দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১০

#দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১০
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

দরজার ওপাশে একজন দাঁড়িয়ে অনবরত দরজা ধাক্কা দিচ্ছে।হৃদীতা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে দরজার পাশে এসে দাঁড়ালো। তারপর নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দরজা খুলে দিলো। ওর দরজা খুলতেই হৃদয় হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়লো। হৃদীতা অবাক হলো না একটুও কারণ এই ছেলেটা কখন কি করে নিজেও বোঝে না। হৃদয় ওকে ইগনোর করে বিছানায় গিয়ে হোপ করে বসে পড়লো। মনে হচ্ছে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। হৃদীতা দরজা বন্ধ করে এসে ওর মুখের দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ওর মনে কি চলছে। কিন্তু বুঝলো না। কিছুক্ষণ এমন করে থেকে হৃদয় হুট করে হৃদীতার গলা চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে আটকে ধরলো। ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। হৃদীতা চেষ্টা করছে ওকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য কিন্তু ও ছাড়ছে না বরং আরও শক্ত করে ধরে হুঙ্কার দিয়ে বললো,

> কি দরকার ছিল ওমন মহারানীর মতো সেজেগুজে আমার বন্ধুদের সামনে যাবার? ওরা তোমাকে নজর দিয়েছে তোমার খুব ভালোলেগেছে তাই না? আমার বাড়িতে থেকে এই সব একদম চলবে না। কাজের মেয়ে একটা, তোমার কোনো ক্লাস না থাকলেও আমাদের আছে বুঝলে? ওরা কতো টা খারাপ তোমার আইডিয়া আছে কোনো?

হৃদীতার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে হৃদয় হাতে কয়েক ফোঁটা পড়েতেই ওর গলা ও ছেড়ে দিলো। হৃদীতা হাপাচ্ছে আর কাশি দিচ্ছে। ওর একটুর জন্য মনে হয়েছিল এখুনি বুঝি মারা যাবো। হৃদীতার প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে মনে হচ্ছে চিৎকার করে কান্না করি। যা কিছু হয়েছে এতে ওর তো কোনো দোষ নেই। ওকে যা বলেছে ও একজন অনুগত দাসীর মতো তা পালন করেছে তবুও এমন কেনো করছে ওর জানা নেই। এই মূহুর্তে ওর হৃদয় কে একদম অসহ্য লাগছে। ইচ্ছা করছে এখুনি বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু কোথায় যাবে সেই চিন্তা ও দমে গেলো। হৃদীতার এখন মনে হচ্ছে জেল খানায় বন্ধি হয়ে মুক্তির অপেক্ষায় আছি। হৃদয় ওকে এমন কান্না করতে দেখে ওর হাত ধরে টানতে টানতে বিছানায় বসিয়ে দিলো। হৃদীতা কোনো কথায় বলছে না শুধু নিরবে চোখের পানি ফেলছে। হৃদয় ওকে বসিয়ে পকেট থেকে ওষুধ বের করলো। তারপর ওর একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। হৃদীতার মুখে ওর নিশ্বাস পড়ছে তাই ও সরে জেতে চাইলো কিন্তু হৃদয় ওর হাত ধরে আটকে দিলো। হৃদীতা নীচের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে হৃদয় ওর মুখ টা তুলে ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে ধরলো। হৃদীতা করুন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদয়ে চোখে আজ হিংস্রতা আর ভালোবাসা দুটাই বিরাজ করছে। হৃদীতা বুজতেই পারছে না কোনটা ওর জন্য ঠিক। হৃদয় এক হাত ওর মুখে রেখে অন্যহাত দিয়ে ওর কপালের ব্যান্ডেজ খুঁলতে লাখলো। হৃদীতা চোখ বন্ধ করে আছে। হৃদয় এবার মুখ খুললো,

> নড়াচড়া করছো কেনো? এই শুনো তোমার কাছে আসার না কোনো শখ নেই আমার বুঝলে? আঙ্কেল বলেছিল তাই এসেছি নয়তো তো আবার আমাকে বলা হবে হৃদয় খারাপ ছেলে।

