তোমাতে মাতোয়ারা পর্ব-১৪

0
1600

#তোমাতে_মাতোয়ারা ১৪তম পর্ব(হলুদ+বিয়ে স্পেশাল)

_আরশিয়া জান্নাত

ক্যামেরা হাতে ভিডিও ম্যান তৈরি সব ফুটেজ ক্যাপচার করতে,
বাড়ির সব বৌয়েরা প্রথমে সাজিয়ে রাখা নানা আইটেম এর ডালা নিয়ে এক এক করে স্টেজে রাখলো।দ্বিতীয় ধাপে বাঁধন,রাকিব,কারিয়ান,দিহান
Tune mari entry yaar dil me baji ghanti…গানটায় ডান্স করলো,
তৃতীয় ধাপে ইশতিয়াক,ইমতিয়াজ,সাদ,প্রান্ত Kala Chashma গানটায় ডান্স করলো।
শেষ ধাপে ইতু,টয়া,তারিন,চৈতি ,পুষ্পি Mere saiyaan superstar গানটায় ডান্স করলো।তখন ফুলের তৈরি শামিয়ানার নীচে দাঁড়িয়ে ঐন্দ্রিলাও তাল মেলালো।ঐন্দ্রিলাকে স্টেজে নিয়ে বসানোর পর বরপক্ষের এন্ট্রি হলো,
প্রথম ধাপে,তারেক,ফরহাদ,আরমান,রায়হান Salam e ishq গানটায় ডান্স করলো।
দ্বিতীয় ধাপে,দিয়া,তাইয়্যেবা,মেঘলা,নিধি,সানিয়া,নায়রা Mehendi laga ke rakhna doli saja ke rakhna..গানটায় ডান্স করলো,শেষ ধাপে নিরব এসে সবার সঙ্গে Sajan ji ghar aye গানটায় ডান্স করে স্টেজে উঠলো।দুজনের বেশকিছু ছবি তোলা হলো।
সবার প্রথমে ইরফাজ সাহেব আর মনোয়ারা বেগম স্টেজে উঠলেন,তারপর দুজনের নানু উঠলো।
বিপত্তি ঘটলো কোন পক্ষের বাবা মা আগে উঠবে তা নিয়ে।ইমরান সাহেব বললো বরপক্ষের আগে উঠুক। তাহজীব সাহেব বললেন না আগে আপনারা উঠুন।তখন তফুরা উঠে বললো,তোরা আগে উঠ,ছেলেপক্ষের দাম বেশি থাকা লাগে।ইমরান সাহেব তাঁর কথার ভঙ্গিতে কিছুটা কষ্ট পেলেও মুখে কিছু বললেন না।তাহজীব বললো,আপা এখানে দাম বেশির কথা না,আগে উনারাই উঠবে।
ইমরান বললো,আসলে বেয়াই আমাদের উঠতে দেরি করাই ভালো কারণ আমার বড় ভাই আছেন উনাকে আগে তুলবো।তাই আপনারাই উঠুন আগে।এটাই ভালো হবে।
তফুরা বেগম জয়ের হাসি দিয়ে ভাইকে তুলে দিল।
তারপর ধীরে ধীরে সবাই উঠলো।ফটোসেশন আর কেক খাওয়ানোতেই রাত দুইটা বাজলো।
ওদিকে বাবুর্চিরা বিয়ের আয়োজন অলরেডি শুরু করে দিয়েছে।মুরুব্বিরা ভেতরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন অনেক আগেই।
পরিশেষে দুইপক্ষের ডান্স পারফম্যান্স হলো,অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় সাড়ে চারটা বাজলো।
সবাই ঘুমু ঘুমু চোখে যে যার মতো করে ঘুমিয়ে পড়লো।ঐদিকে ঐন্দ্রিলা ওয়াশরুমে ঢুকেই বমি করতে লাগলো,দুই পক্ষের এতো মানুষদের হাতে কেক মিষ্টি খেতে খেতে তাঁর অবস্থা নাজেহাল।যদিও সে অল্প করেই খাচ্ছিল তাও ভেতরটা কেমন গুলিয়ে আসছে।চোখেমুখে পানি দিয়ে রুমে এসে বসলো,তারপর কোনোরকম গহনা খুলে হলুদের শাড়ি পড়েই ঘুমিয়ে পড়লো।
