দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_৯

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_৯
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদয় ওকে ধমক দিলো এমন ভেজা কাপড়ে বসে থাকার জন্য। কিন্তু হৃদীতা কোনো কথায় বলছে না। ও নিচের দিকে তাকিয়ে সমানে ঠকঠক করে শুধু কেঁপেই চলেছে। হৃদয় প্রচণ্ড বিরক্ত হলো ওর উপরে ভাবছে এমন করার কি মানে?।তাই ও জোর করে ওর হাত ধরে তুলে দাঁড় করালো। হৃদীতার শরীর একদম পাথরের মতো ঠান্ডা। দীর্ঘস্থায়ী ভেজার ফল এটা। হৃদয় বুঝতেই পারছে না হৃদীতা হঠাৎ ভিজতে কেনো গেলো আর এমন ভেজা কাপড় নিয়ে বসেই বা কেনো আছে। হৃদীতা কথা বলার পর্যায়ে নেই। ওর ঠোঁট কালো হয়ে গেছে শীতে। হৃদয় ওকে জোর বাথরুমে নিয়ে গেলো কিন্তু হৃদীতা কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না। যেমন চুপ ছিল তেমন চুপ করেই আছে। ওকে এমন করতে দেখে হৃদয় শুকনো কাপড় এনে ওর হাতে দিয়ে বলল,

> কাপড় পড়ে নাও দ্রুত। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। নাকি আমি পড়িয়ে দিবো? গোলাম হয়েছি না তোমার?

হৃদয়ে হুঙ্কার শুনে হৃদীতা চমকে উঠে হুম বলবো।

> কি বললে আমি তোমার গোলাম? তোমার কাপড় পড়িয়ে দিবো?( ভ্রু কুচকে)

> এই না না। আমি এখুনি পড়ে নিবো। আপনি বাইরে জান। ( ভয়ে পেয়ে)

হৃদীতা না বুঝেই হুম বলে দিয়েছিল। হৃদয়ে কথা শুনে ও ভয় পেয়ে গেছে। ও ভাবছে কি আজব মানুষ রে বাবা হুম বলেছে বলেই কি কাপড় পড়িয়ে দিতে হবে নাকি। লজ্জা সরম নেই মনে হয়। হৃদীতা ওকে বাইরে যেতে বলে দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে পড়লো। আজ একটা ভয়ানক ঘটনার সাথে ওর পরিচয় ঘটেছে। ও কখনও ভাবতেই পারেনি এমন টা হবে। হৃদীতা মনে মনে ঠিক করলো সব লুকিয়ে রাখবে। ওর সত্যিটা কখনও কেউ জানতেই পারবে না। ভাবতে ভাবতে হৃদীতা উঠে কাপড় পড়ে নিলো। তারপর খুব স্বাভাবিক ভাবে বাইরে এসে দাঁড়ালো। হৃদয় ওর আসতে দেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসলো। মনে হলো এতোক্ষন ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল ও। হৃদীতা কোনো কথা না বলে ওকে ইগনোর করে বিছানায় এসে বসলো। ওর আসতে দেরী দেখে হৃদয় রুমের মধ্যেই কাপড় পাল্টে নিয়েছিল। ও অপেক্ষা করছে কি হয়েছে জানার জন্য। হঠাৎ এমন করে ভিজলো কেনো। হৃদীতা জানে হৃদয় ওকে প্রশ্ন করবে তাই ও কথা না বলে চুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ওর ঘুম আসবে না কিন্তু তবুও চোখ বন্ধ করে আছে। হৃদয় অবাক হচ্ছে আর ভাবছে বাহ কি সুন্দর করে আমাকে ইগনোর করে চলে গেলো। আমি যে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছি এগুলো যে মহারানীর চোখেই পড়লো না। ওর রাগ হচ্ছে হঠাৎ করে। তবুও নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। আর ভাবলো,তোর যা ইচ্ছা কর আমার কি। সকালেই বলতে হবে এই আপদকে অন্যরুমে পাঠিয়ে দিতে। আমার রুমে থাকবে আবার আমার কোনো কথায় শুনবে না এমন হলে তো চলবে না। কথা না শুনলেও সমস্যা নেই মহারানীর যদি কোনো কিছূ হয়ে যায় সেই দ্বায়ভার ও যে আমাকেই নিতে হবে। কি জ্বালা আমার। হৃদয় তুই তুই কেনো যে এমন একটা কাজ করেছিলি এখন বোঝ কেমন লাগে। কথাগুলো বিড়বিড় করে বলতে বলতে ও ঘুমিয়ে পড়লো। হৃদীতা শুয়ে আছে কিন্তু ওর চোখে ঘুম নেই। উত্তেজনাপূর্ণ একটা অবস্থা। সেই সব দৃশ্য ওর চেখের সামনে ভাসছে। মনে হচ্ছে কাউকে বলতে পারলে একটু শান্তি পেতো। কিন্তু এমন আপনজন কেউ তো ওর নেই। ভাবতে ভাবতেই ও ঘুমিয়ে পড়লো।সকালে হৈচৈ এর শব্দ শুনে হৃদীতার ঘুম ভাঙলো। নিচে চিৎকার চেচামেচি হচ্ছে । ও চোখ মুছতে মুছতে উঠৈ তাকিয়ে দেখলো হৃদয় রুমে নেই। ও দ্রুত ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে আসলো। এসে দেখলো হৃদয় চিৎকার চেচামেচি করছে ওর মায়ের সাথে। হৃদীতা শুনছে ওদের কথা। হৃদয় চিৎকার করে বলছে,

