তৃষ্ণা
পর্ব ৩১ ও ৩২
মিশু মনি
মাহিব অংশীর কথার গুরুত্ব না দিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে এলো দোকান থেকে। অংশী পুরোপুরি বদলে গেছে। তবে অংশীর জন্য কোনো মায়া নেই মাহিবের মনে। মাহিবও অংশীকে দেখিয়ে দেবে মাহিব সবসময় ভালো থাকে, কখনো খারাপ থাকে না।
তারই উদাহরণ অংশীকে দেখাতে গিয়ে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা আঁটতে থাকে মাহিব। বেশ কয়েকদিন ধরেই একটা মেয়ে মাহিবের সাথে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওকে গ্রহণ করে অংশীকে দেখিয়ে দিলে ব্যাপারটা নিতান্তই মন্দ হয় না। মাহিব বাসায় ফিরেই মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করলো । তারপর অংশীকে জ্বালানোর পালা।
দুদিন ফোনে কথা বলার পরই মাহিব মেয়েটাকে নিয়ে অংশীর দোকানে এলো শাড়ি কিনতে। মেয়েটা মাহিবের হাত ধরে ঘুরে ঘুরে শাড়ি দেখতে লাগলো। অংশীর ভেতরটা ভরে যাচ্ছে বিতৃষ্ণায়। মাহিব আজকাল এতটাও নিচু মানসিকতর হয়ে গেছে। জেদের বসে আর কি কি করবে ও? মাহিব এক ফাঁকে অংশীকে এসে বললো, ‘মাই গার্ল ফ্রেন্ড। দেখেছো কত স্মার্ট? নিজেও তো আজকাল স্মার্ট সাজার চেষ্টা করছো। শুধু জামাকাপড় ওয়েস্টার্ন হলেই স্মার্ট হওয়া যায় না মিস। খেত সবসময় খেতই থাকে।’
অংশী অপমানে লাল হয়ে গেলো। মুখ তুলে চাইতে পারলো না। মাহিব একটা শাড়ি কিনে ডেস্কের উপর টাকা রেখে মেয়েটার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো। ক্ষোভে, দুঃখে পুড়তে লাগলো অংশী। মাহিব আবারও এভাবে অপমান করে যাবে এটা ভাবতেও পারে নি ও। কষ্টে ভেতর থেকে ঠেলে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইলো। শাড়ির আঁচল খামচে ধরে বসে রইলো অংশী।
সেদিনের পর থেকে অংশী আর মাহিবের খোঁজ কখনো নেয়নি। প্রীতমও কখনো আসেনি এখানে। অংশী একদম একা নিজের চেষ্টায় ব্যবসাটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাহিবের প্রতি ধীরেধীরে অভিমান বাড়ছে। ক’দিন আগেও ওর প্রতি যে ভালোবাসা ছিলো, আজ সেখানে ভাটা পড়েছে। তবুও মানব মন তো, বারবার কষ্ট দেয় যে, পাগল মন তার কাছেই ছুটে যেতে চায়। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে রাখে অংশী।
ধীরেধীরে শাড়ির অর্ডার বাড়তে লাগলো। কয়েকটা দোকান থেকে অনেক গুলো করে শাড়ি ও থ্রি পিছের অর্ডার আসছে। অংশী সময় নিয়ে সেসব ডিজাইন করে ডেলিভারি দিয়ে আসছে। রাতগুলো অমিকে জড়িয়ে ধরেই কাটছে। এভাবে ক্রমাগত দিন পার করছে অংশী।