দৃষ্টির_অগোচরে পর্ব_৭

দৃষ্টির_অগোচরে পর্ব_৭
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদয় ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে চলেছে। শুকনো পাতার শব্দ ওর কানে তীব্রভাবে আঘাত করছে। ওর বিরক্ত লাগছে কারণ বাতাসে ফিসফিস কথা বলার শব্দ ভেসে আসছিল কিন্তু এই শুকনো পাতার মড়মড় শব্দের জন্য ওই শব্দ টা শোনা যাচ্ছে না। হৃদয় দাঁড়িয়ে শুনতে পারতো কিন্তু ওর সামনে যাবার অনেক তাড়া আছে। ওর যে করেই হোক সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কিছু একটা অপেক্ষা করছে ওর জন্য। হৃদয় এবার দৌড় লাগালো। এই রাস্তা যেনো শেষ হতেই চাইছে না। ও হাপিয়ে উঠেছে তবুও ও থামছে না। থামলেই যেনো সব শেষ হয়ে যাবে। এমন করে ও বেশ কিছুক্ষণ দৌড়ালো। অবশেষে ওর রাস্তা শেষ হলো। রাস্তার শেষ প্রান্তে বিশাল বড় একটা রাজমহল। হৃদয়ের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।অদ্ভুত সুন্দর সেই মহল। ও অবাক হয়ে তাঁকিয়ে থেকে সামনে এগিয়ে গেলো একপা দুপা করে। মহলের সামনে প্রহরী দাড়িয়ে আছে কিন্তু ওরা জেনো পাথরের মূর্তি। নড়াচড়া করছে না। ওকে দেখেও কোনো প্রতিবাদ করলো না তাই ও ভয়ে ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। পথের দুধারে নানা রঙের ফুল গাছের সারি কিন্তু একটাও জীবন্ত না কাগজের ফুলের ন্যায়। হৃদয় সেই পথ দিয়ে হেটে মহলে প্রবেশ করলো। ও ভেতরে গিয়ে আরও অবাক হলো। চারদিকে একদম শুনশান নিরবতা। কোথাও কেউ নেই। কিন্তু অদ্ভুত একটা বিষয় এখানে অসংখ্য মূর্তি আছে। বড় ছোট বৃদ্ধা ছোট বাচ্চা সবার। এমন ভাবে আছে মনে হচ্ছে একটা পরিবারেরর প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে এই মূর্তি গুলোর মাঝে। হৃদয় চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে। কয়েকটা বাচ্চার মূর্তি মেঝেতে বসানো আছে। মনে হচ্ছে ওরা খেলছে। হৃদয় সোফায় কয়েকটা মৃর্তি দেখলো ওগুলো মনে হচ্ছে কোনো ব্যাপার নিয়ে বেশ চিন্তিত। হৃদয়ের কাছে এই সব গুলো মূর্তিকে কেমন জীবন্ত মনে হচ্ছে। হয়তো কোনো জাদুকর তার জাদুর কাঠির সাহায্যে এদেরকে পাথরে পরিণত করেছে। এর মধ্যেই হৃদয়ের প্রচণ্ড পানি পিপাসা লাগলো। ও কোথাও পানি পেলো না। ওর মনে হচ্ছে এখুনি পানি ছাড়া ও বাঁচবে না। হৃদয় চিৎকার দিয়ে ডাকলো
> কেউ কি আছেন?
ওর ডাক চার দেওয়ালে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসলো কিন্তু কেউ ওর ডাকে সাড়া দিলো না। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠের মৃদু গুঞ্জন ওর কানে গেলো। হৃদয় দ্রুত পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে ঘোমটা দিয়ে একটা পাত্রে পানি নিয়ে আসছে হৃদয় অবাক হয়ে মেয়েটার কাছে হেটে গেলো। মেয়েটা পানির পাত্র টা ওর দিকে এগিয়ে দিলো। হৃদয় মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ওর হাত থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে ও বললো

>ধন্যবাদ। কিন্তু আপনি ঘোমটা দিয়ে আছেন কেনো? আপনি কে?

