দৃষ্টির_অগোচরে পর্ব_৫

দৃষ্টির_অগোচরে পর্ব_৫
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদয় প্রচণ্ড রেগে আছে শ্রাবণীর কথায়। সেই রাগটা এখন হৃদীতার উপর গিয়ে জমা হলো। ওর এখন ইচ্ছা করছে হৃদীতাকে খুন করতে। ওই মেয়েটাই সব নষ্টের মূল। ওর মনে হচ্ছে ওর গোছানো জীনটাকে ওই মেয়েটা এসে এলোমেলো করে দিয়েছে। রিয়া যদি থাকতো ওর জায়গায় তাহলে কখনও এই কাজের মেয়ে বিয়ে করার কথায় উঠতো না। হৃদয় কথা গুলো ভেবেই হাত মুঠো করে গাড়িতে একটা ঘুসি দিলো। ওর হাথে ব্যাথা লেগেছে কিন্তু রাগের কাছে এই ব্যাথা অতি সামান্য। হৃদয় শাফিনকে পাশ কাটিয়ে টলতে টলতে গাড়িতে গিয়ে বসলো। তারপর গাড়ি ছেড়ে দিলো। গন্তব্য আজ রিয়ার বাসা। রিয়াকে ওর মানাতে হবে যে করেই হোক। হৃদয় রিয়াদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে দরজায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতে লাগলো। এখন রাত এগারো টা বাজে। হৃদয়ের সময় জ্ঞান কম। ওর কিছুতে যায় আসে না এমন মনোভাব। ওর কয়েকবার বেল বাজার পর দরজা খুলে দিলো রিয়ার বাবা আফজাল হোসেনে। উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন হৃদয়ের দিকে। উনি আশা করেননি এতো রাতে হৃদয় এই বাড়িতে আসতে পারে। হৃদয় উনার দিকে না তাকিয়ে সাইড কাটিয়ে ভেতর ঢুকে গেলো। আফজাল হোসেন ওর পিছু পিছু ভেতরে আসলেন। এই ছিলেটাকে উনি খুব একটা পছন্দ করেন না। প্রচণ্ড অসভ্য আর বদরাগী মানুষ কে উনার পছন্দ না। তবুও মেয়ের মুখ চেয়ে বিয়েটা মেনে নিয়েছিলেন। হৃদয় ভেতরে এসে চিৎকার করে ডাকছে,

> রিয়া কোথায় তুমি বাইরে আসো। আমি তোমাকে নিতে এসেছি।

> রিয়া কোথাও যাবে না। ভদ্রতা সভ্যতা কিছুই জানোনা তুমি তাই না?বাইরে যাবে নাকি দারোয়ান দিয়ে বের করে দিবো?( রাগ করে)

> থামুন তো আপনি। বাংলা সিনেমার ভিলেনের মতো বস্তা পচা ডায়ালগ দিচ্ছেন।তবে কমেডি হিসেবে অবশ্য অন্য ব্যাপার।এই ডায়ালগ টা চলবে।

> তুমি আমার একটা মেয়েকে নিয়ে কষ্ট দিয়ে শান্তি পাচ্ছ না আবার আরেকটি কে নিতে এসেছো? হৃদীতার কিছু হলে কিন্তু তোমাকে আমি পুলিশে দিবো। আমাকে চিনো না তুমি। (হুমকি দিয়ে )

> হৃদীতা আপনার মেয়ে? বেশ মজা করতে পারেন তো আপনি। আপনাকে দেখে কিন্তু বোঝা যায় না আপনি এতো সুন্দর কমেডিয়ান। হাত (তালি দিয়ে )

> তোমার মতো নেশাখোর গাধা এই সব বুঝবে না ঠিক আছে?। ওকে আমি নিজের মেয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আমারই ভুল ছিল ওকে বাড়িতে রাখা। মা মেয়ের অত্যাচারে মেয়েটা অতিষ্ঠ ছিল এখন আবার তুমি এসে জুটেছো। এই এখুনি বের হয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। নয়তো দাড়াও তোমার মাকে আমি ফোন দিয়ে বলছি এখুনি এসে নিয়ে যাবে।

> আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন। আমি রিয়ার সাথে কথা বলে তবেই যাবো। ডাকুন ওকে নয়তো কিন্তু ওর ঘরে চলে যাবো।

> দাড়াও তোমার মাকে এখুনি ফোন দিতেছি। নেশাখোর ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে কেনো রেখে শুনবো তার কাছে।।

আফজাল হোসেন ফোনটা হাতে নিলেন হৃদয়ের মাকে ফোন করার জন্য। কিন্তু তার আগেই হৃদয় বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো ঢুলতে ঢুলতে। ও আজ নেশা করেছে। সামান্য একটু খেয়েছিল তাতেই ও এমন এলোমেলো হয়ে গেছে। ওর এই সব সহ্য হয়না কিন্তু রাগের বশে খেয়ে নিয়েছে। হৃদয় গাড়ি নিয়ে চলে এসে ওদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা জঙ্গলের ভেতরে গাড়ি দাড় করিয়ে কিছু একটা ভাবলো।। ওর এখন বাড়িতে যেতে মন চাইছে না। বাড়িতে যাওয়া মানেই ওই মেয়েটাকে সহ্য করা। তাই ও গাড়ির মধ্যেই সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কয়েক মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকতেই ওর কেমন ঘুম চলে আসলো।আর এমনিতে ও হুশে নেই আজ।

চারদিকে ঝিঝিপোকা ডাকছে। হৃদয় গাড়ির জানালা খুলে রেখেছিল সেদিক থেকে হুহু করে বাতাস এসে ওর গায়ে লাগছে। বসন্তের শুরুর দিকে হওয়ার জন্য শীত প্রভাব অনেকটাই আছে এখানো। চারদিকের এমন এলোনাতো বাতাসে হৃদয়ের আরও বেশি শীত শীত করছে। কিন্তু চোখ খুলতেও ইচ্ছা করছে না তাই ও সিটের মধ্যেই জড়সড় হয়ে পাশ ফিরলো। মনে হচ্ছে একটা কাঁথা ভালো হতো। হৃদয় গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছে। কিন্তু হঠাৎ ওর কানে একটা অদ্ভূত চিৎকারে শব্দ এসে ধাক্কা দিলো। হৃদয় চমকে উঠে বসে পড়লো। অনেক সময় ঘুমানোর জন্য ওর নেশা ভাবটা অনেকটাই কমে এসেছে। ও একটা মেয়ের গগনবিদারী চিৎকার শুনতে পাচ্ছে। এই ঘন জঙ্গলে কোনো মেয়ে এমন করে কেনো চিৎকার দিচ্ছে ভেবে ও গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ও বাতাসে কান পেয়ে শোনার চেষ্টা করলো। শব্দের উৎস কোথায় বুঝতে ওর কয়েক সেকেন্ড লাগলো। হৃদয় বুঝলো শব্দটা জঙ্গলের ভেতর থেকে আসছে তাই ও সেদিকেই দৌড়ে গেলো। হৃদয় দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে উঠেছে কিন্তু শব্দের উৎসের কাছে পৌচ্ছাতে পারলো না। ও যতই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে শব্দ টা ততই আরও তীব্র হচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে হৃদয় জঙ্গলের শেষে নদীর ধারে এসে দাড়ালো। মাঝারি আকৃতির নদীটা। আকাশে চাঁদ আছে তাই সব কিছুই চাঁদের আলোতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। হৃদয় চারপাশে তাকিয়ে দেখতে গিয়ে শব্দের কথা প্রায় ভুলে যেতে বসেছিল। হঠাৎ ওর শব্দের কথা মনে হতেই ও খেয়াল করলো সেই শব্দ টা বন্ধ হয়ে গেছে। আর কোনো শব্দই শোনা যাচ্ছে না। হৃদয় ভ্রু কুচকে ভাবছে এমন করে চিৎকার করে কে কাঁদলো। আর সে কোথায় বা গেলো। ওর এমন ভাবতে ভাবতেই ও আকাশে দিকে তাকিয়ে দেখে অবাক হলো। কিছু একটা আলোর রেখা নিচের দিকে ছুটে আসছে। হৃদকে অবাক করে দিয়ে আলোর রেখাটা একটা মেয়েতে পরিণত হয়ে গেলো। মেয়েটা চোখের পলকে নদীর ওপারে গিয়ে পড়লো। মেয়েটা তার দুখানা পাখা ঝাপটাচ্ছে আর কাঁদছে। হৃদয় বুঝলো এই মেয়েটাই তাহলে কাঁদছিল এতোক্ষন। কিন্তু মেয়েটা কি মানুষ নাকি অন্যকিছু। মেয়েটার সারা শরীর থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ছে। সাদা গাউন পড়া মেয়েটাকে মনে হচ্ছে কোনো স্বর্গের অপসরী। হৃদয় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটাকে দেখছে আর ভাবছে এটাই কি তাহলে পরী? যদি পরী হবে তাহলে এমন চিৎকার করে কাঁদছে কেনো?কি সমস্যা ওর? কথাটা ভেবেই ওর মনের মধ্যে ব্যাথা অনুভব হলো। সামনে নদীর জন্য ও যেতে পারছে না। না জেনেই নদীর নেমে পড়া বোকামি হচ্ছে তাই ও দাড়িয়ে আছে। আর ছটফট করছে মেয়েটার কাছে যাবার জন্য। ওর মনে হচ্ছে একে ও আগেও কোথায়ও দেখেছে কিন্তু কোথায় দেখেছে ওর মনে পড়ছে না। হৃদয় এতো সুন্দরী মেয়ে আগে কখনও দেখেনি। ও এপাড় থেকে জোরে চিৎকার দিয়ে ডাকলো।

