তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব- ৩৫

তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ৩৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন বুঝতে পারছে না তার এই মুহুর্তে ঠিক কি করার উচিৎ। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, কেউ তার চোখ বেঁধে দেয়। হুট করে এমন করাতে মেহেভীন কিছুটা ভরকে যায়। কে তার চোখ বেঁধে দিলো? মেহেভীন চিল্লাতে নিলে,কেউ তার মুখ আলতো করে চেপে, মেহেভীনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ধরা গলায় বলে, ‘ প্রেয়সী!তুমি আবারোও ছটফট করছো? কাজের সময়ই এতো ছটফটে হয়ে যাও কেন?ইটস নট ফ্যায়ার। ‘
কথাটি বলেই যুবক তার প্রেয়সীর কানের লতিতে তার ঠোটের উষ্ম পরশ দিয়ে দেয়। কন্ঠটা শুনে মেহেভীনের শরীরের শীরায় শীরায় মৃদ্যুভাবে কেঁপে উঠে। মেহেভীনের শরীরটা যেন তার গতি
হারিয়ে ফেলছে। ভূত দেখলে মানুষ যেভাবে কেঁপে উঠে,তেমনি অচেনা আগুন্তকের হুটহাট স্পর্শে মেহেভীন কেঁপে উঠছে। কন্ঠটা পরিচিত লাগলেও তেমন একটা বুঝতে পারছে না। কিন্তু মেহেভীন এইটুকু আন্দাজ করতে পারছে, রং খেলার দিন মেহেভীনকে যে রং মাখিয়েছিলো, সেই আজ তার চোখ বেঁধে দিয়েছে। অর্থাৎ সেই চিঠি প্রেরকটা। কিন্তু এই অচেনা যুবকটি হঠাৎ করে মেহেভীনের চোখ বাঁধলো কেন? মেহেভীন এইবার আরো জোড়ে জোড়ে নরাচরা করা শুরু করলো। যুবকটি মেহেভীনের কান্ডে বিরক্ত হয়ে বললো,

‘ এইভাবে নরাচরা করছো কেন? ‘

মেহেভীন ভিতু গলায় বললো,

‘ আমাকে ছেড়ে দিন বলছি। আমি এখন চিৎকার করবো। আমাকে ছাড়ুন। আমি বেশ বুঝতে পারছি আপনি আমার চোখে কাপড় বেঁধে আমার মুখ চেপে,আমাকে মেরে এখানকার পুকুরে আমার লাশটা ফেলে চলে যাবেন। যাতে কেউ বুঝতে না পারে। আমি সব বুঝে গেছি আপনার মতলব টা।’

মেহেভীন এইরকম বোকা কথায় যুবকটির রাগে মাথা গরম হয়ে যায়। সে অনেক কষ্টে নিজের রাগটুকু নিয়ন্ত্রন করে, মৃদ্যু সুরে বললো,
‘আমি তোমাকে মারতে যাবো কেন? তুমি তো আমার প্রেয়সী। ‘

মেহেভীন নিজের থেকে অজানা ব্যক্তিকে সরানোর চেস্টা করে বলে,

‘ আমি জানি না কিছু। আমাকে ছেড়ে দিন। আরহাম সাহেব এবং বাকিরা আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। আমাকে যেতে হবে। আমি কিন্তু এখন চিল্লাবো, না ছাড়লে। ‘

কথাটি বলেই মেহেভীন চিৎকার করতে নিলে,যুবকটি তার মুখে চেপে ধরে বলে,
‘ চিৎকার করে কোন লাভ নেই। আজ তোমাকে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি। আজ তোমার সব অপেক্ষার অবসান হবে প্রেয়সী। তার জন্যে একটু অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে। ‘

মেহেভীন কিছু বলার আগেই, অজানা ব্যক্তিটি মেহেভীনকে কোলে তুলে, গাড়ির দিকে এগোতে থাকে। মেহেভীন কোলের মধ্যেই নড়তে থাকে,কিন্তু তেমন কোন লাভ হয়না।মেহেভীনের মুখ ও টেপ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। মেহেভীনের চোখ বেঁধে দেওয়ায়, মেহেভীনের কাছে সবকিছু ধোঁয়াশা লাগছে। কিচ্ছু দেখতে পারছে না সে। মেহেভীন এইটুকু বুঝতে পারছে,আপাতত সে চলন্ত গাড়িতে আছে। এই গাড়ির গন্তব্য কি? কোথায় নিয়ে যাবে তাকে এই অচেনা যুবকটি?