ওর কথায় মেয়েটা হেসে উঠে নিজের ঘোমটা ফেলে দিলো। হৃদয় মেয়েটার দিকে চমকে তাকিয়ে পিছিয়ে আসলো। কারণ ওর সামনে হৃদীতা দাড়িয়ে আছে। ওর কপাল থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে রক্ত পড়ছে। ভীষন খারাপ লাগলো হৃদয়ের ওর জন্য। ও হৃদীতার কপালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে গেলো কিন্তু তার মধ্যেই ওর ঘুম ভেঙে গেলো। হৃদয় উঠে হাপাচ্ছে। ও পাশে রাখা গ্লাস থেকে পানি খাবার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েও ফিরিয়ে আনলো। ওর মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই ও পানি খেয়েছে। হাত দিয়ে মুখ মুছে দেখলো সত্যি মুখে পানির ছাপ আর হাতেও। হৃদয় অবাক হচ্ছে এটা কেমন জীবন্ত স্বপ্ন। ওর মনে হলো সবটা সত্যি ছিল। এর মধ্যেই ওর ভয়ানক ভাবে হৃদীতাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। এখন যেতেই হবে যে করেই হোক। ও বালিশের পাশে রাখা ফোন থেকে টাইম দেখে নিলো। রাত সমান সমান দুইটা বাজে। ওর আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে বাইরে এসে দাড়ালো। শাফিন বাইরে সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু খুটখাট করছে। হৃদয় হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো। কারো পায়ের শব্দে শাফিন মাথা তুলে তাকালো। ওকে এমন আসতে দেখে ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিঞ্জাসা করলো।

> কিরে এতো রাতে বাইরে হঠাৎ?

> বাড়িতে যাচ্ছি। মেয়েটার খোঁজ নেওয়া উচিৎ ছিল।

> সকাল হলে খবর নেওয়া যাবে। এতো রাতে একা যাবি বাড়িতে?( চিন্তিত হয়ে)

> তোর বাড়ি থেকে আমার বাড়ি দশ মিনিটের রাস্তা। তাও আবার আমার কাছে গাড়ি আছে। কতো এসেছি গিয়েছি তার হিসাব আছে। আন্টি কে বলিস পরে আবার আসবো। গেলাম আমি। (জেতে জেতে)

শাফিন ওর চলে যাবার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে আটকে রাখা যাবেনা। বলেছে যখন তখনই যাবেই তাই ও চুপ করে উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আবার ল্যাপটপে নজর দিলো। ও একটা প্রজেক্ট রেডি করছে।হৃদয় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসলো। হৃদীতা বাড়িতে কি হসপিটালে ওর জানা নেই। মাঝ রাস্তায় এসে ওর মনে হলো শাফিনের থেকে জেনে আসা ভালো ছিল। হঠাৎ ফোন করার কথা মনে হলো তাই ও ওকে আবার ফোন দিলো। শাফিন ফোন ধরেই কোনো কথা না বলেই বলে দিলো

> ও বাড়িতেই আছে।

> বুঝলি কেমন করে এই কথাটাই শুনবো?

> শোন তোর সাথে বহুদিন আছি। এইটুকু বুঝতে বিরাট বুদ্ধিমান হতে হয়না।।

> লাভ ইউ দোস্ত।

> লাভ ইউ টু। সাবধানে যা আর সকালে দেখা হচ্ছে বাই।

> ওকে বাই।

হৃদয় ফোনটা কেটে দিয়ে হাসি মুখে আবার গাড়ি ছাড়লো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ও বাড়িতে পৌঁছে গেলো। হৃদয় বাড়ির ভেতরে এসে সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়ে ভাবছে ওকে কোন রুমে রেখেছে আম্মা কে জানে? আমার রুমে রাখবেন না হয়তো। কোথায় গিয়ে খুঁজবে ও। গেষ্ট রুমে অসুস্থ মানুষকে আম্মা রাখবেন না এটা ওর জানা আছে।তাই ও আগে ওর বোনের রুমে গিয়ে নক করলো। কয়েক বার খটখট শব্দ হতেই তন্ময়া দরজা খুলে তাকিয়ে দেখলো ওর ভাই দাঁড়িয়ে আছে। ও মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,

> ভাইয়া এতোরাতে তুমি? কোথায় ছিলে সারাদিন? বাড়িতে তুমি কি উৎখাত শুরু করেছো বলবে? কোথ থেকে কাকে একজন ধরে এনেছো আর তাকে নিয়ে যত সমস্যা। (বিরক্ত হয়ে)

> হু। আচ্ছা মেয়েটা কোথায় আছে বলতে পারিস? তোর রুমে আছে? (ওর কথা এড়িয়ে )

> পাগল হয়েছো তুমি? ও কেনো আমার রুমে থাকবে। আমি রুম শেয়ার করিনা। যাও তো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।( ঝাড়ি দিয়ে )

