দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৯

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৯
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদীতার হাত পা চলছে না।ও অথর্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বাইরে থেকে মুখোশ পড়া একজন লোক জানালা থেকে ঝাপ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। হৃদীতার মনে হচ্ছে ও দরজার সাথে মিশে গেছে ভয়ে। এই মূহুর্তে কি করা উচিৎ ও বুঝতেই পারছে না। রুমে প্রবেশ করে অচেনা আগন্তক জানালাটা আবার ঠিক আগের মতো রেখে হৃদীতার দিকে এগিয়ে আসলো। আগন্তক ধীরগতিতে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। হৃদীতা চোখ বন্ধ করে ভাবলো খুব জোরে একটা চিৎকার দিবে। লোকটা আস্তে আস্তে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। আগন্তকের নিশ্বাস ওর মুখের উপর বাড়ি খাচ্ছে। লোকটা নিজের হাতটা ওর কাধের উপর রাখতেই হৃদীতা খুব জোরে চিৎকার দিতে গেলো ঠিক তখনই ওর মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে লোকটা ওকে চুপ করিয়ে দিলো। হৃদীতার ভয়ে কান্না পাচ্ছে। ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। হঠাৎ একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ওর কানে পৌচ্ছাতেই ও চোখ খুলে তাঁকালো। দেখলো হৃদয় ওর মুখে হাত রেখে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদীতার এবার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। এসবের মানে কি। লোকটা কি ওকে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে নাকি? হৃদীতা ভেবেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। ওকে এমন কাঁদতে দেখে হৃদয় ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত রাখলো।

> আরে পাগলী কাঁদছো কেনো?খুব সরি আমি একটু মজা করেছি।

> আপনি আমাকে পছন্দ করেন না বলে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলতে চান তাই না?( কাঁদতে কাঁদতে)

> বাজে কথা বলবে না হৃদীতা। তোমাকে মেরে ফেলবো কেনো? বউ মেরে বিধবা হবার মতো এমন মহান আমি হয় নই। যদি কেউ দেখে নেই তাই এমন করে এসেছি কিন্তু তুমি তো একবার তাকিয়েই চোখ বন্ধ করে ফেললে। হৃদীতা যে একটা ভীতুর ডিম্ব জানা ছিল না তো।

> না আমি অনেক সাহসী।( ফুপিয়ে )

> তাই?

> হুম।

> তাহলে কাঁদছো কেনো এখনো? ভয় পেয়ে এখনো আমার বুকের মধ্যেই লুকিয়ে আছো। কি সাহস তোমার আমি তাই ভাবছি।( হাসি দিয়ে )

ওর কথায় হৃদীতা দ্রুত ওর কাছ থেকে সরে আসলো। হৃদীতা ভাবছে ও একদম ভীতু না তাই ওকে নিয়ে মজা করার মতো কিছুই হয়নি। ছেলেটা সব সময় এমন উল্টাপাল্টা কাজ করে মানুষের ফিউজ উড়িয়ে দেই। হৃদীতা মুখ গম্ভীর করে রেখেছে দেখে হৃদয় ওর নাকের ডগায় আঙ্গুল দিয়ে ছুয়ে দিয়ে এসে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো।হৃদীতা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

> আপনার তো এখানে আসতে মানা ছিল তাই না? সবাই জানলে কি ভাববে?

> কেউ জানলে বলবো হৃদীতা আমাকে বলেছিল এখানে আসতে। আমাকে ছাড়া নাকি ওর একটুও ভালোলাগছে না। ঘুম আসছে না তাই আমি ওর ঘুম পাড়াতে এসেছিলাম।( হাসি দিয়ে )

> আপনি তো খুব। আমাকে এমন ফাঁসিয়ে দিবেন আমার প্রতি আপনার একটুও মায়া দয়া নেই তাইনা? (ছলছল চোখে)

> মায়া দয়া আছে বলেই তো তোমার কাছে চলে এলাম। ভাবলাম হৃদীতা তো একটা বাচ্চা মেয়ে আর সে ভীষন ভীতু যদি ভয় পাই তাই এসেছি তার ভয় তাড়াতে।।

> হু আমি তো বলেছি আপনাকে এইসব।( মুখ ভার করে)