___

অভ্রের পক্ষে নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে তার। কেন সে মিথ্যে অভিনয় করতে গেলো? আজ যদি সে মেহেভীনের সাথে প্রতারণা না করতো, তাহলে তো আজ মেহেভীনের সকল হাঁসিখুশি থাকার কারণ অভ্র হতো, আরহাম নয়। অভ্র মাটিতে ধপ করে বসে, ভেজা গলায় বললো,

‘ মেহু তোকে ফিরে পাওয়ার কি কোন উপায় নেই? একটিবার তোকে ফিরে পেলে, সত্যি বলছি কখনো হারাতে দিবো না তোকে। তুই কি আমাকে ক্ষমা করবি না কখনো মেহু? আমিই বা কি করতাম? আমিও তো বাধ্যই ছিলাম, বিশ্বাস কর নাহলে আমি কিছুতেই তোর সাথে প্রতারণা করতাম না। ‘

অভ্রের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুড়ছে, কোন একটা উপায়ে যদি মেহেভীনকে সে নিজের করে পেতো। অভ্রের জীবনে আশার এক ফালি আলো হয়ে আসে রাইসা। অভ্রের ভাবনার মাঝেই, তার ফোনটা বেজে উঠে। অভ্র রিসিভ করতেই, রাইসা কিছুটা তাড়াহুড়ো করে বলে,

‘ অভ্র তুই আপাতত যেখানেই আছিস। তাড়াতাড়ি ঢাকায় ফিরে আয়। অনেক জরুরী কথা আছে তোর সাথে। ‘

‘ কিন্তু আমি তো এখন চট্টগ্রামে আছি। এখন কীভাবে আসবো? ‘

‘ তুই তাহলে এখুনি রওনা দে অভ্র। কথাটা বলা তোকে অনেক জরুরী বলে আমি মনে করি। তোর এবং মেহেভীনের জীবনের এক চরম সত্য যা তুই জানিস না,কিন্তু এই সত্যিটা তোর জানার সম্পুর্ন অধিকার। তাই বলছি ভাই তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস ঢাকায় ফিরে আয়। ‘

কথাটি বলেই রাইসা ফোনটা কেটে দেয়। অভ্র উঠে দাঁড়ায়। অভ্রের কাছে রাইসার গলাটা কেমন যেন লাগলো। কি এমন সত্যির কথা রাইসা বললো? যা মেহেভীন জানলেও অভ্র জানে না। রাইসা যথেষ্ট পরিমানের বুদ্ধিমান মেয়ে। সে বলেছে তার মানে নিশ্চয় এর পিছনে অন্য কোন ঘটনা লুকিয়ে আছে।

অভ্র অনুষ্টানের জায়গায় যায়। সেখানে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র আরিয়ানের কাছে গিয়ে বলে,

‘ সবাইকেই দেখছি,কিন্তু আরহাম -মেহেভীন কোথায়? ‘

আরিয়ান চারপাশে তাকিয়ে বলে,

‘ মেহেভীন তো পুকুরের দিকটায় গেলো। ভাইয়া কিনারা গিয়েছে,অফিস থেকে জরুরী কল এসেছে। এখানে তো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাইনা বলতে গেলে। তাই। ‘

অভ্র কিছু একটা ভেবে বললো,

‘ আমি এবং মায়রা এখন ঢাকায় যাওয়ার জন্যে রওনা দিবো। তোরা না হয় থাক। আমি না হয় পরে তোদের সাথে যোগাযোগ করে নিবো। ‘

অভ্রের এমন কথায় আরিয়ানসহ সবাই হয়ে যায়। আরিয়ান অবাক গলায় বলে,

‘ কিন্তু ভাই? তুমি হঠাৎ এখুনি রওনা দিবে কেন? ‘

‘ তা আপাতত বলতে পারছি না, কিন্তু যাওয়াটা খুব জরুরী। মায়রা তুমি যাবে তো? ‘

মারায় নিচু স্বরে বলে,

‘ তুমি যখন যাবে,তখন আমি আর এখানে থেকে কি করবো? চলো তাহলে। ‘

অভ্র এতোটাই তাড়ার মধ্যে ছিলো যে, আরহামকে জানিয়ে বিদায় নেওয়ার কথাটা তার মাথা থেকেই বেড়িয়ে গেছে। সে নিজের গাড়ি করেই, মায়রাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য বেডিয়ে পড়ে। আরিয়ান অভ্রের এমন কান্ডে অবাক হয়ে যায়। অভ্র হঠাৎ এতোটা তাড়া নিয়ে, এমন কোন কাজের জন্যে বেড়িয়ে গেলো?

