#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ৫১ (‘ Meherham Wedding Special) 💞
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজের বিয়ের আসরে প্রাক্তন স্বামীকে দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে যায় মেহেভীন। ভয়ার্থ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অভ্রের দিকে। অভ্রকে বর্তমানে যে কেউই আশা করেনি তা সবার মুখেই স্পষ্ট। অভ্র মেহেভীনের দিকে এগোতে নিলে,মেহেভীন আরহামের পিছনে চলে যায়। আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে, শক্ত মুখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।অভ্র অসহায় হয়ে বলে,
‘ মেহু তুই কী আমাকে ভয় পাচ্ছিস নাকি আরহামকে বল? তুই এই বিয়েটা নিজে থেকে করছিস না তাইনা?তুই তো আমাকে ভালেবাসিস। আরহামকে নয় তাইনা? তোকে তো আরহাম জোড় করে বিয়ে করছে। তুই ভয় পাস না মেহু। তোর অভ্র চলে এসেছে। ‘
কথাটি বলে অভ্র মেহেভীনের দিকে হাত বাড়াতে নিলে,আরহাম অভ্রের হাত খপ করে ধরে ঝাঝালো গলায় বলে,
‘ নিজের লিমিট ক্রস করিস না অভ্র। মেহেভীনের দিকে হাত বাড়ালে তোর হাত ভেঙ্গে আমি গুড়োগুড়ো করে ফেলবো।তুই কী ভেবেছিস? এইসব ড্রামা করে? তুই আজ আমাদের বিয়েটা আটকাতে পারবি? একদমই না।’
অভ্র বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে, ‘ আমি জানি আমার মেহু আমাকে ভালোবাসে। তুই ওকে জোড় করে কখনোই বিয়ে করতে পারবি না আর না কখনো মেহুর ভালোবাসা পাবি। মেহু আমাকেই ভালোবাসে আমি তাতে মেহুর সাথে যতই প্রতারণা করিনা কেন। তাইনা মেহু? ‘
মেহেভীনের পক্ষে এইবার নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করার সম্ভব হচ্ছে না। রাগে থর থর কাঁপছে তার দেহ। সে আরহামের সামনে এসে,অভ্রের সামনা সামনি দাঁড়ায়। অতঃপর রোশপূর্ন দৃষ্টি অভ্রের দিকে নিক্ষেপ করে বলে,
‘ ভালোবাসা আর তোমাকে? তোমাকে কখনো ভালোবাসা যায়না অভ্র! তোমাকে শুধু ঘৃণা করা যায়। আর তুমি আরহাম সাহেবের সাথে নিজের তুলনা করছো? আরহাম সাহেবের জায়গায় যেতে হলে, তোমাকে একাধিক বার জন্ম নিতে হবে অভ্র। ‘
অভ্র মেহেভীনের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে খুব ভালো করে লক্ষ্য করে আজ মেহেভীনের চোখে
শুধুমাত্রই ঘৃণা রয়েছে,কিন্তু একসময় সেই চোখে অভ্র শুধু নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখতে পারতো।
সেসব কিছুর জন্যে অভ্র নিজেই দায়ী।
পাশ থেকে দুই তিনজন মহিলা একে- অপরের দিকে
তাকিয়ে আরহামের বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, ‘ এ কেমন মেয়ে রে বাবা?
