তুমি_যে_আমার🥀 Writer_Nondini_Nila Part_28

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_28

পুলিশ চলে যাওয়ার এক ঘন্টা পর নিদ্রা ও অভ্রের বড় ভাই থানায় এসে হাজির হয়। নিদ্রা থানায় গিয়ে জানায় ও অভ্রকে ডির্ভোস দেবে না। নিদ্রার কথায় অভ্র কে ছেড়ে দেয়। নিদ্রার সিদ্ধান্ত শুনে অভ্র অবাক হয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে ভাই এর সাথে আগে আগে বেরিয়ে আসে। নিদ্রা তখনও আদিল এর কেবিন এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদিল তা দেখে বললো,

‘ কিছু বলবেন মিসেস অভ্র?’

নিদ্রা মাথা নেড়ে না বলে পেছনে ঘুরে চলে যেতে ধরে তখন আদিল আবার ডেকে উঠে নিদ্রাকে চমকে দাঁড়িয়ে পরে নিদ্রা। আদিলের কেবিনে কেউ নাই ও আশেপাশে লক্ষ্য করে নিদ্রার সামনে এসে আমতা আমতা করে বলে,

‘ আপনার হাতটা একটু দেখি।’

নিদ্রা আদিলের কথা শুনে চমকে উঠে। চোখ বড় করে বলে, ‘ হোয়াট?’

আদিল নিজের হাত বাড়িয়ে নিদ্রার বাম হাত টেনে ধরে। নিদ্রা লাফিয়ে উঠে তা দেখে চেঁচিয়ে উঠে বলে,

‘ কি করছেন কি হাত ছাড়ুন? আমার হাত কেন ধরেছেন? কি অসভ্যতামি হচ্ছে ছাড়ুন হাত?

নিদ্রা রাগে গজগজ করছে। কতো বড় অসভ্য ছেলে হলে এভাবে একটা মেয়ের হাত ধরা যায়।
আদিল কোন রিয়াকশন না করে হাতের মুঠো খুলে কি যেন দেখলো তারপর ছেড়ে দিয়ে ছলছল চোখে তাকালো নিদ্রার মুখের দিকে।
নিদ্রা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো। হাত আলগা হতেই ছাড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় আদিল এর দিকে কিন্তু আদিলের ছলছল চোখ দেখে থমকে যায়। রাগ টা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। ও আদিলের মলিন মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার মতিগতি কিছুই বুঝছেনা‌‌ নিদ্রা।

‘ কাঁদছেন কেন? ‘

নিদ্রার কথা শুনে আদিল চোখের জল মুছে নেয় ঝটপট। তারপর অন্য দিকে ঘুরে বলে,

‘ আপনার হাত ধরার জন্য সরি। আমি কোন খারাপ মতলবে আপনার হাত ধরি নি। আমাকে খারাপ ভাববেন না। আপনি এখন আসতে পারেন।’

নিদ্রা স্তব্ধ হয়ে কথা শুনছে।ওর মনে হয়না অফিসার আদিল ওকে মিথ্যা বলছে। কেন জানি কথাগুলো বিশ্বাস হলো খুব। ও আর হাত ধরা নিয়ে কিছু বলল না।
শুধু জিজ্ঞেস করল, ‘ কারণটা জানতে পারি কি?’

আদিল অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘ আপনার সাথে আমার খুব প্রিয় একজন মানুষের সাথে খুব মিল। যাকে আমি অনেক দিন আগে হারিয়ে ফেলেছি। আপনি দেখতে অবিকল তার মতো।তাই একটা জিনিস আপনার হাতে চেক করছিলাম। এভাবে আপনার হাত ধরা উচিত হয়নি। আমাকে ক্ষমা করবেন।’

নিদ্রা আর কিছু না বলে বেরিয়ে আসে থানা থেকে।বাইরে এসে দেখে অভ্র আর ওর ভাই দাঁড়িয়ে আছে। নিদ্রা তাদের বাসায় চলে যেতে বলে।

‘তুই যাবি না?’

