তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি পার্ট:৬

#তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
পার্ট:৬
#পিচ্চি_লেখিকা

আরিয়া সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে আরুশ একটা ছেলেকে বাজে ভাবে মেরে আধমরা করে ফেলে পাশে বসে আছে,,,আগুন চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে,,,আরিয়ার বিষয়টা বোধগম্য না হলেও,,,কাউকে পাত্তা না দিয়ে আরুশের সামনে গেলো,,,

“”এই যে মিস্টার গুন্ডা,,,গুন্ডা হয়ছেন বলে কি মানুষ কে মানুষ মনে করতেছেন না?এভাবে একটা লোক কে আধমরা করে ফেলেছেন,,,গুন্ডাগিরি ছাড়া কি কোনো কাজ নেই আপনার?

আরুশ আরিয়ার কথা শুনে আরিয়ার মুখের দিকে তাকালো,,,আরুশের চোখ দিয়ে যেন আগুন পড়ছে এখনি সব কিছু পুড়িয়ে দেবে,,,আরিয়া একটু ভড়কে গেলো আরুশের এমন রুপ দেখে,,,আরুশ কিছু না বলে উঠে দাড়ালো পাশে পড়ে থাকা ছেলেটাকে আরো একটা লাথি মেরে গটগট করে অন্যদিকে চলে গেলো,,আরিয়ার অনেক রাগ হচ্ছে,,,আরিয়া ভাবছে,,
“”একটা মানুষ এতটা নিষ্ঠুর ভাবে কাউকে মারতে পারে ছি,,,গুন্ডা কোথাকার,,,

আরিয়া চলে আসতে গেলেই পিছন থেকে কেউ তাকে ডেকে উঠে,,,আরিয়া পেছনে ঘুরতেই দেখে আয়ান দাড়িয়ে,,,

“”” আরে আয়ান তুমি এখানে?বাড়ি যাওনি?আর এসব গুন্ডামো কেন দেখছো?

“”বাড়ি তো গেছিলাম,,,আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপু?

“””হুম করো,,

“”আগে বলেন আপনার নামটা কি?

!””আরিয়া,,,

“””আপনি কি আমার ভাইয়া কে চিনেন?

“””আমি কিভাবে চিনবো?কে তোমার ভাইয়া?

“‘”ওই যে যাকে গুন্ডা বললেন,,,সেই আমার ভাইয়া,,,আরুশ আরফান,,,

আরিয়া কথাটা শুনেই চমকে উঠলো,,,আয়ান আর আরুশ ২ ভাই,,,আয়ান এত ভালো আর আরুশ?গুন্ডা একটা,,,

“””কি বললে?ওই গুন্ডা সরি আরুশ আরফান তোমার ভাই,,

“”” হুম,,আমার ভাই,,

“”” কেমনে সম্ভব বলো তো?তুমি এত ভালো,,আর তোমার ভাই কত নিষ্ঠুর গুন্ডাগিরি করে মানুষকে আধমরা করে ছাড়ে আর তুমি কত আলাদা,,

“” হুম,,আপনার কোনো ভাই বা বোন নেই আপু?

“” হুম আছে তো ১ টা ছোট্ট বোন আছে,,,

“” আপনি তাকে কতটা ভালোবাসেন?

“” অনেক ভালোবাসি,,,কেন বলো তো?

“” আচ্ছা আপনার বোন কে যদি কেউ খুব মারে,,,আপনি তাহলে কি করবেন?

আরিয়া এবার রেগে বললো,,

“” খুন করে ফেলবো তাকে,,

“” তাহলে আমার ভাইয়ার এটা গুন্ডামি কি করে হলো?

“”” বুঝলাম না,,,

“” এই যে ছেলেটা কে দেখছেন,,,ভাইয়া যাকে খুব মেরেছে,,,সকালে এই ছেলেটা আর ওর ২ টা বন্ধু মিলে আমাকে মেরেছে,,,বাকি ২ টা ছেলেকে মেরে আবার হসপিটালেও নিয়ে গেছে ভাইয়া কিন্তু এই ছেলেটা বেশি মেরেছে আমাকে তাই ওকে মেরে ফেলে রেখেছে এখানেই,,,

আরিয়া এবার বুঝলো,,,আয়ান একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করলো,,

