তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_7
তুর্য খাবারের প্লেট এনে বর্ষার হাতের উপর দিল।
‘নাও খাও তোমাকে অত্যাচার করতে চাই। কিন্তু তার জন্য না খাইয়ে অসুস্থ করার কোনো রকম ইন্টারেস্ট আমার নাই। পরে তোমাকে নিয়ে অশান্তিতে আমাকেই ভুগতে হয়।’
খাবার দেখেই বর্ষার খিদে যেন তিনগুণ বেড়ে গেল। কিন্তু এই খারাপ লোকটার খাবার ও খেতে চায় না। ও খাবারের প্লেট হাতে শক্ত হয়ে বসে আছে। তূর্য ওর সামনে দাঁড়িয়ে এইসব দেখে দাঁত চেপে বললো,
‘এই না বললে সারাদিন না খাইয়ে তোমাকে অত্যাচার করেছি। এখন খাবার দিলাম খাচ্ছ না কেন?’
বর্ষা তূর্য এর দিকে অশ্রু নয়ন চোখে তাকিয়ে বললো,
‘আপনার দেওয়া কোন খাবার আমি খাব না।
দরকার হলে না খেয়ে মরে যাব।’
বলেই বর্ষা খাবার নিচে নামিয়ে রাখে।
তূর্য বর্ষার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল এটা দেখে ও শান্ত ভঙ্গিতে বলে, ‘ অ্যাটিটিউড না দেখিয়ে চুপচাপ খাবারটা খেয়ে নাও। আমি তোমার আপন কেউ না যে তোমার মরে যাবার কথা শুনে ভয় পেয়ে যাব। আর তোমাকে আহ্লাদ করে খাওয়াবো।’
আপনাকে বলেছি কি আমি আপনি আমাকে আহ্লাদ করে খাওয়ান।’ রেগে।
‘তোমার ভাবভঙ্গি দেখে তো আমার তাই মনে হচ্ছে। মানে আমার হাতে খেতে চাইছো। সব মেয়েরা এক রকম ছেচরা টাইপের। সকালে জ্বরের অজুহাতে আমার হাতে খেয়েছ আবার এখন খাবে না বলে ঢং করছ।’
‘কি আমি আপনার হাতে খেয়েছি জ্বরের অজুহাতে। আর এখন ঢং করছি মনে হচ্ছে?’
‘অফকোর্স। না খেয়ে অসুস্থ হয়ে সেবা পাওয়ার ধান্দা।’
‘আপনি আমাকে অপমান করছেন?’
‘এখন বুঝতে পারলে।’
রাগে বর্ষা কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। অতি আদরের মেয়ে হওয়ার বর্ষার অধিক মাত্রায় রাগ। তূর্য বর্ষা কে রাগিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে হাসছে। আর এতে বর্ষা যেন শরীরের আগুন ধরে যাচ্ছে। তূর্যের মুখের হাসি দেখে হা হয়ে গেছিল বর্ষা। মারাত্মক সুন্দর হাসি। যে কোন মেয়ে প্রেমে পরতে বাধ্য এই হাসিতে। কিন্তু বর্ষা পারল না ও রেগে তাকিয়ে আছে।
রাগে ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। লোকটা কে উচিত শিক্ষা দিতে না পারা পর্যন্ত শান্তি পাবে না।
আচমকা খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে তূর্যের মুখ বরাবর ছুড়ে মারল। সমস্ত খাবার তূর্য এর শরীরে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। আচমকা কাজে তূর্য স্ট্যাচূ হয়ে গেল। মুহুর্তের মাঝে যেন একটা ঝড় বয়ে হয়ে গেল।
তূর্য রাগে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। বর্ষা কাজটা করে আনন্দ পেলেও কষ্ট পেলো খাবার নষ্ট হলো লোকটার জন্য। আল্লাহর কাছে মনে মনে ক্ষমা চাইছে রাগের মাথায় খাবারটায় নষ্ট করে দিয়েছে।
তূর্য অগ্নিদৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকালো। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন বর্ষাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারলে। তাহলে ওর শান্তি লাগবে। রাগে তূর্যের কপালের রগ ফুলে উঠেছে। মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে,
‘You put so much courage on me.’