বলেই তন্ময়া ধড়াস করে দরজা বন্ধ করে দিলো। হৃদয় দাড়িয়ে ভাবছে এই মেয়েটা অত্যন্ত জেদি টাইপের। হয়তো আম্মার মতো হয়েছে। আম্মা ও এমনি। নয়তো কি আর এমন করে ওর সাথে। হৃদয় ওখান থেকে চলে এসে ওর মায়ের রুমের সামনে দাঁড়ালো কিন্তু নক করতে সাহস পেলো না। কি না কি বলবে আবার ঝামেলা শুরু হবে। তাই ও নিজের মনের অদম্য ইচ্ছা টাকে দমন করে নিজের ঘরে ফিরে আসলো। রুমে ড্রিম লাইটের জন্য আলো অন্ধকারের খেলা চলছে। সব কিছুই দেখা যায় আবার কিছুই দেখা যায় না এমন অবস্থ। হৃদয় কিছু না ভেবে গায়ের শার্ট টা খুলে রেখে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। এখন ওর কিছুতেই ঘুম আসবে না। ওর মনের মধ্যে কিছু হলে ওটা না করা পযর্ন্ত ওর শান্তি লাগে না। ও হাত পা দুদিন ছড়িয়ে দিয়ে হামি ছাড়তে গিয়ে হঠাৎ ওর মনে হলো কিছু একটা ওর পায়ের নিচে নড়ছে আর ওর কাধের সাথে কারও নিশ্বাস এসে বাড়ি খাচ্ছে। হৃদয় ভ্রু কুচকে উঠে বসলো। তারপর লাইট জ্বালিয়ে ওর চোখ ছানাবড়া। বিছানায় হৃদীতা শুয়ে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা আছে। হৃদীতা গভীর ঘুমে অচেতন। চুল গুলো বালিশের উপরে ছড়িয়ে রাখা আর ঠোঁট দুখানা শুকিয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে ওর ভীষন ভালো লাগলো। মনে হলো যাক ভালো আছে। হৃদয় ওর মাথায় হাত রেখে দেখলো জ্বর নেই। চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে ও মুখে এসে পড়ছে তাই হৃদীতা বারবার মুখ কাচুমাচু করছে দেখে হৃদয় একটা রাবার দিয়ে ওর চুল গুলো পেচিয়ে দিলো। তারপর ঘরের লাইট টা বন্ধ করে হৃদীতার পাশে এসে শুয়ে পড়লো।

সকালে হৃদীতা চোখ মেলেই দেখলো হৃদয় ওর গায়ের উপরে হাত রেখে শুয়ে আছে। ও হৃদয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে উনি দেখতে কত সুন্দর কিন্তু ওর ব্যবহার এতো নিষ্ঠুর কেনো? সুন্দর চেহারার সাথে যে সুন্দর একটা মনের বড্ড বেশি প্রয়োজন। আপনি কবে ভালো হয়ে যাবেন? নাকি আপনি এমনি থাকবেন সারাজীবন? আমি আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিবো। আমি কখনও ভাবতেই পারিনাই আপনার স্ত্রী হয়ে আমি এই বাড়িতে আসবো। আমি তো কাজের মেয়ে। কোথায় কাজের মেয়ে আর কোথায় মালিক। তেলে জলে কখনও মিশে না। শুধু একটা আশ্রয় পেয়ে নেই। কথা গুলো ভেবে ও দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো। ওর মাথাটা মনে হচ্ছে প্রচণ্ড ভার হয়ে আছে। আর সব কিছুই মনে হচ্ছে দুলছে। হৃদীতা আস্তে পা ফেলে সামনে এগিয়ে গেলো কিন্তু তাল সামলাতে না পেরে দরজার কাছে এসে হুড়হুড় করে পড়ে গেলো। হঠাৎ কিছুর শব্দে হৃদয় চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতা দরজার কাছে পড়ে আছে। ও তাড়াতাড়ি ওকে ধরে বিছানায় এনে বসালো।

> এই মেয়ে নিজেকে কি ভাবো হুম একা একাই মাতব্বরি করতে চলে গেছো। আমাকে ডাকলে কি এমন হতো শুনি? কথা শোনো না কেনো? (বকা দিয়ে )

হৃদীতা কোনো কথা বলছে না। ও শুধু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এই হৃদয় কে ওর চেনা লাগছে না। মনে মনে ভাবছে ও এর আবার কি হলো হঠাৎ আমার জন্য এমন উতালা হচ্ছে। আবার কোনো পরিকল্পনা নিশ্চয়ই এটেছে। কিন্তু কি সেটা বুঝতে হবে। ওকে এমন ভাবতে দেখে হৃদয় ওর মুখের সামনে হাত নেড়ে বলল

