তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_27
ড্রয়িংরুমে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে বর্ষা। নিবিড় চৌধুরী বুকে ব্যথা নিয়ে আক্ষেপ করে বলছে,
‘আমার ভুলের শাস্তি আমার মেয়েকে পেতে হলো কেন? আমার চাকরি চলে গেছে যে তো! আমার সবকিছু শেষ হতো দরকার হলে এর জন্য আমার জীবন চলে যেতো কিন্তু তার বদলে মেয়ের এত বড় সর্বনাশ কেন হলো? আমার ভুলের জন্য আজ আমার বর্ষার এতো বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।নিজেকে আমি কি করে ক্ষমা করবো!’
বর্ষার মা মেয়ের বুকে জরিয়ে নিলেন। তিনিও কাঁদছে।
বর্ষা চুপচাপ মাথা মায়ের বুকে দিয়ে আছে। নিবিড় চৌধুরী মেয়ের সামনে বসে থাকতে পারছে না। তিনি বুকের ব্যাথা চেপে রুমে চলে এলো। বিছানায় শুয়ে পরলো। মেয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো শুধু তার জন্য। আবার বাসা থেকেও নাকি চলে যেতে হবে কোথায় যাবে সে। বুকের ব্যাথা বাড়ছে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে নিবিড় চৌধুরী হার্ট অ্যাটাক করেন রাতেই। বর্ষা ও ওর মা নিবিড় চৌধুরীর অবস্থা দেখে ভয়ে আতকে উঠে। রাতে দুজন মেয়ে মানুষ কি করবে? বর্ষার মা স্বামীর পাশে বসে কাঁদতে থাকে। বর্ষা দৌড়ে দাড়োয়ান চাচাকে ডেকে নিয়ে আসে।
তারপর ড্রাইভার ও দাড়োয়ান এর সাহায্যে রাতেই নিবিড় চৌধুরীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্বামীর এই অবস্থা মানতে পারেনা বর্ষার মা তিনি ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকেও ভর্তি করা হয়।
আর বর্ষা বাবা- মায়ের এই করুন অবস্থায় হাসপাতালের কডিটড়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তখন একটা পরিচিত মুখ দেখতে পায়।
সে আর কেউ না নিদ্রা। নিদ্রা এগিয়ে আসতেই বর্ষা তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগে। নিদ্রা বর্ষার মাথায় হাত রেখে শান্ত হতে বলে,
‘ শান্ত হও বর্ষা। তোমাকে এখন শক্ত হতে হবে। তুমি ভেঙে পরলে আঙ্কেল আন্টিকে দেখবে কে?’
‘ আমি শান্ত হতে পারছিনা। আমাদের সাথে এমন কেন হচ্ছে আপু। একে একে সব কষ্ট আমাদের আস্টেপৃষ্টে ধরছে কেন? সব দিক থেকে বিপদ আমাদের ঘিরে ধরেছে।’
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে। পানি খাও ধরো।’
বলেই নিজের থেকে বর্ষাকে ছাড়িয়ে নিলো নিদ্রা আর পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বর্ষার গলা শুকিয়ে গেছে। ও ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে ফেলল।
নিদ্রা ওর পাশে বসলো। কি বলে শান্তনা দেবে নিদ্রার জানা নেই। নিদ্রা সুস্থ হয়েই হসপিটালে চলে এসেছিলো কাজ বেশি থাকায় রাত হয়ে গেছে।
বাসায় চলে যাচ্ছিল তখন বর্ষাকে ও ওর পরিবারের কে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়। কাছে গিয়ে সব জানতে পেরে নিজেই বর্ষার মাকে দেখেছে। বর্ষার বাবাকে সিনিয়র ডাক্তার দেখছেন। বর্ষা একা ছিলো এখানে ভেঙে পরেছিল কিন্তু পরিচিত নিদ্রা কে পেয়ে একটু ভরসা পেয়েছে। বিয়ের সময় নিদ্রার সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়েছে বর্ষার সাথে।ও নিদ্রাকে নিজের বড় বোন ভাবে তাই নিদ্রাকে পেয়ে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে।
‘ মাম্মা কেমন আছে আপু?’