> কপাল জ্বলছে আমার।( কাঁদতে কাঁদতে )

> ঠিক হয়ে যাবে এখুনি। (ফু দিয়ে )

হৃদয় খুব যত্ন করে ওর কপালে ফু দিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে আর হৃদীতা চোখ বন্ধ করে ভাবছে লোকটা কি এমন করেই আমাকে জ্বালাবে সারাজীবন? এই ভালো তো এই খারাপ। কিছুক্ষণ আগে রাক্ষসের মতো হামলা করে এখন বাংলা সিনেমার নায়কের মতো ব্যবহার করছে। একে ডাক্তার দেখাতে হবে নয়তো কিছুদিন পরে পাগল হয়ে যাবে। হৃদয় ওকে ড্রেসিং করিয়ে দিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলো। হৃদীতা চুপ করে বসে চোখের পানি ফেলছে।কিছুক্ষণ পর হৃদয় অতি নরম সুরে আস্তে করে বলে উঠলো,

>” সরি”

> কিছু বললেন? (না শোনার ভান করে)

> কিছু না। আমি তোমাকে ইচ্ছা করে কষ্ট দেইনি। রাগ হলে মাথায় ঠিক থাকে না। আর ওই বিরাজ ওর মাথা তো আমি সকালে ফাঁটাবো। লুচ্চা একটা। এমন বন্ধু না থাকায় ভালো। (রেগে)

> ছি ছি কি বলেন এই সব? মারামারি ঝগড়া ভালো কাজ না। (চোখ মুছতে মুছতে )

> তোমাকে জ্ঞান দিতে বলেছি আমি? কথা বলবে না একদম। আমার প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে। সবাই রাক্ষসের মতো খেয়ে নিলে আমার কথা তো একবার ও কেউ মনে করোনি। সবাই স্বার্থপর। চলে যাচ্ছি আমি। (উঠে যেতে যেতে)

হৃদীতা উঠে গিয়ে হুট করে হৃদয়ের হাত ধরে ফেলল। ও পেছনে তাকাতেই হৃদীতা মাথা নিচু করে বলল,

> আমি ও খাইনি। আপনি কি নিচে যাবেন তাহলে খাবার গরম করে আপনার সাথে খেতাম। আমার ও ক্ষুধা পেয়েছে।

> খাওনি কেনো? তোমাকে কি কেউ মানা করেছিল?( ধমক দিয়ে )

> জ্বী না। আচ্ছা আপনি যান আমি সকালেই খাবো। (মন খারাপ করে)

হৃদয় চলে যেতে গিয়েও আবার ফিরে এসে ওকে বলল চলো। হৃদীতা খুশি হয়ে ওর পেছনে পেছনে গিয়ে রান্না ঘরে ঢুকলো। হৃদীতা ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে দিলো হৃদয় সেগুলো একে একে টেবিলে নিয়ে আসলো। হৃদীতার আজ অনেক ভালোলাগছে। কিছুক্ষণ আগে হৃদয়ের করা ব্যবহার ও একদম ভুলে গেছে। ও ভাবছে ছেলেটা একটু রাগী কিন্তু মন ভালো। মানুষের ভালো গুন দেখে খারাপ গুনের কথা ভলে যেতে হয়। ও সত্যি সব ভুলে গেছে। খাবার টেবিলে বসে আছে ওর দুজন। হৃদীতা ওর প্লেটে খাবার দিয়ে নিজেও কিছুটা তুলে নিলো। ওরা চুপচাপ খাবার খেয়ে নিয়ে হৃদয় সোফায় গিয়ে বসলো। হৃদীতা টেবিল গুছিয়ে রেখে হৃদয়ের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে বলল,

> ঘুমাবেন না?

> না আমি এখন বাইরে যাবো তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

> এতরাতে কোথায় যাবেন?