“”আসলে কি জানেন আপু,,,যখন থকে বুদ্ধি হয়েছে তখন থেকেই ভাইয়াকেই আব্বু ভাইয়াকেই আম্মু মেনেছি,,,কখনো একটা ফুলের টোকাও আমার গায়ে পড়েনি,,,ফুপিও পরম যত্নে আমাকে রেখেছে,,,কেউ আমাকে মেরেছে শুনে ভাইয়া আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি,,,তাই এরকম বাজে ভাবে মেরেছে এদের,,,আপনার কথাতে আমি যা বুঝলাম,,,আপনি আমার ভাইয়াকে একটুও পছন্দ করেন না,,,গুন্ডা ভাবেন তাকে,,,কিন্তু আপু আমার ভাইয়া গুন্ডা না,,,হ্যা বলতে পারেন নিজের ভাই তাই দোষ দেখছি না কিন্তু এমন না,,আমার ভাইয়া অন্যায় ছাড়া কাউকে ছুয়েও দেখে না,,,কখনো কোনো নিরপরাধ মানুষের গায়ে হাত তুলে নাই ভাইয়া,,,আচ্ছা আপু ভালো থাকেন অনেক কিছু বললাম,,,খারাপ লাগলে সরি,,

বলেই আয়ান চলে গেলো,,আরিয়া মাথাটা নিচু করে আছে,,সত্যি অনেক খারাপ করেছে সে,,,আরুশের বিষয়ে সব না জেনেই কত বকা দিয়েছে সে,,,আরিয়া মাথাটা নিচু করেই বাড়ির দিকে হাটা দিলো,,,বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বসে বসে আরুশের কথা ভাবছে,,

“” গুন্ডাটা কে আজ গুন্ডা বলা ঠিক হয়নি সরি বলতে হবে,,,তবে ওই আরুশ আরফান তো আসলেও একটা গুন্ডা যার জন্যই গুন্ডামি করুক করে তো নাকি,,,বলবো না সরি,,,

আরিয়া পাইচারি করছে আর ভাবছে সরি বলবে কি না,,অনেকক্ষণ পর নিজেই নিজেকে বলতে শুরু করলো,,

“” উফফ আরু তোর কি খেয়ে কাজ নেই নাকি ওই গুন্ডাটার কথা এত ভাবার কি আছে,,আর একবার তুই ওর কথা ভাব তোকে লাথি মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দেবো,,আরে ধুর আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে নিজেই নিজেকে কিভাবে লাথি মেরে উগান্ডা পাঠাবো উফফ আরু তুই আর একটু ওই গুন্ডাটার কথা ভাবলেই পাগল হয়ে যাবি দেখিস,,,

আরিয়া নিজেকে বকতে বকতে শুয়ে পড়লো,,ঘুমিয়ে গেছে,,,

____________

আরুশ কোনোরকম নিজেকে কন্ট্রোল করে আয়ানকে নিয়ে বাসাই চলে আসলো,,,আর যাকে মেরেছে তাকে হসপিটালেও পাঠিয়েছে,,আরুশ আস্তে আস্তে আয়ানকে ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে লিভিং রুমে আয়ানকে বসিয়ে আয়ানের সামনে পা গুটিয়ে বসে,,

“” ওরা তোকে খুব মেরেছে তাই না ভাই?

“” না ভাইয়া ওরা আমাকে তেমন মারে নি,,,তুমি বরং বেশি মেরেছো,,আচ্ছা যাও ফ্রেশ হয়ে আসো,,,ক্ষুধা লাগছে আমার,,,

আরুশ আর কিছু বললো না তাড়াতাড়ি উপরে চলে গেলো,,,নয়তো ওর ভাই খিদেতে কষ্ট পাবে এই ভেবে দৌড়ে চলে গেলো,,,আর আরুশের ফুপি আয়ানের কাছে এসে সবটা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,

“” আরুশ তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে তাই তোকে কেউ আঘাত করছে এটা সহ্য করতে পারেনি,,,কিন্তু রাস্তা ঘাটে এসব করলে কি সব সমাধান হয়ে যাবে?এর পর যদি আবারও ওরা তোর ক্ষতি করতে আসে?আচ্ছা কেউ কি নেই যে এই ছেলেটার রাগ ক্ষোভ কমিয়ে দেবে,,,

বলেই চলে গেলো আরুশের ফুপি,,আর আয়ান চুপচাপ ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো,,,

আরুশ ফ্রেশ হয়ে এসে আয়ান কে নিয়ে খেয়ে আবারও অফিসের দিকে গেলো,,,

___________

আরিয়া ঘুমিয়েছে অনেকক্ষণ তাই আইরা আর তিনা আরিয়ার কানের কাছে চিল্লিয়ে বলে,,,,

“”” আরিয়াাাাাাা আপ্পিিি,,,

আরিয়া কানের কাছে এমন বিকট শব্দ শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসলো,,,আইরা আর তিনা হাসতে হাসতেই শেষ,,,আরিয়া এবার চোখ গরম দিয়ে বললো,,

