দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১২

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১২
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদয়ের রিয়ার নাম শুনেই যেনো গায়ে আরও আগুন লেগে গেলো।ও ভাবছে এই মেয়েটা পৃথিবীর সব থেকে পাজি ব্যক্তিদের একজন। ঘসেটি বেগমের খালাতো বোন। সেদিন ওকে ছেড়ে দেওয়া একদম ঠিক হয়নি। ওটাকে ধরে দুঘা দিলেই সব বের হয়ে আসবে। ওকে বিয়ে করলে জীবন টা তামা তামা হয়ে যেতো। হৃদীতা ভয়ে কান্না করে দিয়েছে তাই ওকে ধরে তন্ময়া দাঁড়িয়ে আছে। দীলারা বেগম হৃদয় কে ইশারা করে থামাতে বলে অনি সজিবের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।

> মানছি তোমার কথায় ঠিক কিন্তু হৃদীতা আমাদের বাড়ির বউ এখন। ওকে তো আমরা তোমার সাথে জেতে দিতে পারিনা তাই না?

> জ্বী আন্টি বুঝেছি আমি।কিন্তু হৃদয়ের জন্য আমাদের ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে গেলো আমি কখনও ওকে ক্ষমা করতে পারবো না। আর ও তো হৃদীতাকে জোর করে বিয়ে করেছে। এখন পযর্ন্ত ওকে স্ত্রী হিসেবে মানে না তাহলে আমি যদি ওকে চাই এতে আমার ভুলটা কোথায়?

কথা গুলো শুনে হৃদয়ের মাথা আরও খারাপ হয়ে গেলো। ও শাফিনের হাত ছাড়িয়ে এবার সজিবের কলার ধরে টানতে টানতে দরজা কাছে নিয়ে আসলো,

> তোর কথা আমারা কেউ বিশ্বাস করছি না। তুই সম্মান পাবার যোগ্য না ঠিক আছে? আর শোন রিয়াকে আমি একটুও বিশ্বাস করিনা আবার তোকে। আর হৃদীতা যদি ও তোকে ভালোবাতো সে আগে কিন্তু এখন তো না। তাই তোর যা ইচ্ছা করতে পারিস। এখনকার মেয়েরা পোশাক পরিবর্তন করার মতো বয়ফ্রেন্ড পরিবর্তন করে হৃদীতার না হয় একটা ছিল। ওটা আমি সামলে নিতে জানি বুঝলি? বিয়ের আগে বয়ফ্রেন্ড থাকতেই পারে স্বাভাবিক। আর কি জেনো বলছিলি আমি ওকে মানি না তাই না? তবে শোন মানি আর না মানি তবুও ও আমার স্ত্রী ঠিক আছে?

হৃদয় কথাগুলো বলে ওকে দরজা দিয়ে বের করে দারোয়ানকে ডেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে টেবিলে এসে বসলো। বাইরে সজিব চিৎকার করছে আর হুমকি দিচ্ছে যেভাবেই হোক ও হৃদীতাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে।। হৃদয় কান পেতে শুনলো কথাগুলো।এখন ও প্রচণ্ড রেগে আছে। ওকে রাগ করতে দেখে বাড়ি অন্যরা ভয় পাচ্ছে। বিশেষ করে হৃদীতা। ও অনবরত কেঁদেই চলেছে। হঠাৎ হৃদয় হুট করে উঠে হৃদীতার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। বাড়ির সবাই ওদের পেছনে পেছনে এসে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু ভেতর থেকে কোনো শব্দ হচ্ছে না নীরব। হৃদয় ভয়ানক রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদীতা ভয়ে চুপসে আছে।

> ও তোমার বয়ফ্রেন্ড তাই না? (শান্ত হয়ে)

> বিশ্বাস করেন ওকে আমি কখনও আগে দেখিনি, চিনিনা আমি ওকে।

> না চেনা জানা ছাড়াই হঠাৎ এমন করে বালার সাহস ও কথায় পেলো? নিশ্চয়ই তোমার সাথে ওর কিছু ছিল নয়তো তুমি তখন চুপ ছিলে কেনো? বলো উত্তর দাও? (চিৎকার করে)

> আমি সত্যি বলছি। (চমকে উঠে)

> তোকে আমি কালকেই ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবো। আর ওর সাথে তোর বিয়ের ও দিয়ে দিবো। তোরা এইটাই তো চেয়েছিলি তাই না?

