তৃষ্ণা পর্ব ২৯

0
1471

তৃষ্ণা
পর্ব ২৯
মিশু মনি

আজ মাহিবের সিনেমা মুক্তির দিন। এটাই হচ্ছে অংশীর সেই বিশেষ দিন। মাহিব ওকে কথা দিয়েছিলো এই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার দিন সে অংশীকে সাথে নিয়ে সিনেমা দেখবে। মাহিব তার কথা রাখেনি। কিন্তু অংশী আজ সিনেমা দেখতে যাবে। মাহিবের সাথে দেখা হওয়ার সবচেয়ে চরম উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্ত আজই আসুক।

ছন্দার থেকে চোখে কাজল ও আইলাইনার দেয়া শিখেছে অংশী। কিভাবে হালকা মেক আপ লুক দিতে হয় তাও শিখিয়ে নিয়েছে। অংশী শাড়ি পড়ে চুলগুলো খুব সুন্দর করে বাঁধলো। চোখে টেনে নিলো কাজল ও আইলাইনার। কপালে দিলো একটা ছোট্ট কালো টিপ। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে অমিকে কাজের মেয়ের কাছে রেখে অংশী বেরিয়ে পড়লো।

আজ অন্যরূপে নিজেকেই অন্যরকম লাগছে অংশীর। মনেমনে চাইছে আজকেই যেন মাহিবের সাথে দেখাটা হয়ে যায়। দেখা হলে কি বলবে অংশী? নাকি কথাই বলবে না? সেসব ভাবতে ভাবতে অংশী সিনেমা হলে চলে এলো। অনেকদিন আগেই অংশী খোঁজ খবর নিয়ে রেখেছিলো কবে সিনেমার শুভমুক্তি। প্রীতমকে জানিয়ে রেখেছিলো সে যেন একবার এসে অংশীকে জানায় যে মাহিব কোন সিনেমা হলে উপস্থিত থাকবে। প্রীতম গতকাল এসে সে খবর দিয়ে গেছে।

বাসা থেকে বেরিয়ে মার্কেটে এসে আগে একটা মোবাইল ফোন কিনে নিলো অংশী। কিভাবে ছবি তুলতে হয় শিখিয়ে নিলো। আজ অংশী ছবি তুলবে, সবার মত করে নয়, নিজের মত করে।

সিনেমা হলে এসে বেশ অবাক হলো ও। বেশ ভিড়, সবাই ঠেলাঠেলি করে টিকেট কাটছে। অংশীর টিকেট প্রীতমের কাছে। প্রীতমকে ফোন দিয়ে নীচতলায় সিঁড়ির কাছে আসতে বললো অংশী। প্রীতম এসে অংশীর রূপ দেখে চমকে গেলো। চেনা অংশী মুহুর্তেই কেমন যেন অচেনা হয়ে গেছে। সে কি রূপ, সে কি মোহময়ী সাজ, আচ্ছন্ন করে রাখার মত। বুকের একদিকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো প্রীতম। অংশীকে হারানোর ব্যথায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে লাগলো।

প্রীতম টিকেট টা অংশীকে দিয়ে বললো, ‘আমি কি চলে যাবো?’

– ‘হ্যাঁ। তোমার বউ আসে নি?’

– ‘না।’

– ‘কেন? নিয়ে আসতে পারতে। এই সুযোগে আমাদের দেখাটাও হয়ে যেতো।’

– ‘কি দরকার? তুমি তো আমার বউকে দেখতে আসো নি। যাকে দেখতে এসেছো তাকে দেখলেই তো হলো।’

– ‘রাগছো কেন? আমি দেখতে আসিনি, দেখাতে এসেছি। আগুন জ্বালিয়ে দিতে এসেছি।’

– ‘অংশী…’

অংশীকে আজ অন্যরকম লাগছে। টানা ভ্রু যুগলের নিচে অপূর্ব কাজল কালো দুটো চোখ। মায়াবী একটা মুখ, নিঁখুত সৌন্দর্য অংশীর। বুকের ব্যথাটা ক্রমশ বাড়ছে। প্রীতম বললো, ‘তবে আমি চলে যাই।’

– ‘প্রীতম ভাই, নাম্বারটা আমার। সেভ করে রেখো।’

– ‘ফোনও কিনে ফেলেছো?’

