#তোমায় ঘিরে
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১১
আর তার সাথে সাথে ঘটল বিস্ফোরণ। ধরীতা হালকা গলায় বলল
“স্যার মামী এত করে বলছে একটু থাকুন না… মামী আপনাকে কত পছন্দ করে। আপনার জন্য মামী এত সেজেছে আর আপনি কি’না মামীকে ইগনোর করছেন! এটা তো ঠিক না স্যার। আপনি একটু বেশিই দুষ্ট। এত দুষ্টামি করলে কী হয় নাকি। ভারি দুষ্ট আপনি। তাই না মামী।”
ধরীতার কথা শুনে তার মামী গদোগদো হয়ে গেল। ধরীতার দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে বলল
“একমাত্র তুই ছাড়া আমার কষ্ট কেউ বুঝল না রে। নিজের মেয়েও না। সিয়ামকে একটু বুঝিয়ে বল তো মা। আমার কী বেশি বয়স নাকি তুই এই বল।”
ধরীতা মুখ চেপে হেসে বলল
“কী বলেন মামী আমার তো মনে হয় আপনার বয়স ১৬ পার হয়ে ১৭ পড়েছে। কে বলল আপনার বয়স বেশি। যে বলেছে তার চোখ কানা, সে আপনাকে হিংসা করে। ”
ধরীতার কথা শুনে সিয়াম বড়ো চোখ করে তাকাল। তৎক্ষণাৎ ধরীতাকে সিয়াম আচমকা বলে উঠল
“আপনার মাথা কী ঠিক আছে? আপনিও এমন আবল তাবোল বলা কেন শুরু করছেন? প্লিজ আমি এবার বাসায় যাই। আপনাদের ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।”
ধরীতা আরেকটু হেসে বলল
“কী যে বলেন না স্যার। আপনি সত্যিই দুষ্ট কিছুই বুঝেন না। মামী আপনাকে এত ভালোবাসে এ সামান্য বিষয়টা বুঝতেছেন না। কুন্দলতা সিরিয়ালটা দেখেন না? যেভাবে মেয়ের টিচারের প্রেমে মা পড়ে যায় মামীও তো সেভাবেই আঁচড়ে পড়ল আপনার প্রেমের মোহে। মামী এখন নিজেকে সে সিরিয়ালের নায়িকা ভাবছে আর আপনি হলেন নায়ক। তাই না মামী?”
ধরীতার মামী মুচকি হেসে বলল
“আরে ধরীতা মা আমার, একমাত্র তুই এই আমাকে বুঝলি। সিয়ামকে একটু বুঝা না রে।”
ধরীতা চাইলে আরও একটু বেশি মজা নিতে পারত। তবে সে তা না করে মামীকে কানে কানে বলল
“বুঝাতে হলে এখানে বুঝানো যাবে না। আমি বাইরে গিয়ে বুঝাচ্ছি। তুমি বরং রিলাক্সে থাকো। প্রথম প্রথম তো সিয়াম একটু লজ্জা পাচ্ছে। আর বিশ্বাসেই করতে পারছে না তোমার মতো সুন্দরী ওকে পছন্দ করে। আগে তো ওকে বিশ্বাস করাতে হবে। আমি বরং বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ বুঝিয়ে আসি। এরপর বাকিটা দেখা যাবে।”
ধরীতার মামী মৃদু গলায় বলল
“আরে কী বলিস ও চলে গেলে খাবে কে? আর ওকে ছাড়া আমি থাকব কী করে?”
“মামী চিন্তা করো না, চিল করো। আমি আছি তো। আর এত খাওয়াতে হবে না। পরের বার এসে খাবেও ভালোওবাসবে। আমি তাহলে ওকে নিয়ে বের হলাম।”
সিয়ামের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এরকম একটা মসিবতে পড়বে জানলে কখনই এ বাসায় আসত না। কী থেকে কী হচ্ছে কোনোকিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। আর ধরীতায় বা কী ফিসফিস করে তার মামীকে বলছে সেটাও বুঝতে পারছে না। এই ফাঁকে দৌড়ে পালাবে কি’না সেটাও সে বুঝে উঠতে পারছে না। সবমিলিয়ে নিজেকে বেশ পাগল পাগল লাগছে তার। এর মধ্যেই মামীকে বুঝিয়ে ঘরে পাঠাল ধরীতা। তারপর সিয়ামের হাতটা ধরে তাকে বলল
“বিপদ সংকেত এড়াতে হলে আমার সাথে চলুন। নাহয় মামী আবার এসে হানা দিবে। উনি এখন উনার মাঝে নেই।”
ধরীতার স্পর্শে কিছুটা ভরসা পেল সিয়াম। আর কিছু বলল না। ধরীতার সাথে বের হলো সে। ধরীতা গাড়ির কাছে এসে গাড়ির দরজাটা খুলে গাড়িতে বসল। সিয়ামও গাড়িতে বসলো। সিয়াম বুঝতে পারছে না ধরীতার মনে কী চলছে। সিয়ামের ভয় এখনও কাটেনি। সিয়াম হালকা গলায় বলল
“আমরা এখন কী করব?”
“আমরা এখন দু চোখ যেদিকে যায় চলে যাব।”
ধরীতার হেয়ালি উত্তরে সিয়াম বলে উঠল
“আমার সাথে কী আপনি মজা করছেন আবার। দুচোখ যেদিকে চলে যায় চলে, যাব মানে?”
