তুমি_যে_আমার🥀 Writer_Nondini_Nila Part_20

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_20

কথা অনুযায়ী আজকে বর্ষা কে ওর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোথায়! সারাদিন তো তার পাত্তা নাই। বিধ্বস্ত অবস্থায় বর্ষা যখন ঘুম ভেঙ্গে খাটের উপর বসে। ও নিজেকে একা পায় বিছানায়। এত কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে বসে থাকে। আজকে ও বাড়ি ফিরে যেতে পারবে সেই খুশিতে। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর বিকেল রাত হয়ে যায় কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটি আর আসে না। তাহলে কি লোকটা বর্ষাকে ধোঁকা দিলো। বর্ষার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।নিজের সর্বস্ব হারিয়ে কি এখনো এখানেই থেকে পচে গলে মরতে হবে নাকি।
নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আজকে বর্ষা নিজের হাতে কেটে ফেলল। হাত দিয়ে রক্ত বের হতেই ও দরজা ধাক্কা দেওয়া বাদ দিয়ে দরজায় কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ল। রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে ব্যথায় কুঁকড়াতে লাগলো।
ওইভাবেই কখন বিছানায় এসে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় নিজেও জানেনা।
তূর্য শাওন এর সাহায্যে বাসায় প্রবেশ করে। হাঁটতে ওর কষ্ট হয়। বর্ষার রুম এর কাছাকাছি আসতেই তূর্য বলে,

‘তুই তোর রুমে যা।’

‘তোকে এখানে রেখে। না চল রুম পর্যন্ত দিয়ে আসি। আর ড্রেসিং ও তো করাতে হবে। অনেকটা ক্ষত হয়েছে।’

‘কিছু হবে না তুই যা। আমি বর্ষার রুমে যাব।’

‘এখন এই রুমে যাওয়ার কি দরকার?’

‘দরকার ছাড়া কি আমার যাওয়া বারণ?’

‘আরে তা না। অনেক পেশার গেছে তোর উপর দিয়ে তাই এখন রেস্ট নেওয়াটা বেটার।’

‘সেসব আমি দেখে নেব।’

অজ্ঞতা চলে গেল শাওন। তূর্য এর সাথে তর্ক তে পেরে উঠবে না। ও চলে যেতেই তুর্য বর্ষার রুমে এলো। এলোমেলো হয়ে বর্ষা বিছানার পরে ঘুমিয়ে আছে। তূর্য বর্ষার কাছে গিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বর্ষার চোখের কোনে জল জমে আছে। তূর্য বিন্দু জলের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা ঝুঁকিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য এর বুকে ব্যথা করছে এখানে অনেকটা কেটে গেছে। শার্টের বোতাম খুলে ক্ষতস্থানের দিকে তাকিয়ে রইল। ক্লান্তিতে চোখে ঘুম চলে আসছে। বর্ষার পাশেই শুয়ে পড়ল তূর্য।
বর্ষার ঘুম ভাঙ্গে কারো গোঙ্গানির শব্দে। ওপাশ ফিরে তাকাতেই গরম কিছুর সাথে স্পর্শ লাগে হাত। ঝট করে হাত সরিয়ে নেয়। তূর্য কে নিজের পাশে শুয়ে থাকতে দেখে চমকে যায়। সাথে রাগ হয় কিন্তু তূর্যের দিকে তাকিয়ে রাগটা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। তূর্য যে শীতে কাঁপছে। আর মুখ দিয়ে শব্দ করে যাচ্ছে। বর্ষা বুঝে উঠতে পারছে না এমন কেন করছে! ওর চোখ তূর্যের বুকের দিকে যেতেই আতকে উঠে। রক্তে দেখা যাচ্ছে জায়গাটা। কালো শার্ট এজন্য বুঝা যায়না শার্ট দেখে। ওপরে দুটো বোতাম খোলা এজন্য ফর্সা বুকে লাল রক্তের ছড়াছড়ি। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষা। এজন্য লোকটা কুকড়াচ্ছে ব্যথায়।বর্ষা কাঁপা হাতে বুকের কাছে নিতেই ওর হাতেও রক্ত লাগে। ও মৃদু চিৎকার করে ওঠে ভয়ে।

এই অবস্থা কি করে হলো লোকটার? এখন আমি কি করব ওনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তো আমি বাসায় ফিরে যাব কি করে? বর্ষা তূর্য কে ডাকতে লাগল।
তূর্য উঠছে না দেখে এক হাত ধরে ঝাকাতে লাগলো। আগুনের মতন গরম হয়ে আছে শরীর। জ্বর এসেছে। তূর্য তাকাচ্ছে না। বর্ষা উঠে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো, কেউ আছেন দরজা খোলেন?