– ‘প্রয়োজন তো। তুমি কি এখনো আমাকে নিয়ে কষ্ট পাচ্ছো?’

– ‘পেলেই বা তোমার কি?’

– ‘কষ্ট পেও না প্রীতম ভাই। যা হয়, যা হচ্ছে সবই ভালোর জন্যই হচ্ছে। সবসময় ভালো থাকতে তুমিই আমাকে শিখিয়েছো প্রীতম ভাই।’

প্রীতম প্রসন্ন হাসি দিয়ে বললো, ‘আমিও ভালো থাকবো রে। কষ্ট নেই, শুধু একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা আছে।’

প্রীতম চলে গেলে অংশী ওর চলে যাওয়া পথের দিকে চেয়ে রইলো অনেক্ষণ। ধীরেধীরে ভিড় আরো বেড়ে গেলো। এমন সময় দূর থেকে অংশী দেখতে পেলো মাহিবকে। ওকে দেখেই বুকের মধ্যিখানে ঢিপঢিপ করে উঠলো। মাহিব দেখতে আগের মতই আছে। শুধু স্টাইলটা পরিবর্তন হয়েছে ওর। মাহিবকে ঘিরে ধরে অনেকে ছবি তুলছে, কেউ আবার হ্যান্ডশেক করার জন্য এগিয়ে আসছে। অংশী জানে মাহিব সিঁড়ি দিয়ে উঠবে না। তাই ছুটে গিয়ে লিফটে ঢুকে দাঁড়িয়ে রইলো অংশী।

মাহিব লিফটের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। দরজা খুলে যাওয়া মাত্রই অংশীর চোখে চোখাচোখি হয়ে থমকে গেলো কিছুটা মুহুর্তের জন্য। লিফটে প্রবেশ করতেই ভুলে গেলো। অংশী মুখে বিতৃষ্ণা ফুটিয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। এমন একটা ভাব করলো যেন এই দেখা হওয়াটা কাকতালীয়। মাহিব ভ্রু কুঁচকে লিফটে উঠে পড়লো।

পাশাপাশি দুজনে দাঁড়িয়ে। লিফটে উপরে উঠছে। লিফট থামতেই সবার আগে বেরিয়ে গেলো অংশী। মাহিব অবাক হয়ে দেখলো অংশীর হাঁটার স্টাইল। অদ্ভুতভাবে বদলে গেছে। শহুরে স্টাইলে হাঁটছে অংশী। তবে সবার চেয়ে বেশি নিঃসংকোচ, নিঁখুত। মাহিব অনেক্ষণ চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেলো। দীর্ঘ বছর পর অংশীর সাথে দেখা। অথচ ওকে দেখার পর থেকেই কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে এই মেয়েটার উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব শুধুই মাহিবের। মাহিব ছাড়া ও আর কারো হতেই পারে না। এমন একটা ভাব হঠাৎ করেই চলে এলো মাহিবের মাঝে। মাহিব সেটাকে পাত্তা না দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো।

অংশী সিনেমা হলের সিটে গিয়ে বসলো। মনের ভেতর একটা যন্ত্রণা বেজে চলেছে। ইচ্ছেকৃত ভাবে এই যন্ত্রণাকে জাগাতে এসেছে অংশী। চাইলে অন্য কারো জীবনের সাথে জড়াতেই পারতো, কিন্তু জড়ায় নি। কেবল মাহিবের যন্ত্রণা নিয়েই থাকতে চেয়েছে। সে যন্ত্রণা বাড়লে ব্যথার সাথে সাথে আনন্দও বেড়ে যায় অংশীর। ও শব্দ করে হাসলো।