> এই যে আপনার কি হচ্ছে বলবেন আমাকে? আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই।

ওর চিৎকার শুনে মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে কান্না বন্ধ করলো। মেয়েটার একটু দূরে হবার জন্য হৃদয় খুব পরিষ্কার করে মুখটা দেখতে পাচ্ছে না। মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো। হৃদয় আরও জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।

> আপনি কোথায় গেলেন? ভয় পাবেন না ফিরে আসুন আমি আপনাকে সত্যি সাহায্য করবো বিশ্বাস করুন। কথা দিতেছি আপনাকে।

হৃদয় চিৎকার করে কয়েকবার কথাটা বললো কিন্তু মেয়েটা আর ফিরে আসলো না। হৃদয়ের রাগ হচ্ছে এই নদীটার উপরে। ওর আর মেয়েটা মধ্যে ভিলেন হয়ে দাড়িয়ে গেছে এই নদীটা। কিন্তু কি করবে এখন। হৃদয় আফসোস করতে করতে ওখানে থেকে চলে আসলো।আর মনে মনে ভাবলো আবার আসবো আমি তোমাকে খুঁজতে। হৃদয় গাড়িতে ফিরে এসে বাড়ির পথে রওনা হলো। সারা রাস্তা ওর মনের মধ্যে মেয়েটার কথায় কল্পনা হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে ও দশ মিনিটের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে গেলো। এখন ভোর রাত কিছুক্ষণ পরেই হয়তো ফজরের আযান দিবে। বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে আছে। হৃদয়ের কাছে চাবি আছে ওটা দিয়েই ও চুপিচুপি বাড়িতে এসে ঢুকলো। তারপর সোজা নিজের রুমে এসে দাড়ালো। রুমে আবছা অন্ধকার খুব ভালো করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না কিন্তু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। হৃদয় বিরক্ত হচ্ছে আর ভাবছে এই মেয়েটা কি রাতে ঘুমের মধ্যেও কান্নাকাটি করে। এমন ভাবে কান্নাকাটি করছে মনে হচ্ছে ওকে জেলখানার টর্চার সেলে পুরে রাখা হয়েছে। সিঁদকাদুনে মেয়ে মানুষ ওর একদম পছন্দ না। হৃদয় রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দেখলো হৃদীতা মেঝেতে হাত পা গুটিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। হৃদয় ভ্রু কুচকে হৃদীতার পাশে এসে বসলো। তারপর নিজের অজান্তেই হাতটা হৃদীতার মাথায় রেখে সাথে সাথে সরিয়ে নিলো। প্রচণ্ড উত্তাপ ওর গায়ে। হৃদয় বুঝলো ওর জ্বর এসেছে। ঠান্ডায় মেজেতে থাকলে জ্বর আরও বেশি হবে তাই ও ওকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ায়ে দিলো। হৃদয় কি করবে এখন বুঝতেই পারছে না। আম্মাকে এখন ডাকা কি ঠিক হবে নাকি ডাক্তার ডাকবো। এটা সেটা ভেবে ও একটা মগে করে পানি এনে কাপড় ভিজিয়ে ওর মাথায় পানি পটি দিলো। মনেমনে ও বিরক্ত হচ্ছে। আবার মায়ায় ও হচ্ছে। জ্বর এসে