দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৪

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৪
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদয় দ্রুত ফজরের নামাজ পড়ে নিলো। ধর্মকর্মে ওর তেমন মনযোগ নেই বললেই চলে। নিয়মিত নামাজ ও পড়া হয়না ওর। রমজান মাস আসলে বন্ধুদের সাথে নামাজে যাওয়া হয় তবুও তা পাঁচ ওয়াক্ত নয়। কিন্তু আজ ওর নামাজ পড়তে ইচ্ছা করছে। মানুষ বিপদে পড়লেই সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণ করে আর সুখের সময় ভুলে যায়। খুব কম মানুষই আছে যারা সুখে দুঃখে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে আর শুকরিয়া আদায় করে। তবুও তিনি তাঁর প্রিয় বান্দারকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। মন থেকে চাইলে তিনি আমাদের ক্ষমা করেন এবং প্রার্থনা কবুল করেন। হৃদয় নামাজ শেষ করে বাইরে ছাদে এসে দাঁড়ালো। এখনো সূর্য উঠেনি ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাসে ওর বেশ শীত শীত করছে। হৃদয় পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর গায়ে আজ নীল রঙের শার্ট যার হাতা কুনোই পযর্ন্ত গুটিয়ে রাখা। দক্ষিণা বাতাসে ওর চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে আর ও হাত দিয়ে বারবার ঠিক করছে দেখতে বেশ লাগছে। এমনিতে ও দেখতে ও খুবই সুদর্শন। মানুষে বলে যারা দেখতে সুন্দর তাদেরকে সব রঙেই নাকি মানিয়ে যায়।।ওর মনে নানা রকমের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু আজকের দিনটাতে আপাতত মেজাজ শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। মেজাজ খারাপ করে কোনো ভুল করা চলবে না। ওর একটা ভুল পদক্ষেপ হৃদীতার জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠবে পারে যেটা ও কখনও হতে দিবে না। ভাবতে ভাবতেই ওর ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। হৃদয় ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো ভাই কাজ হয়ে গেছে।হৃদয় বাঁকা হেসে আসছি বলে ফোনটা পকেটে রেখে দ্রুত নিচে নেমে গলো।।

রিয়া সকাল বেলা বের হয়েছে দৌড়ানোর জন্য। ও ফিটনেস সম্পর্কে বেশ সচেতন। নিজেকে সুন্দর রাখার জন্য ও সব সময় নিয়মকানুন মেনে চলে। ও মনে করে নিয়মিত পার্লার আর খাবার কন্টোলের সাথে সাথে এগুলোর ও প্রয়োজন আছে। ও আপন মনে দৌড়ে চলেছে। কানের হেডফোনে একটা হিন্দি গান অনবরত বেজে চলেছে। রিয়া গানটা শুনছে আর দৌড়াচ্ছে। আজ রাস্তা একদম ফাকা। সাধারণ এই সময় শহরের মধ্যে বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীরা দৌড়াদৌড়ি করে থাকে। কিন্তু আজ মাঝে মাঝে দু একজনের সাথে দেখা হচ্ছে ওর। রিয়ার এগলো নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ওর মন এখন অনেক ভালো। রিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে গোরস্থানের রাস্তায় এসে থামলো। এখান থেকে ওকে আবার ফিরতে হবে। ও পেছনে ফিরে আবার দৌড়ানো শুরু করলো কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে একটা সাদা প্রাইভেট কার এসে ওকে চোখের নিমিষে তুলে নিয়ে গায়ের হয়ে গেলো। রিয়া গাড়ির মধ্যে অজ্ঞান অবস্থায় সিটের উপর পড়ে আছে। গাড়ি চলছে তার নিদিষ্ট গন্তব্যে।

হৃদয় ছাদ থেকে নেমে নিচে আসতেই দিলীরা বেগমের সাথে ওর দেখা হলো। হৃদয় ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে আজ একটুও ঘুমাতে পারেনি। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। হৃদয় হাসি মুখে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

> আম্মু খুব ক্ষুধা পেয়েছে খেতে দিবে? (খাবার টেবিলে বসতে বসতে)

> বসো দিতেছি।।

> তুমি খাবে না?