এক ভাইকে ডিভোর্স দিয়ে, আরেক ভাইকে বিয়ে করছে। আর আপনারাও এই মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ করে নিয়ে আসছেন? আপনাদের মতো শিক্ষিত উচ্চবিত্তশালী মানুষদের কাছে এমন আশা করেনি। ‘
আরেকজন ও তাল মিলিয়ে বলতে থাকে,
‘ শুনেছিলাম আবার আরহামের ভাইয়ের বাচ্চা পেটে নিয়ে, আরহামের বাচ্চা বলে চালিয়ে দিয়েছিলো। কিসব যুগ এসেছে রে। ছিহ। থাকে একজন এর সাথে থাকে এবং দোষ চাপায় আরেকজন এর ঘাড়ে। এই মেয়ের চরিত্রের ঠিক নেই।’
মেহেভীন কথাটি শুনে চুপ হয়ে যায়। শেষে কিনা তার
চরিত্র নিয়েও তাকে এতোগুলো বাজে কথা শুনিয়ে দিলো। মেহেভীনের চোখ ভিজে যায়।
আরহামের বাবা -মা কিছু বলার আগেই, আরহাম চিৎকার করে বলে,
‘ ব্যাস! অনেক বলে ফেলেছেন। আমার হবু স্ত্রীকে নিয়ে কোনপ্রকার বাজে কথা আমি আরহাম হাসান তালুকদার শুনবো না। একটা মেয়ে এই সমাজে সবসময় অপমানিত হয় প্রতারিত হয় এই আপনাদের মতোই কিছু নিচু মন-মানষিকতার নারীদের জন্যেই।
আপনারাই অভ্রের মতো কিছু ঘৃণিত পুরুষদের সুযোগ করে দেন এইভাবে অন্যায় করার জন্যে।
একটা ছেলে যতই অন্যায় করুক। দিনশেষে একটা মেয়েকেই সব দোষ মাথা পেতে নিতে হয় কেন? সে একজন নারী বলে? তার স্বামী তার সাথে যতই প্রতারণা করুক। যতই অন্য নারীকে বিয়ে করুক, সে
সবটা সহ্য করে যাবে। সে যদি সেই প্রতারককে ফেলে আবারোও নিজের জীবন নতুনভাবে শুরু করতে যায় তাহলে আপনাদের মতোই কিছু নারীরা সেই অত্যাচারীত নারীকে ‘চরিত্রহীন ‘ তকমাটা মাথায় লাগিয়ে দিতে একবারও ভাবেন না তাইনা?’
আরহামের প্রতিবাদের সুরে বলা প্রতিটা কথা কাটা গাঁয়ের মতো লাগলো মহিলাগুলো কাছে।
আরহাম বাবা এইবার মুখ খুলে বললেন,
‘ শিক্ষার কথা বলছেন? সব থেকে বড় মুর্খ তো আপ্নারা। হাই সোসাইটিতে থেকেও মেন্টালিটি আপনাদের চেঞ্জ হয়নি। আবার শিক্ষার কথা কোন মুখ বের দিয়ে বের করেন?’
‘আপনারা বড় তাই সম্মানের সাথে বলছি এতোই যখন মেহেভীনকে আপনাদের সমস্যা তাহলে প্লিয আপনারা আসতে পারেন। নো প্রব্লেম! ‘
আরহামের ঠান্ডা গলায় বলা অপমানে তেঁতে উঠলেন তারা। গটগট করে পা বাড়িয়ে চলে গেলেন বিয়ের আসর থেকে। আরিয়ান মেহেভীনের কাছে এসে, মেহেভীনের চোখ মুছিয়ে বলে, ‘ কাঁদছিস কেন তুই?
তুই না আমার লিটেস সিস? এইভাবে একটা শুভ দিনে কয়েকজন বাজে লোকদের জন্যে কাঁদবি?
দেখ তোর হাব্বিরকে। তুই কাঁদলি যে তার ও
কষ্ট হয়। ‘
মেহেভীন অশ্রুসিক্ত চোখে আরহামের দিকে তাকাতেই, আরহাম তাকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করে
যেন চোখের জল মুছে নেয়। সে যে কিছুতেই তার প্রেয়সীর চোখের জল সহ্য করতে পারবে না। মেহেভীন দ্রুত চোখের জলে মুছে ফেলে। অতঃপর এক পা এগিয়ে, আরহামের হাত খানা ধরে, প্রাপ্তির হাসি দিয়ে বলে,
‘ ধন্যবাদ আরহাম সাহেব। আমার জীবনে আসার জন্যে। আমার জীবনে নিজের ভালোবাসার রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তোলার জন্যে। জানেন আজকে নিজেকে বড্ড ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। আগে শুধু নিজের ভাগ্যকে দোষ দিতাম। কেন এতো কষ্ট আমার জন্যে? অতঃপর আমার মাথায় আজ একটা কথা উকি দিলো তা কী জানেন? ‘
আরহাম প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই, মেহেভীন মুচকি হেসে বললো,
‘ মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ট পরিকল্পনাকারী। তিনি সবসময় কষ্টের পর সুখ দিয়েছেন। তিনি যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। আজ যদি অভ্র আমাকে ধোঁকা না দিতো তাহলে আপনার মতো মানুষকে হয়তো আমার জীবনে পেতাম না। আজ আমি নিজে বলছি আরহাম সাহেব আপনার জীবনসঙ্গিনী হওয়ার সুযোগ টুকু দিবেন? থাকতে দিবেন আপনার পাশে দিবেন? হতে দিবেন আমায় আপনার অর্ধাঙ্গিনী? ‘
আরহাম ও তৃপ্তির হাঁসি হেসে, মেহেভীনের হাত দুটো সযত্নে ধরে বললো,
‘ হাত যখন ধরেছি তোমায় প্রেয়সী। আজীবন সযত্নে আগলে রাখবো তোমার হাতজোড়া। শুধু তুমি পাশে থেকো। ‘
মেহেভীন হাঁসে। আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে, স্টেজে নিয়ে যায়। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়। অভ্র পিছিয়ে যায়। দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পড়ে তার। সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তার এবং মায়রার যখন বিয়ে হয়েছিলো তখনি মেহেভীনরেও কতটা কষ্ট হয়েছিলো। নিজের চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো হতে দেখা
অনেকটাই মরণ যন্ত্রনার সমান!