হৃদীতা কাঁদতে কাঁদতে হৃদয়ের পায়ের কাছে বসে পড়লো। ও ভয় কথাটা শুনেই ভয় পেয়ে আরও শব্দ করে কান্না জড়িত কন্ঠ বলল,

> আমাকে ওই লোকটার হাতে তুলে দিবেন না। প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করুন। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো শুধু এমনটা করবেন না প্লিজ।

হৃদীতাকে এমন করতে দেখে ওর কষ্ট হচ্ছে।হৃদয় ওর কাধে হাত রেখে দাঁড় করিয়ে ওর চোখের পানি নিজের হাতের আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

> তোমার চোখের পানি খুব সস্তা তাই না। কিছু হলেই নদী বয়ে যায়। আমি সহজে কারো কাছে হার মানিনা। কিছু জানার ছিল তাই এই খানে নিয়ে এসেছিলাম। লোকটার হাতে তোমাকে তুলে দিবো বলেছি বলে এতোটা খুশি হবার দরকার নেই। আমি নিজের জিনিস ভাগাভাগি করিনা। বাইরে যাও সবাই ভয় পাচ্ছে। ভাবছে তোমাকে আমি মেরে ফেলবো। ক্ষতি করার থাকলে বিয়ে করে বাড়িতে আনতাম না।মেরে গুম করে দিতাম। (গম্ভীর হয়ে)

হৃদীতা কান্নার জন্য কেঁপে কেঁপে উঠছে। ও হৃদয়ের কোনো কথায় বুঝতে পারছে না। সব কিছু এলোমেলো লাগছে। হৃদয় ওকে দাড়িয়ে ভাবতে দেখে ধমক দিলে উঠলো,

> ওই কি হলো বাইরে যাও আমার ক্ষুধা পেয়েছে। খাবার রেডি করো যাও। কাজের মেয়ের তো কোনো নমুনাই পেলাম না এখনো। যবে থেকে এসেছো একটা কাজ ও তো করোনি।

> জ্বী আমি যাচ্ছি।( চমকে উঠে)

হৃদীতা এসে দরজা খুলে দিলো। ওকে দেখে দীলারা বেগম ওকে টেনে নিয়ে এসে বারবার দেখছে আর শুনছে হৃদয় ওকে মেরেছে কিনা। হৃদীতা বারবার বলছে কিছু করেনি ও তবুও কেউ শুনছে না। অবশেষ যখন কিছুই পেলো না তখন ওরা বিশ্বাস করলো। হৃদীতা সবাইকে বুঝিয়ে নিচে নিয়ে গেলো খাবারের জন্য। আজ ও নিজেই সবাইকে খাবার দিচ্ছে। দীলারা বেগম মানা করেছিল কিন্তু ও শোনেনি। বলেছে হুকুম আছে না শুনলে শাস্তি আছে। এইটুকুতেই উনি বুঝেছেন হৃদয় ওকে ভয় দেখিতেছে। রাতের খাবার খেয়ে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো। হৃদীতাও গেছে কিন্তু আজ ওর কিছুতেই ঘুম আসছে না। ও বুঝতেই পারছে না ওই লোকটা হঠাৎ এমন কেনো করলো। সারারাত ভেবে ভেবে ভোরের দিকে ওর চোখ দুটো ধরে আসলো।

আকাশে তাঁরার মেলা আর তার মাঝখানে এক খানা বিশাল আকার চাঁদ উকি দিচ্ছে পৃর্ব আকাশে। সামনে বড় একটা নদী।হৃদীতা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ চাঁদের আলো ওর গায়ে লাগতেই ওর পোশাক পরিবর্তন হয়ে গেলো। ও এবার পানির দিকে তাকিয়ে দেখলো পানিতে একটা সুন্দর পরীর প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। হৃদীতা এবার নিজের দিকে তাকিয়ে খুশী হয়ে চাঁদের দিকে হাওয়াতে ভেসে গেলো। আজ ওর মনে কোনো ভয় নেই। আছে এক অনাবিল আনন্দ। ও এদিক ওদিক ছুটতে ছুটতে হঠাৎ একটা বাজপাখি দেখে ওর প্রচণ্ড পিপাসা লাগলো। ওর মনে হলো এখুনি এই বাজপাখিটাকে ওর চাই। যেকোনো মূল্যে ওর একে চাই। তাই ও চোখের নিমিষে পাখিটাকে ধরেই ওর ঘাড়ে কামড় দিয়ে রক্ত চুষে নিয়ে তারপর ওকে ছুড়ে ফেলে দিলো। হৃদীতার মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে আর ওর হাতে ও রক্ত লেগে আছে। ও নিজের হাত দুটো চোখের সামনে এনে ধরতেই আগের মতো ও ভয়ে কুকড়ে গেলো। এটা ও কি করলো ও একটা নিরীহ প্রাণীকে এমন করে হত্যা করতে ও কেমন করে পারলো আর তার থেকে বড় কথা ও তার রক্ত পান করেছে। এমন জঘন্য একটা কাজ ও করতে পারলো কেমন করে এই সব ভেবেই ওর বমি আসছে। হৃদীতা ছটফট করতে করতে জেগে গেলো।ঘুম থেকে উঠে ও পূর্বের ন্যায় হাপাচ্ছে। হৃদীতা এই স্বপ্ন টা মাঝে মাঝেই দেখে কিন্তু এর মানে ওর জানা নেই।। কিছুক্ষণ পরে ও ফজরের নামাজ পড়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।

