দৃষ্টির_অগোচরে পর্ব_৬

দৃষ্টির_অগোচরে পর্ব_৬
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদীতা দাড়িয়ে আছে বাইরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো সবাই এসে যাবে। ও নিজেকে প্রস্তুত করছে সব কিছু সহ্য করার জন্য। অন্যদিকে হৃদয় ওকে রেখে রুমে গিয়ে বসে আছে। ওর একটু টেনশন হচ্ছে বাড়িতে কোনো ঝামেলা হবে কি না তাই জন্য। কিছু সময় পর ওকে খাবারের জন্য কুসুম ডেকে গেলো। হৃদয় ভয়ে ভয়ে নিচে গিয়ে টেবিলে বসলো। হৃদয়ের আম্মা দীলারা বেগম ওর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর গম্ভীর হয়ে বললেন,
> তুই একা কেনো? হৃদীতা কোথায়? সে তো গতকাল কিছুই খেলো না।

> আম্মু ও আসবে না। (মাথা নিচু করে)

> কেনো আসবে না? (ভ্রু কুচকে)

> ওকে ওই বাড়িতে রেখে এসেছি। শুধু ঝামেলা করে তাই জন্য। ওই বাড়িতেই থাক,ভালো হবে। (হাসি মুখে)

> ওকে কার অনুমতি নিয়ে রেখে আসা হয়েছে? একবার ও শুনেছো আমার কাছে? (রেগে)

> না আম্মা আমার মনে হলো তাই।

> কুসুম হৃদয়ের খাবার ফ্রিজে তুলে রাখ। হৃদীতা বাড়িতে ফিরলে এক সাথে খেতে দিয়ে দিস। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। ফিরে এসে হৃদীতাকে দেখতে চাই।( হুকুম দিয়ে )

> আম্মু একটু বোঝার চেষ্টা করো।

> তুই কি সব ভুলে গিয়েছিস? আমার সাথে একটা কথাও আর বলবি না। আমার সামনে থেকে এখুনি যা। ওকে নিয়ে আসতে পারলে আসিস নয়তো না।

কথাটা বলেই দীলারা বেগম উঠে পড়লেন। হৃদয় ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদয়ের রাগ হচ্ছে হৃদীতার উপরে। ওর জন্যই ওর মা এমন পাল্টে যাচ্ছে। আগে কখনও এমন ছিল না। হৃদয় জানে এখন যদি ওকে না আনতে যায় তাহলে ওর মা দীলারা বেগম ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে দুবার ভাববে না। উনি যা বলেন তাই করেন। তাই হৃদয় টেবিলে একটা থাবা দিয়ে উঠে হনহন করে বাইরে চলে গেলো। বাইরে এসে গাড়ি নিয়ে হৃদীতার বাড়ির দিকে ছুটে চললো।

অন্যদিকে কয়েকমিনিটের মধ্যেই রিয়া আর ওর আম্মু এসে দাড়ালো হৃদীতার সামনে।হৃদীতা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। রিয়া এসেই ওর গালে একটা জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। হঠাৎ থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হৃদীতা ছিটকে পড়ে গেলো।রিয়া আবার ওকে গিয়ে তুলে দাড় করালো।

> রাজরানী হবার খুব স্বপ্ন ছিল তাই না? হৃদয় দিয়েছে তো সব স্বপ্ন পূরণ করে? নাকি এখনো বাকী আছে কিছু? তোর এখানে কোনো জায়গা হবে না। এখুনি বের হয়ে যায়। (ধাক্কা দিয়ে )

> কোথায় যাবো আমি? দয়াকরে আমাকে থাকতে দাও আপু। আমি কথা দিতেছি কখনো তোমার অবাধ্য হবো না। তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো। প্লিজ আপু আমাকে দয়াকরে একটু জায়গা দাও। (হাত জোড় করে)

> তুই আমার স্বপ্ন ভেঙেছিস আর আমি তোকে ভাঙবো। কি করে ভাবলি আমি তোকে সাহায্য করবো? কখনো করবো না। কোথায় যাবি আমি কি জানি? কাজে মেয়ের হঠাৎ স্বপ্ন দেখেছিল রাজরানী হবার। দিলো তো হৃদয় সেই স্বপ্নে পানি ঢেলে?