> বলবে কেনো হৃদীতা? আমি তোমাকে বুঝি ঠিক আছে? নিজের বউয়ের এইটুকু কথা না বোঝার মতো গাধা তো হৃদয় নয়।

> হুম খুব বুঝে।

ওদের কথা বলার মধ্যেই বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ হলো। হৃদীতা ভয়ে ঢোক গিলল। তনুজা দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর হৃদীতাকে ডাকছে। হৃদয় ওকে ভয় পেতে দেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। হৃদীতা ভয়ে ভয়ে হৃদয়ে পাশে এসে বসলো তারপর অনুরোধের সুরে বলল,

> আপনি লুকিয়ে পড়ুন প্লীজ।

> কেনো আমি কি চোর নাকি? ডেকে এনে আমাকে কিন্তু অপমান করছো। (রেগে)

> আপনি লুকাবেন না?( ছলছল চোখে)

> আচ্ছা যাও দরজা খুলে দাও আমি খাটের ওদিকে আছি। আর শুনো ওর কথায় তেমন পাত্তা দিবে না ঠিক আছে?

> আচ্ছা। (হাসিমুখে)

হৃদয় কথা বলতে বলতে খাটের ওপাশে লুকিয়ে পড়লো। ওর লুকানো দেখে হৃদীতা নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখ মুছে নিয়ে দরজা খুলে দিলো। ওর দরজা খুলতেই তনুজা হুড়মুড় করে ভেতরে চলে আসলো। হৃদীতা অবাক হয়ে জিঙ্গাসা করলো,

> আপু আপনি এতো রাতে আমার রুমে?

> কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাওনা নাকি? তুমি কার সাথে কথা বলছিলে? সত্যি করে বলো কিন্তু। কাজের মেয়েদের তো কোনো ক্লাসনেই। আবার কাকে না কাকে ফাঁসিয়ে হাতে রেখেছো সন্দেহ হয়।

> আপু কি বলছেন ওই সব? {ঢছলছল চোখে)

> যাইহোক তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। সারাদিন তো তোমাকে একা পাওয়া যায় না তাই এখন আসতে হলো। আমি এতো নেকামী করে কথা বলতে পারিনা তাই যা বলি পরিষ্কার বলি। তুমি আগামীকাল ভোরে এখান থেকে চলে যাবে। তোমার থাকা খাওয়ার জন্য যত টাকা লাগে আমি দিয়ে দিবো। খুব সকালে উঠবে আমি বাইরে অপেক্ষা করবো টাকা নিয়ে। সবার উঠার আগেই তোমাকে এই বাড়ি থেকে বের হতে হবে। আমি কোনো না শুনতে রাজি না। বুঝেছো? (হুকুম দিয়ে )

> আমি চলে গেলে আপনার লাভ?

> হৃদয়ের সাথে আমার গভীর একটা সম্পর্ক ছিল কিন্তু তোমার জন্য সব নষ্ট হয়ে গেছে। কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছো। সব কিছু তোমার জন্য হয়েছে তাই তুমি চলে যাবে।

> ও আচ্ছা। এই জন্যই উনি আপনাকে অপছন্দ করেন এতো। যাইহোক সকালে আসবেন আমি রেড়ি হয়ে থাকবো।

> তুমি আমার কথায় রাজি?

> না হবার কি আছি। আপনি এখন আসুন আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে।

> আচ্ছা মনে থাকে যেনো।

কথাটা বলেই তনুজা চলে গেলো। এতোক্ষন হৃদয় ওকে ইশারা করছিল মেনে নিতে তাই ও হ্যাঁ বলেছে। নয়তো কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতো। বেয়াদব মেয়ে একটা। মিথ্যা বলার একটা লিমিট থাকে। ও চলে যেতেই হৃদীতা দরজা বন্ধ করে গম্ভীর হয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। ওর বসতেই হৃদয় এসে ওর পাশে শুয়ে পড়লো,

> আপনি ওর কথা মেনে নিতে বললেন?