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো বছর দুয়েক। এই দু বছরে মাহিব একটার পর একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে, কয়েকদিনের ব্যবধানে আবার ভেঙেও গেছে সম্পর্ক গুলো। আজকাল আর মেয়েদের সঙ্গ ভালো লাগে না মাহিবের। কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলে শান্তি পায় না। সবকিছু মিথ্যে মনে হয়। তাই সব ছেড়ে কেবল সিনেমা নিয়েই মত্ত হয়ে উঠেছে। আগের ছবিতে দর্শকের বিপুল সাড়া পেয়ে নতুন আরেকটা সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছে মাহিব। এবারের সিনেমার শুটিং হবে দেশের বাইরে। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতিও চলছে।
সবাই যাচ্ছে, এবার শুধু প্রীতম যাচ্ছে না। প্রীতম নিজেও নতুন করে নাটক তৈরি করছে। মাহিবের সাথে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছে ও।
৩৭
সময়ের প্রতিশোধ বলে একটা কথা থাকে। জগতের সবাই সবকিছ ভুলে যাবে কিন্ত সময় ঠিকই তার প্রতিশোধ নিয়ে নেবে। দ্বিতীয় সিনেমায় বড় ধরণের ধাক্কা খেয়ে গেলো মাহিব। ছবি পুরোপুরি ফ্লপ, হল ফাঁকা, কোনো দর্শক নেই। মাথায় হাত প্রডিউসারের। বিদ্যুৎ শক খাওয়ার মত অবস্থা মাহিবের। প্রথম সিনেমায় দর্শক যেভাবে সাড়া ফেলেছিলো এবার তার একাংশ ও নেই। এতগুলো টাকা সব জলে চলে গেলো। সিনেমার সাথে সম্পৃক্ত সকলের দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই। কি আশা ছিলো আর কি হয়ে গেলো। মাহিব একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।
দর্শক কি তবে ভালো সিনেমা দেখছে না? নাকি আর্ট সিনেমার প্রতি দর্শকের মন নেই? কে জানে এর উত্তর। মাহিব পুরোপুরি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এতগুলো টাকা নষ্ট করায় বাসা থেকেও আর সাপোর্ট পাচ্ছে না। নিজের হাতে ও ব্যাংকে যা টাকা ছিলো সবই সিনেমার পিছনে ঢেলেছে। অথচ সিনেমার দর্শক সংখ্যা হতাশাজনক।
সময়গুলো কেমন যেন তিক্ত হয়ে উঠেছে। কারো সঙ্গ ভালো লাগে না, কোনো কাজ ভালো লাগে না। ডিপ্রেশনে চলে গেলো মাহিব। কাছের লোকগুলো সবাই পিছু হটছে। নতুন করে কাজ করার আগ্রহ কারোরই নেই। এমনকি মাহিব নিজেও ভরসা পাচ্ছে না। টুকটাক শর্ট ফিল্মের কাজ পেলেও সেসব করে শান্তি পাচ্ছে না। এগুলো দিয়ে তো আর ইন্ডাস্ট্রি চলে না। প্রডিউসার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সবার মনে একটা চাপা কষ্ট। কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলছে না।
মাহিব ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আজকাল কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না। মেয়েদের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে বহু আগেই। মেয়েদের দেখলেই কেমন যেন বিরক্ত লাগে। রং চং মাখা মেয়েদেরকে দেখলেই মনেহয় কি লাভ এদের দিকে তাকিয়ে? আবার কখনো মনেহয় মেয়েরা যেমন মেক আপ দিয়ে ত্বকের ত্রুটি আড়াল করে নিজেকে সুন্দর করে তোলে, তেমনি এ শহর ও শহরের মানুষগুলো রং চঙে ঢাকা। একটার উপর আরেকটার স্তর মাখানো। প্রত্যেকের মুখের হাসি, বাইরের চাকচিক্যের আড়ালে একটা প্রকৃত রূপ আছে। অথচ সবাই ভং নামক মেক আপ এর আড়ালে সেটাকে লুকিয়ে রাখে।
