দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_৮

#দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_৮
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমেন

হৃদয় ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এই মেয়েটা কি জাদু জানে নাকি অন্যকিছু। এই হৃদীতাকে ও চিনে না। কে ও?। কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ওকে অবাক করে দিয়ে হৃদীতা ওর সামনে হাত নাড়ালো আর হৃদয় বাস্তবে ফিরে আসলো।

> এমন হ্যা করে কি দেখছেন? যাবেন না?

হৃদয় ওর দিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতার মাথার ব্যান্ডেজ অাগের মতোই আছে। হৃদয় একটা ঘোরের মধ্য আছে। কিছুক্ষণ আগে তাহলে ও কি দেখেছিল আর কি শুনেছিল সব কি মনের ভুল। হৃদয় কোনো কিছুর কুলকিনারা পাচ্ছে না। ওর বারবার এমন কেনো হচ্ছে। নাকি ওর অন্যকোনো সমস্যা হচ্ছে। হৃদয়কে ওমন চুপ করে থাকতে দেখে হৃদীতা আবার ওকে তাড়া দিলো যাবার জন্য। হৃদয় গাড়ি ছেড়ে আবার হৃদীতার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো। ও ভাবছে এই মেয়েটার মধ্যেই কোনো সমস্যা আছে হয়তো। কিন্তু কি এটা আগে বুঝতে হবে। ভাবতে ভাবতেই হৃদয় ওকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে হৃদীতাকে ওর পেছনে পেছনে আসতে বলে ও আগে চলে গেলো। হৃদীতা ধীরগতিতে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। কিন্তু হঠাৎ হৃদীতা খেয়াল করলো ওকে একটা ছেলে ফলো করছে। হৃদীতা বারবার আড়চোখে দেখছে আর সামনে এগোচ্ছে। ছেলেটা এবার ওর একদম পাশে এসে হাঁটতে থাকলো। ওর প্রচণ্ড ভয় করছে কিন্তু কি করবে হৃদয় ওর থেকে দুরে আর সামনের দিকে বলতেও পারছে না। হৃদীতার একদম গায়ের সাথে গা লাগিয়ে হাটার চেষ্টা করছে ছেলেটা। হৃদীতা মুখ কাচুমাচু করছে আর বারবার সরে যাচ্ছে। কিন্তু ছেলেটা এবার হুট করে ওর হাত খানা ধরে ফেলল। হৃদীতা হাত কেড়ে নিয়ে গেলো কিন্তু পারলো না। এবার ওকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটা ওর হাত ছেড়ে দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,

> আমার হাত পুড়ে গেলো। আমি মরে গেলাম।

ছেলেটার চিৎকারে হৃদীতা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। হৃদয় পেছনে এমন শব্দ শুনে পেছনে এগিয়ে এসে ওর পাশে দাড়ালো। ছেলেটার চিৎকার শুনে আরও অনেকেই ওখানে উপস্থিত হলো। সবাই শুনছে ওর কি হয়েছে কিন্তু ও বলছে না। শুধু বলছে আমার হাত জ্বলে যাচ্ছে। হৃদয় ভ্রু কুচকে হৃদীতার দিকে তাকিয়ে দেখলো। মেয়েটা সব সময় এমন ভয় পাই কেনো ওর জানা নেই। ও হৃদীতার হাত ধরে বললো,

> এই যে মহারানী চলুন নয়তো আঙ্কেল অপারেশনে চলে যাবেন আর পাওয়া যাবে না। কার কি হয়েছে এটা দেখেই উনি ভয়ে শেষ।

হৃদীতা ভয় পাচ্ছে কারণ ওর হাত ধরেই তো ছেলেটার এমন হয়েছে। ও হৃদয়ের থেকে হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলো কিন্তু হৃদয় ছাড়লো না।বরং ওকে জোর করে সমনের দিকে নিয়ে চলল। হৃদীতা কৌতূহল চাপিয়ে রাখতে না পেরে বলেই ফেলল,

> শুনছেন আপনার হাত জ্বলছে না?