নিরবের বিয়ে উপলক্ষে কাছের আত্মীয় আর ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য গেস্টদের ইনভাইট করা হয়নি।নিরবের প্ল্যান হলো ঢাকায় গ্রান্ড করে রিসিপশন করবে সেখানেই মিডিয়াকে খবর দিবে।এটা মূলত ঐন্দ্রিলাদের উপর বাড়তি প্রেশার ক্রিয়েট না করার জন্য করা হয়েছে।আজ দুপুরে বিয়ের পর ই সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।
_______

নাহার ঐন্দ্রিলার শিয়রে বসে রইলো,মেয়ের মাথায় বিলি কেটে জড়িয়ে ধরে পাশে শুয়ে পড়লো।না চাইতেও বারবার চোখের কোণ ভিজে আসছে।ঐন্দ্রিলারর সকল স্মৃতি মস্তিষ্কের দৃশ্যপটে ভেসে উঠছে।ঐন্দ্রিলা ঘুমের ঘোরেই মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,মা কেঁদোনা প্লিজ।
নাহার ঐন্দ্রিলাকে বুকের মাঝে নিয়ে মনে মনে বললেন,হে দয়াময় আমার মেয়েটাকে তুমি সুখী করো।ওর জীবনে যেন কোনো কষ্ট না থাকে।সবাই যেন ওকে ভালোবেসে আগলে রাখে।
ঐন্দ্রিলার ঘুম ভাঙলো দশটা বাজে,ফাতেমা এসে বললো,মামণী উঠে তাড়াতাড়ি নাস্তা সেড়ে নে।হলুদ দিয়ে গোসল করাতে হবে,দুপুরেই কিন্তু বিয়ে শহরের মতো রাতে হবেনা।কাল রাতে মেহেদি পড়েছিলি তো?
ঐন্দ্রিলা আড়মোড়া ভেঙে হাত বাড়িয়ে বললো, দেখো তো কেমন হয়েছে?
ফাতেমা হেসে বললো,,মাশাআল্লাহ অনেক গাঢ় রং এসেছে দেখছি!ডিজাইন ও বেশ ভালো হয়েছে।
আচ্ছা মা তাড়াতাড়ি উঠ আমি যাই সবাইকে ডেকে তুলি।তোরা এতো রাত অবধি না জাগলেই পারতি।আজ কত দখল যাবে হুশ আছে!
ঐন্দ্রিলার খুব মাথা ধরে আছে।সে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কড়া লিকারের চা খেলো।তবুও মাথা ব্যথা গেল না।পুষ্পি এসে ওর চুল ঠিক করে দিলো,ভাবীরা সবাই তাঁকে হলুদ দিয়ে গোসলে পাঠালো।
ঐদিকে নিরব তিন ঘন্টা ঘুমিয়েই উঠে গেছে।একটু পরেই ঐন্দ্রিলার আর ওর বিয়ে হতে চলেছে এই খুশিতেই ঘুম ফুরিয়ে গেছে যেন।সে তো পারছেনা এখুনি কাজী নিয়ে এসে কবুল বলে দিতে!এতো আয়োজনের কোনো বিশেষ দরকার কি আছে?
কারিয়ান সেই কখন থেকে ঘুরঘুর করছে চৈতির সাথে যোগাযোগ রাখার ওয়ে খুঁজতে।আজকে চৈতি চলে যাবে,আজকের মধ্যে কিছু করতে না পারলে আর সুযোগ নেই।কিন্তু হুট করে বললে সে কেমন রিয়েক্ট করবে সেই ভয়েও সরাসরি কিছু বলতে পারছেনা।ইতুকে ইনিয়ে বিনিয়ে ওর কনট্যাক্ট বা ফেবু আইডির কথাই বারবার জিজ্ঞাসা চাইছে।ইতু বুঝেও না বোঝার ভান করে হেনস্থা করতে ছাড়ছেনা।শেষে বাধ্য হয়ে বললো, ইতু May be I’m fallen love! প্লিজ বোন হেল্প মি।
ইতু হেসে বললো,ওহো এইসব চলে!শুরুতে স্বীকার করলেই পারতা।এমন ভাব না নিয়ে।তা আমি কি চৈতিকে বলবো নাকি তুমিই কথা বলে নিবে?