>ও হ্যালো তোমাকে কিছু বলেছি আমি। এমন ভাবে চিন্তা করছো মনে হচ্ছে বিশ্ব জয়ের পরিকল্পনা করতে বসেছো।

> সরি আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন তাই আপনাকে আর ডাকতে চাইনি। ভেবেছিলাম এইটুকু কাজ আমি পারবো। অনেক সকাল হয়ে গেছে বাইরে যেতে হবে।

> বাইরে কেনো? শুনো এই বাড়িতে না অনেক কাজে মানুষ আছে তোমার কাজের জন্য কেউ বসে নেই। ফ্রেস হয়ে কাজ নেই। ঘুমিয়ে পড়ো আবার। (হুকুম করে)

> আমার ঘুম আসবে না। অভ্যাস নেই তো তাই। আপনি আমাকে নিচে দিয়ে আসবেন আমি একটু বসে থাকবো। চা খেলে হয়তো ভালো লাগবে।

> বুঝেছি। সারাজীবনের অভ্যাস একদিনে যাবে না। চলো দিয়ে আসি। আমি ঘুমাবো আবার।

কথাটা বলেই হৃদয় ওর হাত ধরে সাবধানে নিচে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দিলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাড়িতে এখন কেউ ঘুম থেকে উঠেনি। সকাল ছয়টা বাজে এখন। মানে বাড়িতে এখন মাঝরাত। সব পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। কাজের লোকগুলো আটটার সময় কাজে আসবে এখন ওদেরকে পাওয়া যাবে না। হৃদয় কখনও রান্না ঘরেই যায়নি তাহলে ওর জন্য চা কে তৈরী করে দিবে হৃদয় চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদীতা ওকে বলল,

> শুনছেন আপনি আমাকে রান্না ঘরে দিয়ে আসনে আমি একটু চা তৈরী করবো।

হৃদয় কিছু একটা ভেবে ওকে না নিয়ে নিজেই চা তৈরি করতে চলে গেলো। তারপর ফোনের ভিডিও দেখে মোটামুটি চা তৈরী করে নিয়ে হৃদীতার সামনে রেখে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেমন হয়েছে জানার জন্য ওর মন কেমন করছে। হৃদীতা অবাক হয়েই হচ্ছে ওর কর্মকাণ্ড দেখে। বুঝতেই পারছে না হঠাৎ এমন বদলে কেনো গেলো। যাইহোক আপাতত কিছু না ভেবে ও চায়ে চুমুক দিলো। চায়ে চিনি আর লবণ দিয়েছে তবে এটা পরিমাণ মতো। হৃদীতা এক চুমুক নিয়েই মনে মনে ভাবছে এমন চা আমি জীবনেও খাইনি। চায়ে যে লবন দিতে হয় এটা তো আমার জানা ছিল না। তবে ভালোই খারাপ না চলবে কোনো রকমে। হৃদয় ওর দিকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদীতা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,

> চমৎকার চা। জীবনে কখনও খাইনি। অনেক ভালো হয়েছে। আপনি বাকি যেটুকু আছে আমার কাছে রেখে যান আমি অনেক সময় পযর্ন্ত বসে থাকবো তখন খাবো।

> হৃদয় কখনও খারাপ কাজ করেনা। হৃদয় সব কাজেই পারদর্শী।

> হুম সে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। যাইহোক আপনি এনে রাখুন।

হৃদয় কথা না বাড়িয়ে চায়ের পাত্র ওর সামনে রেখে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। এখন ওর রুমে যেতে ইচ্ছা করছে না তাই সোফাতেই ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ওর চিন্তা এই মেয়েটা আবার কিছু ঘটাবে সেই জন্য। হৃদীতা সোফায় পা তুলে বসে চা খেতে খেতে হঠাৎ ওর চোখ দুটো ধরে আসলো। ও চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো। ডাইনিং রুমের সোফায় দুপ্রান্তে দুজন ঘুমিয়ে আছে । অনেক বেলা পযর্ন্ত ওরা ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ হৃদয় কারো ডাকে জেগে গেলো। ও উঠে বসে দেখলো দীলারা বেগম ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।
> ওই এখানে কেনো তুই? দুজন রুমে না ঘুমিয়ে বাইরের পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস। আবার কিছু করেছিস তাই না?