> কাজ আছে। ফিরতে দেরী হবে। (যেতে যেতে)

হৃদয় ওর উত্তরের অপেক্ষা না করেই বাইরে চলে গেলো। হৃদীতা ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে আসলো। নিজের ইখতিয়ার ওর জানা আছে। হৃদীতা তবুও আজ অনেক সাহস দেখিয়ে ফেলেছে। ওর তেমন একটা ক্ষুধা ছিল না কিন্তু ওর ওমন কথা শুনে ওর প্রচণ্ড খারাপ লেগেছিল তাই এই মাঝ রাতে খাবার খাওয়া। হৃদীতা কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। অন্যদিকে হৃদয় এসেছে সেই রাতের দেখা পরীর সন্ধানে। নদীর তীরে ও অনেক সময় অপেক্ষা করলো কিন্তু সে আজ আর আসলো না। হৃদয় নিরাশ হয়ে বাড়িতে ফিসে আসলো। ওর ফিরতে ফিরতে ভোর হয়ে এসেছে তাই রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঘুম থেকে উঠে হৃদীতা ফ্রেস হয়ে নিচে আসতেই ওর শাশুড়ি বললেন,

> হৃদীতা তুমি পড়াশোনা আবার শুধু করো। বাড়িতে বসে থেকে কি করবে তারথেকে তন্ময়ার সাথে যাওয়া আসা করো। মাধ্যমিক পরিক্ষা টা তো দিবে। আর বেশিদিন ও তো নেই।

> জ্বী আম্মু খুবই ভালো হবে। (খুশি হয়ে)

হৃদীতার পড়াশুনা করতে প্রচণ্ড ভালো লাগে কিন্তু এখানে আসার পর ও ভেবেছিল আর হয়তো পারবে না। তন্ময়া ওর আম্মু কে বলেছে হৃদীতাকে ওর সাথে যাবার জন্য। ওর বন্ধুরা ওকে খুব পছন্দ করেছে ওরা সবাই বলেছে ওকে তাই ও বাড়িতে এসে বলেছে। তন্ময়া ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

> কি এবার খুশি তো? খুব মজা হবে আমরা সবাই অনেক হৈচৈ করবো ঘুরবো।

হৃদয় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ওদের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে উত্তর করলো,

> পড়তে যাচ্ছিস ঠিক আছে এমন ভাবে বলছিস মনে হচ্ছে পিকনিক করতে যাচ্ছি। শোন আমাদের বাড়িতে মেয়েদের স্বাধীনতা থাকলেও বউদের কোনো স্বাধীনতা নেই। ও শুধু যাবে আর আসবে।( হেটে এসে টেবিলে বসতে বসতে)

> বললেই হবে নাকি। স্বাধীনতা নেই তো কি আছে। আম্মু তো আব্বুর সাথে আমাদের বিজনেসের অনেক বিষয়ে কাজ করে তাঁতে তো কিছুই হয়না। আম্মু শপিং করে নিজের বন্ধুদের বাড়িতে নিয়ে আসে আবার নিজেও যায় সেখানে কোনো বাধা নেই। তাহলে ওর বেলাতে কেনো নিষেধ শুনি?

হৃদয় এবার রেগে গেলো। ওর জানা আছে তন্ময়ার সাথে তর্ক করে কখনও পারা যায় না। আর এখানে তো ও অন্যায় কথা বলবছে সেখানে তো ও হারবেই। হৃদয় ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই ও আবার বললো

> আচ্ছা তোর বউ কে আমি কোথাও নিবো না। শুধু আমার সাথে যাবে আর আসবে। চোখে হারাস নিজের বউকে আবার ভাব নিস এমন যে ওকে তুই সহ্য করতেই পারিস না। শোন আমাকে কিন্তু রাগাবি না।

> আম্মু তুমি কিছু বলবে না? (দীলারা বেগমের দিকে তাকিয়ে)

> শোন আমাকে তোদের মধ্যে টানবি না। গতকাল রাতে কি হয়েছে আমি কিন্তু উপর থেকে সব দেখেছি। ভাব নিয়ে লাভ নেই। ও ঠিকই তো কবলেছে। (খাবার দিতে দিতে)