“”ওই উগান্ডিরা এভাবে কেউ ঘুম ভাঙায়,,তোদের তো আজ আমি তেলাপোকার বিরিয়ানি খাওয়াবো দাড়া,,,

আইরা আর তিনা আরিয়ার কথা শুনে ভো করে দৌড় দিলো,,,আর আরিয়া পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে,,,সারা বাড়ি ৩ জনে ছুটে বেড়াচ্ছে আরিয়ার মামি থামতে বলছে কিন্তু ৩ জন বাচ্চাদের মতো ছুটেই চলেছে,,,

আরুশ অফিস শেষ করে অনেক রাতে বাসায় ফিরছে,,,আজ তার আরিয়ার সাথে কথা হয়নি একটুও,,যখন রেগে ছিলো তখন শুধু একবার দেখেছে,,,আগে অনেক রাত করে ফিরতো,,পাব ক্লাব এলকোহল এসবই যেন তার লাইফ ছিলো,,আয়ান আর ফুপিকেও সময় দিতো তবে কম,,,আরুশ আরিয়ার কথা ভাবছে,,আপন মনেই বললো,,

“” আরুজান তোমাকে দেখার পর আর কোনো নেশা কাজ করে না,,তোমাকে ভুলে থাকার জন্য এলকোহল অনেক ট্রাই করছি বাট আফসোস সেগুলোর চেয়েও তুমি যে ঊর্ধ্বে,,,আমি কখনোই চায়নি আমার এই অভিশপ্ত জিবনে কেউ আসুক,,,কিন্তু তুমি চলে এসেছো আর তাই আমি তোমাকে নিয়েই বাচবো,,,তোমাকে সামনে রেখে অভিশপ্ত জিবনের শেষ করবো,,,

তারপর আরুশ ফোনটা নিয়ে কাউকে কল করলো….

আরিয়া আইরা কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বই নিয়ে বসে আছে,,,অনেক রাত পর্যন্ত পড়া আরিয়ার অভ্যাস,,,এই সব কিছুর মাঝেও সে আরুশের কথা ভাবছে,,,অনেক ভেবে ঠিক করলো কাল দেখা হলে সরি বলে দেবে,,,অনেক রাত পর্যন্ত পড়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,

_________________

সকালবেলা মিষ্টি রোদের আবছা আলোতে ঘুম ভাঙে আরিয়ার,,,আরিয়া উঠে আইরা কে তুলে দিলো তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো,,,তার মামিকে হেল্প করে দিলো,,,সবাই মিলে খেতে বসলো,,আরিয়াকে হঠাৎই তন্ময় জিজ্ঞেস করলো,,,

“” তুই কি সত্যি জব করবি আরু?

আরিয়া মাথাটা নিচু করেই উত্তর দিলো,,

“”” হুম ভাইয়া,,

“” দেখ আরু তুই জব করবি নিজে কিছু করবি ঠিক আছে তবে কখনো এটা ভেবে জব করতে যাস না যে তুই এ বাড়িতে অসহায়ের মতো আছিস বলে জব করবি,,,আশা করি কি বলেছি বুঝতে পেরেছিস,,,

আরিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো,,,

তন্ময়ও চলে গেলো,,,আরিয়া আইরা আর তিনা বেরিয়ে পড়লো তাদের উদ্দেশ্যে,,,আরিয়া আগে আইরা কে স্কুল দিতে গেলো আর তিনা কে বলল চলে যেতে,,,তিনার ২ টা ফ্রেন্ড আসায় তিনাও চলে গেলো,,আর আরিয়া আইরা কে স্কুলে দিয়ে ভার্সিটির দিকে যেতে লাগলো,,,শুভ আজকেও এসেছে আরিয়াকে পটাতে,,,শুভ আরিয়া কে ভালোবাসে এটাই দাবি করে তবে আরিয়া ভালোভাবেই শুভর চরিত্র সম্পর্কে জানে তাই আরো বেশি পাত্তা দেয় না,,,আরিয়া আপন মনে হেটে যাচ্ছে আর শুভ আরিয়ার দিকে এগোচ্ছে,,আরিয়া মাথা নিচু করে থাকায় বুঝতে পারেনি শুভ যে তার দিকে আসছে,,আরিয়া গভীর চিন্তায় মগ্ন আর শুভ আরিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে ব্যাস্ত………

চলবে……..

(আসসালামু আলাইকুম,,,ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️❤️❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here