তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব-৩১

তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব-৩১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

মেহেভীনকে সম্পুর্ন অবাক করে দিয়ে, আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে হোটেলের পাশের সাইডের পুলের দিকে নিয়ে আসে।এই সাইডে তেমন কেউ আসেনা। আরহাম জায়গাটা কিছুক্ষন এর জন্যে ভাড়া করে নিয়েছে।ছোট্ট ছোট্ট ক্যান্ডেল পুলের পানিতে ভেঁসে চলেছে। সবমিলিয়ে মনোরম একটা পরিবশ তৈরি হয়ে গেছে মুহুর্তেই।তার পাশে একজন লোক হাতে দুইশোর মতো গ্যাসের বেলুন একসাথে রশিতে বেঁধে নিজের হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলো বেলুনে ছোট্ট করে লেখা রয়েছে, ‘ New baby is Coming, only after 4 months. just waiting. ‘
লেখাটা পড়ে মেহেভীন তার পেটে হাত রাখে। দেখতে দেখতে পাঁচটা মাস কেটে গেছে তার সন্তান,তার গর্ভে বেড়ে উঠেছ। আর মাত্র ৪ মাস পরেই, সে পৃথিবীতে চলে আসবে। কথাটি ভাবতে গিয়ে, মেহেভীনের চোখে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। মেহেভীনের চোখ অশ্রুটুকু আরহাম সযত্নে মুছে দিয়ে, বলে,

‘ কাঁদছো কেন স্টুপিড মেয়ে? সবাইকে কাঁদলে মানায় না। কিছু কিছু মানুষকে হাসলেই শুধু মানায়। তারা কাঁদলে, বুকের ভিতর ধক করে উঠে। তাদের মধ্যে তুমিও অন্যতম। জানো মেহেভীন আমার কি মনে হয়? আমার কাছে যদি এখন ক্ষমতা থাকতো, তাহলে তোমার কান্না করাটা আমি দন্ডনীয় অপরাধ করা দিতাম। ‘

আরহামের কথা শুনে, ভরকে যায় মেহেভীন নামক রমনী। যুবক প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্যে বলে,

‘ তুমি জানো না? এখন যদি তুমি মন খারাপ করো থাকো,তাহলে ভিতরে যে ছোট্ট একটা প্রান বেড়ে উঠছে, তার কতটা ক্ষতি হবে? জানো তো? ‘

মেহেভীন মাথা নাড়ায়। আরহাম বেলুনওয়ালা লোকটার থেকে, সবগুলো বেলুন নিয়ে নিজের হাতে নিয়ে আসে। অতঃপর মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে,

‘ এখন এই বেলুনগুলো আকাশে তুমি উড়িয়ে দাও। ‘

মেহেভীন অবাকের সুরেই বললো, ‘ আমি কেন? ‘


আরহাম ঠোটের কোণে চমৎকার হাঁসি ঝুলিয়ে বলে,

‘ এই বেলুনগুলোর সাথে তোমার সমস্ত দুঃখ কষ্ট আকাশের কাছে বিলিন করে দাও। আকাশ তো বিশাল। এই বিশাল আকাশে দেখবে তোমার এক মুঠো দুঃখ-কষ্ট মুহুর্তেই বিলিন হয়ে যাবে। জীবনটা অতি ক্ষুদ্র। এই ছোট্ট জীবনে ছোট ছোট আনন্দগুলোকে আকড়ে ধরে আমাদের বাঁচতে হবে। দুঃখ কষ্টকে সাথি করলে জীববটা নরকে পরিনত হয়ে যায়। ‘

আরহামের কথা শুনে মেহেভীনের ঠোটেও হাসির রেশ ধরা দেয়। মেহেভীন আরহামের থেকে বেলুনগুলো নিয়ে, একসাথে তা আকাশে ছেড়ে দেয়। বেলুনগুলো আকাশের ঠিকানায় উড়ে চলেছে। মেহেভীন জোড়ে চিল্লিয়ে বলে,

‘ বেবী তোমার মা তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি করে চলে আসো তোমার মায়ের কাছে। ‘

কথাটি বলেই মেহেভীন হাত তালি দিতে থাকে। আরহাম ও মুচকি হেসে মেহেভীনের সাথে হাতে তালি দেয়।