> আমার হাত জ্বলবে কেনো? তুমি কি নিজেকে আগুন মনে করছো? যে তোমাকে ধরলে আমার হাত পুড়ে যাবে?

> না এমন টা না। ওই ছেলেটা আমার হাত ধরেছিল তারপর এমন হলো। ( ভয়ে ভয়ে)

> ও তোমার হাত ধরলো আর তুমি চুপ করে দেখলে? এই শোনো আমাদের বাড়ির বউদের কিন্তু একটা সম্মান আছে। একদম নষ্ট করার চেষ্টা করবে না। অচেনা একজন লোক তোমার হাত ধরেছে আর তুমি আমাকে বললে না। দাড়াও দিয়ে আসছি দুঘা।

হৃদয় ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আবার ঘুরে পেছনে হাটতে গেলো কিন্তু হৃদীতা ওকে থামালো।

> লোকটা হয়তো অসুস্থ তাই সাহায্য চাইছিল আমার হাত ধরে। আমি বুঝতে পারিনাই।

> হুম তাও হতে পারে। আচ্ছা চলো। আর এমন কখনও করবে না। তুমি কাজের মেয়ে তোমার সম্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমাদের আছে।
আমাদের বাড়ির বউরা কখনও পর মানুষের হাত ধরে না ঠিক আছে।

হৃদীতা মাথা নাড়ালো। ওকে কাজের মেয়ে বললে ওর একটুও অপমানবোধ হয়না। ওতো কাজের মেয়েই। সত্যি কথা বললে ওর কখনও রাগ হয়না। ও হৃদয়ের সাথে হেটে চলেছে আর ভাবছে আসলেই কি ছেলেটা অসুস্থ ছিল নাকি ওর জন্যই এমন হলো। ওর ভাবতে ভাবতেই ওরা ডাক্তারের রুমে চলে আসলো। ডাক্তার হৃদয়ের পরিচিত তাই যেকোনো সমস্যা হলে ওরা এখানেই আসে। হৃদয় সালাম দিয়ে ভেতরে গেলো।ও কে দেখে ডাক্তার শরিফ উদ্দিন হাসি মুখে হাসি টেনে উত্তর দিলেন।

> তা কি খবর তোমাদের? সব ঠিকঠাক তো?

> জ্বী আঙ্কেল ঠিক আছে। আপনি ডেকেছিলেন এবার যা করার দ্রুত করে দেন আমার একটা কাজ আছে। (বসতে বসতে)

> তোমার এতো তাড়া কেনো বলবে? যখনই আসবে তখনই তোমার এমন তোড়জোড়। বসো আমি দেখছি।

> তা বউমা এখন কেমন আছো তুমি? (হৃদীতাকে উদ্দেশ্যে করে)

> আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।( মাথা নিচু করে)

> লজ্জা পাচ্ছো নাকি? আরে আমি তোমার বাবার বয়সি আমাকে লজ্জা পাবার কিছু নেই। বসো আমি ড্রেসিং করে দিতেছি।

হৃদীতার ব্যান্ডেজ খুলতে গুলতে উনি হৃদয়কে বললে,

> হৃদয় ওকে আর এখানে আনতে হবে না। তুমি বাড়িতেই করে দিও। সামান্য লেগেছে বাড়িতে দুদিন ড্রেসিং করলেই ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।

> আমি পারবো না ওসব। আপনি পারলে যাবেন। আমার কি আর কাজ নেই সারাদিন মানুষের সবাযত্ন করবো।

> আরে বাবা মানুষের সবা করলে আল্লাহ খুশি হন। আর মানুষ কি হ্যাঁ? নিজের স্ত্রীর জন্য এইটুকু করতে তোমার কি হবে? কথা বলবে না যা বলেছি তাই করবে।

