তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব- ৫০ (Wedding special)

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ৫০ (Wedding special)
#Jannnatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
প্রাক্তন স্ত্রী এখন নিজেরই ভাইয়ের বউ হবে কথাটি ভাবতেই গা শিউরে ওঠে অভ্রের। ভালোবাসার মানুষটি অন্য কারো হয়ে যাবে? মেহেভীনকে তো সে অনেক ভালোবাসে, তাহলে অভ্র কীভাবে মেহেভীনকে অন্য কারো বউ হতে দেখবে? না অভ্র কিছুতেই দেখতে পারবে না। অভ্রের কাছে খবর এসেছে তালুকদার বাড়িতে নাকি বিয়ের আমেজ পড়েছে। আজকেই আরহাম এবং মেহেভীনের বিয়ে,কিছুটা হুট করেই বিয়েটা ঠিক করা হয়েছে। কিছুক্ষন আগেই জানতে পেরেছে অভ্র,কিন্তু অভ্র
তা কিছুতেই হবে না। সে খুব ভালো করেই জানে মেহেভীন তাকে এখনো ভালোবাসে। সে অন্য কাউকে কিছুতেই বিয়ে করবে না। ইশরা বেগম ছেলের জন্যে খাবার নিয়ে এসে, তার ছেলে একপ্রকার কোন মরণ যন্ত্রনায় ভিতরে ভিতরে কাতরাচ্ছে। ছেলের কাছে জানতে চাইলে,তার ছেলে তাকে একপ্রকার এড়িয়ে গিয়েই চলে যায়। এতে ইশরা বেগমের চিন্তা খানিক্টা বেড়ে যায়।

______

আরহাম এইবার মেহেভীনের দিকে এগোতে এগোতে ভাবুক কন্ঠে বলে,

‘চিরকুটে কি লিখেছে যেনো?উম আমি যেন তোমাকে ভূলে যাই রাইট? ‘

মেহেভীন ঘন ঘন পলক ফেললো। ভয়ে বুকটা বার বার কাপুনি দিচ্ছে৷ মনে হচ্ছে এখুনি আরহাম তাকে চেপে ধরবে। গিলে একেবারে খেয়ে ফেলবে। আরহামের গম্ভীর্যপূর্ন বানীগুলো তার কাছে কেমন যেন ভয়ংকর ঠেকছে। সে মুখ থেকে শব্দ বের করার পূর্বেই, আরহাম ঝাঁঝালো গলায় বললো,

‘ আর কি যেন বলেছিলে? আমি যেন নতুনভাবে শুরু করি। তাও আবার অন্য কারো। হাউ ডেয়ার ইউ মেহেভীন। এতোটা সাহস তোমাকে আমি কবে দিয়েছি। ‘

মেহেভীন স্হীর হয়ে দাঁড়াতে পারলো না। পিছাতে লাগলো। আরহাম রোষপূর্ন দৃষ্টি মেহেভীনের দিকে নিক্ষেপ করে, একেবারেই মেহেভীনের কাছে এসে পড়লো। যতটা কাছে চলে এলে, একে-অপরের নিঃশ্বাস, একে অপরের বুকের ভিতরের কাপনী গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আরহাম মেহেভীনের চোখে চোখ রেখে বললো,

‘ হাও হার্টলেস ইউ আর! কোন হার্ট নেই তোমার।
কোন অনুভুতি বুঝার ক্ষমতা নেই। নাহলে ওই চিরকুটটা লিখে যেতে পারতে না। ‘

মেহেভীন এইবার নিজেকে সামলাতে পারলো ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। নিচু হয়ে ফুপিয়ে কেঁদে বলে উঠলো,

‘ আমি আপনার ভালোর জন্যেই আপনার থেকে দূরে যেতে চেয়েছিলাম। আমি তো সবসময় আপনাকে কষ্ট দেই আপনার ঝামালা বাড়াই,কিন্তু তার বদলে ভালোবাসা দিতে ব্যর্থ হয়েছি আমি। আমি আপনার ভালোবাসা ডিসার্ভ করেনি। ‘

আরহাম শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মেহেভীনের মুখশ্রী আলতো করে নিজের হাত দিয়ে ছুইয়ে দিয়ে বলে,

‘ তুমি আমাকে ভালোবাসা কিনা সেইটা বড় কথা নয়। সব থেকে বড় কথা হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি খুব ভালো করেই জানি আমি
সঠিক মানুষটাকেই ভালোবেসেছি। আমার প্রেয়সী তুমি কী করে ভাবলে তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কারো সাথে নিজের জীবন জড়াবো?’