আরহাম অভ্রের অবস্হা খানিকটা বুঝতে পেরে,ঠাট্টার ছলেই বলে,
‘ ভাই তুমি কিন্তু আবার কোথাও যেও না।
পেট ভরে বিয়ের খাবার খেয়ে যাবে। তাছাড়া তোমার তো অনেক দায়িত্ব আছে তাইনা? তুমি যেমন মেয়ে পক্ষের তেমনি ছেলে পক্ষের। মেয়ের খালাতো ভাই আবার ছেলেরও চাচাতো ভাই। তোমার কি কম দায়িত্ব বলো? ‘
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
অভ্র আরিয়ানের কথার জবাব দেয়না। সে জানে আরিয়ান তার মজা এখন খুব ভালো করেই নিচ্ছে।
সে তো একপ্রকার ঠাট্টার বস্তু হয়ে গিয়েছে। আশিক ও রাহেলাও আরিয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
‘ কি অভ্র ভাই? দেখতাছেন তো? আমাদের আরহাম ভাই এখন আপনার সামনে দিয়া আমাগো ভাবিরে বিয়া কইরা লইয়া যাইবো। আর আপনি বইসা বইসা চাইয়া চাইয়া দেখবেন আর লুচির মতো ফুলবেন। ‘
কথাটি বলেই আশিক এবং রাহেলা অভ্রকে আঙ্গুল দিয়ে কাচকলা দেখায়। অভ্র রাগে, অপমানে, কষ্টে বেড়িয়ে যায়। মেহেভীনকে অন্য কারো হতে সে দেখতে পারবে না। অভ্র চলে যেতেই, আরিয়ান, রাহেলা এবং আশিক ফিক করে হেঁসে দেয়।
কাজি সাহেব বিয়ের কার্যকম শুরু করে দেয়। প্রথমে তিনি মেহেভীনকে কবুল বলতে বলে, মেহেভীন আরহামের দিকে স্মিত হেসে নির্ধিদ্বায় কবুল বলে দেয়। আরহাম ও ফটফট করে অতি দ্রুততার সাথে কবুল বলে দেয়। সবাই একসাথে ‘ আলহামদুলিল্লাহ ‘ বলে। মেহেভীন এবং আরহাম বিয়ের মতো স্নিগ্ধ এবং পবিত্র বন্ধনে নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলে সারাজীবনের সাথে। বিয়ে শেষ হওয়ার পরে, আরহাম মেহেভীনের কানে ফিসফিস করে বলে,
‘ আজ থেকে তুমি সত্যিই মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার হয়ে গেলে প্রেয়সী। ‘
মেহেভীন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। সেই লজ্জামাখা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আরহাম অদ্ভুদ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
________________
বিয়ের অনেকটা সময় পরেই ফারিয়া আসে। তার আজকে পরীক্ষা ছিলো, তাই আসতে কিছুটা দেরী হয়ে যায়। ফারিয়াকে দেখে কিছুক্ষন এর জন্যে স্হীর হয়ে দাড়িয়ে থাকে আরিয়ান। কেননা আজ প্রথমবার সে ফারিয়াকে শাড়ি পড়তে দেখেছে। গোলাপী রং এর শাড়ি পড়েছে ফারিয়া। বেশ মিষ্টি লাগছে ফারিয়াকে। ফারিয়া আরিয়ানকে দেখেই, আরিয়ানের সামনে আসে। ফারিয়াকে দেখে আরিয়ানের ঘোর কাটে।ফারিয়াকে দেখেই আরিয়ান তড়িঘড়ি করে বলে,
‘ এতোটা লেট হলো যে? ‘
‘ এক্সাম তো ছিলোই? তার মধ্যে আবার ট্রাফিক জ্যাম। তাই দেরী হয়ে গিয়েছে। বিয়েটা হয়ে গিয়েছে?’