ধরীতা ভ্রূটা কুঁচকে বলল
“বাসা থেকে এত রাতে বের হওয়ার অনুমতি পেলাম। আমি জানি সারারাত বাইরে থাকলেও মামী কিছু বলবে না। আর মা সবসময় নির্বাক। আজকে আমার এ চাঁদনী রাতে একটু ঘুরতে ইচ্ছা করছে তাই আপনাকে বলা। আপনার কাছে আমি নির্দ্বিধায় সব আবদার করতে পারি। কেন করতে পারি জানি না। আর মামীর বিষয়টা সিরিয়াসলি নিবেন না মামী এরকম উদ্ভট কাজ মাঝে মধ্যেই করে। সিরিয়ালের নায়িকা হিসেবে নিজেকে কল্পনা করে এ কাজ করেছে। চলেন যাওয়া যাক। আপনি যাবেন নাকি আমি নেমে যাব?”
কথাটা বলেই সিয়ামের চোখের দিকে তাকাল ধরীতা। ধরীতার চাহনিতে সিয়াম এক উদ্যম প্রেমের প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করল। দম ধরে থেকে বলে উঠল
“আমার পছন্দের একটা জায়গায় আপনাকে নিয়ে যাই?”
“আমার কোনো সমস্যা নেই।”
সিয়াম ধরীতার উত্তর পেয়ে সামনের দিকে এগুতে লাগল। অসম্ভব ভালো লাগছে তার। ধরীতাও সিয়ামের প্রতি এক অদ্ভুত দুর্বলতা অনুভব করতে লাগল। গাড়িটা চলতে চলতে একটা ব্রিজের উপর আসলো। রাত বেশ হয়েছে। তাই ব্রিজে তেমন গাড়ির চলাচল নেই। সিয়াম গাড়ি থেকে নামল ধরীতাও নামল। রাতের আকাশের চাঁদটা বেশ স্বচ্ছতা নিয়ে যেন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাদের প্রেমবিলাস লক্ষ্য করার জন্য। ধরীতা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়াম তার পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু গলায় বলল
“একটা কথা বলার ছিল। জানি না এত দ্রুত বলা ঠিক হচ্ছে কি’না। তবে মনের ভেতর চেপে রাখতেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি কি বলব?”
ধরীতা সোজা সাপটা উত্তর দিল
“আপনার মুখ কী আমি চেপে ধরেছি নাকি। যা বলার বলুন। কথা চেপে রেখে বদহজম বানাবেন না। বলে ফেলুন সরাসরি। ”
সিয়াম নীচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল
“আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবেসে ফলেছি। আপনার প্রতি অদ্ভুত একটা মায়া কাজ করে আমার। আপনার প্রতি অদ্ভুত টান আমাকে গ্রাস করে। কেন জানি না আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি আমার সারাজীবনের সাথী করে আপনাকে পেতে চাই। বাসা থেকে এমনিতেও বিয়ের চাপ দিচ্ছে। আপনি সম্মতি দিলে আমি বিষয়টা বাসায় বলব।”
ধরীতা সিয়ামের কথায় চুপ আছে। কী উত্তর দিবে সে বুঝতে পারছে না। তবে এ মুহুর্তে একটা উত্তর দেওয়া উচিত। ধরীতা হালকা নিঃশ্বাস টেনে বলল
“আপনার প্রতিও আমার অনুভূতি একই। তবে আমি কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না। আর আপনার পরিবার আমাকে মেনে নিবে না। আমার কোনো শক্ত গার্ডিয়ান নেই। তেমন কোনো সহায় সম্পত্তির মালিকও আমি না। দেখতে সুন্দরীও না। সব মিলিয়ে আপনার পরিবারের জন্য হয়তো আমি পারফেক্ট হব না”
“বিষয়টা একদম ভুল। আমার পরিবার আট দশটা পরিবারের মতো না৷ আপনাকে আমার পরিবার মেনে নিবে। তারা আমার পছন্দের উপর ভরসা করে। আমি যাকে পছন্দ করব তাকে নির্দ্বিধায় মেনে নিবে। আপনার সম্মতির প্রয়োজন।”
সিয়ামের কথা শুনে ধরীতা তার দিকে তাকাল। সিয়ামের চোখ দুটোতে তাকিয়ে বলল
“একটা শর্ত মানলে সম্মতি দিব।”
“বলেন কী শর্ত?”
“আমাকে সবসময় আগলে রাখতে হবে। যত বাধা বিপত্তি অঘটন আসুক আমাকে ছেড়ে যাওয়া যাবে না। আপনার সবকিছু আমাকে ঘিরে হবে আর আমার সবকিছু হবে আপনাকে ঘিরে। সম্বোধনটা তুমিতে নিয়ে আসতে হবে।”
“ওকে তুমিতে নিয়ে আসলাম সম্মতি। কথা দিলাম আমার সকল চাওয়া তোমায় ঘিরে হবে। চলো আজকে তোমায় আমার বাসায় নিয়ে যাই।”
ধরীতা ভ্রুটা কুঁচকে বলল
“পাগল নাকি? এত রাতে তোমার বাসায় যাব?”
“আরে কিছু হবে না চলো তো।”
বলেই সিয়াম ধরীতার হাতটা টেনে গাড়িতে বসাল। গাড়িটা চলছে। সিয়াম এক হাতে ড্রাইভ করছে অন্য হাতে ধরীতার একটা হাত ধরে রেখেছে। খুব বেশি সময় নিল না। গাড়িটা গন্তব্যে পৌঁছাল। সিয়াম দরজার সামনে ধরীতাকে নিয়ে দাঁড়াল। অতঃপর কলিং বেল চাপল।
চলবে?