‘ আন্টি সুস্থ আছে এখন। কিন্তু ওনার জন্য এই চিন্তা করাটা রিক্স। আগেও এর জন্য স্টক করেছেন উনি। তাই উনাকে চিন্তা থেকে দূরে রাখাটা বেটার।’
‘ দূরে কি করে রাখবো। সমস্ত দুশ্চিন্তা তো আমাদের জরিয়ে আছে। এটা থেকে মুক্তি নাই।’
নিদ্রা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। তাই চুপ করেই আছে। বর্ষার ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ও তাকিয়ে আছে বর্ষার কান্না রত মুখের দিকে। মা যেদিন মারা গেলো আমিও এমন অবস্থা ছিলাম।কেউ পাশে ছিলো না। একা বসে কেদেছিলাম আজ নিজের জায়গায় বর্ষাকে দেখতে পাচ্ছে ও বর্ষার কষ্ট টা উপলব্ধি করতে পারছে কিন্তু তাকে শান্ত করতে পারছে না।
নিদ্রার চোখেও জল চলে এলো। কিছু বলতে যাবে ওর ফোন বেজে উঠলো। অভ্র কল করেছে।ও রিসিভ করলো না কেটে দিলো।পর পর কয়েকবার কল এলো তাই বাধ্য হয়ে রিসিভ করে সরে দাঁড়ালো আর কানে নিয়ে বললো,
‘ কি হয়েছে কেটে দিচ্ছি দেখছিস না। তাও কল করছিস কেন?’
‘ কাটছিস কেন?আর কোথায় তুই এই শরীর নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিস কেন? আবার রাত হয়েছে গেছে এখনো বাসায় কেন আসিস নি?’
‘ আমি আর আসবো না।আমি আমার বাসায় ফিরে যাব।’
‘ হোয়াট?’
‘ রাখসি আমি বিজি আছি।’
‘ ওয়েট ওয়েট তুই কোথায় আছিস এখন?’
‘ হাসপাতালে।’
বলেই নিদ্রা কল কেটে দিলো। বর্ষাকে একা রেখে যেতে ও পারছে না। মেয়েটার মনের অবস্থা ভালো নাই তাই পাশে বসে রইলো। ডাক্তার বের হলো অনেকক্ষণ পর বর্ষার বাবার জ্ঞান ফিরেনি। জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত কিছু বলতে পারছে না। শত বলেও বর্ষাকে কিছু খাওয়াতে পারলোনা। অভ্র এলো আধা ঘন্টা পর এসেই বর্ষাকে দেখে চমকালো তারপর নিদ্রার থেকে সব শুনলো। নিদ্রাকে একপাশে টেনে নিয়ে গেলো অভ্র।
‘ কি হয়েছে টানাটানি করছিস কেন?’
‘ বাসায় চল।’
‘ সরি আমি আর ওই বাসায় যাব না। তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছে অনেক বিরক্ত করেছি। আর করতে চাইনা।’
‘ পাগলামো করিস না। বাসায় পুলিশ এসেছে!
‘ মানে কেন? অবাক হয়ে বলল নিদ্রা।
‘ বাসায় গেলেই বুঝতে পারবি। চল আমার সাথে!’
‘ কিন্তু মেয়েটাকে এইভাবে একা রেখে..
‘ ওর আত্নীয় কাউকে আসতে বলি।’
‘ হুম।’
বর্ষাকে বলে চলে গেল নিদ্রা রা।
বর্ষা ওর মামা দের কল করেছিলো কেউ আসবে না। বিপদের সময় কেউ পাশে থাকে না। বর্ষা একাই বসে আছে ওর মাথা ব্যথা করছে ও মাথা চেপে চোখ বন্ধ করে আছে। তখন হাসপাতালে পুলিশ এসে ভিড় করা শুরু করলো।
নিবিড় চৌধুরী কে সব সময় পুলিশের নজরে রাখা হয়েছে। তার এই অবস্থায় কথা জানতে পেরেই সবাই চলে এসেছে। বর্ষাকে সবাই জেরা করা শুরু করলো। বর্ষা এখন বসে থাকতে পারছে না একেতে মাথা ধরেছে তার উপর বাবা মায়ের এই অবস্থা সেখানে এই প্রশ্ন গুলো একটু ও পছন্দ হচ্ছে না ও বিরক্ত হয়ে চুপ করে আছে।
‘ হঠাৎ নিবিড় চৌধুরী হার্ট অ্যাটাক কেন করলো? কি হয়েছিলো বাসায় কেউ কি এসেছিলো? বা কারো সাথে ফোনে ঝগড়া হয়েছে?’