> সকাল হোক তখন বুঝবে। যাইহোক ওর কথা বাদ দিয়ে আমাদের কথা বলো। তোমার সাথে তো আমার তেমন কথায় হয়নি তাই আজ সারারাত তোমার কথা শুনবো। ঘুমালে কিন্তু শাস্তি। ( হুমকি দিয়ে )

> আমার কথা কি আপনার পছন্দ হবে? আমি নিজেই তো একটা দুঃখের পাহাড়। ভালোলাগার মতো কোনো গল্প যে আমার জানা নেই।

> তাহলে কি আমাকে বলতে হবে? আচ্ছা তাহলে
গান শোনাও।

> আমি পারিনা তো। (মন খারাপ করে)

> কিছুই তো পারোনা। এমন আনরোমান্টিক বউ কে রোমান্টিক করবো কেমনে যে কপাল আমার। আচ্ছা কিছু করতে হবে না। মাথায় যন্ত্রণা করছে কপাল টিপে দাও আমি ঘুমাই।

হৃদয় কথাটা বলেই হৃদীতার কোলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। হৃদতার হাত কাঁপছে ওর মাথায় নিজের হাতটা রাখতে। হৃদয় কিছু বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করেই ওর হাতটা টেনে নিয়ে নিজের মাথায় রেখে বলল,

> এটা তো পারবে নাকি তাও পরবে না। এবার কিন্তু আমি রেগে যাবো।

> আপনি কি এখানেই থাকবেন। (কপাল টিপতে টিপতে)

> হুম। রুমে একা ঘুম আসছিল না তাই চলে এসেছি। এখানে ঘুম আসবে তাই। কথা বলো না ঘামতে দাও।

হৃদীতা আর কথা বললো না। হৃদয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে এই ছেলেটাকে যতোটা খারাপ ভেবেছিল তার থেকে অধিক পরিমাণ ভালো। এমন একটা ভালো মানুষ কে নিজের করে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। হৃদদীতা বুঝেছে হৃদয় ওকে ভালোবেসে ফেলেছে। হৃদয়ের এই পরিবর্তন ওর চোখে অনেক আগেই পড়েছে কিন্তু ও বুঝতে দেইনাই। মেয়েদের দিকে কেউ দূর থেকে দৃষ্টি দিলেও সে বুঝতে পারে ওই ছেলের মনের ওর জন্য কি চলছে। সেখানে এতোকাছে থেকে হৃদয়ের মনের কথা বুঝবে না এতোটা মাথামোটা নয় হাদীতা। হৃদীতা ভেবেছে ওকে যেমন কষ্ট দিয়েছে ও তেমন সহজে স্বীকার করবে না। দেখবে হৃদয় সাহেব কি করেন। হৃদীতা ওর মাথায় হাত রেখেই ঘুমে ঢলে পড়ছে তাই ও খাটে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। অনেক ভোরে দরজায় খটখট শব্দে হৃদীতার ঘুম ভাঙলো। ওর ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে কিন্তু ক্রমাগত দরজায় নক করার শব্দের জন্য ও জোর করে তাঁকিয়ে উঠতে গেলো কিন্তু পারলো না। হৃদয় ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। হৃদীতার বিরক্ত লাগছে। মানুষ এমন করে ঘুমাই কেমন করে ওর মাথাতেই আসছে না। রাতে হৃদীতাকে বসে ঘুমাতে দেখে হৃদয় ওকে ঠিক করে নিজের কাছে সুয়ায়ে দিয়েছিল। দরজার নক করার শব্দ টা থামছে না দেখে হৃদীতা হৃদয়ের মাথায় হাত দিয়ে ফিসফিস করে ডাকলো,

> এই যে শুনছেন? দরজায় কেউ এসেছে।

> আসুক আমার ঘুম পুরো হয়নি। আর পাঁচ মিনিট ঘুমাতে দাও প্লীজ। (চোখ বন্ধ করে)

> আমাকে ছেড়ে দিয়ে আপনি যত ইচ্ছা ঘুমান। আপনি তো ভারী কেনো, কি খান এতো? (বিরক্ত হয়ে)

হৃদীতার কথায় হৃদয় তড়িঘড়ি করে উঠে বসে ভ্রু কুচকে বলল,

> তোমার মতো চিকনী হতে বলছো? যাইহোক আমি ঠিক পাইনি, সরি ভুল হয়েছে। যাও দরজা খুলে দাও আগে।