‘যাব কিন্তু তার আগে আমার এক জায়গায় যেতে হবে।’

‘কোথায় যাবি?’

‘ওই বাসায়! চাচা চাচির সাথে একটা বোঝাপড়া করতে হবে।’

‘তুই একা যাবি! আমিও যাই তোর সাথে।’

‘ তার দরকার নাই। তুই বাসায় যা।’

‘ না আমিও তোর সাথে যাব।’

‘জেদ করছিস কেন?’

‘এই রাতে বেলা তোকে একা ছাড়বো না।’

‘বাসা কাছেই 10 মিনিট লাগবে যেতে!’

‘তারা খুব একটা সুবিধার না। তাদের কাছে তোকে একা ছাড়তে পারবো না আমি সরি।’

অজ্ঞতা অভ্র কে নিয়েই যেতে রাজি হয় নিদ্রা।

.
12 ঘণ্টার মধ্যে বর্ষার বাবা জ্ঞান ফিরে। তার অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু আল্লার রহমতে সুস্থ হয়েছেন তিনি।
বর্ষা বাপির সাথে দেখা করে বাইরে বসে আছে। মায়ের কাছেই ঘুমিয়ে ছিলো। মাম্মা জেগে বাপির জন্য উতলা হয়ে গেল। সকালে তাকে আগে বাপির সাথে দেখা করাতে হলো। তারপর শান্ত হলো।
এবার টাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। মাম্মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো বর্ষা। বাপিকে কয়েক দিন হসপিটালে থাকতে হবে। এ টাকা পয়সা কোথা থেকে দেবো সেই চিন্তা করছেন মাম্মা।
তখন বর্ষার মাথায় এলো একটা কথা। ও তাড়াতাড়ি মাম্মার কাছে গিয়ে বলল,,,,

‘মাম্মা বাপি যে আমান নামে একটা অ্যাকাউন্ট করেছিলো মনে আছে তোমার। সেখানকার টাকা তো বাপি কখনো খরচ করবে না বলেছিলো। আমার হয় সে টাকা এখনও অক্ষত আছে। আমরা সেই টাকা দিয়ে তো কিছুদিন চলতে পারি বাপিকে হসপিটাল থেকে ছাড়াতে পারবো তাই না।’

বর্ষার কথা শুনে ওর মায়ের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। বর্ষার একাউন্ট থেকে টাকা উঠিয়ে হসপিটালে যাবতীয় খরচ যাবে।

পরদিনই বাসা ছাড়ার লোক এসেছিল। বাপির এই অবস্থা দেখে তারা কিছুই করেনি। এক মাস টাইম দিয়েছে। বর্ষা নিজের প্রিয় ছাদে দোলনায় বসে আছে এখন। নিজের মন মতো এই ছাদটা ও সুন্দর সাজিয়েছে। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ছাদে, বাসার আনাচে কানাচে। সব মায়া ছিন্ন করে বাসা থেকে চলে যেতে হবে। সব তো ওর জন্য ই হচ্ছে। লোকটা আমাদের নিঃস্ব করে ছাড়লো। ওই লোকটার জন্য ওর মনের কোনে একটু একটু অনুভূতি জন্ম হয়েছে ছিঃ। দোলনা থেকে ওঠে ওর প্রিয় ফুল গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে।
মাম্মা হাসপাতালে গেছে বাপির জন্য খাবার নিয়ে। বর্ষা রেলিং এ হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে উদাশ হয়ে। তখন ওর মনে হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে ও আশেপাশে তাকালো কিন্তু সন্দেহ জনক কাউকে না পেয়ে সরে গেলো সেখানে থেকে। আর দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে চলে এলো।
কোথাও গিয়ে এক দন্ড দাঁড়াতে পারেনা বর্ষা সবসময় মনে হয় কেউ না কেউ ওকে লক্ষ করছে। আর মাত্র কয়েকদিন এইবাসায় থাকতে পারবে ভাবতেই চোখে জলে ভড়ে উঠছে। বর্ষা বিছানার শুয়ে পরলো। আর ঘুমিয়ে পড়ল। কলিংবেলের শব্দে ঘুম থেকে উঠলো। মাম্মা দাঁড়িয়ে আছে।
ভেতরে এসে বললো,

