তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
সারপ্রাইজ_পার্ট
#পিচ্চি_লেখিকা
আরিয়াদের আসতে আসতে সন্ধ্যা নেমে গেছে!আরিয়া একটু রেস্ট নিয়ে চেঞ্জ করে রুম থেকে বাইরে বের হলো।সবাই এক সাথে ছাদে চলে গেলো। তারপর শুরু হলো জমিয়ে আড্ডা। আরিয়াও গিয়ে সবার মাঝে বসলো। দিয়া,মিষ্টি,রিমা,আরিয়া,আইরা সবাই একসাথে বসলো। আরিফাও আছে কিন্তু নিজের মতো। ফোন গুতাগুতি করতেছে। সবাই গল্প করছে এটা ওটা বলছে। কিন্তু আরিয়ার আর ভালো লাগছে না। এই ১ বছরে আরিয়া নিজেকে সবসময় একা রাখায় কারো সাথে আর তেমন মিশতে পারে না। কেউ একটু বেশি কথা বললেই বিরক্ত হয়ে যায়। আইরা এতদিন পর সবার সাথে আড্ডায় মেতে অনেক খুশি তাই আরিয়া আইরা কে বিরক্ত না করে চলে আসে ছাদ থেকে। ছাদ থেকে আনমনে হেটে আসছিলো। মুখে তার বিষন্নতার ছাপ। সিড়ি দিয়ে নিজের রুমে যেতে লাগছিলো এমন সময় সজোড়ে কারো সাথে ধাক্কা খায়। অপর পাশের ব্যাক্তিটাও ফোনের দিকে নজর দিয়েই হাটছিলো তাই সামনে কে আছে খেয়াল করেনি। আরিয়া নিজেও অন্যমনষ্ক ছিলো তাই তারো দোষ আছে ভেবে সরি বলতে যাবে এমন সময় ওই মানুষটা সরি বলে উঠে। আরিয়া কন্ঠটা শুনেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে যায়। মাথাটা তুলে সামনে তাকাতেই অবাকের চরম পর্যায় পৌছে গেছে। সে কি আদৌ ঠিক দেখছে নাকি ভুল। সামনের মানুষটার নজর এখনো ফোনের দিকে। আরিয়া এত বড় ধাক্কা সামলাতে না পেরে সেন্স হারিয়ে টলে পড়ে সেই মানুষটার সামনে। আরিয়ার এমন হঠাৎ সেন্স হারানো তে ভড়কে যায় ছেলেটা। মানবিকতার খাতিরে নিজের রুমেই নিয়ে যায় আরিয়া কে।
এদিকে আরিয়াকে দেখতে না পেয়ে আইরা নিচে চলে আসে। কিন্তু কোথাও না পেয়ে ২ তলা চলে যায়। আরিয়ার রুম দেখে পাশের রুমে যেতেই দেখে আরিয়া শুয়ে আছে। আইরা ভেবেছে এতদুর আসার জন্য হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে তাই বিরক্ত না করে আবারও ছাদে চলে গেলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর আরিয়ার সেন্স আসে। লোকটা তখন নিজের রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেটের ধোয়া উড়াতে ব্যস্ত। আরিয়া তখন কার কথা মনে হতেই অস্থির হয়ে আরুশ বলে চিৎকার করতে থাকে। লোকটা আরিয়ার এমন চেচামেচি তে সিগারেট টা ফেলে আরিয়ার সামনে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,
“” হেই সাট আপ। কি হচ্ছে এসব? এমন কাকের মতো কা কা কেন করছেন? বাড়ির লোক কি ভাববে? সবাই তো ভাববে আমি আপনাকে জোড় করে আটকে রেখেছি।
আরিয়া সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে চোখের জলের বাধ ছেড়ে দেয়। অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,,
“” আ..আরুশ!
লোকটা আরিয়ার কথা শুনে কেমন করে তাকালো,,
“” হোয়াট!ওভাবে তাকানোর কি আছে? আর কে আরুশ?
আরিয়া কোনো কথা না বলে লোকটার দিকে কয়েকপা এগিয়ে এসে দাড়ালো। দুজনের মধ্যে স্রেফ কয়েক ইঞ্চি দুরত্ব। যা আরিয়া বেশিক্ষণ থাকতে দেয়নি। ঝাপিয়ে পড়ে লোকটার বুকে। আরিয়ার এহেন কান্ডে লোকটা বোকা বনে যায়। কয়েক সেকেন্ড শকড টা কাটিয়ে আরিয়াকে সোজা করতে লাগে,,
“”” আরে ছাড়ুন আমাকে। কে আপনি? এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেন? ছাড়ুন বলছি।
আরিয়া কান্না করতে করতে লোকটা কে ছেড়ে দিয়ে সারা মুখে চুৃমু দিয়ে যাচ্ছে পাগলের মতো,,লোকটা কোনোরকম আরিয়াকে ছাড়িয়াকে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,,
“” হু দা হেল আর ইউ? এসব বেহায়াপনার মানে টা কি? চেনেন না জানেন না একটা লোককে কিস জড়িয়ে ধরছেন? আর ইউ মেড?