> আমি ওই মেয়েটার সাথে থাকতে পারবো না। মেয়েটার মাথায় সিট আছে। রাতে পাগল হয়ে গিয়েছিল। গোসল করে ভেজা কাপড়ে বসে ছিল মেঝেতে। আমি ওর সাথে থাকলে নিজেই পাগল হয়ে যাবো। ওর কিছু হলে সবাই আমাকে দোষ দিবে এমন হবে না। আম্মু তুমি যদি ওকে অন্যরুমে থাকতে না দাও তাহলে আমি কিন্তু বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো বলে দিলাম। (রাগ করে)

> বাজে কথা বলবি না। ওর কি হবে?। হঠাৎ গরম লেগেছিল হয়তো তাই গোসল করেছে। শোন ও অনেক ছোট তাই ও বুঝতে পারে না ভালো মন্দ। তুই ও যদি না বুঝে কথা বলিস কেমন হয় বল?( নরম সুরে)

> আমি ওর সাথে থাকবো না আম্মু তুমি যাই বলো না কেনো।

হৃদীতা ওদের কথার মাঝেই ওর শাশুড়ির পাশে গিয়ে বলল,

> আম্মু আমি একা থাকতে পছন্দ করি আর আমার ও ভালো হবে। আপনি আমাকে অন্যরূমে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। (মাথা নিচু করে)

হৃদীতার কথায় সবাই চুপ করে গেলো। দীলারা বেগম রাগ করে কুসুম কে চিৎকার করে বলে দিলেন হৃদীতার রুম ঠিক করে দিতে। আজ থেকে ও সেই রুমেই থাকবে। হৃদীতা চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসলো। সকালে উঠেই ওর চা খাবার অভ্যাস কিন্তু এই মূহুর্তে বলার সাহস পালো না। মনে মনে ভাবছে জল্লাদ টা আবার তার পুরাতন রুপে ফিরে এসেছে এর থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে। আপাতত যতদিন এখানে আছি ততদিন পযর্ন্ত। হৃদীতা বসে কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই একজন ওকে চা দিয়ে গেলেন। হৃদীতা মিষ্টি করে হেসে চায়ের কাপটা ধরলো। ও আশা করিনি এখন চা টা পেতে পারে তবুও পেয়েছে অনেক ভালোলাগছে। হৃদীতা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। প্রশান্তিময় একটা সময়। হৃদীতার চাওয়া পাওয়া গুলো অতি সামান্য অল্পতেই ও খুশি হয়ে যায়। আর এখন তো নিয়তির হাতে সব কিছু ছেড়ে দিয়েছে। যা কিছু হচ্ছে সব কিছুই ওর ভাগ্যে ছিল মেনে নিয়েছে। হৃদীতাকে এমন করে চা খেতে দেখে হৃদয় বিরক্ত হলো। ও ভ্রু কুচকে ভাবছে এই মেয়েটার কোনো ক্লাস নেই চা খাবার ভাব দেখে মনে হচ্ছে অমৃত পান করছে যতসব। হৃদয় এবার ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

> আম্মু সন্ধ্যায় আমার বন্ধুরা আসবে ওকে দেখতে। তুমি ওকে বলে দিবা যেনো ভালো হয়ে থাকে। আমার একটা সম্মান আছে। কাজের মেয়ের মতো সাধারণ ভাবে যেনো না চলে আসে।