> আমাকে দেখলেই তোমার শুধু সন্দেহ হয় কেনো বলোতো? আমি ওই মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিলাম। আর তুমি জানো আমি চা তৈরী করে ওকে দিয়েছি।( চোখ মুছতে মুছতে)

> উদ্ধার করেছো আমাকে। তাই তো বলি কোন অকর্মণ্য লবণ দিয়ে চা তৈরি করেছে। চা খেলাম না সুস্বাদু শরবত খেলাম।

> আম্মা ওই মেয়েটা তো কিছুই বললো না। ও ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।

> ও ভয়ে কিছু বলেনি।যাইহোক খাবার খেয়ে ওকে হসপিটালে নিয়ে যা। ড্রেসিং করতে হবে। ডাক্তার বাড়িতে আসতো কিন্তু কখন সময় সুযোগ হবে বলা যায় না। (চিন্তিত হয়ে)

> তুমি যাও নয়তো বাবাকে বলো। আমার কাজ আছে।

> কাজ তো সেই ঘুরে বেড়ানো। ওকে দ্রুত সুস্থ হতে হবে। বাড়িতে অনুষ্ঠানে আয়োজন করতে হবে। কেউ তো বউ দেখেনি সবাই ফোন দিচ্ছে।

> আমি সেদিন বাড়িতে থাকবো না কিন্তু। সবাই বলবে হৃদয় কাজে মেয়ে বিয়ে করেছে আমি পারবোনা সহ্য করতে।

> আগে ভাবা দরকার ছিল।

হৃদয় কিছু একটা ভেবে বাধ্য ছেলের মতো খাবার টেবিলে বসে পড়লো। ওর অপর দিয়ে হৃদীতা বসে খাবার খাচ্ছে। হৃদয় ওর দিকে তাকিয়ে নিজের খাওয়াতে মন দিলো। হৃদয় মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকিয়ে দেখছে কিন্তু হৃদীতা একবার ও মাথা তুলছে না। ওকে এমন মনোযোগ দিয়ে খেতে দেখে হৃদয় ভ্রু কুচকে ভাবছে এই মেয়েটা কি রাক্ষস নাকি। আশপাশের না তাকিয়ে খেয়েই চলেছে। দেখে তো মনে হচ্ছে রোগা পাতলা শরির। এতো খেয়ে কোথায় রাখছে কে জানে। হঠাৎ হৃদীতা ওর দিকে তাকিয়ে ওকে অবাক করে দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওকে খাবার খেতে ইশারা করলো। হৃদয় লজ্জা পেয়ে গেছে মেয়েটা তো ভারী দুষ্ট। হুট করে ধরে ফেলেছে ওকে কেউ দেখছে। হৃদয় মনে মনে ভাবলো আর এমন ভুল করা যাবে না। উদ্ভট মেয়ে একটা।।

সকালের খাবার খেয়ে হৃদয় ওকে নিয়ে হসপিটালে যাবার জন্য বের হলো। হৃদীতা কালো রঙের একটা শাড়ি, কানে দুল আর কয়েকটা কালো রঙের চুড়ি পড়েছে। ও পড়তে চাইনি কিন্তু ওর শাশুড়ি ওকে জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে। এই সামান্য সাজে ওকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। হৃদয় মাঝে মাঝে ওকে দেখছে কিন্তু হৃদীতা সামনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। হৃদয়ের হঠাৎ মনে হচ্ছে এই হৃদীতাকে ওর চেনা নেই। এর চোখে কোনো ভয় নেই আছে অন্যরকম একটা রহস্য।কিন্তু হৃদীতা তো এমন না। হৃদয় গাড়ি থামিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
> এমন পাথরে মূর্তির মতো তাকিয়ে আছো কেনো?

ওর কথায় হৃদীতা কোনো উত্তর করলো না।কিন্তু হঠাৎ ও নিজের কপালের ব্যান্ডেজ টা খুলতে শুরু করলো। হৃদয় ওকে আটকানো চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। হৃদীতা খুলে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো আমার কিছুই হয়নি। আমার কিছু হতেই পারেনা। আমার শরীরের ক্ষত আমি নিজেই ঠিক করতে পারি। হৃদয় ওর কথায় অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর কপালে কোনো দাগ নেই। মনে হচ্ছে কখনও কোনো দিন ওর কিছুই হয়নি। হৃদয় যে নিজ চোখে দেখেছিল ওর কপালে সেলাই দিতে তাহলে ওটা কি ছিল?

(ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটি ভৌতিক কাল্পনিক গল্প তাই এটাকে বাস্তবের সাথে মেলাতে চেষ্টা করতে যাওয়া বোকামি হবে। ভালো না লাগলে বাজে মন্তব্য না করে দয়াকরে ইগনোর করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here