রিয়া বকতে বকতে হৃদীতার চুল ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। ও তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে গিয়ে বাড়ির সামনে একটা গাড়ি দাড় করানো ছিল ওটাতে গিয়ে ধাক্কা খেলো। ওর মাথায় প্রচণ্ড লেগেছে। এমনিতেই ও দুর্বল ছিল তারপর এমন আঘাত লাগার জন্য ও জ্ঞান হারালো। হৃদীতা মাটিতে পড়ে আছে। রিয়া আর ওর মা বিষয়টা অন্যদিকে গড়াবে বুঝতে পারেনি। ও এতোটা আঘাত করতে চাইনি। হঠাৎ এমন হবে ও বুঝতে পারেনি। রিয়া ওর মায়ের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালো। ওর মা ওর দিকে ভ্র নাচিয়ে জিঙ্গাসা করলো বেঁচে আছেতো? রিয়া কথা বলছে না। ওর হাত পা কাপছে। মারা গেলে ওকে জেলে যেতে হবে ভেবেই ওর আরও ভয় বেড়ে যাচ্ছে। হৃদীতার কপাল কেটে রক্ত প ড়ছে। কি করবে এখন ওদের দাঁড়িয়ে ভাবতে ভাবতেই হৃদয় গাড়ি এসে থামলো। হৃদয় গাড়ি থেকে নেমে রিয়াকে দেখে বললো,

> মেয়েটাকে ডাকো আম্মা ওকে নিয়ে যেতে বলেছে। গতকাল এসেছিলাম তোমাকে খুজতে কিন্তু পাইনি। দ্রুত ডাকো ওকে। আমার ক্ষধা পেয়েছে বাড়িতে যেতে হবে।

হৃদয়ের কথায় রিয়া চুপ করে আছে। ওর হাত সমানে ঠকঠক করে কাঁপছে। হৃদীতা গাড়ির ওপাশে পড়ে আছে হৃদয় ওকে দেখতে পাচ্ছে না। হৃদয় কে শান্ত করতে রিয়ার মা মুখ খুললো। উনি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,

> হৃদীতা কোথায় আছে জানিনা। এখানে আসেনি। তুমি কোন সাহসে আবার আমার বাড়িতে এসেছো? এখুনি চলে যাও বলছি।

> ও হ্যালো আমি থাকতে আসিনি আপনার বাড়িতে। ওকে নিয়েই চলে যাবো। আর ওকে আমি নিজে এখানে রেখে গিয়েছি আর ও এই বাড়িতেই আছে। শুনেন বেশি ঝামেলা করবেন না তাড়াতাড়ি করুন নয়তো মাথা গরম হয়ে গেলে আমি কিন্তু নিজেই গিয়ে খুঁজে নিবো।

> আমি কিন্তু পুলিশ ডাকবো। বের হয়ে যাও নয়তো খারাপ হচ্ছে বলে দিলাম।

হৃদয় দাড়িয়ে থেকে ভাবলো এরা কেউ ওকে ডাকবে না তাই নিজেই ওকে খুঁজে নিয়ে আসি। কথাটা ভেবেই ও সামনে এগিয়ে আসলো। ওকে এগিয়ে আসতে দেখে রিয়া ঢোক গিলে ওকে আসতে মানা করলো কিন্তু এ শুনলো না। হৃদয় কয়েকপা এগিয়ে আসতেই দেখলো হৃদীতা গাড়ির সামনে পড়ে আছে। হৃদয় দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরলো। মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে। হৃদয় ওকে নিজের পায়ের উপরে রেখে পকেট থেকে রোমাল টা বের করে ওর মাথায় ঠেসে ধরে ওকে কোলে তুলে নিয়ে রিয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালো।

> ওর সাথে কি করছো তোমারা? যদি কিছু হয়ে যায় আমি কিন্তু তোমাদের ছাড়বো না। ও আমার বউ ঠিক আছে? ওর সাথে আমি যাই করি তোমারা কেনো করবে? ও এতিম আর কাজের মেয়ে ছিল কিন্তু এখন না। তোমাদের কোনো আইডিয়া আছে ওর সম্পর্কে? ও আমাদের বাড়ির বউ তাই আমার সম্পত্তির অর্ধেক মালিকানা ওর নামে হয়ে গেছে। আমি যতই না মানি ওকে। এই সত্যি টা কখনও মিথ্যা হয়ে যাবে না। আমার আম্মু তোমাদেরকে জেলে পাঠাবে।(চিৎকার করে)

হৃদয়ের কথায় ওরা চুপ করে আছে তাই ও আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলো। হৃদয় ওকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে গেলো। ওর অনেক টেনশন হচ্ছে ওর ভুলের জন্যই এমন হলো। এই কথাটা ওর আম্মা জানতে পারলে তো ওকে মেরেই ফেলবে। হৃদীতাকে ডাক্তার ওটিতে নিয়ে গেছে। কিছু সময় পরে ডাক্তার বের হলেন।। হৃদয় বসেছিল এতো সময়। ডাক্তার কে বের হতে দেখে ও ছুটে গেলো উনার কাছে।

> আঙ্কেল কি অবস্থা ওর? বেঁচে আছে তো?