একা একা সারাদিন ঘরে বসে থাকে মাহিব। একটার পর একটা সিগারেট ফুঁকতে থাকে আর বই পড়ে। বইতেও সুখ খুঁজে পায় না যেন। জীবনটা ধীরেধীরে কেমন যেন তিক্ত হয়ে উঠছে।
বাবা মাহিবের ঘরে ঢুকে এ অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলের বিয়ে দেবেন। দিন দুয়েক পরেই উনি পাত্রী দেখার জন্য জোর করতে লাগলেন মাহিবকে। মাহিব নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো, ‘বিয়ের কথা বোলো না বাবা। আমার ইচ্ছে নেই।’
– ‘এভাবে একা কতদিন থাকবি? বয়স তো অনেক হলো।’
– ‘ডিপ্রেশনের মুহুর্তে কখনো বিয়ে করতে নেই বাবা।’
– ‘ডিপ্রেশন কাটাতেই বিয়ে করতে হয়। নতুন বউকে নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবি, ভালো লাগবে।’
– ‘বাবা, প্লিজ এখান থেকে যাও।’
ছেলের ঘর থেকে হতাশ মুখে বেরিয়ে এলেন বাবা। মাহিব রুম অন্ধকার করে বসে রইলো। সন্ধ্যের পর হয়তো একটু গিটার নিয়ে বসে। কিছুক্ষণ গিটার বাজায়, এরপর আবার শুয়ে থাকে। অন্ধকারে কারো ছায়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মাহিবের কেমন যেন লাগতে শুরু করে। একাকীত্ব চারিদিক থেকে এসে চেপে ধরে ভীষণভাবে। ঘন ঘন সিগারেট ফুঁকতে থাকে মাহিব।
জীবনটা তিক্ত হয়ে উঠছে দিনদিন। ঘরে বসে থাকতেও ভালো লাগে না। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাই। মাহিবকে আজকাল কোনো একটা অনুশোচনা তীব্রভাবে চেপে ধরে। কেন যেন নিজের মাঝে এক ধরণের অপরাধবোধ জেগে ওঠে। এ অপরাধবোধ কিসের? নিজেকে প্রশ্ন করতেই অংশীর মুখ ভেসে ওঠে চোখের সামনে। মাহিব অস্থির হয়ে ওঠে। ভেতরটা দগ্ধ হচ্ছে পুরনো যন্ত্রণায়। তার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।
অংশীর কথাই তবে ঠিক মিলে গেলো। ও একদিন বলেছিলো মানুষের মস্তিষ্ক কখনো তার পাপ ভুলতে পারে না। একসময় মস্তিষ্ক ঠিকই দহন করতে থাকবে। আজকাল মাহিবের তাই হচ্ছে। অংশীর প্রতি করা অন্যায়কে মনে করে নিজের মাঝে এক ধরণের অপরাধ বোধ জেগে উঠছে। তবে এ অপরাধের চেয়েও বেশি পীড়া দিচ্ছে সেই সন্তান যাকে মাহিব নষ্ট করে ফেলতে চেয়েছিলো। কেবলই মনে হচ্ছে, ও সন্তান তো আমার। তবে ওকে আমি কেন মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম? শুধুমাত্র আনন্দের জন্য? নিজের ওপর ধিক্কার জন্মাতে লাগলো মাহিবের। কষ্টে হৃদপিন্ড ছিঁড়ে যেতে চাইলো।
রাতে শুয়ে শুয়ে নিজের অতীতের কথা ভাবে মাহিব। একটার পর একটা মেয়ের সাথে জড়িয়েছে বলেই হয়তো আজকাল কাউকে ভালো লাগে না। সবাইকে কেমন ন্যাকা মনেহয়। সবার ভালোবাসা কিংবা ভালো কথাগুলোকেও মেকি মনেহয়। অংশীর মত একটা নিষ্পাপ মেয়েকে শহরে এনে একা ছেড়ে দেয়ার মত অন্যায়টা করা ঠিক হয়নি। কেন এই ভুল করেছিলো মাহিব?