‘ হুম কিছুক্ষন আগেই হয়ে গেলো। ‘
ফারিয়া মন খারাপের সুরে বলে,
‘ ইসস আমি মিস করে গেলাম। ‘
‘ যাই বলো আজকের বিয়ের আসরটাকে আরেকটু আলোকিত করতেই বোধহয় এইভাবে ভয়ংকরী রুপ ধারণ করেছো তুমি। ‘
আরিয়ানের দুষ্টুমি ছলে বলা কথা বুঝতে পেরে, ফারিয়া ও মুচকি হেসে বলে, ‘ কিন্তু আমার দিকে কী কারো লক্ষ্য রয়েছে আরহাম সাহেব? বিয়ের বাড়ির মেয়েদের নজর এখন আরহাম ভাইয়া এবং আপনার উপরই। এইভাবে গোল্ডেন শেরওয়ানী পড়ে তামিল হিরোদের মতো না আসলে বুঝি আপনার হতো না?’
আরিয়ান ফারিয়ার দিকে ঝুঁকে বলে,
‘ আর ইউ জেলাস? ‘
ফারিয়া মুখ ঘুড়িয়ে মুচকি হাঁসে।
ফারিয়া এবং আরিয়ানকে অনেকক্ষন ধরেই লক্ষ্য করছেন আরহামের মা।
____________
তালুকদার বাড়ির নিয়ম বিয়ের স্টেজ থেকে বাড়িতে প্রবেশ করার সময়, নতুন বউকে কোলে নিয়ে বরকে বাড়িতে প্রবেশ করাতে হবে। যথারিতিতে আরহাম মেহেভীনকে কোলে নিয়েই বাড়িতে প্রবেশ করে। যদিও মেহেভীনের লজ্জা অনুভব হচ্ছিলো। বাড়িতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপর ফুলের বর্ষন হয়।
______________
বউরুপে আরহামের রুমে বসে আছে মেহেভীন। চারদিকে বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাঁজানো হয়েছে তাদের বাসরঘর। আজ থেকে মেহেভীন আরহামের সত্যিকারের বউ। মেহেভীন কখনো ভাবেনি তার জীবনে এমন খুশির মুহুর্তও আসবে। বাইরে আরিয়ান এবং আরহামের কাজিনরা আরহামকে ঢুকতে দিচ্ছে না। তাদের ভাষ্যমতে টাকা না দিয়ে,বাসরঘরে ঢুকা যাবেনা।
মেহেভীন ভাবলো এইবার একটু চেঞ্জ করে নেওয়ার দরকার। তাই মেহেভীন খাট থেকে নামতে নিলেই,ঘরের লাইট সব বন্ধ হয়ে যায়। মেহেভীন ঘাবড়ে যায় তখনি……..
চলবে কী?
[বড় করে দিছি 🔪🙄হুহ! বিয়েতে আসলেন বাট গিফ্ট দিয়ে যাইয়েন। ‘মেহেরহাম” জুটিকে আপনাদের দোয়া দিতে ভুলবেন না কিন্তু। আজকে একটু লেট হলো দিতে আসলে ব্যস্ততার মাঝে যাচ্ছি]
এত সুন্দর একটা গল্পের জন্য অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আর কতো অপেক্ষা করতে হবে…????দয়া করে অপেক্ষাটা আর দীর্ঘ করবেন না।
Next part plz….
Bakita 52 kothay
Plsssss nxt part ta den…… Apnar golpo khub vlo lge…..but w8 krte pr6i na rr…..
Porer part gulo taratari din please 🥺🥺🥺 please… R wait kora jachhe na.. roj din check korchi.. please taratari den..
Plz taratari part gulo din na,
Ar kotodin lagbe porer part gula dite hmm ato jokhon busy e thaken tahole golpo e lekhen kno na e lekhten amader aivabe wait korte hoito na at list😔😔😔