নানা রকম এর প্রশ্ন করে যাচ্ছে বর্ষাকে। কোন উওর দিচ্ছে না দেখে সবাই ব্যর্থ হয়ে চলে গেলো।
দুইজন পুলিশ কে নিবিড় চৌধুরী এর জ্ঞান ফেরার জন্য রেখে গেলো। জ্ঞান ফিরলেই যাতে খবর দেয়।
নিদ্রা বাসায় এসে দেখলো তিনজন পুলিশ বসে আছে সোফায়। আর আয়েশ করে কফি খাচ্ছে। ও তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এগিয়ে এলো।
আদিল খুব তৃপ্তি করেই কফি খাচ্ছে। তখন কাউকে আসতে দেখে মাথা তুলে সামনে থাকালো। নিদ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো আর দাঁড়িয়ে পরলো। বিষ্ময়ে ওর হাতে থেকে কফির কাপ নিচে পরে গেলো আর ঝনঝন শব্দ করে তা ভেঙে গেলো।
ও অবাক নয়নে নিদ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আর নিদ্রা হাঁটা থামিয়ে আদিল এর হতভম্ব হওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা নিচু করে ভাঙা কাপের দিকে তাকায়। বাসায় সবাই অবাক হয়েছে আদিল এর রিয়াকশন দেখে।
আদিল এর পাশ থেকে একজন আদিলের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
‘ স্যার আর ইউ ওকে! আপনি এমন করছেন কেন?’
আদিল হকচকিয়ে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ সরি, আপনাদের কাপটা ভেঙে ফেললাম।’
বলেই গম্ভীর করে ফেললো মুখটা আদিল তারপর নিদ্রার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আপনি মিসেস অভ্র?’
নিদ্রা হ্যা বলে। তারপর বলে,
‘ আপনি যাদের কথার ভিত্তিতে এখানে এসেছেন সেটা সম্পূর্ণ ভুল অফিসার!’
আদিল এগিয়ে এসে নিদ্রা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
‘ আপনি কি বলতে চাইছেন?’
‘ আমাকে জোর করে বিয়ের আসরে বসানো হয়নি। আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। আর ডির্বোস ও নিজের ইচ্ছায় ই দেবো। এখানে অভ্র বা ওর পরিবারের কোন দোষ নাই। তারা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। কোন রকম অত্যাচার করেনি। আমার চাচা চাচি নিজের স্বার্থ এ এসব করেছে। আপনি অভ্রকে জেলে নেবেন না প্লিজ।
‘ সরি, আমরা আপনার কথা রাখতে পারবো না। কেস যেহেতু করা হয়েছে মিস্টার অভ্রকে আমাদের সাথে যেতেই হবে।’
‘ এটা কি ধরনের কথা আমি নিজে বলছি তো এসব ওদের জোর জবরদস্তি নাই। আমার সম্মতি আছে। আর সম্পর্ক থেকে আমি বের হতে চাইছি।’
‘ এটাই সমস্যা। আপনারা যদি একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে আপনার কথা মেনে নিতাম কিন্তু আপনাদের আলাদা হওয়ার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে কেসটা করা ঠিক হয়েছে।আর আপনি সত্যি বলছেন তার কি গ্যারান্টি এমন ও তো হতে পারে আপনার স্বামী আপনাকে ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে এসব বলাচ্ছে নিজে বাঁচতে ’
‘ আপনারা আমার কথা বিশ্বাস না করে তাদের কথা কেন বিশ্বাস করছেন যারা আমাকে এক দন্ড সহ্য করতে পারে না। কষ্ট এরা না তারা আমাকে দিয়েছে। আর আপনি তাদের কথায় এখানে আমার হাজব্যান্ড কে গ্রেফতার করতে এসেছে কেন? আর অভ্র আমার বন্ধু ওকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি ওকে আমি বন্ধুর বেশি ভাবিনা তাই ডির্ভোস দিয়ে আলাদা হবে যাবো এতে এতো সমস্যা কোথায়?’
‘ আপনার স্বামী অন্য কাউকে ভালোবাসে সে জন্য আপনাকে ডিভোর্স দিতে চায় শুনছি আমরা।’
নিদ্রা , অভ্র ও ওর পরিবারের সবাই পুলিশ কে বুঝানো চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।অভ্রকে জেলে নিয়ে গেছে।নিদ্রা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো সোফায়। এখন অভ্রকে জেলে থেকে ছাড়াবো কি করে ভাবছে নিদ্রা।
আদিল যাওয়ার আগেও নিদ্রার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো যা নিদ্রার চোখ এড়ায়নি।
#চলবে……….