার। আমাকে প্লিয এখন একা ছেড়ে দাও। ‘
‘ অভ্র…এইসব বলছো কি তুমি! আগেও তো কত টায়ার্ড থাকতে তুমি। সারাদিন অফিসের কাজ করে, আমার বায়না মিটানোর জন্যে, কত লং ড্রাইভে নিয়ে গিয়েছো? আজ এতোটা চেঞ্জ কেন হলে, অভ্র?’
মায়রা চোখ ছলছলো হয়ে উঠছে কথাগুলো বলতে বলতে। অভ্র জবাব দিলো না।
‘ ডিনার করতে চলো। ‘
কথাটি বলেই প্রস্হান করলো অভ্র। মায়রা বরাবরের মতো আশাহত হলো।
______________
এদিকে,,
মেহেভীন নিজের রুমে এসে পানির গ্লাস হাতে নিতেই দেখে, তার পাশে ছোট্ট চিরকুট। তাতে লিখা,,
‘ প্রেয়সী! তুমি সবার খেয়াল রাখো। এদিকে আমার অন্তরের খবর কী রাখো? উহু একদমই না।
আমার অন্তরটা জ্বলে পুড়ে খাড় হয়ে যাচ্ছে, তোমাকে না পাওয়ার অসুখে সেই খবর রাখো? চিন্তা করোনা। ঠিক আমি তোমাকে নিজের করে নিবো। ‘
চিরকুট টা দেখে মেহেভীনের অতিমাত্রায় রাগ হলো। কে এই আগন্তক? দুইদিন পর পর উদয় হয়? যত্তসব! মেহেভীন চিরকুট টা ফেলে দেয়। আরিয়ানের ডাক আসে ডিনারের জন্যে। মেহেভীন নিজের ভাবনাটা চেপে রেখে, নীচে চলে যায়।
আরহামও নীচে বসে আছে। মেহেভীন নীচে নেমে আসে। মেহেভীন নীচে নামতেই, তখনি কেউ এসে আরহামকে জড়িয়ে ধরে। তাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় মেহেভীন। আরিয়ান ও বসা থেকে উঠে যায়। আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউ তাকে এখানে আশা করেনি। মেহেভীন যেন তাকে দেখে ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে।
চলবে….ইনশা-আল্লাহ।
[ অনেক ব্যস্ততার মাঝে যাচ্ছি তবুও গল্প দিচ্ছি প্রতিদিন। কেউ ছোট বলবেন না 🐸]