হৃদীতা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই তনুজা একটা ব্যাগ হাতে ভেতরে ডুকলো। রুমে লাইট বন্ধ তাই অন্ধকারে কিছু দেখার উপাই নেই। তনুজা এসেই ওকে ধমক দিলো,

> উঠতে এতো দেরী হলো কেনো? মরার ঘুমে ধরেছিল? বলেছিলাম দ্রুত উঠবে তানা ঘুমিয়েই যাচ্ছ। এই ব্যাগ টা নিয়ে এখুনি বাইরে যাও। (এক দমে)

> আমি চলে গেলে আপনি এই বাড়িতে কি বলবেন?

> কিছু একটা বলবো। তুমি যাও নয়তো সবাই উঠে পড়বে।

তনুজা ব্যাগটা এগিয়ে দিলো তখনই রুমের লাইট টা জ্বলে উঠলো। তনুজা সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলো কারণ ওর সামনে হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে রাগী দৃষ্টি নিয়ে। তনুজা ভয় পেয়েও মুখে জোরকরে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> তু….তু…তুমি এখানে? আমি মজা করছিলাম আসলে দেখছিলাম হৃদীতা তোমাকে ছেড়ে যায় কি?

> আমার বউ ঘরে কার সাথে কথা বলছে তার খোঁজ তো ভালোই রেখেছিস দেখলাম। তোর সাথে আমার গভীর একটা সম্পর্ক ছিল তাই না? এই সব কিছুই মজা করে বলেছিস?(শান্ত হয়ে)

> আমি কিছু বলিনি বিশ্বাস করো। এই মেয়েটা হয়তো তোমাকে আমার নামে মিথ্যা বলেছে।

> চুপ আর একটা মিথ্যা বললে তোকে আমি এখানেই খুন করে ফেলবো। চল আমার সাথে তোর ফাজলামি আমি ছুটিয়ে দিবো।

হৃদয় ওর হাত ধরে চিৎকার করে টানতে টানতে নিয়ে গেলো। হৃদীতা মনে মনে ভাবছে তনুজা এবার গেলো। বাঘের থাবায় পড়েছে ওকে এখন বাঁচাতে হবে। তাই ও নিজেও ওদের পেছনে দৌড়ে গেলো। আর হৃদয় কে বোঝাচ্ছে এমন না করতে। ভুল হয়েছে এবারের মতো ক্ষমা করতে কিন্তু হৃদয় শুনছে না। হৃদয়ের চিৎকারে বাড়ির অন্যরা উঠে এসেছে বাইরে। হৃদয় ওকে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে ছুড়ে দিয়ে বললো,

> একে আমি পাঁচ মিনিট সময় দিলাম এর মধ্যেই যদি ও এই বাড়ি থেকে না যায় আমি নিজেই হৃদীতা কে নিয়ে চলে যাবো।

> ওই সাত সকালে এ সব কি শুরু করেছিস তোরা বলবি?( দীলারা বেগম)

> তোমার ভাইয়ের মেয়ের আমার জন্য দরদ উথলে পড়ছিল তাই সে হৃদীতাকে টাকা দিয়ে এই ভোর বেলা বাড়ি থেকে চলে যেতে অফার করছিল। আর ওর সাথে আমার নাকি গভীর সম্পর্ক ছিল। আরও অনেক কিছু বলেছে। (চিৎকার করে)

> ফুপি সব মিথ্যা কথা ও আমার নামে মিথ্যা বলছে। আসলে ওকে মানা করা হয়েছিল হৃদীতার সাথে দেখা না করার জন্য তবুও ও ওখানে গেছে আমি দেখে ফেলেছি বলে আমার নামে মিথ্যা বলছে।( কাঁদতে কাঁদতে)

