দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৩

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৩
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদীতা কামরায় ঢুকতেই অবাক হলো।কোথায় ওর বাবা ওখানে কেউ নেই। সুন্দর সুন্দর আসবারপত্রে সাজানো একটা রুম যার সারা ওয়াল জুড়ে ওর ছবি। হৃদীতা অবাক হয়ে ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছে আর ভাবছে কে এমন করে ওর ছবি তুলে সাজিয়ে রেখেছে। আর বাবাকে ওরা কোথায় রেখেছে?। ও এবার ভাবলো আমি ভুল করে অন্যরুমে চলে আসিনি তো? যাই নিচে গিয়ে শুনে আসি কথাটা ভেবেই ও রুম থেকে বের হতে গেলো কিন্তু পারলো না। দরজা ওপাশ থেকে বন্ধ। হৃদীতা বারবার দরজা ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু কেউ খুলছে না। ও এবার বুঝতে পারলো সবটা ওকে বোকা বানানোর জন্য করা হয়েছে। কিন্তু এখন ও এখান থেকে বের হবে কেমন করে? ওর এমন বোকামির জন্য নিজেই নিজেকে লাথি দিতে মন চাইছে। হৃদীতা আকাশ পাতাল ভাবছে আর কাঁদছে। ও বুঝতেই পারছে না রিয়া আর আম্মু ওকে কোথায় রেখে গেলো। কার কাছেই বা রেখে গেলো। কে ওকে উদ্ধার করবে এখান থেকে। এই সব ভেবে হৃদীতা মেঝেতে বসে অনবরত কাঁদতেই আছে।

অন্যদিকে হৃদয় দুপুরের পরেই বাড়িতে ফিরে এসেছে। এই প্রথম ও এতো দ্রুত বাড়িতে ফিরেছে।। বন্ধুদের সাথেও ওর কোনো যোগাযোগ নেই আর শাফিন একটা কাজের জন্য বাইরে আছে। হৃদয় বাড়িতে এসেই চিৎকার করে কুসুম কে খাবার রেড়ি করার জন্য বলতে বলতে রুমে চলে আসলো। রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিচে আসলো। খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে হৃদয়ের জন্য। হৃদয় এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লো। তারপর খাবার প্লেটে নিতে নিতে বলল,

> আম্মু নবাব নন্দিনী কে দেখছি না। সেকি খাবে না? তাকে আনতে কি হেলিকপ্টার পাঠাতে হবে? (খাবার প্লেটে নিতে নিতে)

> ও নেই। (খেতে খেতে)

> নেই মানে কি? কোথায় গেছে। (চিন্তিত হয়ে)

> ওর আবা অসুস্থ রিয়া আর ওর আম্মু এসে ওই বাড়িতে নিয়ে গেছে। চলে আসবে।

> আম্মু তুমি ওকে যেতে কেনো দিলে? আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলে কি এমন হতো শুনি? তুমি জানোনা ওরা কেমন?( খাবার রেখে দাঁড়িয়ে )

> বসে খেয়ে নে। আমরা আগামীকাল সকালে যাবো আর ওকে নিয়ে আসবো। এতো কেনো টেনশন করছিস?( ওর দিকে তাকিয়ে )

> আম্মু টেনশন করবো না বললেই হবে? আমি এখুনি যাচ্ছি। ফিরে এসে খাবার খাবো। (যেতে যেতে)

> ওই খাবার ফেলে কোথাও জেতে নেই। অন্তত খেয়ে তো যা। (চিৎকার করে)

হৃদয় কোনো কথায় আর বললো না ও গেট দিয়ে বের হয়ে গেলো। হৃদয় গাড়ি নিয়ে ছুটছে হৃদীতাকে আনতে। আধা ঘন্টার রাস্তা ওর কাছে মনে হচ্ছে যেন শেষ হতেই চাইছে না।অনেক কষ্টে অবশেষ ওর রাস্তা শেষ হলো। হৃদয় গাড়ি থেকে নেমে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। ও গিয়ে দেখলো রিয়ার বাবা সোফায় বসে টিভি দেখছে। ওকে দেখেই উনি দাঁড়িয়ে পড়লেন।

> কি ব্যপার তুমি আবার এসেছো?