> আম্মু আমি রেগে যাচ্ছি কিন্তু । আমি এমন কিছুই ভাবিনি। রাতে ক্ষুধা পেয়েছিল তাই ওই মেয়েটা আমাকে সাহায্যে করছে জাষ্ট এতোটুকু আর কিছু না। আমি ওকে কখনও মন থেকে মেনে নিবো না। ও আমাকে রাগান্বিত করে ইচ্ছে করে বিয়ে করেছে।। কাজে মেয়ে যার কোনো ক্লাস নেই তাকে আমি শখ করে বিয়ে করেছি বলে মনে হয়?

> থাক আর বলতে হবে না। সব জানি আমি।

হৃদীতা এতোক্ষন ওদের কথা শুনছিল হঠাৎ ওর প্রচণ্ড খারাপ লাগলো তাই ও মন খারাপ করে উঠে চলে আসলো। হৃদয় নিজের মতো করে খাবার খাচ্ছে ওর দিকে তন্ময়া আর ওর আম্মু রাগী দৃষ্টি তে থাকি আছে ও সেদিকে না তাকিয়েই চিৎকার করে ফুলিকে ডেকে বলে দিলো,

> ফুলি রাতে বিরানি রান্না করবি। আজ বাড়িতে ফিরে আমি বিরানি খাবো।

কথাটা বলে ও হাত ধুয়ে উঠে পড়লো। হৃদীতা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে জানালার কাছে বসে দূরের দিকে তাকিয়ে আছে। জীবন টা এমন না হলেও পারতো। হৃদয় ওকে আজ তেমন কিছুই বলেনি অন্যদিনের তুলনায় তবুও ওর আজ খারাপ লেগেছে। অভিমান শব্দটার সাথে ওর পরিচয় ছিল না কিন্তু হঠাৎ আজ ওর মনে হৃদয়ের জন্য তীব্র অভিমান জমা হয়েছে। এমন কেনো হলো ওর জানা নেই। কাজের মেয়ের তকমাটা ওর একদিনের প্রাপ্ত না যে হঠাৎ চলে যাবে। শুনতে শুনতে ওর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। তবুও আজ খারাপ লাগলো কেনো ওর মাথায় আসছে না। যাইহোক ও এটাকে আর মনের মধ্য আশকারা দিলো না। বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওর মন ভালো হয়ে গেলো। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ মাঠের শেষে জঙ্গল। হৃদীতার জানা আছে ওই জঙ্গলের শেষে কি আছে। জঙ্গলের শেষে আছে অপরূপ সুন্দর একটা নদী। ভেবেই হৃদীতার মনে অনাবিল আনন্দে ভরে গেল।

হৃদয় সকালে বাড়ি থেকে এসেছে আর যায়নি। হঠাৎ সকালে ওর প্রচণ্ড রাগ হয়ে গিয়েছিল তাই রাগটা হৃদীতার উপরে দেখিয়ে নিজেকে শান্ত করেছে। ও আগে মাঝে মাঝে ওদের অফিসে বসতো কিন্তু এখন নিয়মিত ভাবেই বসছে। আজও গিয়েছিল তারপর শাফিনের সাথে করে সন্ধ্যায় ক্লাবে এসেছে বন্ধুদের সাথা আড্ডা দিতে। ওর মনে আজ অন্যকিছু চলছে। সবাই এসেছে শুধু বিরাজ বাদে ওর জন্য অপেক্ষা করার কিছু সময় পরে ও আসলো। ও হন্তদন্ত হয়ে এসে বসে পড়লো হৃদয়ের পাশের চেয়ারে। সবাই কথা বলছে নিজেদের মতো করে এর মধ্যে বিরাজ হঠাৎ হৃদয়ের উদ্দেশ্যে বলে বললো,

> হৃদীতা কেমন আছে? আমার প্রস্তাবের কোনো উত্তর পেলাম না তো। তুই কিন্তু ভেবে দেখতে পারিস। তুই ওকে ডিভোর্স দিয়ে রিয়াকে বিয়ে করে নে। আরও ভালো হবে।( হাসতে হাসতে)