> মেয়েটা কোথায় আছে এখনও কোনো সন্ধান হলো না আমার চিন্তা হচ্ছে। সারারাত ঘুম হয়নি ভেবে। ও বাড়িতে না ফিরলে আমার মুখে খাবার উঠবে না। (ছলছল চোখে)

> আম্মু আমার সাথে বসো। বলেছি না চিন্তা করো না। আমি ওকে ফিরিয়ে আনবো।

> তবুও মন মানছে না।

> আমাকে বিশ্বাস করো তো? বলেছি যখন তখন খুব দ্রুত ওকে ফিরিয়ে আনবো ইনশাআল্লাহ। এখন খেয়ে নিবে বসো।

হৃদয় ওর মায়ের প্লেটে খাবার দিয়ে নিজেও কিছুটা খেয়ে নিলো। এই সময় ওর খাওয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু মায়ের জন্য ওকে খেতে হচ্ছে। ওর ফোনটা বারবার বেজেই চলছে হৃদয় দেখছে আর কেটে দিচ্ছে। বাইরে যেতে হবে। একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। হৃদয় বাড়িতে আসছি বলে বের হলো।

রিয়া একটা চেয়ারে বাধা অবস্থায় বসে আছে। সমস্ত রুম অন্ধকার শুধু ওর মুখেই লাইট দেওয়া আছে। কিছুক্ষণ আগে একজন এসে ওর মুখে পানি ছুড়ে দিয়ে গেছে যাতে ওর জ্ঞান ফিরে আসে।সামনে ছোট একটা টেবিল তার ওপাশে হয়তো একটা চেয়ার আছে মনে হচ্ছে কিন্তু শিউর না। একটু একটু করে রিয়ার জ্ঞান ফিরে আসতেই ও এগুলো দেখতে পেলো। ওর মুখ কাপড় দিয়ে বাধা আছে। চাইলেই ও কথা বলতে বা দৌড়ে পালাতে পারবে না। রিয়া চোখ খুলতেই চারদিকে অন্ধকার আর নিজের মুখের উপর আলো দেখে ঘাবড়ে গেলো। ও কিছুই দেখতে পারছে না। চারদিকে নির্জন কোনো শব্দ হচ্ছে নেই। এটা কোন জায়গা কিছুই বোঝার উপাই নেই।। এখানে ও কেমন করে আসলো বুঝতে ওর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো।দুহাত চেয়ারের সাথে বাধা। ও নিজের হাত খোলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো কিন্তু পারলোনা। ওর এবার ভয় করছে কেউ ওকে মেরে ফেলার জন্য এখানে ধরে আনেনি তো। কিন্তু ও ওকে মেরে কার কি লাভ হবে । আর যদি কোন পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে তাহলে কি হবে?। কে বাঁচাবে ওকে। ভেবেই কান্না পাচ্ছে ওর। এই ঘরের কোথায় কি আছে কিছুই তো চোখেও দেখা যায় না। রিয়া এই সব কথা ভাবছে আর ঘেমেঘেটে একাকার হচ্ছে। রিয়া এবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।। হঠাৎ ওর মুখের বাধন কেউ একজন খুলে দিলো। আর তার সাথে সামনে থেকে একটা গম্ভীর কন্ঠে আওয়াজ আসলো।

> ছটফট না করে চুপ করে বসো নয়তো কিন্তু আমি না আমার হাতের রিভলবার কথা বলবে। (হুমকি দিয়ে )

> কে আপনি?আমার থেকে কি চাই আপনার যে এমন করে আমাকে ধরে রেখেছেন? ছাড়ুন আমাকে কিন্তু।

> এক সাথে এতো প্রশ্ন? তোমাকে এখানে নিমন্ত্রণ খেতে আনা হয়নি। একটা কথা জানতে চাই হয় সত্যি বলবে নয়তো এই রিভলবার দিয়ে তোমার শেষ বিদাই জানানো হবে। বলো সত্যি বলে বাড়িতে যাবে নাকি মিথ্যা বলে কবরে যাবে?

> কি কথা?( ভ্রু কুচকে)

> হৃদীতা কোথায়? ওকে কোথায় রেখেছো?

> জানি…..