আরিয়া কয়েক কদম এগিয়ে আসতে গেলে লোকটা কয়েক কদম পিছিয়ে দাড়ায়,,
“” দেখুন ভদ্র ভাবে বলছি কাছে আসবেন না। কে আপনি?
আরিয়া এবার দুর থেকেই কান্না করতে বলে,,
“” প্লিজ আরুশ এমন করবেন না। আমি ভুল করেছি তার জন্য মাফ করে দিন কিন্তু এভাবে আর দুরে থাকবেন না।
“” আরুশ কে?
আরিয়া অবাক চোখে সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে,,
“”” নিজের পরিচয় টাও মিথ্যা করে দিচ্ছেন?
“” ওহ হ্যালো..আপনি ভুল করছেন আমি কোনো আরুশ নয়। আমি আয়ুশ চৌধুরী। আশা করি ভুল ভেঙেছে এবার যান প্লিজ। আঙ্কেল আন্টি আপনার এসব দেখলে আমাকে খারাপ ভাববে।
আরিয়া আর স্থির থাকতে পারলো না। রেগে গটগট করে আয়ুশের সামনে গিয়ে তার কলার চেপে ধরে,,
“”” আয়ুশ?কে আয়ুশ? আপনি আরুশ..আমার আরুশ। আর যতই অস্বীকার করেন আপনিই আরুশ।এটা আমার বিশ্বাস। ১ টা বছর পাগলের মতো বেচেছি আর না। আমি একবার আপনাকে হারিয়েছি আর পারবো না। আর হ্যা আপনি আরুশ এটা নিজে মুখে স্বীকার করবেন আপনি।
আয়ুশ নিজের কলার ছাড়িয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শান্ত গলায় বললো,,
‘”” আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি আরুশ?
“”কেন মনে হচ্ছে মানে? আপনি ই আরুশ।
“” ওয়েট কোন আরুশ সেইটা বলেন!
“”আরুশ এব….
“” আপনার বাজে কথা রেখে বলেন কোন আরুশ?
আরিয়া মুখ ছোট ছোট করে বললো,,
“” নিজেই নিজেকে চিনে না ঢং। আরুশ আরফান!
আয়ুশ আরিয়ার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো। আরিয়া আয়ুশের হাসি দেখছে। একজন মানুষের মাঝে এত মিল হতে পারে না। এটা আরুশ সে সিউর। আয়ুশ কোনোমতে নিজের হাসি থামিয়ে বলে,,
“” লাইক সিরিয়াসলি মিস..
“”” এখন আমার নাম টাও জানেন না!
“” কিভাবে জানবো? আজব!
“”” ওকে জানতে হবে না। বউজান বলেই ডাকেন। আপনার মুখে ওটাই ভালো লাগে।
“” ওহ জাস্ট সাট আপ আপনার এসব ফালতু কথা নিজের কাছে রাখেন। আরুশ আরফান বিশিষ্ট বিজনেসম্যান যিনি ১ বছর আগে মারা গেছে তাকে আমার সাথে গুলাতে আসবেন না প্লিজ।
আরিয়া ২ কদম আয়ুশের দিকে এগিয়ে আসতে গেলেই আয়ুশ হাত দিয়ে থামিয়ে বলে,,
“” আপনার কথা শুনে মনে হলো আপনি উনার ওয়াইফ। সে যায় হোক আই ডোন্ট কেয়ার & ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এক রকম দেখতে পৃথিবীতে ৭ জন মানুষ আছে। আশা করি আপনাার আন্সার পেয়ে গেছেন সো লিভ।
আরিয়া আর কথা বাড়ালো না। আরিয়া ভালো ভাবেই জানে এই ঘাড়ত্যাড়া আরুশকে ঘারত্যাড়ার মতোই বোঝানো লাগবে। তাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু পিছন ফিরে আবারো বলে,,
“”” এখন যাচ্ছি ঠিক আছে। একই বাসায় যখন আছি তখন আবারো আসবো মিষ্টার আরুশ আরফান উফফস সরি আয়ুশ চৌধুরী।