হৃদয় আগে থেকেই ওর উপরে রেগে ছিল হঠাৎ এমন বলাতে ওর আরও রাগ উঠে গেলো। ও জেনো এই কথাটার অপেক্ষায় করছিল। তাই কারো বুঝে উঠার আগেই ও হাত মুঠো করে দুম করে ওর মুখে কয়েকটা ঘুসি বসিয়ে দিলো। আর সাথে সাথেই ওর নাক দিয়ে রক্ত টপটপ করে পড়তে লাগলো। বিরাজ মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। সবাই হৃদয়ের এমন কান্ডে অবাক। কেউ বিরাজকে গিয়ে ধরলো আর কেউ দাঁড়িয়ে ওকে বকছে। শাফিন শুধু ওর পক্ষে আছে বাকি সবাই ওর বিপক্ষে। ওদের দুজন কে রেখে বাকি সবাই হম্বিতম্বি করে হুমকি দিয়ে বিরাজকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।ওরা যেতেই শাফিন ওর সামনে গিয়ে বসলো। হৃদয় একটা টাইগারদের বোতল মুখে নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। শাফিন ওর দিকে এক দৃষ্টিতে থাকে আছে। এই ছেলেটার মাথায় কি ঘুরছে ও আর আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। যাকে ও একটুও পছন্দ করে না তার জন্য এতোদিনের পুরাতন একটা বন্ধুত্ব নষ্ট করলো। শাফিন কথা মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে।।হৃদয় হঠাৎ ওর দিকে একটা বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,

> নে খা। এমন করে দেখছিস মনে হচ্ছে সাংঘাতিক কিছু করে ফেলেছি। তোর মনে এখন উল্টপাল্টা প্রশ্ন আসছে এটা আমি জানি। কিন্তু উত্তর দিবো না তাই ওসব না ভেবে চিল কর।

> ওরা কতো খারাপ জানিস তবুও ঝামেলা করলি ওরা কিন্তু পাল্টা আক্রমণ করবে। আন্টি শুনলে খুব বকবে।

> আম্মুকে কে বলবে কে, যে জানতে পারবে। তুই কি কিছু দেখেছিস? (খেতে খেতে)

> না তো কি হয়েছে এখানে?

> তাহলে আর কি কিছুই হয়নি চুপ থাক।

ওরা অনেক রাত পযর্ন্ত ওখানে বসে থেকে বের হলো বাড়িতে ফিরার জন্য। হৃদয় গাড়িতে বসে ওকে বাই বলে চলে আসলো। হৃদয় গুনগুন করে গান গাইছে। আজ মনটা বেশ ভালো। হঠাৎ জঙ্গলের রাস্তায় আসতেই কয়েকটা বাইক ওর রাস্তায় এসে আটকালো। হৃদয় ভ্রু কুচকে গাড়ির হন বাজালো কিন্তু কিছুতেই ওর রাস্তা ছাড়লো না দেখে ও নেমে আসলো। ও নেমে আসতেই হঠাৎ বাইক থেকে নেমে ছেলে গুলো ওর উপরে হামলা শুরু করলো। হৃদয় বুঝতেই পারছে না হঠাৎ ওরা ওকে এমন মারছে কেনো। এতো গুলো লোক মিলে ওকে লাঠি দিয়ে মারছে ও কয়েকা লাথি ছুড়লো কিন্তু ওতে কিছুতেই কাজ হলো না। ও একা মানুষ এতোগুলো লোকের সাথে ও পারবেই বা কেমন করে এটা কি বাংলা সিনেমা নাকি যে নায়ক একাই সবাই কে মেরে কাধে করে হসপিটাল নিয়ে যাবে। এর মধ্যেই মারতে মারতে হঠাৎ একটা লাঠি ওর মাথায় এসে লাগতেই ও চিৎকার করে জ্ঞান হারালো।