সিনেমা অর্ধেক শেষ হবার পর আর বসে থাকতে পারলো না অংশী। অমি নিশ্চয় কান্নাকাটি করছে মাকে দেখতে না পেয়ে। মাহিবের সাথে দেখা তো হয়েছে, আর বসে থাকবার কোনো মানে হয় না। এবার মাহিবের মনে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় কি না সেটাই দেখতে চায় অংশী। মাহিব ওকে খোঁজার চেষ্টা করে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। যদি নাও করে, অংশী খুব বেশি কষ্ট পাবে না। আর যদি করে, তবে ধীরেধীরে যন্ত্রণার অবসান হবে অংশীর।

বাসায় ফিরে নিজের কাজে মন দেয়ার পরও একটা চাপা আর্তনাদ অংশীকে ভেতরে ভেতরে দহন করে যাচ্ছিলো। মাহিবকে দেখার পর সে যন্ত্রণা যেন আরো গতি পেয়েছে। মনে কোনো শান্তি পাচ্ছে না অংশী। কেমন যেন একটা যন্ত্রণা। মাহিবকে এখনো পেতে ইচ্ছে করে। কেন করে? অবচেতন মনটা গোপনে গোপনে ঠিকই ভালোবেসে যাচ্ছে তাকে। এই মানুষটাই যে অংশীর জীবন পুরোপুরি এলোমেলো করে দিয়েছে। তাকে ভুললে চলবে কেন?

অংশী যখন কাজ ফেলে এসব ভাবছিলো তখন কাজের মেয়ে এসে বলে, আপা প্রীতম ভাই আসছে।

প্রীতমের কথা শুনে অংশী চমকালো। অনেকদিন পর বাসায় এসেছে প্রীতম। অংশী হাত মুছে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। প্রীতম বললো, ‘কাজ করছিল্র বোধহয়? বিরক্ত করলাম?’

– ‘না ঠিকাছে। সিনেমা কেমন সাড়া পেলো?’

– ‘ভালোই। দেখেই তো এসেছো।’

– ‘হুম। ভেতরে এসে বসো। হঠাৎ এলে যে?’

– ‘থাকতে পারি নি। আজ তুমিও হঠাৎ চলে এলে যে?’

– ‘আমি চলে এসেছি সেটা তুমি জানো?’

প্রীতম হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘মাহিব ভাই হঠাৎ বলে উঠলো ওটা অংশী না? তখন সামনে তাকিয়ে দেখি সিনেমার রশ্মিতে তোমাকে দেখা যাচ্ছে। আমার তো চিনতে অসুবিধে হওয়ার কথা না তাই নয় কি?’

অংশী মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ‘ওহ আচ্ছা।’

– ‘তবে মাহিব তোমার চলে যাওয়াতে কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠেছিলো। এটা খুবই ভালো।’

– ‘প্রীতম ভাই, মাহিব কি আমাকে খুঁজবে?’

– ‘তুমি চাও সে তোমাকে খুঁজুক?’

– ‘আমি তার হতে চাই না, কিন্তু চাই সে আমাকে দেখুক, আমাকে খুঁজুক, আমাকে ভালো..’

আর কিছু বলতে পারলো না অংশী। প্রীতম হাসতে হাসতে বললো, ‘সবই ভালো। তবে দ্বিতীয়বার ভুল কোরো না অংশী, নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখো। একলা লড়াই করে এতদূর এসেছো, সব মাটি করে দিও না।’

– ‘নিজের উপর এখন সেই বিশ্বাস আমার আছে প্রীতম ভাই। অন্তত সে ভুল আমাকে দিয়ে আর হবে না।’

– ‘অংশী, আমি চাই তুমি অনেক বড় হও। তোমার লাখ লাখ টাকার বিজনেস হোক।’

অংশী নিজেও তাই চায়, তবুও অবাক হওয়ার ভান করে প্রীতমের দিকে তাকালো। প্রীতম অংশীর চোখে চোখ রেখে বললো, ‘তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি আমি। আমি চাই তুমি অনেক উপরে ওঠো। এখন নিজের প্রচেষ্টায় তোমাকে অনেকদূর যেতে হবে অংশী।’

অংশী ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, ‘আমাকে আপনার কি মনে হয় প্রীতম ভাই?’

