তুমি_যে_আমার🥀 Writer_Nondini_Nila Part_24

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_24

নিবিড় চৌধুরী মাথা নিচু করে ইজি চেয়ারে বসে আছে। তার বাসায় গমগমে পরিস্থিতি। পুলিশ এসে সারা বাসা চেক করছে। লজ্জায় তিনি মাথা তুলতে পারছে না। পুলিশ যেখানে তার প্রটেক্ট করতে ব্যস্ত থাকে। তারা এখন জেরা করছে তাকে। খবরে পেপারে ছাপা হয়েছে। বড় বড় অক্ষরে তার নাম। তিনি তার অসাবধানতায় দরকারি ফাইল হারিয়েছে। অনেক কষ্টে অনেক তথ্য জোগাড় করেছিলো পুলিশরা। যার ভিত্তিতে একজন বড় মাপের মাফিয়াকে শাস্তি দেওয়ার প্রমাণ ছিলো। সাথে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিলো সব এক রাতে মিসিং। সিসি ক্যামেরা চেক করেও সেই সময়ের কিছু পায়নি।এবার এই নিয়ে সবাই নিবিড় চৌধুরী কে সন্দেহ করছে। সবাই আশংকা করছে তার মেয়েকে কোন মাফিয়া কিডন্যাপ করেছিলো।আর মুক্তি পণ হিসেবে সিউর ওই তথ্য গুলো হাতিয়ে নিয়েছে।
নিবিড় চৌধুরি নিজের মেয়ের জন্য আইনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সবার ধারণা এখনই একটাই।সব বড় বড় পুলিশ অফিসারা ও তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তার মেয়ের সন্ধান এক ফোটা ও বের করতে পারে নি।আর এখন হুট করেই তার মেয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই বাসায় ফিরে এসেছে কাকতালীয়ভাবে।এর পেছনে হয়তো নিবিড় চৌধুরীর গোপন কোনো হাত আছে। তিনি হয়তো কিডন্যাপার দেয় সাথে গোপনে কোন
চুক্তি করে ছিল যা সবার থেকে আড়াল করে রেখেছে।এভাবে ফাইলটা তো হারিয়ে যেতে পারে না তার বাসায় এত পাহারাদার থাকতেও এসব নাটকীয় ঘটনা কীভাবে ঘটছে?
সম্মানিত একজন মানুষ নিবিড় চৌধুরী সবসময় সৎ ও নিষ্ঠা ভাবে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন।কিন্তু এবার তার দুর্বলতায় আঘাত করেছে বলেই হয়তো তিনি তার সত্যের পথ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এটা আশঙ্কা করছে সবাই।

বাসায় আত্নীয় ও আছে। তারা বর্ষাকে এতো দিন পর বাড়ি আসার খবর শুনে দেখতে এসেছে। দুঃখী দুঃখী মুখ করে দেখতে আসলেও তাদের মধ্যে আছে খোটা দেয়ার ভাব আর তাচ্ছিল্য করা কথা। বর্ষার পাশে বসে একজন মহিলা বলে উঠলো,

‘আহারে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার? কি অত্যাচারী না করেছে! তোমার বাপ মার কি অবস্থা হয়েছিল পাগলের মত হয়ে গেছিল তোমার জন্য! আল্লার রহমতে ফিরে আসছো ভালই হইছে।তোমার ফিরে আসায় তো খুশি হয়েছি। কিন্তু একটা মেয়ে এভাবে দশ বারো দিন অজানা অচেনা পুরুষের সাথে ছিল। এটা তো খারাপ কথা লোকে কত কিছু বলতাছে খারাপ খারাপ কথা। কিন্তু আমরা কিছু বলি না‌। কিন্তু সত্যি তোমারে বিয়া দিব কেমনে আর সমাজে তোমার বাপ মায় মুখ দেখাইবো কেমনে। সেটাই ভাবতাছি তোমার জন্য খারাপ লাগতাছে।’

বর্ষার পাশে ওর ফ্রেন্ডরা বসে ছিল।ওরাও দুপুরের পরে এসেছে। ওদের সামনে এই কথাটা বলে উঠলো। এই মহিলাটা বর্ষাদের বাড়ির পাশের বাসার। দুঃখী দুঃখী মুখ করে কথা বললেও উনি যে ওদের অপমান করলো সেটা স্পষ্ট।বর্ষা চুপচাপ থাকার মেয়ে না। অন্য সময় হলে এই অপমানের মোক্ষম জবাব দিয়ে দিতো। কিন্তু আজকে কিছুই বলছে না মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। ও অবশ্যই এই মহিলাটির কথা কানেই নেয় নি ও তো চিন্তায় বিভোর নিজের বাপিকে নিয়ে। সমস্ত কাজ করেছে ও কিন্তু তার শাস্তি পেতে হচ্ছে বাপিকে। কষ্টে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

বর্ষা কিছু না বললেও ওর ফ্রেন্ডরা এসব মানতে পারলো না। তিশা বলে উঠলো,

‘ আপনার যদি বর্ষা দের নিয়ে এত চিন্তা আর খারাপ লাগা থেকে থাকে। তাহলে এটা বুঝেন না এসব বললে ওদের খারাপ লাগা কমবে না বরং বাড়বে। কথার তালে তো মানুষকে ভালোই কথা শোনাতে পারেন। সান্তনা বাণী না দিয়ে এখানে থেকে জানতো যতসব।’

মহিলাটা দাত কটমট করে তাকিয়ে চলে গেলো।
তিশা বর্ষার হাত ধরে বললো,

‘ তুই তো এমন নিরবে সব সহ্য করার মতো মেয়ে ছিলি না। আজ কি হলো ওই মহিলার কথাগুলো সহ্য করলি কেন?’