— বললে যদি ছ্যাঁচড়া ভাবে?মনে করে ফ্লার্ট করছি?
–আরেহ ভাববে না।মেয়েটা অনেক ভালো আর ব্রড মাইন্ডের।
–না এখনই কিছু বলিস না।বোনের বিয়েতে এসে তাঁর ফ্রেন্ডকে প্রপোজ করছি এটা খুব খারাপ দেখাবে।আগে কথা বলি এরপর নাহয়,,,
–আচ্ছা এজ ইউর উইশ।তুমি বরং ফেবু আইডি রাখো।ট্যাগ করে ফটো আপলোড করেছি।দেখে নিও।
কারিয়ান হেসে বললো,থ্যাংক ইউ বোইনা।
ইতু বললো,শুকনো কথায় চিড়া ভিজবেনা,ট্রিট দিও।
–প্রেমটা হয়ে গেলে নিশ্চিত পাবি।
ইতু হেসে চলে গেল।

তাইয়্যেবা গোসল সেড়ে চুল ঝাড়ছে এমন সময় আরমান এসে বললো,বড় ফুপীকে কি করা যায় বলোতো!
— কি করেছে আবার?
— উনি হিসেব করতে চাইছেন গিফট হিসেবে কি কি দিবে ঐন্দ্রিলারা।
–বাবা মা কিছু বলেনি?
— বলেছে না!তোমার ফুফু কারো কথা শোনে?সে বলে কিছু চাইতে হয় নাকি,ওরাই তো খুশিমনে দিবে এটাই তো নিয়ম।একমাত্র মেয়ে অথচ কিছুই দিবেনা তা তো হয়না?
তাইয়্যেবা বিরক্ত হয়ে বললো,ফুপী বরাবরই এমন।নিরব জানতে পারলে একদম ছেড়ে কথা বলবেনা।এমনিতেই ঐন্দ্রিলাকে কথা শোনানোতে খুব রেগে গিয়েছিল।কত কষ্টে সামলেছি জানো!
–আমি বুঝিনা তোমাদের ফ্যামিলি এতো রিচ হওয়া স্বত্বেও তোমার ফুপীর মাইন্ড এতো লো কেন?
তাইয়্যেবা আরমানের কলার ঠিক করে বলল,টাকাপয়সা দিয়ে মানসিকতা বিচার করা যায় না।তোমার মনের ধারেকাছেও ওরা যেতে পারবেনা।
আরমান তাইয়্যেবার কোমড় জড়িয়ে বললো,তোমার চোখে আমিই সেরা সবসময়?এতো ভালোবাসো কেন হুম?
–কি করবো বলো ভালোবাসা যে বড্ড ছোঁয়াচে!!

নাঈমা বিরক্তিতে পায়চারি করে চলেছেন।তাহজীব সাহেব বললেন,এমন অস্থির হয়োনাতো জানো তো তফুরা এমনই।
নাঈমা রেগে বললো,তোমার কি মনে হয় না তোমার এই ছাড়ের জন্যই সে এতো বাড় বেড়েছে?এখানে আসার পর থেকেই দেখছি কেমন করে ওদেরকে হেনস্থা করছে।এতো যত্ন করে তাঁরা সবার খেয়াল রাখছে আর তোমার বোনের কাছে খুঁতের অভাব নেই!মানুষকে মিনিমাম রেস্পেক্ট দিতে পারছেনা?
আর এখন যে কান্ড করছে উনারা জানতে পারলে কি ভাববে বুঝতে পারছো?
–শান্ত হও প্লিজ!