সঙ্গে সঙ্গে মেঘের গর্জন করে উঠে। নভেম্বর মাস এখন। শীত প্রায় চলে এসেছে বলতে গেলে। এইসময় হঠাৎ বৃষ্টি আশাজনক নয়। বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করে দেয়। মেহেভীন বৃষ্টি দেখে পুলের দিকে গিয়ে, দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করতে থাকে। মেহেভীনের বরাবরই বৃষ্টি পছন্দ, তবে এতোদিন কষ্টের ভেড়াজালে সে তা প্রকাশ করতো না। আজ আরহামের কথা শুনে, তার বৃষ্টিতে বড্ড ভিজতে ইচ্ছে করছে। আরহাম মেহেভীনকে এইভাবে ভিজতে দেখে বলে,

‘ মেহেভীন? চলো এখন হোটেলে। অসময়ের বৃষ্টি। জ্বর-ঠান্ডা লেগে যাবে তো। লেটস গো। তাড়াতাড়ি চলো। ‘

আরহাম কথাটি বলে এগোতে নিলে, মেহেভীন আরহামের হাতজোড়া ধরে ফেলে। মেহেভীন এইভাবে হাত ধরে রাখায়, আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন বললো,

‘ একটু বৃষ্টিবিলাশ করলে ক্ষতি কি আরহাম সাহেব? বড্ড ভালো লাগে আমার বৃষ্টি। আপনার বুঝি ভালো লাগেনা? আপনিই তো বললেন ছোট ছোট আনন্দকে পুজি করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। ধরে নিন আমার আনন্দ এই বৃষ্টির মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ‘

মেহেভীনের কথা শুনে আরহাম মেহেভীনকে বাঁধা দিলো না। বরং স্মিত হেসে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে রইলো। আরহামের থেকে সায় পেয়ে, মেহেভীন খুশিতে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে,বৃষ্টি বিলাশ করতে থাকে। নিজের আখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে। ঠোটের কোণে মিষ্টি হাঁসি লেগে আছে। মেহেভীনের এইরকম মিষ্টি হাঁসি দেখে আরহাম আস্তে করে বলে,

‘ ওগো বৃষ্টিবিলাশিনী দেখতে পাচ্ছো? হাসলে কিন্তু তোমার মুখে অদ্ভুদ মায়া এসে ভীর করে। এই অদ্ভুদ মায়ার ভীরে যেকোন যুবক হারিয়ে যাবে, তাহলে সবসময় হাঁসো না কেন? স্টুপিড মেয়ে একটা। ‘

আরহাম গুন গুন করে গেঁয়ে উঠে,

রাতেরই এ আঁধারে
অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া
যেন গোধূলি আবীর মাখা

রাতেরই এ আঁধারে
অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া
যেন গোধূলি আবীর মাখা

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

আরহামের গানে মেহেভীন আরহামের দিকে তাকায়। আরহামের সুরে অদ্ভদ ভালো লাগা কাজ করছে মেহেভীনের। আরহামও সম্পুর্ন ভিজে যাচ্ছে। আরহাম মেহেভীনের দিকে এগোতেই, মেহেভীন পিছাতে গিয়ে, ধপ করে পড়ে যেতে নিলে, আরহাম মেহেভীনকে নিজের দিকে টেনে নেয়। মেহেভীনের ভেজা চুল আরহামের মুখে আচড়ে পড়ছে। আরহাম আস্তে আস্তে চুলগুলো ধীরে ধীরে মেহেভীনের কানের কাছে গুজে দিতে থাকে। আরহামের তপ্ত নিঃশ্বাস মেহেভীনের গলায় উপচে পড়ছে। মেহেভীনের মনে হচ্ছে এই নিঃশ্বাস সে আগেও তার গলায় অনুভব করেছিলো,কিন্থ তা কীভাবে সম্ভব? আরহামের কেন যেন ঘোরের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির বেগ সময়ের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরহাম মেহেভীনের ঠোটের দিকে এগোচ্ছে। মেহেভীন সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তার৷ চিকন ঠোটজোড়া কাঁপছে অনাবরত। মেহেভীন ঠোট দিয়ে টু শব্দও করতে পারছে না। শরীরে যেন কোনপ্রকার শক্তি সে পাচ্ছে না। আরহাম কিছু একটা ভেবে, নিজেকে সামলিয়ে নেয়। আরহাম মেহেভীনের থেকে দূরে সরে গিয়ে বলে,