‘ ১৭ তারিখ থেকে তোর এক্সাম শুনলাম। বলিসনি কেন আমাকে।’

‘ আমি পরিক্ষা দেবো না মাম্মা।’

‘ কি বলছিস?’

‘ ঠিক‌ই বলছি। এই অবস্থায় আমার পড়া আর হবে না।’

‘ এক চর দিয়ে তোমার গাল লাল করে দেবো। এসব বললে। চুপচাপ পরতে যাও।

‘ কিন্তু মাম্মা .

‘ লেখাপড়া নিয়ে আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।’

‘ মাম্মা এতো টাকা খরচ না করলে হয় না।”

‘ রুমে যাও।’

বর্ষা চুপচাপ রুমে চলে এলো। বেতন আর ফিশ বাবদ বাইশ হাজার টাকা লাগবে এখন এতোটা খরচ করতে হবে ভেবেই ও এসব নিয়ে ভাবতে চায়নি। কিন্তু মাম্মার কথার উপর কথাও বলতে পারবে না। তাই পরিক্ষা দিতেই হবে। রুমে এসে পরতে বসতে হলো।

.
আরিয়ান বাসায় এসেছে আজ। ওর জানা হয়ে গেছে নিদ্রা আর অভ্র কে ডির্ভোস দেবে না। সব একদিকে ফেলে ও চলে এসেছে রাগে ওর শরীর কাঁপছে। বাবা মায়ের থেকে এটাও জানতে পেরেছে নিদ্রা ওর বর কে নিয়ে এসে অপমান করে গেছে।
আরিয়ান রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলো। আর সোজা নিদ্রার হাসপাতালে এলো।
নিদ্রা নিজের কেবিনে বসে ছিলো। ওর সামনে বসে আছে আদিল। দুজনে কিছু বলে হাসছে।
তখন আরিয়ান দরজা শব্দ করে খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।
দরজার শব্দে তাকিয়ে নিদ্রা দাঁড়িয়ে পরে আর রাগান্বিত আরিয়ানের মুখ দেখে। কতোদিন পর আরিয়ান কে দেখলো খেয়াল নেয় কিন্তু অনেকদিন পর দেখছে। আদিল রেগে পেছনে তাকালো। কি সুন্দর আড্ডা দিচ্ছিলো এমন সময় কে এলো ওদের ডিস্টার্ব করতে। পেছনে তাকিয়ে চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেললো। আরিয়ান আদিলের মুখ দেখার আগেই। আরিয়ান কোন দিকে লক্ষ্য না করে নিদ্রার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে এলো হসপিটাল থেকে। নিদ্রা হাত ছাড়ানোর জন্য যুদ্ধ করতে লাগলো। ” ভাইয়া আমার হাত ছাড়ুন! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এভাবে?’

আদিল টিস্যু দিয়ে মুখ ডেকে বসে ছিলো আরিয়ান চলে যেতেই উঠে দাঁড়ালো। ওর মস্তিষ্কে ঢুকছে না আরিয়ান নিদ্রাকে এভাবে টেনে নিয়ে গেলো কেন?
ও হাসপাতালের বাইরে এসে কাউকে কল করলো। সাথে সাথে একটা সাদা রঙের প্রাইভেটকার এসে থামলো আর একজন দৌড়ে এসে দরজা খুলল,
আদিল ভেতরে গিয়ে বসতেই গাড়ি চলতে লাগলো। আদিলের পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

‘ ডাঃ নিদ্রার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। মনে হয় এতেই তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।’

#চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here