> থামো। আমার কথাটা মনে হয় তুমি বুঝনি। বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কাছে রিভলবার আছে। নিজের চোখেই দেখে নাও।

লোকটা অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটা রিভলবার টেবিলের উপর রাখলো। রিয়া সামনে তাকিয়ে ভয়ে ঢোক গিললো কয়েকবার। ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিভলবার টার দিকে। হঠাৎ লোকটা খুব জোরে একটা ধমক দিয়ে উঠতেই রিয়া চমকে উঠলো।

> কি হলো অনন্তকাল ধরে তাকিয়ে থাকলেই হবে? বলবে নাকি মরবে। তোমার ইচ্ছা পূরণ করতেই আমি অপেক্ষা করছি।

> আচ্ছা আপনি ওকে কেনো খুজতেছেন? কে হয় ও আপনার?

> তুমি বড্ড বেশি কথা বলো । উত্তর দাও আমার হাতে সময় নেই। (চিৎকার করে)

কথাটা বলেই লোকটা ফায়ার করে দিলো। প্রচণ্ড শব্দে রিয়া ভয়ে গুটিয়ে গেলো। ও চিৎকারে করে বলল উঠলো,

> আমাকে মারবেন না আমি কিছু করিনি সব আম্মু করেছে। আম্মুকে অচেনা একজন অনেক টাকা দিয়ে বলেছিল হৃদীতাকে তার হাতে তুলে দিতে। আমি তো শুধু আম্মুর সাথে ছিলাম। ওরা শহরের পাশে একটা গ্রামে ওকে রেখেছে। আজকে সন্ধ্যায় ওকে নিয়ে লোকটা চলে যাবে নিউজিল্যান্ড। (একদমে)

> তোরা না মানুষ না। সামান্য টাকার জন্য এমন করতে পারলি? তোদের সাথে ভালো ব্যবহার করা ঠিক হবে না। শোন যতক্ষণ না ওকে আমি পাই ততক্ষণ তুই এখানেই থাকবি। ওকে না পেলে তোকেও পাচার করে দিবো উগান্ডায় বুঝলি? (চিৎকার করে)

> দয়াকরে আমাকে ছেড়ে দিন। প্লিজ ছেড়ে দিন।

> ছাড়বো। গ্রামের নাম আর ঠিকানা বল ওকে নিয়ে এসে তোকে ছাড়বো।

রিয়া গটগট করে সব বলে দিলো। ওর বলা শেষে দরজা খুলে গেলো। তারপর কয়েকজন রুম থেকে বেরিয়ে দরজা আবার বন্ধ হয়ে গেলো। রিয়া বুঝলো এখানে একজন ছিল না অনেকেই ছিল। ও ভাবছে হৃদীতাকে এরা কেনো খুজতেছে? ওর এখন মনে হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি হৃদীতাকে পাবে ততই ওর জন্য মঙ্গল।একটা গাড়ির সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে হৃদয়। ওর পাশে কয়েকজন আছে। ওদের একজনের দিকে তাকিয়ে হৃদয় বলল,

> বাহ কালাম তুই তো কামাল করে দিয়েছিস।

> ভাই আপনাকে সাহায্য করতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমরা আপনার সাথে আছি। আপনি ওখানে চলে যান আমারা আপনার পেছনেই থাকবো।

> তোরা আছিস বলেই না আমি এতোটা ভরসা পাচ্ছি। আমি যাচ্ছি তোরা সাবধানে থাকিস।

> আচ্ছা ভাই।

হৃদয় গাড়িতে উঠে বসলো। ওর গন্তব্যস্থল হৃদীতাকে রাখা হয়েছে সেই গ্রামে। হৃদয় রিয়াকে লোকদিয়ে কিডন্যাপ করিয়ে সব খবর জেনে নিয়েছে। ও সামনে গেলে রিয়া কখনও বলতো না তাই এই লুকোচুরি। হৃদয় গাড়িতে বসে আছে আর টেনশন করছে সত্যি কি আজ হৃদীতাকে পাবে ও। যদি পাই তাহলে তো ভালো আর না পেলে কোথায় খুজবে। এই মূহুর্ত্তে রিয়ার মায়ের উপরে ওর ভীষণ রাগ হচ্ছে। এই মহিলা জীবনেও মানুষ হবে না। টাকা পয়সার তো কোনো অভাব নেই তবুও এতো লোভ কেনো কে জানে। ও গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ও কখনও ভাবতেই পারেনি যাকে ও এতোটা অপমান আর অবহেলা করেছে তার জন্য ওকে এমন পথে পেথে ঘুরতে হবে। । হৃদয় আজ ওর ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে এসেছে। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। ওখানে গিয়ে ও কি করবে তার একটা প্লান ও করে ফেলেছে।ওখানে পৌঁছাতে ওর দুই ঘন্টার মতো সময় লাগলো। হৃদয় সেই বাড়ি থেকে একটু দুরে নেমে ড্রাইভার কে অপেক্ষা করতে বলে নিজে সামনের দিকে এগিয়ে চলল।