> আপনার না শরীর খারাপ? আপনি কেমন অসুস্থ যে বিছানায় না শুয়ে সোফায় বসে টিভি দেখছেন?( ভ্রু কুচকে)

> তুমি বড্ড বেশি বেহায়া জানো তো? আমি অসুস্থ তোমাকে কে বলেছে? আজগুবি কথা বলার জায়গা পাওনা।( চিৎকার করে)

> আপনি অসুস্থ হোন বা না হোন আমার কি যায় আসে?। হৃদীতাকে বলুন হৃদয় নিতে এসেছে। আমাকে না বলে এভাবে রিয়ার সাথে আসাটা উচিৎ হয়নি।( হুঙ্কার দিয়ে )

> মানে কি? হৃদীতা এখানে তো আসেনি। আর রিয়া ওই বাড়িতে গিয়েছিল কে বললো? রিয়া আর ওর আম্মু শপিং করতে গেছে। এখুনি চলে আসবে।

> আপনার স্ত্রী আর মেয়ে আপনি অসুস্থ বলে সকালে পুলিশ নিয়ে গিয়ে হৃদীতাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে। ওর যদি কিছু হয়ে যায় সত্যি আমি কিন্তু আপনার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে যাবো। তামাশা হচ্ছে আমার সাথে তাই না।( হুঙ্কার দিয়ে )

> বাবা আমি সত্যি বলছি এর কিছুই তো আমি জানিনা। ওরা সকালে গেছে আর ফিরে আসেনি। কোথায় আছে তাও তো জানিনা। অপেক্ষা করো আমি ফোন দিতেছি।

রিয়াকে কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরেও ফোন তুলল না দেখে হৃদয় চলে আসতে গেলো তখনই রিয়া আর ও মা হাসতে হাসতে গেট দিয়ে প্রবেশ করলো। ওরা সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাবার সময় হঠাৎ হৃদয় কে দেখে ঘাবড়ে গেলো। রিয়া জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> আরে তুমি এই সময় আমাদের বাড়িতে? কোনো সমস্যা হয়েছে কি? (অবাক হয়ে)

> ভনিতা রেখে বলো হৃদীতা কোথায়?

> কোথায় মানে তোমার বাড়িতে।

> ছিল কিন্তু এখন নেই কারণ সকালে তুমি আর তোমার মা ওকে মিথ্যা বলে নিয়ে এসেছো। কোথায় রেখেছো ওকে বের করো।

> কি বলছো তুমি আমি আর আম্মু তো শপিং করতে গিয়েছিলাম। তোমার ভুল হচ্ছে কোথাও।

> ভুল হচ্ছে তাই না? আমি কিন্তু তোমাকে শেষ বার সুযোগ দিচ্ছি বলো কি করেছো ওর সাথে?