মারা গেলে সবাই ওকে দোষারোপ করবে এটা ভেবেই ও আরও শঙ্কিত। হৃদয় ওর মাথায় কাপড় রেখে একটু পরেই ও হৃদীতার পাশে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালের রোদ চোখে পড়তেই হৃদীতার ঘুম ভেঙে গেলো। ও চোখ খুলেই চোখ বড়বড় করে ফেলল। কারণ ওর একদম হৃদয়ের কাছেই ঘুমিয়ে আছে। হৃদয়ের নিশ্বাস ওর মুখে এসে পড়ছে। হৃদীতা ভয়ে চুপসে গেলো। ওকি রাতে ভুল করে এখানে এসে ঘুমিয়েছিল? ওকে এখানে দেখলেই গন্ডার টা চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করে তুলবে। কি করবে এখন উঠতে গেলেই তো ওর ঘুম ভেঙে যাবে আর ও ধরা খেয়ে যাবে। হৃদীতার শাড়ি আচল ওর পিঠের নিচে পড়ে আছে। হৃদীতা খুব সাবধানে উঠে বসলো। কিন্তু আচল টা টেনে নিতে পারলো না। হৃদীতা বিড়বিড় করছে। খেয়ে খেয়ে ষাঁড়ের মতো মটু হয়েছে একে তুলতে গেলে আমার গায়ের হাড্ডি সব মটমট করে ভেঙে যাবে। ওর বসে ভাবতে ভাবতেই হৃদয় পাশ ফিরলো। হৃদীতা তাকিয়ে দেখলো ওর আচল ও ছেড়ে দিয়েছে। ও তাড়াতাড়ি নিজের আচলটা টেনে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। হৃদীতা তাড়াতাড়ি করে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয় নিলো। এখন সকাল আটটা বাজে। ও সাধারণ তো অনেক সকালে উঠে নামাজ পড়ে তারপর কাজ শুরু করে কিন্তু আজ অনেক বেলা হয়ে গেছে। ও ভয় পাচ্ছে এই বাড়িতে ওকে কেউ বকবে কিনা দেরিতে উঠার জন্য তাই ও ভয়ে ভয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে নেমে ও কিচেন খুঁজে চায়ের পানি চাপিয়ে দিয়ে পাশ ঘুরতেই দেখলো কুসুম দাড়িয়ে আছে। হৃদীতা কুসুমের দিকে তাকিয়ে আছে। কুসুম ঠিক ওর বয়সী হবে হয়তো। সবুজ রঙের একটা পুরানো থ্রী পিচে রোগাপাতলা গড়নের মেয়েটাকে দেখে হৃদীতার প্রচণ্ড মায়া হলো। ও উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে কথা বলার জন্য কিন্তু লজ্জা পাচ্ছে। কি বলবে হঠাৎ করে বুঝতে পারছে না তাই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কুসুম জানিনা কি বুঝে নিজেই ওর সাথে কথা বললো।

> আপনি রান্না ঘরে কি করছেন ম্যাডাম? খালাআম্মা দেখলে তো আমার চাকরি থাকবে না।

> কেনো থাকবে না। আমি কাজ করতে পারি। তুমি আমাকে সাহায্য করো আমি সব রান্না করে নিবো। আর ম্যাডাম ডেকে আমাকে ছোট করো না। আমারা তো মনে হয় সমবয়সী। তুমি আমাকে নাম ধরেই ডেকো।

> ছি ছি কি বলেন। খালা আম্মু জানলে খুব বকবেন। আমি আপনাকে ভাবি বলেই ডাকবো। আপনি চা তৈরি করে বাইরে গিয়ে বসেন আমি সব করছি। আর অনেক লোক আছে কাজের জন্য। এই বাড়িতে সবাই দেরীতে ঘুম থেকে উঠে তাই এখনো রান্নাঘরে আসনে নাই কেউ।