কারো সারা শব্দ পাওয়া গেল না। শব্দ শুনবে কি করে কেউ এই রুমের বাইরে যে ওর কথা যায়নি। বেশি ধাক্কাতে পারলো না কারণ ওর হাতে ব্যথা। আবার ফিরে এসে তূর্য এর পাশে বসলো। লোকটা শীতে কাঁপছে। বর্ষা উঠে ফ্লোরে ফেলে রাখা চাদর তুলে নিল হাতে। এটা ও রেগে ফেলে দিয়েছিলো। চাদর দিতে গিয়ে দেখল তূর্য এর পায়ে কাদা মাখা জুতা। নিজে টেনেটুনে জুতা খুলল তারপর চাদর টেনে দিল পেট অব্দি।বুকের রক্তে দিকে তাকিয়েই কাঁপা হাতে শাটের সবগুলো বোতাম খুলতে লাগল। খোলা হতেই শার্ট সরাতেই ফর্সা উন্মুক্ত শরীর বেরিয়ে এলো। চোখ কুঁচকে ইস বলে উঠলো। বুক থেকে পেট পর্যন্ত একটা ছুরির আঘাত। এত বড় আঘাত নিয়ে লোকটা এখানে পড়ে আছে কেন হসপিটালে না গিয়ে। বর্ষা কি করবে ভাবছে আঘাতটা খুব গভীর মনে হচ্ছে। আঘাতের জন্য জ্বর এসেছে। কিন্তু এই রক্ত মুছে একটু ড্রেসিং করতে পারলে ভালো হতো। লোকটা অর চরম শত্রু তা ও তার সেবা করতে হচ্ছে কি অদ্ভুত! বর্ষা কি ভেবে জানো তূর্য এর প্যান্টের পকেটে হাত দিলো আর সাথে সাথে ফোন পেলো। সবাইতো ফিংগারপিন ইউজ করে লোকটার সিঙ্গার দিয়ে ট্রাই করে দেখি। তূর্যর ডান হাতের একটা আঙ্গুল ছোঁয়াতেই ফোনের লক খুলে গেলো। বর্ষার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
কললিস্টে গিয়ে প্রথমেই শাওন নাম দেখতে পেল ওর সাথে সাথে সে নাম্বারে কল করলো। ও সিউর এটা ওর পরিচিত শাওন।‌
ঘুমের মাঝে শাওন কারো কল দেখে বিরক্ত হলো কিন্তু তিশা ভেবে রিসিভ করে নিলো।মেয়েলি কন্ঠ আসছে কিন্তু এটাতো তিশা না। নাম্বার চেক করে ঘুম ছুটিয়ে দেখে এক তূর্য এর নাম্বার। একি তূর্য এর নাম্বার থেকে মেয়েদের কথা আসছে কি করে? চমকে বিছানা থেকে উঠে বসে।

‘হ্যালো কে ? তূর্য এর ফোন তোর কাছে গেলো কি করে?’

‘আপনি কি শাওন? ফোনের মালিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে আপনি তাড়াতাড়ি আসুন!’

‘ফোনের মালিক অসুস্থ হয়েছে মানে কে অসুস্থ হয়েছে তূর্য!’

বর্ষা তূর্য নামের কাউকে চেনে না তাহলে কি এই লোকটার নাম তুর্য! হতে পারে। না হলে এই নাম্বার থেকে কল গেছে তাই তুর্য বলছে কেন?

‘হ্যাঁ! আমি বর্ষা!’

আমি বর্ষা শুনেই শাওন ফোন কেটে দেয় ও বুঝে গেছে। ছুটে বর্ষার রুমে আসে আর চাবি দিয়ে লক খুলে ভেতরে ঢুকে হন্তদন্ত হয়ে।

‘ কি হয়েছে তূর্য এর?’

বলেই কোন দিক না তাকিয়ে বিছানায় তাকায়। তূর্য কে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বর্ষা যে আছে খেয়াল নেই। দরজাও লক করেনি।
বর্ষা দেখতে পাচ্ছে তূর্য লোকটার জন্য শাওন কতো চিন্তিত। ওর নিজেও কষ্ট লাগছে তূর্য এর জন্য লোকটা ওর সাথে এতো অপরাধ করেছে তবুও তার জন্য ওর কষ্ট হচ্ছে। শাওন ডাক্তার কে কল করলো। এর মধ্যে বর্ষার চোখ গেলো দরজার দিকে। দরজা খোলা দেখেই ওর হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো। একটা আশার আলো দেখতে পেলো।ওর হাতে তূর্য এর ফোন এখনো ও ফোন হাতেই পালানোর চিন্তা করছে। তূর্য এর শুকনো মুখটা দেখে মায়া লাগছে। লোকটাকে এই অবস্থায় রেখে পালাতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু আমাকে পালাতে হবে। মায়া বাড়িয়ে থাকলে আমি কখনো বাড়ি যেতে পারবো না।ওনি উনার কথা না ও রাখতে পারে।বর্ষার পরনে সাদা প্লাজো আর লাল গেঞ্জি ও এলোমেলো চুল হাত দিয়ে পেঁচিয়ে খোঁপা করে ধীরে ধীরে দরজার কাছে এলো। শাওন তূর্য কাছে বসে আছে। এদিকে ওর খেয়াল নেই। এটাই সুযোগ আমার পালিয়ে যাওয়ার। আল্লাহ এর নাম নিয়ে বর্ষা ছুটে বাইরে চলে এলো।
বাবার নাম্বার মুখস্থ ওর ও আড়ালে এসে তূর্য এর নাম্বার দিয়ে কল করলো বাবাকে।

কালকে বর্ষার মাকে বাসায় আনা হয়েছে। আনার পর থেকে উনি মেয়েকে দেখার ধরে পাগলামো করে যাচ্ছে।
ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে কেবল নিজে শুয়ে চোখ বন্ধ করেছে। তখন ফোন বেজে উঠে এতো রাতে আবার কে কল করলো? ফোনের আলো জ্বালিয়ে দেখে চারটা বাজে আননোন নাম্বার। না ধরে কেটে চোখ বন্ধ করে এখন ঘুমানো প্রয়োজন আজেবাজে কল রিসিভ করে আর সময় নষ্ট করবে না। কিন্তু অপর প্রান্তে লোকটা নাছোড়বান্দা একের পর এক কল করেই যাচ্ছে।

ফোনটা বন্ধ করতেই হবে কোন উপায় নাই‌।
নিবিড় চৌধুরী ফোন বন্ধ করার জন্য হাতে নেই।
বর্ষা কাঁপা হাতে ফোন কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই বুঝি কেউ দেখে ফেললো সেই ভয়ে। বাপি কল কেন রিসিভ করছে না?

#চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here