বিশাল বড় এই বাড়িতে একটা মেয়ে ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই সবাই পুরুষ মানুষ। চারদিকে অনেক মানুষ আর সবাই তার মালিকের হুকুম শোনার জন্য তৎপর হয়ে থাকে। হৃদীতা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। এখানে ওকে কে এনেছে ওর জানা নেই কিন্তু এই বাড়ির সবাই ওকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। একটা মেয়ে আছে ঠিক ওর বয়সি না অনেকটাই বড়। হৃদীতাকে ওই মেয়েটা প্রায় সময় বোঝাতে আসে বাড়ির কথা ভুলে ওদের সাথে এখানে ভালোভাবে থাকতে। সব সময় এমন কান্নাকাটি না করতে। হাদীতা বলেছে ও বিবাহিত কিন্তু ওই মেয়েটা বলেছে এই বিয়েটা ওর জন্য ভালো হয়নি। আর ওর স্বামী তো ওকে চাইনা তাই তাকে ভুলে গিয়ে মেয়েটার বড় ভাইকে বিয়ে করে নিতে। অনেক সুখে থাকবে তাহলে।কিন্তু হৃদীতা সেই ভদ্রলোকে এখনো দেখেনি। ওই লোকটা ওকে কেনো বিয়ে করতে চাইছে ওর জানা নেই। তবে এখানে ওর একটুও ভালোলাগে না। ও হৃদয়ে কাছেই ফিরে যেতে চাই। লোকটা রাগী কিন্তু খারাপ না। হৃদীতা কাঁদতেই থাকে সব সময়। কে ওকে রক্ষা করবে এই চিন্তাই। হৃদয় কি ওকে বাঁচাতে আসবে? হৃদীতা দূরে তাকিয়ে আছে। এই বাড়ির মধ্যে যে কেউ প্রবেশ করতেই পারেনা।। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে হৃদীতা পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো সেই মেয়েটা এসেছে। মেয়েটা আসতেই হৃদীতা চোখের পানি মুছে নিলো। মেয়েটা হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

> একটা ভালো সংবাদ আছে। আমরা আজকেই চলে যাচ্ছি সন্ধ্যায় ফ্লাইট। তুমি ও আমাদের সাথে যাবে। ওখানে আমাদের বাবা মা আছে।

> আমি যাবো না কোথাও। প্লিজ আপু আমাকে যেতে দিন। আমি আমার মতো বাঁচতে চাই। সারাজীবন আমি শুধু অন্যদের মতো চলেছি। কেউ আমাকে বুঝেনি। আপনি একটু দয়াকরুন। (অনুরোধ করে)

> কি সব বলছো তুমি? আমার ভাইয়াকে তুমি দেখেছো? হাজার ও মেয়ের ক্রাশ আমার ভাইয়া। তোমাকে ও পছন্দ করেছে মানে তোমার ভাগ্য খুলে গেছে। আর আমার বাবা মা ও তোমাকে দেখেছে। তারাও তোমাকে পছন্দ করেছে। সমস্যা কোথায়?