মেহেভীন কান্নামিশ্রিত গলায় আরহামের দিকে তাকাতেই আরহাম মেহেভীনের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে,

‘ আর কতবার বললে বুঝবে তুমি প্রেয়সী? তোমার আরহাম সাহেব শুধু তোমাকে আজীবন ভালোবেসে যেতে চায়। সযত্নে আগলে রাখতে চায় তোমার হাতখানা। তুমি যদি জানতে প্রেয়সী তোমার আরহাম সাহেবের মনের কতটা গহীনে তোমার বসবাস তাহলে
কেঁপে উঠতো তোমার ভিতরের হৃদয়টা। ‘

কথাটি বলতে গিয়ে আরহামের গলা ধরে এলো। ভিজে গেলো আখিঁজোড়া। মেহেভীন এখনো ফুপাচ্ছে। খানিক্টা ফুপানি কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ এতো ভালোবাসার যোগ্য নই আমি আরহাম সাহেব। আপনি আমাকে বিয়ে করে আপনি শুধু কষ্টই পাবেন। ‘

মেহেভীনের বলা একিই কথায় বার বার বিরক্ত হচ্ছে আরহাম। বিরক্তিতে নাক উচিয়ে মেহেভীনকে পুনরায় কোলে নিয়ে নিলো। মেহেভীন ভরকে গেলো। আরহাম মেহেভীনকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে বললো,

‘ বুঝলাম! তুমি আমাকে বিয়ে করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছো তাই এইসব বাজে কথা বলছো যেন আমি রেগে এখন খুব তাড়াতাড়িই তোমাকে বিয়ে করে ফেলি। ওকে নো প্রব্লেম। তোমার যা ইচ্ছে। ‘

আরহামের উদ্ভুট কথায় নাক ফুলালো মেহেভীন।মাথাটা কেমন ঘুড়াচ্ছে। সে কি বললো আর আরহাম তার উল্টো বুঝলো,তাকে কোনপ্রকার বানী ব্যক্ত করার সুযোগ না দিয়ে, আরহাম গলা উচিয়ে কয়েকজন মেয়েকে ডাকলো। তাদের দেখেই মনে হচ্ছে তারা পার্লার থেকে আগত। আরহাম তাদের দেখেই বললো,

‘ আমার হবু বউকে একদম লাল টুকটুকে বউয়ের মতো সাঁজিয়ে তুলবেন। আর হ্যা কোন ভারি ম্যাকাপ দিবেন না। হাল্কাতেই আমার প্রেয়সীকে সুন্দর লাগে।’

আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকিয়েই কথাটি বললো। আর মেহেভীন সে তো যেন ঘোরের মাঝে রয়েছে।
মেয়েগুলো হেসে বললো, ‘ জ্বী স্যার আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আপনার হবু বউকে আপনার মন মতোই সাঁজিয়ে তুলবো আমরা। ‘

আরহাম রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। মেয়েগুলো তাদের সাঁজানোর কাজে লেগে পড়লো। মেহেভীন চাইলেও আটাকতে পারলো না।

_________

লাল টুকটুকে বেনারশি পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেহেভীন। মুখে হাল্কা সাঁজ থাকলেও মেহেভীনের সৌন্দর্যকে দ্বীগুনভাবে ফুটিয়ে তুলছে খুব নিঁখুতভাবে। মেহেভীন আয়নায় নিজেকে দেখেই চিনতে পারছে না। তার মনে অস্হিরতা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এই বিয়ে না হলেই ভালো হবে। তার অস্হিরতাকে কাটাতে আরিয়ানের আগমন ঘটলো। সে মেহেভীনকে দেখেই মুচকি হেসে বললো,

‘বাহ রে আজ যে আমার বেস্টুটাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। ভাই তো চোখই সরাতে পারবে না।’

মেহেভীন আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে বললো,

‘ আরিয়ান প্লিয তুই আরহাম সাহেবকে বুঝা। উনি যা চাইছেন তা ঠিক নয়। আমি উনার যোগ্য নই।’

মেহেভীনের কথা শুনে, আরিয়ান মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘ এই মুহুর্তে এইসব বাজে কথা বলার কোন মানেই হয়না মেহু। আজকে কতটা স্পেশাল দিন জানিস?আজ তোর এবং ভাইয়ের বিয়ে। বলেছিলাম না? একদিন কেউ একজন আসবে, যে তোর জীবনকে আলোকিত করে তুলবে। হ্যা সেই সঠিক মানুষটিই হলো তোর আরহাম সাহেব। তাকে এইভাবে হারিয়ে ফেলিস না মেহু। সঠিক মানুষ জীবনে একবারই আসে। বুঝলি মেহু? ‘