> তোর বউ তুই বল আমি কেনো বলবো? বিয়ের সময় কি আমাকে সাথে নিয়েছিস যে এখন আমাকে বলছিস। নিজেই নিজের বউকে সব সময় কাজের মেয়ে কাজের মেয়ে বললে অন্যলোক কি বলবে। দেখো হৃদয় আমি কিন্তু প্রচণ্ড রেগে যাচ্ছি। সকাল সকাল কি শুরু করেছিস বলবি?( ধমক দিয়ে )

হৃদয় ওর মায়ের ধমক শুন চুপ করে উপরে উঠে গেলো। প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর। রাতে ওকে মেয়েটা ইগনোর করেছে এটা ও কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। তাই সকাল সকাল ওর এমন হম্বিতম্বি করা। হৃদীতা চা শেষ করে উঠে আসতে গেলো কিন্তু ওর শাশুড়ি আসতে দিলো না। ওকে বলল খাবার খেয়ে উপরে যেতে। তাই ও সোফাতেই কিছু সময় অপেক্ষা করলো। কয়েক মিনিট পর যখন সবাই খাবার টেবিলে বসলো হৃদয় ওদেরকে পাশ কাটিয়ে গটগট করে বাইরে বের হয়ে গেলো। ওর রাগ হয়েছে তাই ও আজ বাড়িতে ফিরবে না এটা বাড়ির সকলেই জানে। প্রায় সময় ও এমনটাই করে থাকে। হৃদীতা খাবার খেয়ে ওর যেই রুমে থাকা ব্যবস্থা হয়েছে ও সেখানেই চলে আসলো। দক্ষিণের জানলার পাশে হৃদীতা বসে পড়লো। এই দিকে জঙ্গল নেই আছে মাঠ। দূর বহুদূরে চোখ চলে যায়। হৃদীতার ভীষণ পছন্দ হয়েছে এই রুমটা। আর যাইহোক শান্তিতে থাকা যাবে ভয় ছাড়া। নিশ্বাস নেওয়া যাবে নিজের মতো করে। হৃদীতার কথাটা ভেবেই ভালোলাগছে। ও বাতাসে চুল খুলে বসে আছে। ঝকমকে সোনালী সকাল টাকে ও প্রাণ ভরে উপভোগ করছে। কিন্তু ওর এই শান্তিতে ভাটা পড়লো তন্ময়ার আগমনে। ও হুটকরে এসে হৃদীতার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

> তোমাকে নিয়ে আম্মু আমাকে শপিং করতে যেতে বলেছে আমি কিন্তু পারবো না জেতে। তুমি আম্মুকে বলে দিবে যে তুমি যেতে চাও না ঠিক আছে?

> জ্বী আচ্ছা বলবো । (মাথা নেড়ে)

> আর শোনো আমি যে তোমাকে শিখিয়ে দিয়েছি এটা কিন্তু ভুলেও বলা চলবে না আমি রেগে যাবো।

> জ্বী আচ্ছা। আমি কি আপনার সাথে পরিচিত হতে পারি?

> হুম পারো কিন্তু আমি তোমাকে ভাবি বলতে পারবো না। নাম ধরেই ডাকবো। আমি তন্ময়া হৃদয় ভাইয়ার ছোট বোন। তোমাকে দেখতে অনেক মিষ্টি আর সুন্দর তাই তোমার সাথে কথা বললাম নয়তো আমি কখনও কথা বলতাম না। প্রথম দিন তোমার উপরে প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল আমার কিন্তু এখন কমে গেছে।

> সরি আমি অনেক দুঃখিত এমন হবে কখনও বুঝতে পারিনাই। আমি সবাইকে দুঃখ দিয়েছি কিন্তু বিশ্বাস করেন কখনও চাইনি এমন হোক। (বিনয়ের সাথে)

> আমাকে আপনি আপনি বলতে হবে না। তুমি করেই বলবে। আর তোমাকে আমি বিশ্বাস করি। ভাইয়া কেমন এটা আমাদের থেকে ভালো কেউ জানে না তাই তোমাকে দোষ দেবার মতো বোকামি আমি করবো না। এমনকি আমাদের বাড়িতেও কেউ করবে না। ও ছোট থেকেই এমন।