ভোরের সূর্য উঠার সাথে সাথে আরেকটি নতুন দিনের সুচনা হয়েছে। হৃদীতা ছাদ থেকে নেমে এসে আজ রান্না ঘরে ঢুকেছে। গতকাল হৃদয়ের বলা কথাটা ওর গায়ে লেগেছে। কাজ দেখে হৃদীতা ভয় পাইনা। ও সবার জন্য নাস্তা তৈরী করছে। কুসুম ওকে সাহায্যে করছে। ওর কাজ শেষ হতেই বাড়ির অন্যরা একে একে নিচে আসলো। হৃদয় ঘুম ঘুম চোখে সোফায় এসে আবার শুয়ে পড়লো। দীলারা বেগম ওর মাথার কাছে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।অন্যদিকে তন্ময়া হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনছে আর সোফায় বসে পা নাচিয়ে চলেছে। হৃদীতা কাজ শেষ করে দীলারা বেগম কে ডাক দিলো,

> আম্মু খাবার রেডি আপনারা আসুন নাস্তা করবেন।

দীলারা বেগম হৃদীতাকে আসছি বলে হৃদয়ে চুলে আস্তে করে টান দিয়ে বলল,

> শুনেছিস খাবার রেডি। ওকে তুই গতকাল কি বলেছিস বলতো? সকাল সকাল কাজের লোকগুলোকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা একা একা সব করছে। এইটুকু একটা মেয়ে এতো কিছু পারে বল?

> পারবে না কেনো। বয়ফ্রেন্ডের সাথে প্রেম তো খুব ভালোই করেতে জানে।

> হৃদয় আমি কিন্তু এই সব কথা শুনবো না। আগে কি হয়েছে না হয়েছে ওসব ভুলে যা। মেয়েটা ছোট হয়তো ভুল করেছে।

> আম্মু আমি অফিসে জেতে চাই।( কথা এড়িয়ে )

> কয়েকদিন পরে যাবি।

> আম্মু না। খুব প্রয়োজন আছে। আমার কিছু তথ্য চাই।

> হুম আমার ছেলের মাথায় যখন কিছু ঢুকেছে তখন তো সেটা জানতেই হবে। কিন্তু তার আগে খেতে হবে বুঝলে?

> হুম চলো।

হৃদয় ওর আম্মুর সাথে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। তন্ময়া কারো কোনো কথায় শুনছে না। ও নিজের মতো গান শুনতে ব্যস্ত। এই একটা মেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। গতকাল এতোকিছু হলো কিন্তু এতে ওর কোনো হেলদোল নেই।যাইহোক সকালের খাবার খেয়ে হৃদয় অফিসে চলে আসলো।হৃদীতা আর তন্ময়া বসেছে টিভি দেখছে।দীলারা বেগম নিজের রুমে আছেন। হয়তো ঘুমাচ্ছেন এমন সময় হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে উঠলো। দুইবার বাজার পর তন্ময়া বিরক্ত হয়ে কুসুম কে বললো দরজা খুলতে। কুসুম দরজা খুলতেই ভয় চুপসে গেলো। কয়েকজন পুলিশ হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করলো। ওরা দুজন পেছনে তাঁকিয়ে অবাক হলো হঠাৎ পুলিশ কেনো বাড়িতে? তন্ময়া কুসুম কে ইশারা করলো দ্রুত দীলারা বেগম কে খবর দিতে। পুলিশ এসেই হৃদীতার সামনে এসে দাঁড়ালো।

> আপনি কি মিস হৃদীতা? (গম্ভীর ভাবে)

> জ্বী। (মাথা নাড়িয়ে )