আরিয়া বাকা হেসে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। আর আয়ুশ আরিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। আরিয়া চলে যেতেই আয়ুশ দরজা লাগিয়ে দিলো। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। রুমের মধ্যে সব ভাঙচুড় শুরু করে দিলো। রাগে তার শরীর কাপছে। ভাঙা শেষে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে সমানে ফুকে যাচ্ছে। রাগ গুলো যেনো এর মাঝেই প্রকাশ পাচ্ছে। ওদিকে আরিয়া কম যায় কিসে? রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর যখন আয়ুশ দরজা লাগিয়ে দেয় তখন দরজায় এসে কান পাতে। আর যা ভেবেছিল তাই ভাঙচুরের প্রচুর শব্দ। আরিয়া ডেভিল একটা স্মাইল দিয়ে বলে,,
“” লুকিয়ে থাকার শখ জেগেছে আমার জামাইয়ের। ১ বছর নিজের ভুলের জন্য ভালোবাসা হারানোর জন্য ছটফট করেছি। এখন যখন জানলাম আপনি বেচে আছেন তখন আর আপনাকে স্বীকার করাতে কতক্ষণ লাগবে আমার? জাস্ট ওয়েট & সি।
আরিয়া নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর ছাদে সবার কাছে চলে গেলো। আজ সে মহা খুশি। আজ থেকে আর মন খারাপ সে করবে না। আরুশকে আরুশের পদ্ধতিতেই ঠিক করার চিন্তায় আছে। আরিয়া গিয়ে সবার মাঝে বসে পড়ে,,
“”” তোমরা আমাকে রেখেই গল্প জুড়ে দিয়েছো দিজ ইজ নট ফেয়ার দিয়া। কি কি গল্প করলে এখন আমাকে আবার বলো।
আরিয়ার কথা শুনে আইরা আর রিমা চোখ বড় বড় করে দুজনের দিকে তাকালো। আরিয়া নিজে থেকে এত হাসি খুশি হয়ে কথা বলছে। অবিশ্বাস্য!
রিমা আরিয়ার কপালে হাত দিয়ে বলে,,
“” বইন আমার তোর জ্বর টর আসছে নাকি রে? ওমা কই জ্বর তো নাই। তাইলে ভুল বকছিস কেন?
আরিয়া রিমার মাথায় টোকা মেরে বলে,,
“” গাধী,,ভুল বকবো কেন? তোরে কি ভুত তার ভুতনি বানাই ফেলছি নাকি? এই দিয়া চুপ করে গেলে কেন?
দিয়াও হা হয়ে গেছে। আসার পর থেকে যে মেয়ে টু শব্দও নিজের ইচ্ছায় করেনি সে এখন গল্প শুনতে উঠে পড়ে লেগেছে! আরিয়া সবাইকে চুপ থাকতে দেখে নিজেই শুরু করে দিলো। সবাই আরিয়ার আগা মাথা ছাড়া কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আরিয়া নিজেও হাসছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে তাতে কি আরিয়ার হাসিটাই তার মুখের সৌন্দর্য দ্বিগুন করে দিয়েছে। আরিয়াকে এত খুশি দেখে আইরা অবাক হলেও ভিষন খুশি হয়েছে। সবাই আড্ডা দিয়ে নিচে চলে গেলো সবার পেছনে আরিয়া আর আইরা আছে। আইরা আরিয়াকে পেছন থেকে টেনে জিজ্ঞেস করে,,
“” আপু আজ তুমি এত খুশি কেন?
“” কেন আমি খুশি বলে তুই খুশি না?
“” ধ্যাত আপু কি যে বলো না তুমি! তবে তুমি তো সব সময় গুম হয়ে বসে থাকো।
“” আরে আমার গুলুগুলু বোনু জানতে পারবি আমি কেন এত খুশি!এখন নিচে চল।
“”আচ্ছা চলো।
আরিয়া আর আইরা নিচে চলে গেলো সবার৷ সাথে। যে যার রুমে গিয়ে রেস্ট নিচ্ছে। আরিয়া আর আইরা এক রুমে। রাত হয়ে যাওয়ায় সবাইকে ডিনারের জন্য নিচে ডাকা হয়। আরিয়া আর আইরা গল্প করতে করতে নিচে নামছে। সিড়ি থেকেই আরিয়া আইরাকে কিছু ইশারা করে। আইরা সেইটা ফলো করে তাকাতেই হা হয়ে গেছে…..
চলবে…
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️
হ্যাপি রিডিং😊