আরিয়ানের কথা শুনে মেহেভীন চিন্তার পড়ে গেলো। আরিয়ান আবারোও বললো,

‘ তুই ভাইয়ের কাছে ঠিক কতটা বিশেষ তুই জানিস না মেহু। তুই ভাইয়ের প্রতিটা হাসির কারণ। প্রতিটা খুশির কারণ। তুই ভাইয়ের প্রেয়সী মেহু।ভাই তো তোর কাছে ভালোবাসা চাইছে না।
শুধু তোকে সারাজীবনের জন্যে পাশে চাইছে। এইটুকু তুই ভাইকে দিতে পারবি না মেহু? ‘

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
মেহেভীন আরিয়ানের কথার উত্তর দেয়না। চুপটি করে বসে থাকে বিছানায়। আরিয়ান চলে যায়। মেহেভীন ভাবতে থাকে যে মানুষটা তাকে নিঃস্বার্থাভবে এতোটা আগলে রাখলো,এতোটা ভালোবাসলো। তাকে কষ্ট দেওয়াটা কী ঠিক হবে আদোও? মেহেভীনের মনে হচ্ছে আরহাম কষ্ট পেলে তারও খুব করে কষ্ট হবে। অনেক কষ্ট হবে। সেই কষ্টের পরিমাণ হয়তো বলতে পারবে না মেহেভীন।
তখনি কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো মেহেভীন। মেহেভীন উঠে দাঁড়িয়ে দেখে, আরহাম এগিয়ে আসছে। সাদা কালারের সাথে মেচিং করে কিছুটা গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানী পড়েছে। এলোমেলো চুলগুলো কপালে এসে লেপ্টে রয়েছে। মুখে চমৎকার হাঁসি ঝুলিয়ে রেখেছে। আরহামকে দেখে কেন যেন বড্ড তাকাতে ইচ্ছে করলো। লোকটা যেন আজ বররুপে সকল মেয়েকে ঘায়েল করে রাখার জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অপরদিকে আরহাম মেহেভীনের দিকে কিছুক্ষন স্হীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লাল টুকটুকে শাড়িতে মেহেভীনকে কবে থেকে সে এইরকম বউরুপে দেখতে চেয়েছিলো আজ তা পূরন হয়ে গেলো। মেহেভীন ঘন ঘন পাপড়িগুলো বার বার পলক ফেলছে। ঠোটজোড়া কেমন কামড়ে ধরে রেখেছে,যা মেহেভীনের প্রতি আরহামকে দ্বীগুনভাবে মোহিত করে রাখছে।

‘ বউরুপে তোমাকে এতোটা মোহনীয় লাগে প্রেয়সী?
আগে জানলে প্রতিদিন তোমাকে বউ সাঁজিয়ে নিজের ঘরে বসিয়ে, সারাদিন দেখতাম। ‘

আরহামের এমন শীতল কন্ঠে বলা কথায় লজ্জায় শিউরে উঠে মেহেভীনের হৃদয়টা। তা কি আরহাম বুঝতে পারছে?
আরহাম এইবার মেহেভীনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,

‘ যদিও আমি বিয়েটা কিছুটা জোড়া খাটিয়ে করছি। তবুও এই শেষ মুহুর্তে এসে তোমার কাছে জানতে চাইছি। তুমি কি আমায় বিয়ে করবে প্রেয়সী? আগলে রাখতে দিবে বাকিটা জীবন?একটিবার হ্যা বলে দেখো আজীবন মনের রানী করে রাখবো তোমায়। একটিবার সুযোগ দিবে? ‘

আরহামের করা এই গভীর অনুরোধকে প্রতিহত করার আদোও কোন যুক্তি মেহেভীনের কাছে নেই। সে কাঁপা কাঁপা হাতে আরহামের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। আরহাম তৃপ্তির হাঁসি দিয়ে, মেহেভীনের হাত ধরে নীচে নিয়ে যায়। সকলে মেহেরহামকে একসাথে দেখে মুগ্ধ পানে তাকিয়ে থাকে। আরহাম মেহেভীনকে স্টেজে নিয়ে আসতেই, অভ্র……

চলবে।।।কী?

[আজকে আমার মন-মেজাজ কিছুই ভালো নি। তাই হয়তো গল্পে ভুল হতে পারে। আশা করি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here