হৃদয় অনেক হুমকি ধামকী দিলো কিন্তু ওরা কিছুতেই বললো না। হৃদয় উপায় না পেয়ে ফিরে আসলো। ভাবলো প্রমাণ নিয়ে পুলিশ সাথে করে আবার যাবো। ওদের বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে ওটা আর যেই পুলিশ এসেছিল ওদেরকে নিয়ে যাবে তখন হৃদীতাকে ফেরত দিয়ে ওরা বাধ্য হবে। হৃদয় সারা রাস্তায় শুধু হৃদীতাকেই ভেবেছে। মেয়েটা কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে, যদি ওর সাথে খারাপ কিছু হয়ে যাই এই সব ভেবেই ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ও কোনো রকমে বাড়িতে পৌঁছে সিসি ক্যামেরা চেক করলো কিন্তু একটা পুলিশ কেও ওর চেনা মনে হচ্ছে না। ও এবার থানায় ফোন দিয়ে শুনলো দুপুরে ওর বাড়িতে কারা এসেছিল কিন্তু থানা থেকে জানালো ওদের কেউ আসেনি। হৃদয় এবার পড়লো মহা ঝামেলায়। কোনো প্রমাণ নেই ওর কাছে। কি করবে এবার কোথায় পাবে ওকে। দীলারা বেগম আফসোস করছেন তখন থানায় ফোন না করেই কেনো ওদেরকে বিশ্বাস করেছিল এখন কি হবে।। মেয়েটাকে হাতছাড়া করাটাই বোকামি হয়েছে। হৃদীতার নামে বিশাল অঙ্কের একটা অর্থ আছে ওটার কথা কি ওরা জেনে গেলো এই কথাটা উনার মাথায় বারবার ঘুরছে। পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে তদন্ত চলছে। সঠিক প্রমাণের অভাবে হৃদয় কিছুই করতে পারছে না। ও নাওয়া খাওয়া ভুলে হৃদীতাকে খুজতে লেগেছে। এতোদিন ওর এই সম্পত্তির জন্য ওকে এই বাড়ি থেকে ওরা জেতে দেইনি কিন্তু আজ হৃদয়ের ওর জন্য অন্যরকম একটা অনুভূতি অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে হৃদীতাকে ওর চাই। এই চাওয়াটাকে ভালোবাসা বলে কি ওর জানা নেই। হৃদয়ে বাবা বাড়িতে ছিলেন না। উনি ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলেন বাড়িতে ফিরেই পুত্রবধূর নিখোঁজ সংবাদে উনি অস্থির হয়ে উঠেছেন। বারবার মাথায় পানি নিচ্ছেন। আসলে উনি অত্যন্ত কৃপণ একজন ব্যক্তি। অনেক কষ্ট করে তিল তিল করে এই সম্পদ উনি অর্জন করেছিলেন। তাই খরচ করতেও উনার অনেক কষ্ট হয়। উনি হৃদয় কে খুব একটা পছন্দ করেন না তাই ম্যানেজারের পরামর্শে হৃদয়ের সম্পত্তির অর্ধেকের বেশি অংশ ওর বউয়ের নামে দলিল করেছিলেন। যাতে হৃদয় ইচ্ছা করলেও না খরচ করতে পারে। দলিলে উল্লেখ ছিল বিবাহের এক বছরের মধ্যেই যদি হৃদয় ওর স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয় তাহলে ওটা ওর বউয়ের নামেই থেকে যাবে। এর মধ্যেই যদি ওর স্ত্রীর অপঘাতে মৃত্যু হয় তাহল সব সরকারি তহবিলে চলে যাবে। তাই এখন যদি হৃদীতা কোনো রকমে মারা যায় এই ভয়ে উনি শঙ্কিত বা কেউ ওর থেকে জোর করে নিয়ে নিলো। উনার এখন মনে হচ্ছে ম্যানেজারকে ধরে পিটিয়ে সোজ করতে। বেটা উল্লুকের পরামর্শ নেওয়াটা একদম ঠিক হয়নি। যাইহোক উনাকে এমন করতে দেখে দীলারা বেগমের প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে। উনি বলেই ফেললেন,

> তোমার মতো লোক আমি জীবনেও দেখিনাই। একটা মেয়ে বিপদে আছে কোথায় তাকে কিভাবে বাঁচতে হবে এটা ভাববে তানা তোমার টাকা পয়সার কথা ভেবে মাথা খারাপ হচ্ছে।

> তুমি বুঝতে পারছো কি হবে ওর কিছু হলে?

> কিছুই হবে না। আমার ছেলের উপরে আমার ভরসা আছে ও কিছু একটা নিশ্চয়ই করবে। তোমার মতো নয় ও।

> আমার কপাল খারাপ ছিল তাই আমার মতো হয়নি। আমার মতো না হয়ে কার মতো যে হলো। আচ্ছা যখন ও হসপিটালে জন্মালো তখন কি তোমার পাশে আর কেউ ছিল? মানে অন্যকারো কি বাচ্চা হয়েছিল?

> একদম বাজে কথা বলবে না। কি সব পচা কথা বলছো? ও আমার ছেলে ঠিক আছে? বাজে লোক একটা। আমার শশুর মশাই মানে তোমার বাবা একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন কিন্তু তার ছেলে যে এমন কিপ্টে কেমন করে হলো এটা নিয়ে কখনো কি আমি তোমাকে কিছু বলেছি না প্রশ্ন করেছি?