> কি যে বলোনা না তুমি। বেঁচে কেনো থাকবে না। মাথায় লেগে কেটে গেছে আর মেয়েটা অসুস্থ ছিল তাই হঠাৎ এমন লাগার জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। কিছু সময় পরেই জ্ঞান ফিরবে। কপালে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। খুব বেশি কাঁটেনি দুদিন ড্রেসিং করলেই ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

> আঙ্কেল বাঁচালেন আমাকে। আম্মু জানলে জানিনা কি করবে। আম্মু কে না বলে আবার আরেক টা ভুল করলাম। কি হচ্ছে আমার সাথে বুঝতেছি না। (মাথায় হাত রেখে)

> শুনেছি আমি সব। আর তোমার আম্মুকে আমি ফোন দিয়েছি উনি আসছেন। টেনশন করোনা।

> আপনি ফোন দিয়ে সব বলে দিয়েছেন?

> আরে বাবা আমি আছি না। তোমার কিছু হবে না। যাও হৃদীতার কাছে গিয়ে বসো। আমি আসছি।

বলেই ডাক্তার চলে গেলো।হৃদয় ধীর পায়ে হৃদীতার দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো। খুব সংকোচ হচ্ছে। সকালে ওমন না করলেও পারতো। রিয়া মেয়েটার মন-মানুষিকতা এতো খারাপ ওর জানা ছিল না। ও সব সময় বলতো হৃদীতাকে ও নিজের বোনের মতো ভালোবাসে কিন্তু হৃদীতা সব সময় ওর নামে শুধু বদনাম করে। হৃদয় আগে রিয়ার কাছে ওর নামে খারাপ খারাপ কথা শুনে ওর মন বিষিয়ে গেয়েছিল। প্রথমে যেদিন রিয়ার সাথে ও ওই বাড়িতে যায় দেখা হয়েছিল হৃদীতার সাথে। সহজ সরল আর মিষ্টি একটা মেয়েকে দেখে হৃদয়ের অনেক ভালো লেগেছিল। অল্প বয়সি মেয়েটাকে দেখে ওর মনে মায়া হয়েছিল কিন্তু রিয়া বলেছিল ওই মেয়েটার চেহারা যেমন সুন্দর ওর মনের মধ্যে তত বেশি খারাপ চিন্তা। সেদিন রাস্তায় ওকে থাপ্পড় মাথার কারণ ছিল রিয়া। হৃদয় রিয়ার কাছে শুনেছিল হৃদীতার পড়াশুনা কেমন চলছে। কি অবস্থা ওর কিন্তু রিয়া তার উত্তরে ওকে বলেছিল,

> তুমি ওকে নিয়ে এতো ভাবো আর ও তোমার নামে আমাকে আজেবাজে কথা বলেছে। বলেছে তুমি বড়লোক বাপের বখে যাওয়া নেশাখোর ছেলে। তোমার চরিত্র অনেক খারাপ। তুমি মেয়েদেরকে ঠকাও। তোমাকে দেখেই ও বুঝে গেছে তুমি জঘন্য একজন মানুষ।