–সে এরকমই বলে বলে ছেড়ে দিতে পারিনা!এতোদিন আরমানকে কথা শুনিয়েছে এখন আবার ঐন্দ্রিলাকে।তুমি জানো উনি সবার সামনে কিসব আলোচনা করছিল?ঐন্দ্রিলাকে সরাসরি বলছে মুখে কিছু মাখেনা কেন।স্ট্রেইঞ্জ!
তাহজীব কিছুটা নেতিয়ে বললো,কি করবো বলো বোনকে তো আর ফেলে দিতে পারিনা!
–শোনো অন্যায়কে চুপচাপ মেনে নেওয়া প্রশ্রয় দেওয়ার সামিল।এখানে আমি চুপ আছি আর নিরব ও কিছু বলছেনা তার মানে এই না সবটা সহ্য করবো।পরে কিছু হলে দোষ দিও না যেন!
বিয়ে বাড়িতে হাঙ্গামা করলে আমি কিন্তু একদম সহ্য করবোনা।

ঐন্দ্রিলা রেড চেরি কালারের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পড়েছে,চুলগুলো খোঁপা করে তাতে অনেকগুলো গোলাপ ফুল দিয়ে সেট করা হয়েছে,কপালে টায়রা টিকলি,নাকে টানা নথ,কানে দুল আর গলায় গর্জিয়াস নেকলেস।চোখ রেড আর গোল্ডেনের কম্বিনেশনে সুন্দর করে সাজানো,ঠোঁটে রেড লিপস্টিক,দু’হাত ভর্তি চুড়ি আর ব্রাইডাল ঝুমকা রাখি,পায়ে হাই হিল।মাথায় দোপাট্টা সেট করে পুষ্পি বললো,মাশাআল্লাহ দোস্ত তোরে দেইখা আমিই তো ক্র্যাশড!আয়নায় তাকিয়ে দেখ নিজেকে চিনতে পারিস কিনা।
ইতু–আসলেই আপু তোকে অনেক সুন্দর লাগছে!
নাহারকে টেনে এনে চৈতি বললো,আন্টি দেখো তোমার মেয়েকে কেমন লাগছে!
নাহার কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে মনে মনে বললো,বারাকাল্লাহু ফিক।
তোদের সবার হলো বরপক্ষ এসে গেল যে!তাড়াতাড়ি কর আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।
চৈতি–আন্টি কিছু বললো না !
পুষ্পি–মনে মনে বলেছে বলদি!নিজের সন্তানের দিকে মায়েরা বেশি তাকায়না।
মনোয়ারা বেগম এসে বদনজর থেকে বাঁচার দোআ পড়ে নাতনীর মাথায় ফুঁ দিলেন।ভেজা গলায় বললেন,বুবুন তোরে বৌ সাজে দেখার ইচ্ছা পূরণ হইলো আইজ।আল্লাহ তোরে অনেক সুখী করুক।
পুষ্পি–দাদুন এখনই না প্লিজ,বহুকষ্টে সাজাইছি তোমার নাতনীরে।চোখের পানিতে কয়বার নষ্ট হইছে জানো?এতো পানি আসে কোত্থেকে বুঝিনা।
চৈতি বললো,তুই বুঝবি কেমনে?নাচতে নাচতে সাজতে বসে গেছিলি বিদায়ের সময় যা একটু চোখের পানি ফেলছোস!ঐন্দ্রিলা তোর মতো সিমার নাকি।ও অনেক ইমোশনাল।
পুষ্পি–হ আমি তো সিমার!একটুও ইমোশন নাই আমার।
টয়া– তোমরা এতো ঝগড়া করতে পারো!আমার তো বিশ্বাস হয়না তোমরা ঐন্দ্রিলা আপু ফ্রেন্ড!