> এই তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।

তন্ময়া এতোক্ষন সোফায় বসে ছিল মা বাবার এমন ঝগড়া শুনে ওর প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে। ওরা যখনই এক জায়গায় হয় তখনই ঝগড়া লেগে যায়। কখনও এরা ঠিক হবে না। এদের বিয়েটা ভুল ছিল।সঠিক পাত্র পাত্রী নির্বাচন হয়নি বলে এমন হয়েছে বলে মনে করে তন্ময়া। ও বিরক্ত হয়ে উঠে আসলো হৃদয়ে কাছে।হৃদয় ঘরে বসে ল্যাপটপে ভিডিও চেক করছে। বাড়ির সামনে যে গাড়িটা ছিল ওটার নাম্বার টা দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না। কেমন ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।ও সকালে খাবার খেয়েছিল আর খাওয়া হয়নি। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আসতে চলেছে কিন্তু ওর ক্ষুধা পাচ্ছে না। ওই সবাড়িতে রিয়ার কাছে ও দশবার গেছে কিন্তু কিছুই হয়নি। শেষ পযর্ন্ত ও বলেছে যদি হৃদীতাকে খুঁজে দেয় তাহলে ও হৃদীতাকে ডিভোর্স দিয়ে ওকে বিয়ে করবে তবুও ও রাজি হয়নি। একবার যদি বলতো ভেবে দেখবে তখনই হৃদয় ওর গলাই ছুরি চালিয়ে হৃদীতাকে খুঁজে নিতো। কিন্তু রিয়া বড্ড চালাক। হৃদয় মনে মনে ভেবেছে আগামীকালের মধ্যেই রিয়ার বারোটা ও বাজিয়ে দিবে। ওকে এখনো চিনে নাই তাই এমন সাহস করেছে। হৃদয় কথাটা ভেবেই ঠোঁট বাঁকা করে হাসলো। তন্ময়া হৃদয়ের পাশে এসে বসলো। ওর আজ প্রচণ্ড মন খারাপ হচ্ছে হৃদীতার জন্য। মেয়েটা যে অনেক সরল। হৃদয় ওকে দেখে মাথা তুলে তাকালো। তন্ময়া ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

> ভাইয়া কি হবে এখন কোথায় খুঁজবে ওকে? খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য। কিছু হবে না তো ওর?

> আরে পাগলি কিছুই হবে না। আমি আছি না? কালকের মধ্যেই আমি ওকে বাড়িতে আনবো প্রমিজ করছি। ওকে নিয়ে যাওয়ার সাহস করেছে যে তার ব্যবস্থা ও তো করতে হবে। হৃদয় কে সে চিনতেই পারেনি।

> ভয় করছে অনেক।

> ভয় কিসের? এখন নিচে যা আর আব্বু আম্মুকে বল খাবার খেয়ে নিতে। তুই ও খেয়ে নে। আজকের রাতটা আমাকে সময় দে ঠিক আছে?

> হুম। তুমি খাবে না? (মাথা নেড়ে)

> হুম খাবো তো। নিচে যা আমিও আসছি।

তন্ময়া নিচে চলে জেতেই হৃদয় ল্যাপটপের দিকে নজর দিলো। ও নিজের মতো একটা পরিকল্পনা করে ফেলেছে। এটাই হবে হাদীতার কাছে পৌঁছনোর একমাত্র রাস্তা। রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু হৃদয়ের চোখে ঘুম নেই। হৃদয় জানালা খুলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বারবার হৃদীতার বলা কথা আর ওর ছবি ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মেয়েটার কান্না, চোখে পানি, কথা বলার ধরন সবটাই অন্যরকম। ওর কথা গুলো ভাবতেই আজ হৃদয়ে মনে সুখ অনুভব হচ্ছে। অথচ এতদিন কখনও ওর এমন টা মনে হয়নি। হয়তো দূরে আছে বলেই ওর অনুপস্থিতি ওকে এমন তীব্রভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছে ওর প্রয়োজনীয়তা। অনেক রাত ও এখানে বসে আছে। ভোরের দিকে জানালায় বসে থাকতে থাকতেই হৃদয়ের চোখ দুটো ধরে আসলো।