হৃদয় অল্প কথাতেই রেগে যায়। তারপর উপর ওর নামে এমন বলাতে ওর প্রচণ্ড রাগ হয়ে গিয়েছিল তাই ওমন করে ওকে রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে মেয়েছিল। হৃদয় ভাবছে রিয়াকে বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি। হৃদীতার জন্য ওর মায়া হয়েছিল এটা ভেবে যে এই টুকু একটা বাচ্চা মেয়ে এতো পরিশ্রম করে তবুও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে হাসিমুখে এই জন্য। অন্যকিছু ওর মনে ছিল না। সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষের জন্য বড়লোকদের মনে দয়া মায়া হতেই পারে তাই বলে তাকে বউ করে ঘরে আনার কথা খুব কম মানুষ ভেবে থাকে। হৃদয় ও তাদের মধ্যে একজন ছিল। ওতো কখনো ভাবেনি হৃদীতাকে ওর বিয়ে করতে হবে। হঠাৎ রাগের মাথায় ভুল করেছে ও এটাক মেনে নিতে পারছে না। কখনও হয়তো মানতে পারবেও না। হৃদীতাকে ওর ভালোলাগে কিন্তু সংসার করতে হলে তো ভালোবাসার প্রয়োজন হয়। ভালো না বেসে এক সাথে এক ছাদের নিচে জোর করে বসবাস করা মানে নিজেই নিজেকে ঠকানো। হৃদয় মনের বিরুদ্ধে কিছুই করবে না। হৃদীতাকে ও মন থেকে মানতে পারেনি। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হৃদয় দরজা খুলে হৃদীতার পাশে গিয়ে দাড়ালো। মুখটা শুকিয়ে আছে মেয়েটার। ঠোঁটের কোনে রক্ত লেগে আছে। চুল গুলো বাতাসে উঠছে। হৃদয় ওর পাশে বসে ওর হাতটা নিজের মুঠোয় নিলো। সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েটাকে আর কোনো কষ্ট দিবে না। ওর মতো ও ভালো থাকুক। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওকে ওর মতো ছেড়ে দিবে। প্রয়োজন ছাড়া ওর সামনে আসবে না। কাজের মেয়ে হোক আর যায় হোক ও মানুষ এটাই ওর বড় পরিচয়। হৃদয় এমন করতো না শুধু রিয়ার কথা শুনেই এমন করেছে। নিজের উপরে এখন রাগ হচ্ছে। ও হৃদীতার দিকে এক দৃষ্টিতে থাকিতে কথা গুলো ভাবছে তখনই হৃদয়ের মা হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো। উনি আসতেই হৃদয় দাঁড়িয়ে পড়লো। ও সরে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। দীলারা বেগম ওর দিকে কটমট দৃষ্টিতে থাকিয়ে হৃদীতার কাছে এসে বসলেন। তারপর ওর মাথায় হাত রেখে কঠিন গলায় বললেন,

> তোমার জানা আছে দলিলের ব্যপারে? ওখানে কি লেখা আছে?

> হুম জানি।

> ভুলে গেলে আবার বলছি। ওখানে লেখা আছে তোমার স্ত্রী তোমার সম্পত্তির অর্ধেক মালিকানা পাবেন। তাঁর যদি কিছু হয়ে যায় তবে সব কিছুই সরকারি ফান্ডে জমা হয়ে যাবে। আর আমি ভেবেছি আমার সম্পত্তির সবটাই হৃদীতাকে দিয়ে দিবো। আমি মারা যাবার পরে অন্তত এটা ভেবে শান্তি পাবো যে অন্যায় কিছু করিনি আমি। এতদিন তোমার অনেক অন্যায় আমি সহ্য করেছি আর না। হৃদীতাকে বাড়িতে নিয়ে গেলে তুমি ওর ধারে কাছেও আসবে না। দূরে থাকবে ওর থেকে।সব আমার ভুল ছিল। ভেবেছিলাম মেয়েটার মুখ দেখে হলেও তুমি ভালো হবে।

হৃদয় মাথা নিচু করে শুনছে সবটা। আজ ও ভুল করেছে বলে এখনো শান্ত আছে। নয়তো প্রচণ্ড রেগে যেতো। হৃদয় অশান্ত প্রকৃতির ছেলে। ওর মন এখন ভালো তো একটু পরে আবার খারাপ। কখন কি করতে হবে না ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এই জন্য ওকে যে পস্তাতে হয়না এমন টা না।। হৃদয় মন খারাপ করে বের হয়ে আসলো হসপিটাল থেকে। তারপর শাফিনের বাড়িতে গিয়ে খাবার খেয়ে নিলো। শাফিন কে ও কিছুই বলেনি আগে থেকে। ওদের বাড়িতে এসেই ও টেবিলে বসে চিৎকার করে ডাকলো,

> আন্টি কোথায় আপনি? আমার খাবার দেন। দুদিন খাবার খাইনা অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।

শাফিনের আম্মা ওকে অনেক ভালোবাসেন। দুদিন খাইনা জেনে উনি ওকে আদর করে অনেক যত্ন করে খাবার দিলেন। শাফিন বাইরে ছিল হঠাৎ বাইরে থেকে এসে ওকে দেখে ও অবাক হয়ে ওর পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। হৃদয় ওর দিকে একবার থাকিয়ে না দেখার ভান করে খাওয়াতে মন দিলো। শাফিন ওর দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।

> বাড়িতে সব ঠিকঠাক আছে? ভাবি কেমন আছে?