> আপনারা তো ভেবেই নিয়েছেন কি করবেন তাহলে আর কি। আপনি যান আমাকে একা থাকতে দিন।( রাগ করে)

> আচ্ছা থাকো আমি গেলাম। খবর টা দেওয়ার ছিল।

মেয়েটা চলে জেতেই হৃদীতা বসে পড়লো। ওকে কিছু একটা উপাই খুজতে হবে। এখান থেকে বের হবার কোনো উপাই লাগবে। কিন্তু কী সেটা ও চিন্তা করছে। হৃদীতা এখানে আসার পর থেকেই এই ঘরে বন্দী আছে। আজ সকালে বারান্দায় এসেছে। বাড়ির কিছু মানুষ ওকে খাবার আর দেখে যায় মাঝে মধ্যেই। এর মধ্যে ওর সাথে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। ওর বারবার মনে হচ্ছে কানে কানে কেউ একজন ফিসফিস করে কথা বলছে। ওকে অদৃশ্য থেকে কেউ কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু ও বুঝতে পারছে না। এটা বারবার হচ্ছে। হৃদীতা ভয় ও পাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু অদ্ভুত ঘটনা যে ওর সাথে ঘটে যায় এটা ওর জানা আছে কিন্তু এটা কি?

অন্যদিকে এই বাড়িতে সবাই অনেক তোড়জোড় করছে মালিক চলে যাবে তাই বেশ ভালো ভালো রান্না হচ্ছে। আবার অনেক ব্যবসায়ীরা এসেছে দেখা করতে। আবার কবে দেখা হবে কি জানা নেই তাই। হৃদয় দ্রুতগতিতে এগিয়ে এসে গেটের কাছে এসে দাঁড়ালো। গেটে দুজন দারোয়ান আছে ওরা পান খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। হৃদয় এসে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। ওকে দেখে একজন দারোয়ান বলে উঠলো।

> কি চাই?

> স্যার আমি একজন মালি। এই বাড়ি থেকে খবর পাঠানো হয়েছিল কাজের জন্য তাই এসেছি। মালিক চলে যাবেন তাই আমাকে এই বাড়ির বাগানের দায়িত্বে রেখে যাবেন। (বিনীত সুরে )

> ও আচ্ছা যাও। আসার কথা কখন আর এসেছো কখন শুনি? এমন করবে না আর ঠিক আছে?

> জ্বী আচ্ছা।

হৃদয় দ্রুত ভেতরে চলে আসলো। শত্রুকে না চিনে হঠাৎ হামলা করা বা পুলিশ নিয়ে আসা বোকামি হতো। পুলিশ দেখে যদি এরা হৃদীতাকে লুকিয়ে ফেলতো তাই ও আগেই এসেছে। আর সব ব্যবস্থা করেই এসেছে। হৃদয় হাসতে হাসতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।। ওকে এগিয়ে আসতে দেখে দুজন ওর দিকে এগিয়ে আসলো। হৃদয় খুব পুরাতন একটা লুঙ্গি আর ময়লা একটা শার্ট পড়ে আছে। আর মুখ ভর্তি দাড়িতে ওকে সত্যি মালি মালি মনে হচ্ছে। ওরা এসেই হৃদয় কে ধরলো।

> এই তুমি কে?

> জনাব আমি একজন মালি।

> ও আচ্ছা। কিন্তু বাগান তো পেছনের দিকে। ওদিকে না গিয়ে তুমি ভেতরে কোথায় যাচ্ছো? (ধমক দিয়ে )

> আমি চিনতে পারিনি ক্ষমা করবেন ।

> আচ্ছা ঠিক আছে। ওই দিকে বাগান। (বাগানের দিকে দেখিয়ে)

হৃদয় বাধ্য হয়ে বাগানে দিকে এগিয়ে গেলো। ওর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। ও কে ধমক দিয়ে হুকুম করা হচ্ছে। মনে মনে ভাবলো একবার ওই হাফ পাগল মেয়েটাকে পাই তখন এদেরকে ও দেখে নিবো। হৃদয় প্রমিজ করেছে এই দুইটাকে না মেরে ও এখান থেকে যাবেনা। ও এসে বাগানে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নানা রকমের ফুল আর ফলের সমাহার এখানে। কি কাজ করবে ও বুঝতেই পারছে না। ওতো কখনও কোনো কাজ করেনি। আর ওতো কোনো কাজ করতে ও আসেনি। ও তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে কোনো জানালা বা বারান্দা আছে কিনা ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। ও ভালো করে লক্ষ করতেই হঠাৎ একা ওড়নার আচল দেখতে পেলো। এই ওড়না টা ওর চেনা। এটা সামনের বারান্দা থেকে উড়ছে।

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। খারাপ লাগলে বাজে মন্তব্য না করে দয়াকরে ইগনোর করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here