> আমি একটা অাশ্রয় পেলেই চলে যাবো। (মাথা নিচু করে)

> কোথাও জেতে হবে না। তুমি জেতে চাইলেও আর আম্মু আব্বু তোমাকে জেতে দিবে না। কেনো দিবে না এটা তুমি দিনদিন বুঝবে। এখন বলা নিষিদ্ধ। যাইহোক আমি তোমাকে রাগ করে বলেছিলাম শপিংয়ে নিয়ে যাবো না কিন্তু এখন আমি মতামত পরিবর্তন করেছি। তোমাকে আমার ভালোলেগেছে । রেডি হয়ে নাও আমি ও গিয়ে রেডি হয়ে আসছি। অনেক কেনাকাটা প্রয়োজন।

হৃদীতা মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ালো। ও মনে মনে ভাবছে যেমন ভাই তার তেমন বোন। মন ভালো হতে সময় লাগে না আবার খারাপ হতেও সময় লাগে না। এরা কী দিয়ে তৈরী আল্লাহ ভালো জানেন। তন্ময়া চলে যেতেই হৃদীতা উঠে আলমারি খুলে দেখলো। কিছু পোশাক আছে এখানে। দীলারা বেগম ওর জন্য কিছু কেনাকাটা করেছিল যেটা ও এখনো পড়া হয়নি তাই ও সেগুলো একটা একটা করে দেখে নিলো। খুব সুন্দর একটা কালো রঙের গাউন ওর পছন্দ হলো তাই ওটাই ও পড়ে নিলো। চুলগুলো সুন্দর করে বেধে মাথায় ওড়না পেচিয়ে নিয়ে বের হলো। ও মোটামুটি হালকা সাজে সেজেছে। চোখে খুব যত্ন করে কাজল নিয়েছে আর কানে একজোড়া ঝুমকা। হৃদীতা রুম থেকে বের হতেই তন্ময়া এসে হাজির হলো। তন্ময়া ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

> খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।

> তোমাকে ও। (হাসি দিয়ে )

> জানি আমি সুন্দরী কিন্তু তোমার মতো না।

> সুন্দর নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। মনের সৌন্দর্যের কাছে বাইরের সৌন্দর্য তুচ্ছ।

> কিন্তু সবাই যে সুন্দরের পুজারী। ভালো কথা বলতে পারো তুমি যাইহোক চলো এখন। দেরী হলে কিন্তু তোমাকেই বকা শুনতে হবে। সন্ধ্যায় ভাইয়ার বন্ধুরা আসবে আর তোমাকে সুন্দর করে ওদেরকে ম্যানেজ করতে হবে বুঝলে? নয়তো তুমি গেলে।

> আমি উনার স্ত্রী উনাকে ম্যানেজ করতেই পারলাম না আবার উনার বন্ধুদের। ওসব হৃদীতার জন্য নয়।

> সব পারবে। আর ম্যানেজ করতে আমি শেখাবো। ভেবো না আমি আছি তো।

হৃদীতা আর তন্ময়া শপিং করার উদ্দেশ্যে বের হলো। শপিংমলে গিয়ে ওরা বেশ অনেক কিছু কেনাকাটা করলো। হৃদীতা অবাক হয়ে শুধু দেখছে কোথায় কী আছে। ও কখনও শপিং করতে আসেনি। ওর যা প্রয়োজন হতো আম্মুকে বললে উনি এনে দিতেন নিজের পছন্দমতো। উনি কখনও ওকে বলতেন না হৃদীতা এটা কি তোর পছন্দ হয়েছে।আর হৃদীতাও কখনও বলতো না কিছু। যখন যা পেতো নিয়ে নিতো। কাজের মেয়ের আবার পছন্দ আর অপছন্দ কি সব এক। হৃদীতা পুরানো দিনের কথা গুলো ভাবছে আর তন্ময়ার সাথে সাথে ঘুরছে। দূর থেকে একজন ওকে অনুসরণ করছে যেটা ওরা বুঝতেই পারছে না। লোকটা হৃদীতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে একে আমার চাই যেকোনো উপায়ে। এমন একটা মিষ্টি মেয়েকেই তো আমি চেয়েছিলাম। ওরা কেনাকাটা শেষ গাড়িতে এসে বসলো। ওদের গাড়ির পেছনে পেছনে অচেনা একজন আসতে পারে ওরা কখনও ভাবেনি। ওদের গাড়ি গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো আর সেই গাড়ি টা বাইরে দাড়িয়ে তারপর কিছুক্ষণ পরে আবার ফিরে গেলো। ওরা গাড়ি থেকে নেমে কয়েকপা এগিয়ে জেতেই হৃদীতা দাঁড়িয়ে পড়ে পেছনে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। সারাদিন শপিং করা আর ওগুলো বাড়িতে এনে দেখতে দেখতেই ওদের সময় পার হলো।