> ভালো। (খেতে খেতে)

> এখানে কখন এসেছিস? তোর বাড়িতে না খেয়ে আমাদের বাড়িতে কি করছিস।

শাফিন ওকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। হৃদয় চুপ করে শুনছে। হঠাৎ ওর কাশি শুরু হলো তাই শাফিনের আম্মা ওকে বকা দিলো। ছেলেটা খাবার খাচ্ছে আর ও পুলিশের মতো একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে। শাফিন মায়ের থেকে ঝাড়ি খেয়ে চুপ করলো কিন্তু ওর মন বলছে কিছু একটা হয়েছে। কারণ ও এই বাড়িতে ঝামেলা ছাড়া আসে না। যখনই আসে তখনই কিছু একটা করেই তবেই আসে। ওকে এমন ভাবতে দেখে হৃদয় খাবার খেয়ে ওকে ইগনোর করে উঠে গিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে টিভি অন করলো। শাফিন ও ওর পেছনে পেছনে এসে বসলো।

> কিরে বল?

> আন্টির রান্না টা খুব ভালো জানিস? খুভ মজা লেগেছে।

ও জোরে চিৎকার করে শাফিনের আম্মাকে বলে দিলো

> আন্টি তোমার রান্না খুবই মজা হয়েছে। আমি কিন্তু প্রায় আসবো এখন থেকে।

> প্রতিবার তুই এই কথাটাই বলিস কিন্তু আসিস না। (শাফিনের আম্মা)

শাফিন বিরক্ত হয়ে গেলো হৃদয়ের উপরে। ও প্রশ্ন করছে কিন্তু উওর পাচ্ছে না তাই ও উঠে চলে আসলো রুমে। তারপর দীলারা বেগম কে ফোন দিলো।

> আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি কেমন আছেন?

> ওয়ালাইকুমাসালাম। ভালো আর তোমার বন্ধু কোথায় রাখলো। জানো কি করেছে সে?

> না আন্টি। শোনার জন্যই ফোন দিয়েছি। কি হয়েছে বলুন তো?

হৃদয়ের মা ওকে সব ঘটনা খুলে বলল। ওর সব শুনে রাগ হচ্ছে। ওইটা আসলেই মানুষ না। কথা শেষ হতেই হৃদয় ওর রুমে আসলো। শাফিন রাগি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো,

> এমন করে কি দেখছিস? আমার কোনো দোষ নেই। ওরা এমন করবে আমি কি জানতাম নাকি

> তুই তো ফিটার খাস বুঝবি কেমন করে। শোন বাড়িতে যা এখন । আন্টি তোকে বাড়িতে ডেকেছে।

> রাত হয়ে এসেছে। আমি সকালে যাবো। সারাদিন ওই মেয়েটার চক্করেই পার হয়েছে। শোন জ্বালাস না। তুই অন্যরুমে যা। আমাকে দেখলে তোর এখন রাগ হবে আমি বুঝেছি। তুই আর আমার আম্মা এক টাইপের বুঝলি?

হৃদয়ের কথা শুনে শাফিনের সত্যি রাগ হয়ে গেলো। ও কিছু না বলেই বের হয়ে গেলো। এই ছেলেটার মাথা আগেই খারাপ ছিল এখন আরও বেশী হয়েছে। শাফিন যেতেই হৃদয় ওর বিছানায় শুয়ে পড়লো।সারাদিনের দৌড়াদৌড়ি করে হৃদয় ক্লান্ত ছিল তাই বিছানায় শুতেই ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।

গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হৃদয় হেটে চলেছে। ঘন জঙ্গলের জন্য ভেতরে আবছা অন্ধকার বিরাজ করছে। এখন ঠিক কয়টা বাজে ওর জানা নেই। রাত দিন এখানে মিলেমিশে একাকার। জঙ্গলের মধ্যে দূর থেকে মাঝে মাঝে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে। শুনশান নিরবতা কোথাও কেউ নেই। শুকনো পাতা উপর পা ফেলার জন্য মচমচ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোন যাচ্ছে না। হৃদয় শেয়ালের ডাক শুনে বুঝলো এখন রাত হবে হয়তো। নাকি দিনের বেলাতেও জঙ্গলে শেয়াল ডাকে। কি জানি ওর এই সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই। ও সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা সম্পূর্ণ একটা কাল্পনিক গল্প তাই বাস্তবের সাথে মিল করার চেষ্টা করা বোকামি হবে। ভালো না লাগলে বাজে মন্তব্য না করে দয়াকরে ইগনোর করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here