‘ অনেক ভেঁজা হয়েছে। এইবার রুমে চলো,নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। ‘

আরহাম কথাটি বলেই দ্রুত রুমের দিকে যেতে থাকে। মেহেভীনের লজ্জ যেমন হচ্ছে, তেমন অস্বস্হিও হচ্ছে। সে নিজেকে বার বার বকা দিতে থাকে। সে কেন আরহামকে বাঁধা দেয়নি? মেহেভীনের এক মুহুর্তের জন্যে মনে কি আরহামের জন্যে অনুভুতি জন্ম নিয়েছিলো? মেহেভীন নিজের মনকে বুঝিয়ে বলে,

‘ এইসব কি ভাবছিস তুই মেহু? ছিহ। এইসব ভাবাও পাপ। আরহাম সাহেবের জন্যে কোনপ্রকার অনুভুতি জন্ম নিতে পারে না আমার। আমি আমার জীবনে আর কখনো কাউকে জড়াবো না। সবথেকে বড় কথা আরহামের সাহেবের মনে অন্য কেউ আছে। ‘

মেহেভীন নিজের মনকে শত বুঝালেও,সে একটু হলেও বুঝতে পারছে তার মনে অন্যরকম করে সুপ্ত অনুভুতির আগমন ঘটছে, যা মেহেভীনকে আবারোও কষ্ট দিবে। মেহেভীন কাঁপা গলায় বললো,

‘ মানুষ ভূল জীবনে একবারই করে। আমার কাছে ভালোবাসা তেমনই একটা ভূল। আমি জেনে বুঝে কিছুতেই পুনরায় ভূল করবো না। ‘

মেহেভীন ও আস্তে আস্তে করে রুমের দিকে পা বাড়ালো। অভ্র এতোক্ষন নিজের রুমের জানালা দিয়ে, সবকিছুই দেখছিলো। আরহাম এবং মেহেভীনের কাছে আসার প্রতিটা মুহুর্তেই অভ্রের নজরে ভালো করেই এসেছে। অভ্র নিজের মাথাটা ঠিক রাখতে পারছে না। তার মাথায় যেন আগুন ধরে গেছে। মেহেভীন তো একদিন তার ও এতোটা কাছে এসেছিলো। মেহেভীন তার স্ত্রীও ছিলো বটে, সে আজ অন্য কারো সাথে ঢলাঢলি করছে, তা কিছুতেই সে দেখতে পারছে না। অভ্র তার হাতে থাকা ফুলদানীর বাস্কটা সপাটে ছুড়ে ফেলে।

এদিকে মায়রা ঘুমিয়ে ছিলো, কিছু পড়ার আওয়াজে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মায়রা ঘুম থেকে উঠে দেখে অভ্রের হাত থেকে ফিংকি রক্ত মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছে। অভ্রের চোখ-জোড়া লালাটে আকাড় ধারণ করেছে। অভ্র কেমন একটা হিংস্র মনে হচ্ছে। মায়রা থমথমে গলায় বললো,

‘ অভ্র…’

সঙ্গে সঙ্গে অভ্র চিৎকার করে বলে,

‘ কেন? আজ কেন মেহেভীন আমার থেকে দূরে? আমি যে সহ্য করতে পারছি না। একদমই করতে পারছি না। আমি পারছি না আমার প্রাক্তন স্ত্রী আজ অন্য কারো এতোটা কাছে। আমি পারছি না মায়রা? আমার এতোটা অসহায় কোনদিন ও লাগেনি। ‘

অভ্র ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে কথাটি বলে। মায়রা মুখ চেপে কান্না করে। সে কিছুতেই ভাবতে পারেনি,অভ্র মেহেভীনের প্রতি এতোটা দূর্বল হয়ে যাবে।