কিভাবে যে এই চারজনকে পাইছে আপু আল্লাহ জানে।
তারিন– চলো সবাই গ্রুপ সেলফী তুলি।

নিরব অফ হোয়াইট কালারের এমব্রয়ডারি করা গর্জিয়াস শেরোয়ানী পড়েছে,মাথায় চেরী কালারের পাগড়ী আর কাঁধে ওর্নি,পায়ে গ্রুমস সুজ।তাইয়্যেবা আর দিয়া ভাইকে রেডি করালো।পাগড়িতে অথেনটিক ব্রোচ আর গলায় গ্রুমস সেট পড়িয়ে সেন্ট মাখলো।নিরব ঘুরেফিরে নিজেকে দেখে বললো,আপু দেখ তো ভালোমতো সব ঠিকঠাক আছে কিনা?
দিয়া–নট এগেইন!
নিরব–উফ বিরক্ত হবিনা।তোরা দুই বোন থাকতে আমি যদি হ্যান্ডসাম লুক না পাই কিভাবে হবে!সাহিল ইবনানের একটা আলাদা রেপুটেশন আছেনা?
তাইয়্যেবা–হুম তা তো অবশ্যই।তা তোর কেন মনে হয় তোকে ভালো দেখাচ্ছেনা?বিয়ের পানি পড়তেই চেহারা কতো গ্লো করছে,আনন্দ তো ঠিকরে পড়ছে।
নিরব–ঐন্দ্রিলাকে আজ অনেক সুন্দর লাগবে তাইনা আপু!ওকে বধুবেশে দেখে জ্ঞান হারাবো না তো?
দিয়া–আহা আমার ভাইটা কত্ত রোমান্টিক!বৌকে কল্পনা করতেই কেমন ব্ল্যাশ করছে।
তাইয়্যেবা–মন ভরে দেখিস নিজের বৌকে।এখন সর অনেক কাজ বাকি আছে।
নাঈমা রশিদ ছেলেকে দেখে বললো,মাশাআল্লাহ আমার ছেলেকে তো একদম রাজপুত্র লাগছে!
নিরব হেসে বললো–থ্যাংক ইউ মা।তোমাকেও কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে,কেউ বলবেই না তুমি বরের মা!
নাঈমা ছেলের কান মলে বলল,ফাজিল ছেলে সুযোগ পেলেই মা কে বাটারিং করা হয়!
দিয়া– বাটারিং মনে হলেও সত্যি বলছে ভাইয়া।তোমাকে সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে।বাবা আজকে আবার তোমার প্রেমে পড়বে।হিহি
নাঈমা দিয়ার দিকে চেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।এই দুইদিনে আজকে মেয়েকে হাসতে দেখলো।কি হয় মেয়েটার কে জানে,এই হাসে এই কাঁদে বুঝেই পায়না এতো আবেগী কেন মেয়েটা।
সবাই খুব সুন্দর করে তৈরি হয়ে আছে।একটু পরেই নিরবরা বরযাত্রী নিয়ে বের হবে।ঐদিকে ইরফাজ সাহেব আর ইমরান ঐন্দ্রিলাকে এড়িয়ে বাঁচছে।ঐন্দ্রিলাকে বিদায় করার কথা ভেবেই সকাল থেকে দুজনের ভেতরে যুদ্ধ চলছে।মনোয়ারা বেগম ইরফাজ সাহেবকে ঐন্দ্রিলার কাছে নিতে চাইলে কাজের বাহানা দিয়ে সরে এসেছেন।তিনি চাননা এই সুন্দর মুহুর্তকে চোখের পানিতে ভাসিয়ে দিতে।
বর এসেছে কলোরবে সবাই গেইট ধরতে চলে গেলো।দুই পক্ষের দর কষাকষি শেষে ইতু দই মিষ্টি খাইয়ে নিরবকে বরণ করে নিলো।সবাই খুব যত্ন করে তাঁকে স্টেজে বসালো।অন্যরা সুগন্ধী জল ছিটিয়ে বাকিদের বরণ করলো।তারপর কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।
কবুল বলতে বলার সাথে সাথেই নিরব ধড়ফড়িয়ে বললো আলহামদুলিল্লাহ কবুল কবুল কবুল।সবাই ওর এহেন কান্ডে হেসে ফেললো।