নিজের ভুলের জন্য নিজেকেই ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছে। সময় ঠিক সময়েই তার প্রতিশোধ নিয়ে নেয়। যেমন এখন প্রতিনিয়ত নিজে নিজেই পুড়তে হচ্ছে। কষ্টগুলো কেমন যেন খাপছাড়া। কখনো বুকে আঘাত করে তো কখনো মাথায়।
আজকাল ঘুমের ঘোরে অংশীর মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে। মেয়েটা কোথায় আছে কে জানে। কি নিষ্পাপ পবিত্র একটা মুখ ছিলো মেয়েটার। কত চঞ্চল, মিষ্টি ছিলো। অথচ মেয়েটার সবকিছু ওলট পালট করে দিয়েছে এই মাহিব। ভাবতেই কেমন যেন স্বার্থপর মনেহয় নিজেকে। অংশীর সাথে একবার দেখা করা দরকার। হয়তো ও এখন আর একা নেই, নিশ্চয় ওর জীবনে কেউ এসে গেছে। তবুও তো মাফ চাওয়ার সৌভাগ্য হবে। একবার অংশীর কাছে যেতেই হবে।
অর্ধেক রাত অব্দি ছটফট করে অবশেষে থাকতে না পেরে বেরিয়ে পড়লো মাহিব। জীবনের এ পরিণতি হবারই ছিলো। আজ একমাত্র অংশীকেই পাশে প্রয়োজন। অংশীর কাছে ক্ষমা না চাইলে এ পাপ থেকে নিস্তার নেই। অংশীর দোকানের সামনে এসে ফুটপাতে বসে রইলো। সকাল হলে নিশ্চয় দোকান খুলবে অংশী। তখন দেখা হবে, সেই ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
আচ্ছা, দেখা হওয়ার পর মাহিব কি করবে প্রথমে? অংশীকে জড়িয়ে ধরবে? জড়িয়ে ধরলে ও কি রাগ করবে? না জড়িয়ে ধরা যাবে না। অংশীর পায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়বে মাহিব। হাত জোর ক্ষমা চাইবে ওর কাছে। অংশী হয়তো কয়েকটা কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দেবে। সব চুপ করে শুনবে মাহিব। কোনো প্রতিবাদ করবে না। অংশীর কথা শেষ হয়ে গেলেই ওকে জাপটে ধরে বুকের সাথে পিষে ফেলবে মাহিব। অংশীকে আর কিছু বলার সুযোগ ই দেবে না। অংশী যদি রাগ করে? করুক। তবুও ওকে একবার জড়িয়ে ধরবে মাহিব। বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুনটাকে নিভাতে হবে তো। ইস, কখন যে আসবে অংশী! এতদিনের জমে থাকা কষ্টগুলোকে আর ভালো লাগছে না মাহিবের। অংশী এসে যেন সমস্ত কষ্টের অবসান ঘটায়।
মাহিব রাস্তায় বসে ছটফট করতে লাগলো। সকাল হতে আরো কত বাকি! সময় বুঝি ঘড়ির কাঁটায় আটকে আছে। একটুও এগোচ্ছে না। অংশীর বাড়ি চিনলে সেখানেই চলে যেতো ও। কিন্তু সেদিন বাড়ির ঠিকানা নেয়া হয়নি। তাতে কি? দোকানে আসলে এবার বাড়ির ঠিকানাও নেবে মাহিব।
অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে চোখে ঘুম নেমে এলো। উঠে রাস্তায় পায়চারি করতে লাগলো যাতে ঘুম না আসে। এদিক সেদিক ছোটাছুটি করেও শান্তি হচ্ছে না মাহিবের। গাড়িতে গিয়ে বসে রইলো।
সকালের আলো ফুটলে মাহিব চাতক পাখির মত চেয়ে রইলো পথ ধরে। কিন্তু কোনোদিক থেকেই অংশীকে আসতে দেখা যাচ্ছে না। অংশী ভেতরে হয়তো ঘুমিয়ে আছে এই ভেবে দোকানের শাটারে শব্দ করে ডাকতে লাগলো মাহিব। ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, কে?
মাহিব উত্তর পেয়ে স্বস্তি পেলো। বললো, ‘আমি মাহিব। ভেতরে কে?’
দোকানের শাটার কিছুটা তুলে এক বয়স্ক লোক মাথা বের করে দিলো, ‘কে আপনি?’
মাহিব অস্থির হয়ে বললো, ‘এটা যার দোকান আমি তার খোঁজে এসেছি।’
– ‘এটা আমার দোকান।’
– ‘কি বলেন? এখানে তো একটা মেয়ে ছিলো আগে।’
– ‘মাইয়া মানসের খোঁজ ক্যান? আমি জানিনা সেইসব। মালিকের সাথে কথা বলেন গিয়া।’
মাহিবের মনে আঘাত লাগলো। মালিকের নাম্বার নিয়ে তখনই কল দিলো। কয়েকবার রিং হলো কিন্তু রিসিভ হলো না। হতাশ হয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় কিছুক্ষণ ড্রাইভ করতে লাগলো। ক্রমাগত বেলা বাড়ছে, সেইসাথে অস্থিরতাও বারছে মাহিবের। দশটার পর আবারও ফোন দিলো দোকানের মালিকের নাম্বারে। লোকটা রিসিভ করে বললো, ‘হ্যালো..’