সকালের তীব্র আলো চোখে পড়তেই ও চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো ও বিছানায় শুয়ে আছে। ওর পায়ের কাছে খাটে হেলান দিয়ে হৃদীতা বসে চোখ বন্ধ করে আছে। হৃদয় বুঝলো ঘুমিয়ে আছে। ও উঠে বসতে গেলো কিন্তু পারলো না মাথা ভার হয়ে আছে। ওকে এমন নড়াচড়া করতে দেখে হৃদীতা উঠে বসলো। ওর দিকে সরে এসে উদ্বেগপূর্ণ হয়ে বলল,

> কেমন আছেন এখন? ঠিক আছেন আপনি? গতকাল রাত থেকে আপনার জ্ঞান নেই।

হৃদীতা একদমে কথা গুলো বলে থামলো

> কে আমাকে বাড়িতে এনেছে? (ওর কথা এড়িয়ে)

> জানিনা। গতরাতে আপনাকে কেউ বাড়ির সামনে গাড়িতে রেখে বাড়িতে ফোন দিয়েছিল। জানিনা কে ছিল। সারারাত আমরা বসে ছিলাম আপনার পাশে।সকালে আম্মু বাইরে গেছে। অনেক চিন্তা করছেন উনি।

> আমার ফোন টা দাও। আর তুমি এখন যাও আমি ঠিক আছি।

> কিন্তু।

> কোনো কিন্তু না। যাও এখন। (ফোন নিতে নিতে)

হৃদীতা বাধ্য হলো যেতে। ও যেতেই হৃদয় শাফিন কে ফোন দিলো। কয়েকবার রিং হতেই ও ফোন তুললো।

> হ্যা হৃদয় বল।

> আমি অসুস্থ আর তুই ফোন তুলছিস না আর এখন বলছিস বল?( রাগ করে)

> তোর আবার কি হলো? হয়েছে তো এখানে। গতরাতে আমাদের বন্ধুদের প্রায় সবাইকে কেউ একজন পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে গিয়েছিল। ওদের দেখতেই আমি হসপিটালে এসেছি।

>কে এমন করলো? আমাকে ও কারা যেনো রাস্তায় মেরে বাড়িতে দিয়ে গেছে। একটু সুস্থ হতে দে সব কয়টাকে খুঁজে খুজেঁ বাড়িতে গিয়ে পিটিয়ে আসবো। হঠাৎ আমাকে এমন করে আক্রমণ করার মজা দেখবো।।( রাগ করে)

> বলিস কিরে আমি তো জানি না। কোথা থেকে এমন হলো বলতো? (চিন্তাত হয়ে)

> আমাদের বাড়িতে আসার রাস্তায় যে জঙ্গল টা পড়ে ওখানে।

> তুমি কি জানিস এদেরকে ওখানেই পাওয়া গেছে। আমার মনে হচ্ছে ওরা তোকে মারতে গিয়েছিল গতকাল রাতের ওই ব্যাপার টা নিয়ে। কিন্তু এদেরকে আবার কে মারলো। শোন তুই অপেক্ষা কর আমি এখুনি আসছি।

> আচ্ছা বাই।

হৃদয় ফোন রেখে কথা গুলো ভাবছে। ও যখন জ্ঞান হারায় তখন তো কেউ ছিল না ওকে রক্ষা করার মতো তাহলে হঠাৎ কে এসেছিল ওকে বাঁচাতে? আর বাড়ি চিনে ওকে পৌঁছে কেমন করে দিয়ে গেলো?। কে ছিল সেই অচেনা মানুষ টা? ওর হঠাৎ মনে হলো আরে সেই লোকটা তো বাড়িতে ফোন করেছিল।ওই নাম্বারটা দিয়েই তো ওর পরিচয় জানা জাবে। আর শিউর হওয়া যাবে কারা ওকে মারতে এসেছিল।

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পটা ভৌতিক কাল্পনিক গল্প তাই বাস্তবের সাথে মেলানোর চেষ্টা করা বোকামি হবে। খারাপ লাগলে ইগনোর করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here