হৃদয় চেয়ারে বসে আছে। শরিফ উদ্দিন হৃদীতার মাথার ব্যান্ডেজ খুললেন। উনি ক্ষত স্থান দেখে অবাক হলেন। একদিনের মধ্যেই অনেকটা কমে গেছে। মনে হচ্ছে কয়েকদিনের কাটা। উনি তবুও ওষুধ লাগিয়ে সব ঠিক করে দিলেন কিন্তু ব্যান্ডেজ করলেন না। হৃদয় ডাক্তারের থেকে বিদায় নিয়ে হৃদীতাকে সাথে নিয়ে বের হলো। হৃদয় লম্বা করে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে আর হৃদীতা ভয়ে ভয়ে ওর পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে। তারপর হৃদয় ওকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে বললো,
> তুমি বসো আমি এখুনি আসছি। সামনের দোকানে আমার একটা কাজ আছে।

হৃদীতা মাথা নেড়ে আচ্ছা বললো। হৃদয় চলে গেলো আর হৃদীতা বাইরের দিয়ে তাকিয়ে বসে আছে। কত রঙ বে রঙের মানুষের আনাগোনা এই শহরে। সবাই প্রয়োজনের তাগিদে ঘুরছে। হসপিটাল কোনো সুখের স্থান না আবার অনেকের কাছে সুখের। এখানে জীবনের শেষ হতে না হতেই অন্যদিকে নতুন জীবনের সুচনা হচ্ছে। কেউ ফিরে পাবার আনন্দ নিয়ে বাড়িতে ফিরছে আবার কেউ হারিয়ে ফেলার দুঃখ নিয়ে বাড়িতে ফিরছে। হৃদীতার ভীষণ মন খারাপ হলো। হঠাৎ করেই ওর বাবা মায়ের কথা মনে হলো। বাবা মা কি ওকে কখনও একটুও ভালোবাসে না। কি এমন হয়েছিল যে তারা ওকে এমন করে ফেলে দিয়েছিল রাস্তায়। কথা গুলো ভেবেই ওর চোখ দুটো আবারও পানিতে ভরে উঠলো। হৃদীতা চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে নিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই ওর আবারও কাধে সেই পুরাতন ব্যাথা টা জেগে উঠলো। একটু একটু করে ব্যাথা বাড়ছে। এখুনি ওকে এখান থেকে সরে যেতে হবে। এই ব্যাথাটা আস্তে আস্ত ভয়ানক ভাবে বাড়বে। যখন অতিরিক্ত বেশি হবে ও নিজের মধ্যেই থাকবে না। তখন ওর সাথে কি হয় সব কিছুই ওর দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে যায়। ও বুঝতে পারেনা এই সময় টা ওর সাথে কি হয়েছে। হৃদীতা বসে থাকতে পারছে না আর। হঠাৎ এমন দিনের বেলাতে কেনো এমন হচ্ছে ও বুঝতে পারছে না। আগে মাঝ রাতেই হতো। হৃদীতা শক্ত হয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে মুখ খুললেই ওর চিৎকারে আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়ে যাবে। ও বারবার তাকিয়ে দেখছে হৃদয় আসছে কি না। কিছু সময় পর হৃদয় ফিরে আসলো। হৃদয় গাড়ি ছেড়ে হৃদীতার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো। সারা রাস্তায় ওদের আর কথা হলো না। হৃদীতা চুপ করে বসে আছে। বাড়িতে পৌঁছে হৃদীতা কোনো কথা না বলে গটগট করে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। হৃদয় ওকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আবার বের হলো। হৃদীতা রুমে এসে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। ওর চিৎকারে রুমের মধ্যের আসবাবপত্র আয়না সব কিছুই মনে হলো থরথর করে কেঁপে উঠলো। হৃদীতা মেঝেতে গড়িয়ে পড়লো তারপর কিছুক্ষণ পর সব কিছুই আবার নিরব হয়ে গেলো। হৃদীতা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। ওর সাথে এই সব কি হচ্ছে ওর জানা নেই। এগুলো কি ওর জন্ম সূত্রের সাথে সংযোগ আছে নাকি অন্যকিছু।