ওদের কথা বলতে বলতেই আরও কয়েকজন চলে আসলো। হৃদীতা কথা না বাড়িয়ে বাইরে সোফায় গিয়ে বসলো। ও ভাবছে এই বাড়িতে সব সকালে উঠে না কেনো কে জানে। একা একা ওর নিচে বসে থাকতে ইচ্ছা করছে না তাই এক কাপ চা নিয়ে কুসুমের সাহায্যে ছাদের রাস্তা চিনে ছাদে চলে আসলো। ছাদে এসে ওর চোখ ভরে গেলো। চারদিকটা সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছে ভরপুর। হৃদীতা একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। রোদ উঠে পড়েছে কিন্তু গাছের ছায়া আছে তাই রোদটা ওর গায়ে লাগছে না। আর হালকা শীত শীত করছে রোদটাও খুব একটা খারাপ লাগছে না। হৃদীতা এক চুমুক করে চা মুখে নিচ্ছে আর সামনে তাকিয়ে দেখছে।। গতরাতে ও ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত কিছু অনুভব করেছে। ওর সাথে যা হচ্ছে এটা নিয়ে ও যথেষ্ট ভয় আছে। কিছুই ওর মাথায় ঢুকছ না। অনেক আয়েশ করে ও চা টা শেষ করলো। চা শেষ হতেই ওর মনে হলো আরেক কাপ হলে মন্দ হতো না কিন্তু নিচে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে এটা ভেবে চা খাবার অদম্য ইচ্ছা টাকে ও দমন করে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিলো।অন্যদিকে হৃদয় ঘুম থেকে উঠে পাশে হৃদীতাকে না দেখে হন্তদন্ত হয়ে বাইরে বের হলো। মনে মনে ও হৃদীতাকে খুঁজলো কি পেলো না তাই উপায় নে পেয়ে রান্না ঘরে কুসুমের কাছে গিয়ে দাড়ালো। ওকে এমন দাড়িয়ে থাকতে দেখে কুসুম বলল,

> কিছু লাগবে ভাইয়া?

> ওই মেয়েটাকে দেখেছিস? কোথায় আছেন মহারানী সাত সকালে?

> ভাবীর কথা বলেছেন? উনি তো ছাদে আছে ভাইয়া।

কুসুমের বলতে দরী কিন্তু হৃদয়ের যেতে দেরী হলো না। ও প্রায় দৌড়ে ছাদে গেলো।। ছাদের দরজা খুলতেই ওর চোখে পড়লো হৃদীতার উপরে। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। শুকনো মলিন মুখটাকে দেখে হৃদয়ের কেমন একটা অনুভব হলো। ও হন্তদন্ত হয়ে হৃদীতার কপালে হাত রাখলে। হঠাৎ কেউ ওর মাথায় হাত রাখার জন্য হৃদীতা চমকে উঠে সোজা হয়ে চোখ খুলে বসলো। হৃদয় কে দেখে ও আরও চমকে উঠলো। ওর ভয় করছে বিনা অনুমতিতে ওর বিছানায় ঘুমানোর জন্য ওকে কি মারবে? ওকে এমন ভয় পেতে দেখে হৃদয় নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো। তারপর ঝাড়ি দিয়ে বলল,

> গতরাতে তোমার জ্বর এসেছিল তাই দেখতে এসেছি এখন কেমন আছো। তোমার কিছু হলে তো সবাই আমাকেই দোষ দিবে। বলবে আমি তোমাকে টর্চার করে অসুস্থ করে ফেলেছি। তোমাকে ওই বাড়িতে রেখে আসবো। নিচে গিয়ে রেডি হয়ে নাও। আমার এতো ঝামেলা ভালোলাগছে না।

> ওই বাড়িতে আমাকে রেখে আসবেন না প্লিজ। আম্মু খুব মারবে আমাকে। আমি আপনার রুমে থাকবো না। আমি বাইরে কুসুমের সাথে থাকবো। কখনো আপনাকে জ্বালাবো না। দয়া করুন আমাকে। প্লিজ ওরা আমাকে মেরেই ফেলবে। (কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে)