সন্ধ্যায় হৃদয়ে বন্ধুরা আসবে তাই বাড়িতে আয়োজন চলছে।তন্ময়া এই সুযোগে নিজের বন্ধুদের ও বলে দিয়েছে আসতে। ওরাও দেখতে চেয়েছিল নতুন ভাবিকে তাই। একজন এসে হৃদীতাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। হৃদীতা শাড়ি পড়তে ভালো জানে না। শাড়ি পড়লে ওর মনে হয় এই বুঝি পড়ে যাবো। কিন্তু এখন তো ওকে পড়তেই হবে। তবে তন্ময়া ওকে আশ্বস্ত করেছে সব সময় পাশে থাকবে আর কোনো সমস্যা হবে না। সন্ধ্যার পরেই হৃদয় বন্ধুদের নিয়ে চলে আসলো আর তন্ময়ার বন্ধুরাও এসেছে। হৃদীতা এখানো রুম থেকে বের হয়নি। নিচে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। হৃদয়ের বন্ধুদের মধ্য দুজন বাদে কেউ হৃদীতাকে দেখেনি। ওর মনে মনে ভিষন খুশি হয়েছে হৃদয় কাজের মেয়েকে বিয়ে করেছে এই কথাটা জেনে। ওদের ধারনা কাজের মেয়ে দেখতে আবার কেমন হবে। হৃদয় সব সময় অন্যদেকে নিয়ে মজা করে এখন বুঝবে। মুডি হৃদয়ের উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। সারাজীবন অসুন্দর বউকে নিয়ে সংসার করে বুঝুক ও। ওরা পরিকল্পনা করেই এসেছে হৃদয় কে ছোট করার এইতো সুযোগ। আড্ডা দিতে দিতে একজন বললো

> হৃদয় ভাবীকে ডাক একটু তার চাঁদ মুখটা দর্শন করি।দেখি সে কেমন রুপসী সে যে আমাদের বন্ধু কে একেবারে ঘায়েল করে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিলো।

হৃদয় ওর কথায় কোনো উত্তর না করে তন্ময়াকে ডাকলো হৃদীতাকে আনতে। তন্ময়া ওর বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল এতোক্ষন।তন্ময়ার বন্ধুদের মনে হচ্ছে ওরা কেউ বউ দেখতে আসেনি এসেছে শুধু গল্প করতে। হৃদীতাকে নিয়ে ওদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। যে যাকে নিয়ে খুশি তাকেই তো বিয়ে করবে। হোক সে কাজে লোক হোক সে অসুন্দর। আধুনিক যুগে বসবাস করেও যদি সেই পুরানো দিনের মতো জাতী ধর্ম বর্ণপ্রথা নিয়ে এমন ভেদাভেদ করি তাহলে আর কোথায় আধুনিক হতে পারলাম। তন্ময়া ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে আচ্ছা যাচ্ছি বলে হৃদীতাকে নিয়ে আসতে গেলো। হৃদয়ের বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। ও হৃদীতাকে একটুও বিশ্বাস করেনা। এই মেয়েপা উদ্ভট ভাবে এসে ওর সম্মানের বারোটা না বাজিয়ে দেয়।

সবাই আড্ডায় ব্যস্ত। তন্ময়া হৃদীতাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। হঠাৎ শাফিন শব্দ করে বলে উঠলো হৃদয় ভাবী আসছে। ওর ডাকে সবাই সিড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদীতা সাবধানে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। নীল রঙের শাড়ি আর জুয়েলারিতে ওকে দেখে ওখানের সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো। ওরা কখনও ভাবতেই পারেনি এমন টা দেখবে। ওরা তো এসেছিল অসুন্দর একটা মেয়েকে দেখতে। যে হৃদয়ের যোগ্য না কিন্তু এখানে তো অন্যকিছু। হৃদীতা ধীর পায়ে এসে সবার সামনে সোফায় গিয়ে বসলো। তন্ময়া ওর পাশেই আছে। সবাই চুপ করে আছে। কেউ কিছুই বলছে না। হঠাৎ শাফিন বললো