বর্ষার বললো, ‘ বাপির জন্য কষ্ট লাগছে রে। ‘

‘ সবাই আঙ্কেল কে ভুল বুঝছে। কষ্ট পাস না সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘

‘হুম।’

‘ কতোদিন পর আমরা সব ফ্রেন্ডরা একসাথে আছি। তোর জন্য তো আমাদের আড্ডা জমতোই না। সবাই মন খারাপ করে থাকতো।’

বর্ষা তিশার দিকে তাকিয়ে শাওনকে মনে করলো।

‘ শাওন এর কি খবর?’

‘ জানিনা কেন? অবাক হয় তিশা শাওন এর কথা জিজ্ঞেস করায়।

‘ জানিস না মানে তোরা না প্রেম করতি!’

‘ করতাম কিন্তু তার তো খবর নাই‌।’

‘ মানে??

‘ মানে হলো তোর হারানোর পর থেকে আমিও শাওন এর খোঁজ হারিয়ে ফেলি। এর মাঝে আমার ফোন হাত থেকে পরে গেছিলো জগে। আর নষ্ট হয়ে গেলো। ওর সাথে পরে ফোন ঠিক করার পর কথা হয়েছিলো একটু কিন্তু বেশি না। ‘

‘ ওহ্।’

বর্ষা মনে মনে ভাবছে। থাকবে কি করে সে তো তোকে ব্যবহার করেছে স্বার্থে। এখন আর এতো ভালোবাসার অ্যাক্টিং করা প্রয়োজন নাই তাই করে না।
আমাদের আশেপাশের মানুষ গুলোই আমাদের প্রতিনিয়ত ঠকিয়েছে। আর আমরা তাদের সাথে চলাফেরা করেছি। তাদের মুখোশ এর আড়ালের চেহারা টা না চিনেই।

বর্ষা সবার সাথে কথা বলেই বিদায় দিলো। ওরা চলে যেতেই বাপির সাথে কথা বলতে বেরিয়ে এলো।
বাহরে এখন কেউ নাই। কিছুক্ষণ আগেও পুলিশের ছড়াছড়ি ছিলো সবাই চলে গেছে। বাপি তার ইজি চেয়ারে বসে আছে। বর্ষা চুপচাপ তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এটা করা ছাড়া ওর আর কিছু করা ছিলো না। তূর্য এর শর্ত ও এটাই ছিলো। তাকে এই ইনফেকশন গুলো আমায় দিতে হবে। না হলে তিনি বাপিকে মেরে দিতো।
আমি কি করে সেটা মানতে পারতাম। বাপি কে এই অসম্মানিত আমি করলাম। এটা না করলে তাকে যে বাঁচাতে পারতাম না।

নিবিড় চৌধুরী মেয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে মেয়ের দিকে তাকায়। এতো কষ্টের মধ্যেও মেয়ে মুখটা দেখে তার শান্তি লাগছে।
তিনি বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
‘ কি হয়েছে আমার প্রিন্সেস এর? মলিন মুখে দাঁড়িয়ে কেন?’

বর্ষা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। বাপি ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে কিন্তু আমাকে বুঝাতে চাচ্ছে না। তাকে আমি কতো কষ্ট দিলাম ওই পাষাণ লোকটার জন্য।

‘ সবাই তোমাকে ভুল বুঝছে বাপি।আমার ভালো লাগছে না।’

‘ মন খারাপ করো না। সত্যি সামনে আসবেই। সত্য চাপা রাখা যায় না। এই সব কষ্টের মাঝেও আমি খুশি কেন জানো?’

‘ কেনো বাপি? ফুপাতে ফুপাতে।

‘ আমার প্রিন্সেস আমার কাছে চলে এসেছে। এটা আমার জন্য সব চেয়ে আনন্দের।’

বর্ষা ওর বাপিকে জরিয়ে ধরলো। নিবিড় চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

এদিকে

‘অফিসার আদিল আপনার কি মনে হয়? ব্যারিস্টার নিবিড় চৌধুরী মেয়ের জন্য আইনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো?’

‘ করতেই পারে। উনার মেয়ে উনার জীবন শুনেছি। তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য এমনটা করতেই পারে।’

‘ কিন্তু উনি একজন ন্যায়পরায়ণ লোক। এমনটা উনি করবেন বিশ্বাস হচ্ছে না।’

আদিল আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর ফোন টিপছে। ওর মাথায় থেকে এই চিন্তা দূর হয়েছে এতেই শান্তি ও।

‘ তুমি এতোটা শান্ত আছো কি করে?’

‘ আছি কারণ আমার আর ওনার মেয়েকে হন্নে হয়ে খুঁজতে হবে না। একটা শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।’

‘ কিন্তু আমার তো শান্তি নাই‌‌। এই কাজটা তো আমাকে দিয়েছে। ফাইলটা আমাকে সন্ধান করতে হবে।’

‘ কাজে লেগে পরেন। বেস্ট অফ লাক।’

আদিল চিন্তামুক্ত হয়ে কফি খাচ্ছে। আর হাবিব মুখ কালো করে চলে গেলো।

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here