> শোনো তুমি আমাকে অনেক জ্বালিয়েছো এবার আমাকে মুক্তি দাও। আর আমার ঘাড় থেকে নামো এখন। ওখানে রেখে আসবো যা মন চাই করবে।।

হৃদীতার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো পানিতে। ও নিজেকে শক্ত করলো। এই হৃদয়হীন মানুষ টা ওর কষ্ট কখনও বুঝবে না তাই তাকে অনুরোধ কথা বৃথা। কপালে যা আছে হবে তাই ও চোখ মুছতে মুছতে ছাদ থেকে নেমে আসলো। রুমে এসে ও নিজের পোশাক টা পড়ে নিলো। যেটা পড়ে ও এই বাড়িতে এসেছিল। গোছানোর মতো ওর কিছুই নেই। । শূন্য হাতে এসেছিল তাই শূন্য হাতেই যাবে ও। ছাদ থেকে ও চলে যেতেই হৃদয় ও নেমে আসলো। এখনো বাড়িতে কেউ রুম থেকে বের হয়নি তাই এই সুযোগ হৃদয় ওকে সাথে নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো। হৃদীতা কোনো কথায় বলছে না।শুধু মাঝে মাঝে চোখের পানি মুছতেছে। হৃদয় গাড়িতে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

> আম্মু যে কাপড় আর জুয়েলারি দিয়েছিল ওগুলো তোমার। তাই ওটা সাথে নিয়ে আসলেই পারতে।

> লাগবে না। কাজের মেয়েদের দামি শাড়ি আর জুয়েলারিতে মানায় না। আমি যেমন আছি তেমনি থাকবো। বড় লোকের অনুগ্রহ নিয়ে নিজের অভ্যাস খারাপ করতে চাইনা। (মুখ কঠিন করে)

> তোমার এই একটাই সমস্যা জানো? লেকচার দিতে শুরু করলে থামার নাম থাকে না যতোসব।তোমার যা ইচ্ছা করো আমার কি? মরে যাও চলে যাও তাতে আমার কিছু যায় আসেনা বুঝলে? (হুঙ্কার দিয়ে )

> জানি আমি। (শব্দ করে কেঁদে উঠে)

হৃদয় ওর কথায় খুব রেগে গেলো তাই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো আর ভাবলো এই মেয়েটা করুনার যোগ্যই না।। মনে হচ্ছে চোখের নিমিষে ওরা ও বাড়িতে পৌঁছে গেলো। হৃদয় গাড়ি থেকে নেমে ওর হাত ধরে বাইরে বের করে দিয়ে আবার গাড়িতে গিয়ে বসলো। হৃদীতা বাড়ির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। কোন মুখে ভেতরে যাবে ওর প্রচণ্ড ভয় করছে। চোখের পানি মনে হচ্ছে ভয়ে পালিয়ে গেছে। গত দুই দিন তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি ওর শরীর অনেক দুর্বল লাগছে। অনেক সময় বাইরে দাড়িয়ে থেকে ও শেষ পযর্ন্ত ভেরতে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো। ওর হাত পা কাপছে ভয়ে। তবুও মনে সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলো।রিয়া বেলকোনিতে দাড়িয়ে ব্রাশ করছিল হঠাৎ নিচে ওকে দেখে ও চিৎকার দিয়ে উঠলো।

> ওই তুই এখানে কেনো? ওখানেই দাড়া ভেতরে
আসবি না।

কথাটা ভলেই ও ভিতরে চলে গেলো। হৃদীতা ওর কথা কানে জেতেই দাড়িয়ে পড়লো। ওর জানা আছে এখন কি হতে চেলেছে ওর সাথে। ভেবে নিলো ওরা মারবে বকবে ও একটুও প্রতিবাদ করবে না। অন্যায় করেছে শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে। নিয়তি ওর সাথে খেলছে। তাই ও নিজের ভাগ্যকে সেই নিয়তির হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। মৃত্যুর উপরে আর তো কোনো কথা নেই।

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটি ভৌতিক কাল্পনিক গল্প তাই ভালো না লাগলে বাজে মন্তব্য না করে দয়াকরে ইগনোর করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here