> চলুন আমরা আপনাকে নিতে এসেছি। বাইরে আপনার বোন আর মা অপেক্ষা করছে।

> কিন্তু আমি তো এতিম। আমার বাবা মা নেই।

> এতোদিন যাদের বাড়িতে থাকলেন খেয়ে পড়ে বড় হলেন আর এখন তাদেরকেই ভুলে যাচ্ছেন। এটা কিন্তু ঠিক না। মিস্টার হৃদয় আপনাকে অপহরণ করে বিবাহ করেছে এটা আমরা জানি তাই আপনি ভয় পাবেন না। আপনার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি তাই আপনি আমাদের সাথে যেতে বাধ্য।

> আমি যেতে চাইনা কোথাও। প্লিজ আমাকে নিবেন না। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। প্লিজ আমার নিবেন না। (হাত জোড় করে)

> ওরা আপনার আপনজন ওরা কেনো মারবে আপনাকে। আপনি চলুন সময় নষ্ট করবেন না।

ওদের কথার মধ্যেই দীলারা বেগম হাজির হলেন। উনি পুলিশ দেখে একটুও অবাক হননি। উনি জানতেন এমনটাই হবে। কারণ সজিব সম্পর্কে উনার হালকা ধারণা আছে। ও রিয়াকে দিয়ে এই সব করিয়ে নিচ্ছে। ছেলেটা অল্প বয়সে একটু বেশিই রাজনৈতিক বুঝে ফেলেছে। দীলারা বেগম স্বাভাবিক ভাবে পুলিশের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।

> আপনি ওকে নিয়ে যাবেন ঠিক আছে কিন্তু ওর যদি কিছু হয়ে যায় তার দায়বদ্ধতা কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। আমি থানায় দুদিন আগে ওর মা আর বোনের নামে সাধারণ একটা ডিজি করেছি। আপনি চাইলেই তার কপি দেখতে পারেন। ওর মা আর বোন মিলে ওকে হত্যার চেষ্টা করেছিল আমার ছেলে ওকে উদ্ধার করে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল। এখন বলুন পারবেন নিতে। যদি না পারেন তাহলে কিন্তু আমি ছেড়ে কথা বলবো না। আমাকে তো আপনি চিনেন? না চিনলে চিনে নিবেন। আর ওর বিয়ের বয়স হয়েছে কি হয়নি এটা তো প্রমাণ বলবে। আপনি এখন আসতে পারেন। (কঠিন গলাই)

> কিন্তু ম্যাডাম উনার পরিবার যে উনাকে ফেরত চাইছেন।

> ফেরত চাইছেন মানে কি ওকে কি আমরা কয়েদ করে রেখেছি? ওখানে ও জেতেই পারে তবে সারাজীবনের জন্য নয়। যাবে আর চলে আসবে।

> উনার বাবা অসুস্থ। উনাকে দেখতে চেয়েছিলেন শেষবারের জন্য।

কথাটা শুনেই হৃদীতার বুকের মধ্যে ধুপ করে উঠলো। এই পৃথিবীতে ওই একটা মানুষ আছে যে ওকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে। আর সে আজ অসুস্থ হৃদীতা মেনে নিতেই পারছে না। ও মনে করে ওটাই ওর নিজের বাবা। নিজের আপনার থেকেও আপন। হৃদীতা হুট করে বলে বসলো

> আমি যাবো। আব্বু অসুস্থ আর আমি যাবোনা কখনও হতেই পারে না। (কান্না করে)

> হৃদয় বাড়িতে আসুক ওকে সাথে নিয়ে আমরা সবাই মিলে তোমার আব্বুকে দেখতে যাবো। এখন ওদের সাথে যাওয়া ঠিক হবে না।

> আম্মু উনি আসবেন কখন তার তো কোনো ঠিকনাই। আমি এখুনি যাবো। আপনি আমাকে জেতে দিন প্লিজ। (কাঁদতে কাঁদতে)

> আচ্ছা যাও। সাবধানে থাকবে আর সমস্যা হলে ফোন করবে। হৃদয় কে বললে ভালো হতো।

হৃদীতা অনুমতি পাওয়ার মাত্র দৌড়ে চলে গেলো। বাইরে এসে দেখলো বাইরের গাড়িতে রিয়া আর ওর মা বসে আছে। হৃদীতা চুপ করে ওদের পাশে গিয়ে বসলো। পুলিশ ও ওর পেছনে পেছনে আসলো। হৃদীতা মাথা নিচু করেই বলল,