______

রাইসা নিজের রুমে বসে গভীর ভাবনায় ঢুবে আছে।
অভ্র এবং মেহেভীনকে সে অনেকটা কাছ থেকে দেখেছিলো। অভ্র শুধুমাত্র মায়রাকে জেলাস ফিল করানোর জন্যে, মেহেভীনকে শুধুমাত্র ব্যবহার করেছে, এই বিষয়টা সম্পুর্নভাবে রহস্যজনক লাগছে তার। তাছাডা রাইসার কাছে মনে হচ্ছে অভ্র যা করছে কিংবা ভবিষ্যৎ এ করবে,তা সত্যি ভয়ংকর। রাইসা সেদিন হোটেল রুমের সম্পুর্ন কাহিনী জানে। মেহেভীন এবং অভ্র সেদিন নেশার ঘোরে কাছাকাছি এসেছিলো, তা অভ্র নেশার ঘোরে ভূলে গেলেও, মেহেভীন রাইসাকে ঠিকই কথাটি জানিয়েছিলো। রাইসা বুঝতে পারছে, মেহেভীনের সাথে বড় অন্যায় করা হয়েছে। মেয়েটার মুখ ভেসে উঠলেই, রাইসার বড্ড খারাপ লাগে। রাইসা অভ্রকে পুনরায় ফোন করে।

_____

মায়রা উঠে দাঁড়িয়ে, অভ্রের কলার চেপে ধরে বলে,

‘ তুমি এই কথা বলছো অভ্র? তুমি কী করে বলতে পারলে অভ্র? তোমার এখন তোমার প্রাক্তনের প্রতি এতোটাই দরদ উতলে পড়ছে যে, তার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারছো না তুমি?কিন্তু কেন অভ্র? জবাব দাও অভ্র? আচ্ছা তুমি কি মেহেভীনকে ভালোবাসো? ‘

মায়রার কথায় মুহুর্তেই অভ্র শান্ত হয়ে যায়। তার মুখে নেমে আসে অন্ধকার। অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে,মায়রার মেজাজটাই বিঘড়ে যায়। মায়রা অভ্রের শার্ট শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

‘ কি হলো অভ্র? তুমি কথা বলছো না কেন? আমাকে জবাব দাও। দেখো আমি অনেক সহ্য করেছি আর পারছি না। তুমি কী মেহেভীনকে ভালোবাসো? ‘

অভ্র কী জবাব দিবে এখন? এই প্রশ্নের উত্তর তো সে নিজেও জানে না। অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে মায়রা আশাহত হয়। বুক ফেটে কান্না আসে তার। তার এখন সব রাগ -ক্ষোভ উতলে উঠছে মেহেভীনের উপর। মেহেভীন নামক কাটাটাই তার জীবনের সব সুখ নিমিষেই শেষ করে দিচ্ছে।
মায়রা গটগট করে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।

মায়রা বেডিয়ে যেতেই,অভ্রের ফোন বেজে উঠে। অভ্র তাকিয়ে দেখে রাইসার ফোন। অভ্র রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে, রাইসা হতদন্ত হয়ে বললো,

‘ অভ্র আমি কাল বা পরশুর মধ্যে দেশে ফিরছি৷ তোর সাথে জরুরী কথা আছে আমার। ‘

‘কি এমন জরুরী কথা? ‘

‘সেসব বলার সময় আমার নেই। শুধু এইটুকু জেনে রাখ। অনেক বড় কথা তোকে বলার আছে,যা সামনাসামনিই বলতে হবে। ‘

রাইসা কথাটি বলেই ফোন কেটে দেয়। অভ্র বুঝতে পারছে না রাইসা হঠাৎ কি বলতে চায়?

______

আরহাম সোফায় গড়াগড়ি করছে। তার চোখে ঘুম যেন ধরাই দিচ্ছে না। মেহেভীন রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আরহামের কেমন যেন অস্বস্হি কাজ করছে। মেহেভীনকে তাকে কোনভাবে ভূল বুঝেছে? তখনি আরহামের কানে মেহেভীনের আর্তনাদ ভেঁসে আসে।

চলবে…কী?

[একটু বড় + ছোট খাটো স্পেশাল পার্ট দিলাম 🥰। আজকের দিনটা আমার জন্যে একটু স্পেশাল তাই।]

6 COMMENTS

  1. Apu next part er jnno to r opekkha krte partechi nh onno golpo pora diya ata age diyo plz ai golpo ta khubi vlo lagaar moto akta golpo amr frnd ra ata dekhar jnno pgl hoye jacche kintu baki part gulo to dile oder o sunaite prtm…. Plz jldi diye daw part gula

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here