প্রীতমও অংশীর পিছু পিছু ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো। বললো, ‘হঠাৎ?’

অংশী ড্রয়ার খুলে উপার্জিত সব টাকা বের করে বললো, ‘আপনি চলে যাওয়ার পর জেদ করে আমি উঠে পড়ে লেগেছিলাম। শপিং মল থেকে প্রচুর কাজের অর্ডার নিয়ে সব ডেলিভারি দিয়েছি।’

প্রীতমের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। খুশিতে, আনন্দে লাফিয়ে উঠলো ও। উল্লাস প্রকাশ করে বললো, ‘কংগ্রেটস অংশী, কংগ্রেটস। তুমি পারবে আমি জানতাম। আমি তোমাকে আরো অর্ডার নিয়ে দিবো। আমাকে দুদিন সময় দাও।’

অংশী টাকাগুলো ড্রয়ারে রেখে কিছু টাকা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে বললো, ‘প্রীতম ভাই, আজ আমি আপনাকে খাওয়াবো। প্লিজ না করবেন না।’

অংশীর অনুরোধকৃত চকিত চাহনী দেখে প্রীতম আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘আচ্ছা আচ্ছা পাগলী। চল না, খাবো। আজ আমি পেট পুরে খাবো। অমিকেও নিয়ে যাই?’

অমি খেলাধুলায় ব্যস্ত ছিলো। ওকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো প্রীতম।

প্রীতমের সহায়তায় কয়েকটা বড় দোকানে শাড়ির অর্ডার পেয়ে গেলো অংশী। কয়েকদিন সময় নিয়ে সব শাড়ি মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করলো। নিজের কাজ দেখে ওর নিজেরই আনন্দে বুক ভরে গেলো। প্রত্যেকটা কাজ হয়েছে অনেক শৈল্পিক ও মনোমুগ্ধকর। শাড়িগুলো সময়মত ডেলিভারি দিয়ে বাসায় এসে প্রশান্তির ঘুম দিলো অংশী।

অমি ধীরেধীরে বড় হচ্ছে আর যন্ত্রণা বাড়ছে অংশীর। ছেলেরা যত বড় হয় তত নাকি মায়েদের শান্তি। অথচ অংশীর ক্ষেত্রে যতই বড় হচ্ছে ততই জ্বালা বাড়ছে। বাচ্চাকে সামলে সব কাজ করাটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে অংশীর জন্য।

বাধ্য হয়ে একজন কর্মচারী নিয়োগ দিতে হলো। এখন দুজন মিলে কাজ করে। অংশী তাকে দেখিয়ে দেয়, মেয়েটা সে অনুযায়ী অংশীকে সহায়তা করে। কাজের সময় অমি ভীষণ বিরক্ত করে অংশীকে। মাঝেমাঝে রেগে গেলেও সামলে নেয় অংশী। সমস্তকিছু মানিয়ে নিয়েই কাজ এগোতে হবে।

ভাগ্যিস অংশী শহরে আছে। এখানে কেউ কারো খোঁজ রাখে না। অংশী কোন বাসায় থাকে সেটাও হয়তো অনেকেই জানে না। গ্রামে থাকলে লোকজনের অপবাদ, অপমান আর লাঞ্চনায় জীবন শেষ হয়ে যেত, সেই ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে অংশী।

মাঝেমাঝে গভীর রাতে বিছানার উপর উঠে বসে। জীবনের হিসেব কষতে থাকে। জীবনে একটা ভুলই সে করেছিলো। মাহিবকে ভালোবেসে। যার মাশুল আজীবন দিয়ে যেতে হবে। আর কোনোদিনো অংশীর হয়তো বিয়ে হবে না। বিয়ে করার ইচ্ছেও ওর নেই। একা একটা জীবন পার করে দেয়াটা বড্ড কঠিন। সেই কঠিনকে ভালোবেসে প্রতিনিয়ত কাজ করে গেলেও মাঝেমাঝে রাতগুলো বড্ড বেশি পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। বিছানায় সুখ হাতড়ে বেড়ায় অংশী। সময়গুলো সংগ্রামী, আগের চেয়ে সময় অনুকূলে এলেও মনের মাঝে নেই কোনো সুখ, নেই কোনো প্রশান্তি। এভাবে জীবন কাটিয়ে দেয়া আর কতদিন?