তূর্য এর ককর্শ গলায় আওয়াজ শুনে বর্ষা শুকনো ঢোক গিলে। ও ভয় পেলেও নিজেকে সাহসি প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বলে,
‘আপনার জন্য এটাই ঠিক হয়েছে। আমার তো মন চাইছে আপনাকে….
আর বাকিটুকু বলতে পারল না। তূর্য এগিয়ে আসতে লাগলো রাগী চোখে তাকিয়ে ওর দিকে। বর্ষা দাঁড়িয়েছিল তূর্যের এগিয়ে আসা দেখে ভয় পিছিয়ে যেতে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
‘আমার দিকে এরকম রাক্ষসের মত তাকিয়ে এগিয়ে আসছেন কেন? দূরে যান একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।’
ভয়ে বর্ষার মুখে একটুখানি হয়ে গেছে।
‘অনেক সাহস দেখিয়ে ফেলেছো তুমি!’
বলে একদম বর্ষার কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় তূর্য। বর্ষার পেছনে যাওয়ার আর জায়গা নাই তাই নিজের মাথায় পেছনে হেলিয়ে দেয় আর তূর্য ফট করেই হাত উঁচু করে। বর্ষা ভয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠে,
‘ দুইবার আমার গায়ে হাত তুলেছেন। এটা নিয়ে তিনবার হবে।’
বর্ষা চোখে খিচে বন্ধ করে আছে ভয়ে। অপেক্ষা করছে থাপ্পর খাওয়ার জন্য। তূর্য কথাটা শুনে হাত থামিয়ে ফেললো। আর বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে টান মেরে দাড় করিয়ে ফেললো। বর্ষা আচমকা টানে ভয় পেয়ে তূর্য এর শার্ট খামচে ধরে। পিটপিট করে চোখ মেলে ভীতু মুখ করে। তূর্য দাঁত চেপে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।বর্ষা ঢোক গিলতে বাস্ত।
‘ প্রথম অন্যায়, তুমি খাবার গুলো ফেলে নষ্ট করেছো। তোমার দ্বিতীয় অন্যায়, আমার গায়ে খাবার ছুড়ে মারার সাহস দেখিয়েছে। দুই দুটো অন্যায় এর জন্য তোমাকে শুধু মারলে হবে না।’
‘মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?আমি খাবার ফেলে অন্যায় করেছি ঠিক আছে। কিন্তু আপনার উপর ফেলে আমি কোনো অন্যায় করিনি একদম ঠিক কাজ করেছি।’
তেজি গলায় বললো বর্ষা। তূর্য শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। নিজের হাত বর্ষার কোমরে ধরা ছিল। বর্ষার এমন তেজি কন্ঠ শুনে তূর্য আরো শক্ত করে চেপে ধরে কোমর যাতে বর্ষা নিজে কোমরে ব্যথা অনুভব করে। আর ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগে। ব্যথায় ওর চোখে অশ্রু চলে আসে। তুর্য সে দিকে তোয়াক্কা না করে নিজের হাত আরো শক্ত করে কোমর চেপে ধরে বলে,
‘ I can’t imagine what I will do to show you such courage.’
‘ছারুন আমাকে আমি ব্যাথা পাচ্ছি।’
ব্যথায় একটুখানি মুখ করে বলল বর্ষা। তূর্য কোমর ছেড়ে দিলো ঠিকই। কিন্তু হাত আরো শক্ত ধরে টেনে বাথরুমে নিয়ে এলো। বর্ষা বলছে,
‘ছারুন আমার হাত। আমাকে এভাবে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।’
তূর্য উওর দিলো না। বর্ষাকে টেনে বাথরুমে এনে ছারতেই বর্ষা বিস্মিত হলো। এখানে নিয়ে এলো কেন? পাগল নাকি!
মুখে বলেই ফেললো, ‘ আর ইউ ম্যাড। আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন মাথা গেছে নাকি আপনার।’
‘And if I say a bad word, I will bury this idiot girl here.’