ঘনগভীর জঙ্গলে মধ্যে একটি বিশাল দুর্গের মতো বড় প্রাসাদ। হৃদয় সেই প্রাসাদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে প্রচণ্ড ভাবে চিৎকারের আওয়াজ আছে। মনে হচ্ছে কেউ যেনো বাঁচার জন্য জীবনের শেষ চেষ্টা করছে তার চিৎকারের মাধ্যমে। প্রাসাদের সামনে দারোয়ান বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনুমতি ব্যতিত কাউকে দেখলেই গুলি করে দিবে। হৃদয় ভেতরে কেমন করে যাবে। দারোয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেমন করে ও এই বাড়িতে প্রবেশ করবে। এই প্রাচিল ডিঙিয়ে যাবার মতো ক্ষমতা ওর নেই। ও বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভেবেই চলেছে কি করবে। হঠাৎ ওর মনে হলো দারোয়ান কি সত্যি ওকে দেখতে পাচ্ছে নাকি পাচ্ছে না। যদি পেতো তাহলে তো এতোক্ষণ ওকে দেখতো কারণ ও তো সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় মনে সাহস করে ভেতরে প্রবেশ করলো। ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে দেখছে না। ও এগিয়ে চলেছ সামনের দিকে। চারদিকে অসংখ্য মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যে যার মতো কাজে ব্যস্ত। ভেতরের কক্ষ থেকে আওয়াজ আসছে তাই ও সেইদিকে ছুটে গেলো। হৃদয় হাটতে হাটতে একটা কক্ষের সামনে এসে থামলো। এটার মধ্যে থেকেই সেই আওয়াজ টা আসছে হৃদয় সামনে হাত বাড়িয়ে দিলো আর দরজাটা আপনা আপনি খুলে গেলো। দরজা খুলতেই হৃদয় দেখলো হৃদীতা মেঝেতে গড়িয়ে গড়িয়ে চিৎকার করছে। ওর সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। ও দৌড়ে গিয়ে হৃদীতাকে ধরতে গেলো কিন্তু পারলো না তার আগেই কিছু লোক ওকে ধরে ফেলল। মুখ ঢাকা একজন মানুষ হৃদীতার সামনে দাঁড়িয়ে আছে চাবুক হাতে। হৃদয়ের জানা নেই কিন্তু লোকটা কিছু একটার জন্য ওকে বারবার মারছে আর বলছে রাজি হতে কিন্তু ও হচ্ছে না। হৃদীতা চিৎকার করছে আর কাঁদছে। হৃদয় এই দৃশ্য সহ্য করতে পারছে না। ওর সারা শরীর কাঁপছে। কি করবে এখন এই ভয়ানক লোকটার থেকে ওকে কেমন করে রক্ষা করবে। আর এই লোকটাই বা কে? কি চাই ওর থেকে? হৃদয় বারবার নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। হঠাৎ ফোন বাজার শব্দে ওর ঘুম ভেঙে গেলো। হৃদয় দ্রুত উঠে হাপাচ্ছে। পাশে রাখা ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে। ফোনটা ধরতে হবে ঘড়িতে সকাল পাঁচটা বাজে। এতোসময় ও স্বপ্ন দেখছিল। হৃদয় ভাবলো হয়তো ওকে নিয়ে একটু বেশি ভেবেছে তাই এমন অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু তবুও মনের কোনে খচখচ করছে। মেয়েটা ভালো আছে তো। ও নিজেই নিজেকে বারবার সান্ত্বনা দিচ্ছে। ওর ভাবতে ভাবতেই ফোনটা কেটে গেলো কিন্তু তখনই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। হৃদয় ফোনটা কানের কাছে নিতেই ওপর পাশ থেকে উত্তর আসলো,

> আসসালামুয়ালাইকুম ভাই একটা খারাপ খবর আছ।

> ওয়ালাইকুমাসালাম। কি খবর তাড়াতাড়ি বল?

> ভাই সজিবের বাড়ির সামনে আমি। ভদ্রলোক খুন হয়েছেন । আপনি বলেছিলেন এখানে নজর রাখতে আমি আর কালাম এখানে সারারাত বসে আছি। এইমাত্র পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেলো।

> মানে কি বলছিস? ওকে আবার কে মারলো? আর কোথায় ওর লাশ পাওয়া গেছে জানিস কিছু?

> ভাই বাথরুমে কেউ উনাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। আমি আরও বিস্তারিত জেনে আপনাকে ফোন দিতেছি।

> শোন তোরা এখুনি ওখান থেকে চলে আই। পুলিশের নজরে আসলে সমস্যা হবে। এমনি আমি অনেক ঝামেলায় আছি।

> আচ্ছা ভাই। রাখছি এখন।

হৃদয় ফোন কান থেকে নামিয়ে থপ করে বসে পড়লো। হৃদয় ভেবেছিল ওই লোকটা রিয়ার সাহায্যে হৃদীতাকে কিডন্যাপ করেছে কিন্তু লোকটাকে অন্যএকজন খুন করে ফেলেছে। এখন কি হবে? কেমন করে ও হৃদীতার কাছে পৌচ্ছাবে।

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পটা কাল্পনিক তাই বাস্তবের সাথে মেলাতে চেষ্টা করা বোকামি হবে। ভালো না লাগলে বাজে মন্তব্য না করে ইগনোর করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here