অবচেতন মনটা থেকে থেকে বলে ওঠে, প্রীতমকে ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো? ছেলেটার বুকে বড় নিরাপদে জীবনটা কেটে যেত। পরক্ষণেই আবার মন থেকে সেই চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলে দেয় অংশী।

তবে সবসময় কষ্টগুলোকে ঝেড়ে ফেলে দেয়া যায় না। কখনো কখনো জীবন কাউকে পাশে চায়, কারো ভালোবাসা পাবার জন্য শরীর মন সমস্তটা ব্যকুল হয়ে ওঠে। সেই মুহুর্তে মাহিবের উপর ভীষণ জেদ চেপে যায় অংশীর। মাহিব ভালো আছে এই ভেবে কখনো ভালো লাগে, আবার কখনো কষ্ট হয়। জীবন এমনই বিচিত্র। আবার মাহিবের সামনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় অংশী।

শাড়িতে বাংলা বর্ণমালার অক্ষর ছাপিয়েছে অংশী। এবার সেই শাড়ি পড়ে বাঙালীয়ানা সাজে যাবে মাহিবের সামনে। কিন্তু সাজিয়ে দেবে কে? ছন্দাকে কথাটা বলতেই সে বুদ্ধি দিলো পার্লারে গিয়ে সেজে আসার জন্য। অংশী পার্লারে গিয়ে পুরোপুরি বাঙালীয়ানা মেক আপ লুক নিয়ে মাহিবের অফিসের দিকে যাত্রা করলো।

অফিসে এসে প্রীতমের খোঁজ করলে একজন পিয়ন ওকে একটা কক্ষে নিয়ে এলো। সেখানে একটা শর্টফিল্মের শুটিং চলছিলো। অংশী গিয়ে দাঁড়ানো মাত্রই মাহিব চোখ তুলে তাকালো। অংশী সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে প্রীতমকে ডাক দিলো। প্রীতম মাহিবের মুখের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অংশীর কাছে গিয়ে বললো, ‘তুমি এখানে? একবার ফোনও তো করলে না।’

অংশী প্রীতমের হাত ধরে বললো, ‘বাইরে আসো না।’

প্রীতমকে টেনে বাইরে নিয়ে গেলো অংশী। এ দৃশ্য মাহিবের ভেতর কেমন একটা যন্ত্রণার সঞ্চার করলো। প্রীতমের সাথে অংশীর যোগাযোগ থাকাটাই তো অকল্পনীয়। সেখানে এভাবে নিঃসংকোচে ওকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা মাহিবকে বেশ ভাবাতে শুরু করলো। এর রহস্য জানার জন্য মন আকুপাকু করতে লাগলো মাহিবের।

পরবর্তী কয়েক মিনিট ও কাজে একেবারেই মনোযোগ দিতে পারলো না। ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের চেম্বারে চলে এলো। আসার পথে বারবার এদিক সেদিক খেয়াল করছিলো কোথাও ওদেরকে দেখা যায় কিনা। স্থির হয়ে বসেও একদন্ড শান্তি পেলো না মাহিব। অংশীর নতুন রূপটা ওর মনে বারবার ভেসে উঠতে লাগলো। নবরূপে মেয়েটাকে মারাত্নক আকর্ষণীয় লাগছে। সম্পর্ক না থাকলেও কোথাও একটা যোগসূত্র যেন থেকেই গেছে। অংশীর প্রতি এখনো মনে মনে অধিকার রয়ে গেছে। সে অধিকার বলে অংশীকে একমাত্র নিজের দখলে রাখতে ইচ্ছে করে মাহিবের। এতদিন পর মেয়েটাকে দেখেও এমন কেন লাগছে এর উত্তর খুঁজে পেলো না মাহিব। চেয়ারে বসে শুধু ছটফট করতে লাগলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here