সেদিন সারাদিন হৃদয় বাড়িতে ফিরলো না। ও অফিসে গিয়েছিল কিছু কাজের জন্য। তারপর ওখান থেকে ক্লাবে গিয়ে কখন সন্ধ্যা নেমে রাত হয়ে গেছে ও বুঝতেই পারেনি। রাত নয়টার পর থেকে শাফিন বকবক শুরু করেছে বাড়ীতে যাবার জন্য কিন্তু হৃদয় বাড়ীতে ফিরছে না। বাড়ীতে গিয়ে ওর সময় কাটবে না তাই আর গেলো না। হৃদয় বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে আছে। এখানে অনেকেই জানে ওর বিয়ের কথা। সবাই বায়না ধরেছে ওর বউ দেখবে। হৃদয় ওদেরকে মানা করতে পারলো না তাই বলে দিলো আগামীকাল সন্ধ্যায় ওদের বাড়িতে যেতে। অনেক রাত হয়ে এসেছে সবাই একে একে বাড়িতে ফিরে গেলো। শাফিন ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ওকে না নিয়ে ওর যাওয়ার উপাই নেই। ওরা বাল্য বন্ধু। প্রয়োজন অপ্রয়োজনে ওরা সব সময় পাশে থাকে। আর হৃদয় মাথা গরম ছেলে কখন কি করে বসে ঠিকনাই তাই শাফিন ওর সাথেই থাকে। হৃদয়ের অসংখ্য মেয়ে বান্ধবী আছে। পড়াশোনাতে মোটামুটি ভালো তবে দুষ্টুমিতে সবার সেরা। কাউকে ভয় পাওয়া যেনো ওর রক্তে নেই। শাফিন ওকে অনেক ভালোবাসে মাঝে মাঝে ওকে বকাবকি করে আবার রাগ ও করে। কিন্তু হৃদয় কিছুই মনে করে না। ও জানে কখনও শাফিন ওর খারাপ চাইবে না। ও অন্ধের মতো চোখ বন্ধ ওকে বিশ্বাস করে। কখনও ওর এই বিশ্বাস ভাঙবে না এটা হৃদয়ের বিশ্বাস। তবে সত্যিই কি এমন থাকবে ওদের সম্পর্ক? হয়তো থাকবে নয়তো না। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। সামনের দীন গুলোতে যদি এমন থাকে তো ভালো নয়তো বিশ্বাস ভাঙার কষ্ট হৃদয় পারবে কি সহ্য করতে?। এমন আকাশ পাতাল ভাবনা হৃদয়ের কখনও হয়না। অবান্তর কথা হৃদয় ভাবে না।