____________

মেহেভীন উপলব্ধি করে গাড়িটা থেমে গেছে। মেহেভীনকে অচেনা যুবকটি আস্তে ধীরে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। মেহেভীনের মনে অজানা ভয় জন্ম নিয়েছে। অচেনা যুবকটির উদ্দেশ্য কি? হুট করে অচেনা যুবকটির হাতে তালিতে বাড়ির সব লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। মেহেভীন বুঝতে পারছে, যুবকটি তার চোখের কাপড়টা খুলে দিচ্ছে। এমনকি মুখের টেপ ও খুলে দিচ্ছে। মেহেভীন মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে নিলেই,সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির প্রতিটা লাইট জ্বলে উঠে। মেহেভীন বাড়িটির দিকে তাকিয়ে, হতভম্ব হয়ে যায়। বাড়িটা বেশ বড়। বাড়িটার পাশেই বেশ বড় বাগান রয়েছে। মেহেভীন তো তখনি অবাকের শীর্ষে চলে যায়, যখন সে দেখে দেয়ালের সবটুকু অংশ জুড়ে তার ছবি ছড়িয়ে আছে। সব ছবির মাঝখানেই রয়েছে, মেহেভীনের সেই সবুজ রং এর ছবিটা। যেই ছবিটাতে মেহেভীন লজ্জামাখা মুখশ্রীটা শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ছবিটা কেউ নিজের প্রতিভা দিয়ে, নিপুনভাবে একেঁছে। এই ছবিটা এর আগেও সেই অচেনা চিঠিপ্রেরক মেহেভীনকে পাঠিয়েছিলো। দেয়ালজুড়ে প্রায় সবগুলো ছবিগুলো অত্যন্ত নিপুনতার সাথে অনেকটা যত্ন নিয়ে একেঁছে কেউ। সবগুলো ছবিতেই মেহেভীনের ছোট্ট ছোট্ট আনন্দের মুহুর্তকে তুলে ধরা হয়েছে। মেহেভীনের কাছে মনে হচ্ছে যে ছবিগুলো একেঁছে, সে নিশ্চয় খুব প্রতিভাবান হবে,কেননা প্রতিটা ছবিই যেন ক্যামেরার ছবিকে হার মানানোর মতো সুন্দর। মেহেভীন ছবিগুলোর প্রতি তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায়। তখনি সে শুনতে পায়,কারো মধুর গলায় গাওয়া গান। মেহেভীন ছুটে বাগানের দিকে চলে যায়। বাগানের চারপাশে জুড়ে রয়েছে নানারকমের ফুলের গাছ। তার পাশে ছোট্ট একটা পুল রয়েছে। বাগানটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ ভালোবাসা নিয়ে বাগানটি নিজ হাতে বানিয়েছে। মেহেভীন আরেকটু এগিয়ে যেতেই শুনতে পায়, সেই অচেনা যুবকটি বাগানের এক পাশে দাঁড়িয়ে কিছু একেঁ যাচ্ছে এবং গাইছে,

ছন্নছাড়া মনে, এসেছ গোপনে
মুখে বলেছি যে, নিয়ো না তো টেনে
অজানাকে ভুলে সাজা খেটে চলি
জানি শোধরানো হবে না কখনো

তবু গভীরে, সে থাকে গভীরে
যার আঁকা ছবি রে, সে ছিল গভীরে
গভীরে গভীরে, সে থাকে গভীরে
যার আঁকা ছবি রে, সে ছিল গভীরে
সে পাশে নাই, কী জানি নাই
সে পাশে নাই, কী জানি নাই

গানের গলাটা মেহেভীনের কাছে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। মেহেভীন আরেকটু কাছে যেতেই দেখতে পায়, অচেনা যুবটি মেহেভীনের সেসময়ের একটা ছবি একেঁ যাচ্ছে, যখন মেহেভীন শাড়ি পড়ে আরহামের দিকে লজ্জামাখা দৃষ্টিতে এগিয়ে আসছিলো। সেই মুহুর্তটাকেও কি সুন্দরভাবে নিজের শিল্প দিয়ে ফুটিয়ে তুলছে অচেনা যুবকটি। যুবকটি উল্টো দিকে মুখ করে থাকায়,মেহেভীন তার মুখটা দেখতে পারছে না। মেহেভীন কাঁপাকাপি গলায় বললো,

‘কে….কে আপনি? কি আপনার পরিচয়? ‘

অচেনা যুবকটি এইবার মেহেভীনের দিকে ঘুড়ে তাকালো। মেহেভীন তো স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার গলা দিয়ে স্বরটুকুও বের হচ্ছে না। সে কখনোই আশা করেনি তার সামনা থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ নয় বরং স্বয়ং আরহাম হাসান তালুকদার। মেহেভীম মিয়ে যাওয়া গলায় বলে,

‘ আরহাম সাহেব! আপনি? ‘

চলবে…কী?

[ পারলে ঘটনমূলক কমেন্ট করবেন, কিন্ত কোন আজেবাজে কমেন্ট করে মনোবল ভাঙ্গবেন না। স্টুডেন্ট মানুষ আমি সামনে বার্ষিক পরীক্ষা তবুও লিখছি। আমি বোর্ড পরীক্ষা দিবো না। বার্ষিক এক্সাম দিবো। কেউ গুলিয়ে ফেলবেন না। ]

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

3 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here