> আব্বু কেমন আছেন এখন।

> ভালো না রে। সেদিন তোর সাথে আমি খুব খারাপ ব্যবহার করেছি ক্ষমা করে দে প্লিজ। আমি ওমন করে তোকে মারতে চাইনি।

> ঠিক আছে আপু। আমি কিছুই মনে করিনি।

ওরা গাড়ির মধ্যে বসে আছে গাড়ি ছুটছে শহরের দিকে। হৃদীতা ভাবছে হৃদয় বাড়িতে ফিরে ওকে না দেখে কি কিছু বলবে? হয়তো বলবে নয়তো না। একজন কাজের মেয়ে বাড়িতে থাকলেই কি আর না থাকলেই কি। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ও খেয়াল করলো গাড়িটা ওদের বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে অন্যদিকে যাচ্ছে। হৃদীতা ভ্রু কুচকে বলল,

> আমরা কোথায় যাচ্ছি?

> হসপিটালে যাচ্ছি আসলে আব্বুকে ওখানেই রাখা হয়েছে। জানিস তো অসুস্থ। (আমতা আমতা করে)

হৃদীতা কিছুটা শান্ত হলো কথাটা শুনে।কিন্তু হঠাৎ ওর কেমন ভয় ভয় করছে। মনে হচ্ছে কিছুই ঠিক হচ্ছে না। ও ঘনঘন বাইরে তাঁকিয়ে দেখছে। গাড়ি ছুটতেই আছে থামার নাম নেই। হৃদীতা লক্ষ্য করলো গাড়ি শহর পেরিয়ে কোনো গ্রামের রাস্তায় ঢুকছে। ওর মনে হচ্ছে শহরের হসপিটাল রেখে ওরা গ্রামের হসপিটাল কেনো এনেছে কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না। ও এবার ভাবলো রিয়া আর আম্মুকে ওকে কি মিথ্যা বলে এনেছে। কিন্তু কেনো? ও প্রচণ্ড টেনশন করছে। ওকে এমন করতে দেখে রিয়ার আম্মু ওর মাথায় হাত রাখলো.

> মা এমন টেনশন করিস না। তোর বাবাকে আমরা সামনে একটা ভালো হসপিটাল আছে ওখানে ভর্তি করেছি। ভালো চিকিৎসা হবে তাই জন্য।

হৃদীতা বারবার অবাক হচ্ছে। এই মহিলা ওকে কখনও মা বলা তো দূর একটুও ভালো ব্যবহার পযর্ন্ত কখনও করেনি কিন্তু আজ হঠাৎ এর হলো কি?। ওর ভাবনার মাঝেই গাড়িটা একটা গেট দিয়ে ঢুকে বড় একটা বাড়ির সামনে এসে থামলো। ওরা গাড়ি থেকে নামতেই কয়েকজন লোক ওদেরকে ঘিরে ধরলো। হৃদীতা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ওদের সাথে। এটা হসপিটাল মনেই হচ্ছে না। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই একজন গম্ভীর কন্ঠে বললো যেকোনো একজন এখানে থাকা যাবে বাকীরা বাইরে অপেক্ষা করতে হবে। এই কথায় ওরা সবাই থমকে গেলো। রিয়া ওকে বোঝালো তোকে আব্বু দেখতে চাইছে তাই তুই এখানে থাক আমরা বরং বাইরে অপেক্ষা করছি।। হৃদতীর সংকোচ আর ভয় দুটাই হচ্ছে তবুও ওকে যে জেতেই হবে তাই ও মাথা ঝাকিয়ে আচ্ছা বলে ভেতরে চলে গেলো। হৃদীতা ধীরগতিতে পা ফেলে এগিয়ে সিড়ির কাছে আসতেই হঠাৎ ওর মনে হলো আব্বু কোন কক্ষে আছে এটাই তো জানা হলো না কি হবে এখন। ওকে এমন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেই লোকটা আবারও বললো সিড়ি শেষ হলে তার সামনের কক্ষতে আছে। হৃদীতা আর অপেক্ষা করলো না তরতর করে উপরে উঠে গেলো। আর ভাবছে গ্রামের মধ্যে এমন সুন্দর হসপিটাল জীবনে কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছে এটা কোনো বাগান বাড়ি। কোনো সৌখিন মানুষের তৈরী। ও সিঁড়ির শেষ প্রান্তের কক্ষে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো কিন্তু ও এখানে এসে ও যা দেখলো তার জন্য ও প্রস্তুত ছিল না।

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটি ভৌতিক কাল্পনিক গল্প তাই ভালো না লাগলে বাজে কমেন্ট না করে দয়াকরে ইগনোর করুন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here