অনেক রাতে হৃদয় শাফিন কে বাই বলে গাড়ি নিয়ে চলে আসলো। ওদের বাড়ি শহরের দু প্রান্তে তাই এক সাথে ফিরা ওদের হয়না। হৃদয়ের বাড়িটা শহরের পাশে। তাই একটু সময় লাগে জেতে কিন্তু শাফিনদের বাড়ি শহরের মধ্যেই। হৃদয়ের বাবা রুহুল হক শহরের শোরগোল শব্দ পছন্দ করেন না তাই শহরের বাইরে এই বিশাল বাড়ি টা তৈরী করেছেন। উনার বাবা ছিলেন অনেক দরিদ্র আর পরিশ্রমী একজন মানুষ কিন্তু রুহুল সাহেব নিজের চেষ্টায় এই পযর্ন্ত এসেছেন। শহরের মধ্যে দুখানা বাড়ি আছে উনার কিন্তু সেখানে ভাড়া দেওয়া থাকে। যাইহোক হৃদয় গাড়ি নিয়ে যখন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ ওর সেদিনের কথাটা মনে পড়লো। ওর মন আবার সেখানে ছুটেছে। হৃদয় গাড়ি দাঁড় করিয়ে একপা দুপা করে সেদিকে এগিয়ে গেলো। কাছে আজ ফোনের টর্চ আছে। আকাশে চাঁদ আছে কিন্তু মাঝে মাঝে মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে তার জন্য আবছায়া পড়ছে। হৃদয় ফোনের টর্চ অন করে সেই আলো ধরেই এগোচ্ছে। এমন করে ও বেশ কিছুদূর এগিয়ে আসলো। তারপর ও সেই নিদিষ্ট স্থানে এসে পৌচ্ছালো। নদীর তীরে একখানা নিম গাছে কিছু একটা ডেকে চলেছে হয়তো প্যাঁচা হবে। হৃদয় কখনও বাস্তবে প্যাঁচার ডাক শোনেনি এই প্রথমবার শুনছে তাই ওর কাছে কেমন অদ্ভুত লাগছে। কখনও ও কোনো কিছুতেই ভয় পাইনা কিন্তু আজ ওর গা কেমন ছমছম করছে। হৃদয় নদীর কুলে এসে দাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। কোথাও কেউ নেই। সেই রাতে সেই মেয়েটা যেখানে ছিল ও তার ঠিক সামনে দাড়িয়ে আছে। নদীর ওপার আর এপার এই যা তফাৎ। হৃদয় পাশ ফিরে নিম গাছের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্যাঁচা টা ডাকাডাকি বন্ধ করে দিয়েছে। হঠাৎ সেদিনের সেই অদ্ভুত চিৎকারের শব্দে হৃদয় চমকে উঠলে। নদীর ওপারে সেই মেয়েটা আবার ফিরে এসেছে। ওর শরীর থেকে আলো এসে চারপাশ আলোকিত হয়ে গেলো।। হৃদয় দ্রুত গতিতে নিজেকে ওই গাছের আড়ালে লুকিয়ে ফেলল। ওর মন বলছে ওই মেয়েটা ওকে দেখলেই পালিয়ে যাবে। হৃদয় শুধু তন্ময় হয়ে দেখছে কি হচ্ছে। মেয়েটা ঘাসের উপরে চিৎকার করে গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদছে। হয়তো কোনো ব্যাথা পেয়েছে। এমন করে চিৎকার করতে করতেই মেয়েটার শরীরে দুখানা ডানা দৃশ্যমান হলো। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে ঝুমঝুম বৃষ্টি নেমে পড়লো। মেয়েটা ডানা দুখানা মেলে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। হৃদয় গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে আসলো। ওর এই বৃষ্টির উপর ভিষন রাগ হচ্ছে। কি দরকার ছিল তোর এখনই নামার? ও বকতে বকতে ফিরে আসলো গাড়িতে। বৃষ্টিতে ও ভিজে একাকার। কোনো রকমে ও বাড়িতে আসলো সেই ভেজা শরীর নিয়েই। হৃদয় বাড়িতে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেছে তাই সবাই যে যার রুমে চলে গেছে। হৃদয় গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রুমের দরজা খুলে ভেতরে আসলো। রুমে আবছা আলো আছে। হৃদয় বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওখানে হৃদীতা নেই। ও ভ্রু কুচকে ভাবলো নবাব নন্দিনী আজ অন্যরুমে শুয়েছেন বেশ ভালো। কথাটা ভেবে ও রুমের লাইট অন করলো। ভেজা কাপড়ের জন্য মেঝেতে পানি পড়ছে। হৃদয় লাইন অন করে পেছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো কারণ হৃদীতা ভেজা কাপড়ে ঘরের এক কোনায় জড়সড় হয়ে বসে কাঁদছে। আর ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। হৃদয় দ্রুত ওর পাশে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত রাখলো। হৃদয় ওর ছোয়ায় চমকে উঠে পিছিয়ে গেলো। কোনো কারণে ও প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আছে। হৃদয় রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বকতে শুরু করলো,

> ওই মেয়ে এমন ভেজা কাপড়ে কি করছো? ঠান্ডা জ্বর লাগিয়ে আবার আমাকে বকা শোনানোর ধান্দা করেছো তাই না? সবাই আমাকে ভুল বুঝবে। দুদিন তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছি বলে ভেবো না আমি সব সময় এমন করবো। আমি কিন্তু তোমাকে একদম পছন্দ করি না তবুও সহ্য করছি।

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পটা কাল্পনিক ভৌতিক গল্প তাই ভালো না লাগলে ইগনোর করুন। গল্পের নামটা হঠাৎ মাথায় এসেছিল তাই দিয়েছিলাম। দুঃখিত জানতাম না এই নামে আরও গল্প আছে। এখন নাম পরিবর্তন করলে জানিনা কেমন হবে। তাই সামান্য একটু পরিবর্তন করলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here