> ওই তোরা হঠাৎ চুপ কেনো?আর ভাবী আমাকে চিনতে পেরেছেন? ওই দিন আমি ছিলাম কিন্তু।

ওর কথায় হৃদীতা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর দিকে হ্যা করে তাকিয়ে আছে। হৃদীতা মাথা নেড়ে নিচের দিকে তাকালো। একটু পরেই সবাই স্বাভাবিক হয়ে গেলো। হৃদীতা চুপ করে আছে সবাই গল্প করছে ও শুধু শুনছে। একসময় হৃদীতার শাশুড়ি ওকে ডেকে নিয়ে গেলো তন্ময়া আর ও চলে আসলো রাত হচ্ছে তন্ময়ার বন্ধুরা চলে যাবে তাই ওদের বিদাই করতে। হৃদয় বন্ধুদের নিয়ে বসে আছে গল্প করছে। হঠাৎ হৃদয়ে বন্ধু বিরাজ বলে বসলো,

> হৃদয় তুই তো হৃদীতাকে পছন্দ করিস না। ওকে তুই ডিভোর্স দিয়ে আমার হাতে তুলে দে আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। ওকে আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে। সব সময় কাজের মেয়ে বলিস কিন্তু এটা তো এখনকার দিনে কোনো ব্যাপার না। আর ওকে দেখলে কে বলবে ও আগে কি করতো। বউ হলো ঘরের শোপিসের মতো সাজিয়ে রাখতে হয়। এমন সুন্দর একটা মেয়েকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পেলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো।

ও কথা গুলো বলছে আর হৃদয় নিজের মুঠ শক্ত করে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে বসে আছে। ওর এখনই ওর মুখে একটা ঘুসি দিতে মন চাইছে। বেটা লুচ্চা বন্ধুর বউকে দেখতে এসে নিজেই বিয়ে করার প্রস্তাব দিচ্ছে। এমন বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। আমার বউকে আমি মানি আর না মানি তাতে কার কি। ও কথা গুলো ভেবে হুট করে দাঁড়িয়ে বললো আজ আর কোনো আড্ডা হবে না। তোরা এখন যেতে পারিস।।

ওর কথায় বিরাজ চুপ করে গেলো আর বাকি সবাই নিরাশ হলো। শাফিন হৃদয়কে ইশারা করলো কোনো ঝামেলা না করতে। শাফিন সবাইকে বলে বাইরে বের করলো। হৃদয় হন্তদন্ত হয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। শাফিন থেকে গেছে দীলারা বেগম ওকে খুব পছন্দ আর ভরসা করেন তাই ওকে জেতে দেন নাই। খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে। দীলারা বেগম শাফিনের দিকে তাকিয়ে বলল,

> কি সমস্যা তোর বন্ধুর বলবি?

> আন্টি মাথায় সমস্যা। হুট করে রেগে যায় কি করবো। ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ এমন রেগে গিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজে দরজা বন্ধ করে দিলো।
> এতোদিন আমরা জ্বলেছি এখন এই মেয়েটা জ্বলছে। পাগল হয়ে যাবো। ভাবছি ওকে বাইরে কোথাও পাঠিয়ে দেই কি বলিস? তুই ও যা সাথে নয়তো আর পারছি না।

> একদম ঠিক হবে না আন্টি। তুমি দেখো ও ঠিক হয়ে যাবে।
> ঠিক হলেই ভালো।
কথা বলতে বলতে ওরা খাবার খেয়ে নিলো। তারপর শাফিন বিদাই নিয়ে বাড়িতে চলে গেলো আর যে যার রুমে চলে গেলো। হৃদীতা রুমে এসে পোশাক চেঞ্জ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। সারাদিন অনেক পরিশ্রম হয়েছে ওর। তাই বিছানায় শুতেই ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। মধ্যে রাত হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ হৃদীতার ঘুম ভাঙলো। ও অবাক হচ্ছে এতো রাতে দরজায় কে আসলো। শব্দ টা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। এখন রীতিমত বাড়ি পড়ছে দরজায় তাই ও আস্তে করে সাবধানে পা ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।

(চলবে)

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটা ভৌতিক কাল্পনিক গল্প তাই বাস্তবের সাথে মেলাতে চেষ্টা করা বোকামি হবে। খারাপ লাগলে ইগনোর করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here