মাহিব অংশীর ব্যাপারে বিস্তারিত বললো। সব শুনে দোকানদার বললো অংশী দেড় বছর আগেই এই দোকান ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। মাহিবের মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো। মনে পড়ে গেলো সেই দিনের কথা। এরপরই হয়তো অপমান নিতে না পেরে চলে গেছে অংশী। কোথায় গেছে ও!
মাহিব সোজা প্রীতমের বাসায় চলে এলো। প্রীতমের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ওর ঘরের ভেতরে চলে এলো। মাহিব এর আগে কখনো এভাবে আসে নি। প্রীতম চোখ কচলে উঠে বসলো। মাহিব বিছানার কাছে এসে হাঁটুগেরে বসে প্রীতমের হাত ধরে বললো, ‘ভাই, আমার একটা উপকার কর। প্লিজ সত্যিটা বল, প্লিজ?’
প্রীতম অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। বললো, ‘কি বলবো?’
– ‘অংশী কোথায় আছে?’
অবাক হলো প্রীতম। এতদিন পরে অংশীর খোঁজ!
মাহিব বললো, ‘ভাই, প্লিজ, দোহাই লাগে। বল অংশী কোথায় আছে?’
– ‘জানি না আমি।’
– ‘জানিস তুই। অংশী কোথায় আছে বল? প্লিজ প্রীতম।’
– ‘সত্যিই আমি জানিনা। ওর সাথে আমার যোগাযোগ নেই দু বছরের বেশি হবে।’
– ‘কি বলিস? সত্যি?’
– ‘হ্যাঁ। আমি জানি না ও কোথায়। কখনো ফোনও দেইনি।’
– ‘কেন?’
চুপ করে রইলো প্রীতম। অংশীকে ধীরেধীরে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল ও। কোথায় আছে জানে না, এমনকি অংশীর নাম্বারে কখনো কলও দেয়নি। প্রীতম অংশীর ফোন নাম্বার বের করে কল দিয়ে দেখলো নাম্বার বন্ধ।
অবাক হয়ে মাহিবের দিকে তাকিয়ে রইলো ও। মাহিবের চেহারায় বিষন্নতার ছাপ। কত রাত ঘুমায় না বোঝাই যাচ্ছে। কি হাল হয়েছে বেচারার। প্রীতমের আফসোস করতে ইচ্ছে করলো।
মাহিব বললো, ‘এখন আমি কি করে খুঁজে পাবো ওকে? আমি যে অন্যায় করেছি তার শাস্তি আমি পাচ্ছি। অংশীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে আমাকে। আমি ক্ষমা চাইবো ওর কাছে।’
প্রীতম বিছানা ছেড়ে উঠে একটা জামা গায়ে জড়িয়ে হললো, ‘আসো আমার সাথে।’
প্রীতম ওর বন্ধুর বাসায় চলে এলো, আগে এ বাসায় অংশী থাকতো। কিন্তু এখানে এসেও হতাশ হতে হলো। অংশী অনেকদিন আগেই এ বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। ওর নাকি শহরে থাকতে ভালো লাগছে না তাই পাহাড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কথাটা শুনে মাহিব ও প্রীতম একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। পাহাড়ে! কোথায় গেছে আন্টি সেটা স্পষ্ট বলতে পারলেন না। উনি শুধু পাহাড়ের কথাই বললেন। মাহিব হতাশাগ্রস্ত মনে ফিরে এলো সেখান থেকে।
এর আগে ভীষণ কষ্টেও কান্না পায় নি ওর। আজ খুব কান্না আসছে ভেতর থেকে। অংশী সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও হারিয়ে গেছে। এই নিদারুণ কষ্টটা মাহিবের তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে দিলো।
চলবে..