বলেই বর্ষার গলা চেপে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড় করালো। বর্ষা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর কথা বলতে পারছে না।হাত বাড়িয়ে তূর্য এর হাত সরানোর চেষ্টা করছে। শেষ সময়ে তূর্য গলা থেকে হাত সরিয়ে নিলো আর বর্ষার দুপাশে দেয়ালের দুহাত রেখে বর্ষার উপর সামান্য ঝুকে বলতে লাগলো,,
‘আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে আসলে তার ফল তোমার জন্য ভালো হবে না। তাই নিজের মুখটা বন্ধ রাখ। এটার তোমার জন্য বেটার।’
বর্ষা গলায় হাত দিয়ে খুকখুক করে কেঁশে উঠলো। এতো ভয় পেয়েছে যে ও কথা বলতে পারছে না।ভয়ে ওর শরীর কাঁপছে। কিছু ক্ষনের জন্য মনে হয়েছিলো এইখানে বুঝি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে।
ভয়ে আর তূর্য এর দিকে মাথা তুলে তাকাতে পারলো না। বর্ষা নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে।
তূর্য বর্ষা থেকে সরে এসে নিজের শার্ট এর বোতাম খুলতে লাগলো। এই শার্ট এই মেয়েকে ধুয়াবে ও। এজন্য এটাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
বর্ষা দেয়ালে হেলান দিয়ে কাঁদছে। আর এক হাত গলায় বুলাচ্ছে। আরেক হাত পাশে ঝর্নার হ্যান্ডেল ধরে কাঁদছে ঠোঁট কামড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। তূর্য শার্ট খুলে বর্ষার মুখে ছুড়ে মেরে এগিয়ে এলো। আর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ নষ্ট করেছো তুমি। নিজে তাই নিজেই এটা পরিষ্কার করবে ওকে।’
বর্ষার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো।
বর্ষার মুখে আচমকা কিছু ছুটে আসতেই চমকে মাথা তুলে তাকায় আর দেখতে পায়। তূর্য এর শার্ট তা ওর দিকে ছুঁড়ে মেরেছে। ও ঝর্না হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে ছিলো। তাই এসবের হাত মুচার লেগে ঝর্না চালিয়ে ফেলে ভুল বশত। আর এতে ঝমঝম করে পানি বর্ষা ও তূর্য এর গায়ে পরে শরীর ভিজিয়ে দেয়। বর্ষা চমকে উপর দিকে তাকিয়ে ভয়ে আতকে উঠে। ওর হাতের চাপ লেগে এসব হয়েছে বুঝতে পারে। বর্ষা ভয় পেয়ে যায় ভয়ার্ত চোখে তূর্য এর দিকে তাকায়। তূর্যের কপাল বেয়ে পানি মুখ থেকে গলায় পরছে সারা শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। ও নিজেও ভিজে যাচ্ছে।ওর জন্য ঝর্না চালু হয়ে গেছে। এখন কি এর জন্য ওকে শাস্তি দিবে কিনা! ভেবে বর্ষা কুঁকড়ে যাচ্ছে ভয়ে। গলা চিনতে চেপে ওকে তো মেরেই ফেলছিলো।এখন যদি রেগে সত্যি মেরে ফেলে তাহলে কি হবে? বাপি, মাম্মার আর দেখা হবে না।
তূর্য এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। এইসব বর্ষার জন্য হয়েছে ও বুঝতে পারছে। রেগে বর্ষার দিকে তাকালো। বর্ষা ওর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ পিটপিট করছে।বন্ধ করছে তো খুলছে আসলে বর্ষা তো ভিজে যাচ্ছে ওর কপাল বেয়ে চোখে পানি পড়ছে চোখে আর ও তার জন্য চোখ বন্ধ করে আবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। মনে মনে বর্ষা শুকনো ঢোক গিলছে। তূর্য কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। দুজনে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। বর্ষার সাদা শার্ট ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। তূর্য নেশাতুর দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য কে এমন নিজের দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বর্ষার সন্দেহ হচ্ছে। না বকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? বর্ষা চোখ নামিয়ে ভাবছে এমন হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে কেন? এই গন্ডার টার আবার টা হলো? হুট করেই ও নিজের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। তূর্যের এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ বুঝতে পেরে লজ্জায় পেছনে ঘুরে যায়। আমার বিরবির করে বলে,
‘ নির্লজ্জ, চরিত্রহীন লোক একটা।’
#চলবে….