ঐন্দ্রিলাকে বলতে বলার পর ও দাদা দাদী,মা-বাবার দিকে চেয়ে রইলো, অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ধরা গলায় কবুল বললো।তারপর রেজিস্ট্রি খাতায় সাইন করে মিসেস সাহিল ইবনানে রূপান্তরিত হলো।বিয়ের পর ইরফাজ সাহেব আর ইমরান মিলে তাঁকে যখন স্টেজের সামনে নিলেন,নিরব মুগ্ধ চোখে ঐন্দ্রিলার দিকে চেয়ে হাত বাড়িয়ে তাঁকে স্টেজে তুলে নিলো,তখন তাঁরা দুজনে চোখ মুছে হাসিমুখে তাদের দিকে তাকালেন।আয়না দেখানো সহ বিভিন্ন রিচুয়াল খুব আনন্দেরসহিত পালন করা হলো।
সবাইকে খুব ভালোভাবে আপ্যায়ন করা হলো,যত্নে কোনো ত্রুটি রাখলোনা।
বিদায়ের ক্ষণে ইমরান যখন মেয়েকে নিরবের হাতে তুলে দিলেন,কান্না আটকে থাকা কাঁপা গলা বললেন,বাবা মেয়েটাকে খুব যত্নে বড় করেছি,আমার মেয়েটা খুব চাপা স্বভাবের।কষ্ট পেলেও মুখে কোনোদিন বলবেনা কষ্ট পাচ্ছি। তোমার হাতে আমার কলিজার টুকরাকে তুলে দিলাম।ওর খেয়াল রেখো,কখনো কষ্ট দিও না।
তাঁর কথায় উপস্থিত সবাই কেঁদে ফেললো,ঐন্দ্রিলা সেই কখন থেকেই কেঁদে যাচ্ছে কোনো কথা বলার শক্তি তাঁর নেই।
ইরফাজ সাহেব বললেন,দাদুভাই আমার বংশের রত্ন তোমারে দিলাম।দেইখা রাইখো!
মনোয়ারা বেগম বললেন–কোনো বিবাদ হইলে দুইজনে মিইলা মিটানোর চেষ্টা করবা।মনে রাইখো স্বামী স্ত্রীর মাঝে দন্ড তৈরি করা শয়তানের কাজ।সবসময় একে অন্যরে বিশ্বাস করবা,বন্ধুর মতো সঙ্গী হইবা।অনেক সুখী হও।
সবার কাছ থেকে কেঁদেকেটে বিদায় নিয়ে দাদাইয়ের যত্নে বানানো ফুলে ফুলে সাজানো পালকিতে চড়ে ঐন্দ্রিলা চললো নতুন ঠিকানায়।
পেছনে একঝাঁক আপন মানুষদের ফেলে নতুন মানুষের ভীড়ে!
ইশতিয়াক মা কে ধরে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে,সবার চোখ অশ্রুসিক্ত।ইরফাজ সাহেব নাতনীকে গাড়ি অবধি এগিয়ে দিতে গেলেন।কিছুক্ষণ পর ইমরান,ইসহাক, ইশতিয়াক ও সেই পথে গেল।ঐন্দ্রিলাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে দৃষ্টির সীমানা অবধি চেয়ে রইলো।ঐন্দ্রিলা বারবার পিছে ফিরে বাপ ভাইদের ঝাপসা চোখে দেখতে লাগলো।
নিরব ঐন্দ্রিলার হাত ধরে বললো,একটু শান্ত হও প্লিজ,আমরা ফের আসবো তো।তোমার যখন মন চাইবে তখনই চলে এসো আমি একটুও মানা করবোনা।এভাবে আর কেঁদো না প্লিজ।
ঐন্দ্রিলা হেচকি তুলে বললো,ওরা আমাকে অনেক ভালোবাসে,ওরা নিজেকে সামলাতে পারবে তো?দাদাই কিভাবে কাঁদছিল দেখেছেন!বাবাতো তাও শক্ত দেখায়,মা দাদুন ভাইয়া ওরা ,,,,
ঐন্দ্রিলা আর কথা বলতে পারলোনা চোখ বেয়ে কেবল বাঁধভাঙা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
এতো কষ্ট কেন বিচ্ছেদে??

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here