> ও তাই নাকি। জানতাম এমন বলবি তাই তাই প্রমাণ রেখেছিলাম।

হৃদয় নিজের ফোনটাতে একটা ভিডিও অপেন করে সবাইকে দেখিয়ে দিলো। দীলারা বেগম ভীষন রেগে গেছে। হৃদয়ে বাবা এমনিতে ও তনুজাকে তেমন পছন্দ করতেন না কিন্তু স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেন না। এমন একটা সুযোগ পাওয়ায় উনি বেশ খুশী হলেন। উনি হুঙ্কার ছেড়ে বললেন এমন অন্যায়ের শাস্তি হওয়া উচিৎ। বাড়ির মালিক কে টাকা দিয়ে বলছে বাড়ি থেকে চলে যেতে। দীলারা বেগম কিছু একটা বুঝে নিজের ভাইয়ের কথা ভেবে সবাইকে বোঝালেন বাচ্চা মেয়ে ভুল করেছে তাই বিয়ের দিন পযর্ন্ত এই বাড়িতেই থাকবে। তারপর বিয়ে মিটে গেলে চলে যাবে। এই দুদিন ওকে হৃদীতার আশেপাশের যেতে দিবেন না। ওর সব দায়িত্ব দীলারা বেগম নিলেন। হৃদয় তবুও শান্ত হচ্ছে না।ও মিথ্যা বলা একদম পছন্দ করেনা। সত্য বলে মৃত্যু হওয়া ভালো। হৃদয় রাগে ফুলতে ফুলতে নিজের রুমে চলে গেলো। হৃদীতার সংকোচ হচ্ছে সবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। ওর জন্যই সব কিছু হচ্ছে কিন্তু ওর কি দোষ ও তো ইচ্ছা করে এই বাড়িতে আসেনি। আর চলে যাবে? যাওয়ার তো কোনো রাস্তাও খোলা নেই। এই বিশাল পৃথিবীতে ওর আপনি বলতে কেউ নেই যে তার কাছে ও চলে যাবে। হৃদীতা কাঁদতে কাঁদতে চলে আসলো গেষ্ট রুমে। ওর পেছনে পেছনে তন্ময়া এসে ওর পাশে বসে ওকে বোঝালো। বাড়িতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সকালের ঘটনার জন্য। তন্ময়া সব ঠিক করার জন্য বাইরে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে সবাইকে নিয়ে ড্যান্স শুরু করলো।। ওর বন্ধু বান্ধবী অনেকেই এসেছে। আজ হৃদীতার গায়ে হলুদ। হৃদীতাকে সুন্দর করে হলুদ শাড়িতে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। তন্ময়া কোনো কিছুতেই খামতি রাখেনি। ও সবটা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করিয়ে নিচ্ছে।ও বাড়ির ছাদে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। হৃদীতা ওখানেই আছে। হৃদয় মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ওর ওখানে যাওয়া নিষেধ আছে। সারাদিন বেশ ভালো করেই পার হলো। হৃদীতাও ভিষণ খুশি আজ। রাতে হৃদীতা জানালার দিকে তাঁকিয়ে বসে আছে। ভাবছে আজও হতো হৃদয় আসবে তাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে। অনেক রাত পযর্ন্ত অপেক্ষা করার পরও যখন ও আসলো না হৃদীতা ভাবলো ও আর আসবে না তাই ও জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাবার জন্য জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখতে পেলো বাগানের মধ্যে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে পেছনের দিকে মুখ করে।। হৃদীতার কেমন কৌতুক হলো জানার জন্য কে এই মেয়েটা যে এতোরাতে বাড়ির বাগানের মধ্যে দাড়িয়ে আছে?বাইরে লাইট জ্বলছে,বাগানের মধ্যে পুরোপুরি আলো না থাকলেও অন্ধকার নেই। বেশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। হৃদীতা একপা একপা করে দরজা খুলে বাইরে আসলো। মেয়েটা সেই একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদীতা দ্রুত মেয়েটার পেছনে গিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,

> কে আপনি? এখানে কি করছেন?

হৃদীতার প্রশ্নের জবাব এলো না কিন্তু মেয়েটা আস্তে করে ওর দিকে ঘুরে তাকালো। হৃদীতা মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। কারণ হুবুহু ওর মতোই একটা মেয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হুবহু ওর মতো কি মনে হচ্ছে ও নিজেই এটা। এই মেয়েটার শরীর থেকে আলোর রশ্মি ঠিকরে পড়ড়ে চারদিকে আর ওর পেছনে দুটা পাখা বাতাসে ঝাপটা দিচ্ছে।

(চলবে)

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here