দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২০
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
হৃদীতা এই মূহুর্তে যেই মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে
আছে এই মেয়েটা ওর নিজেরই প্রতিচ্ছবি মনে বলে হচ্ছে। মেয়েটার ঠোঁটের কোনে হাসি লেগেই আছে যেনো ফুরাতেই চাইছে না। হৃদীতার সারা মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে। ও এই ঠান্ডা পরিবেশেও ঘামছে আর ওর চারদিক কেমন ঘুরছে। হৃদীতা নিজেকে শক্ত করে আবারও প্রশ্ন করলো,
> আপনি আমার মতো হুবুহু দেখতে কেমন করে? বলুন কে আপনি?
হৃদীতার কথায় মেয়েটা এবার শব্দ করে হেসে উঠে বলল,
> নিজেই নিজেকে চিনতে পারছো না কেমন মেয়ে তুমি? নিজের অস্তিত্ব কেই ভুলে বসে আছো! আমি তোমারই প্রতিচ্ছবি হৃদীতা। আমি তুমি দুজনেই যে এক।
> বিশ্বাস করিনা আমি। তুমি আমার মন আর চোখের ভ্রম। চলে যাও আমার সামনে থেকে আর কখনও এসোনা আমার সামনে।( কাঁপতে কাঁপতে)
> এসেছি কোথায় যে চলে যাবো। আমি তো তোমার মাঝেই ছিলাম। তুমি কেনো চাইছো না আমার অস্তিত্ব কে স্বীকার করতে? কবে থেকে তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি বুঝতেই চাইছো না। হৃদীতা সময় এসেছে সব কিছু জানার বোঝার। তোমার জানতে ইচ্ছা করে না তুমি কে?তোমার বাব মা কোথায়?
> আমি কিছুই জানতে চাইনা তুমি চলে যাও আমার সামনে থেকে। হৃদয় হৃদয় কোথায় আপনি আমাকে বাঁচান। এই মেয়েটা আমাকে মেরে ফেলবে।
হৃদীতা চিৎকার করে হৃদয় কে ডাকতে শুরু করলো। ওর চিৎকার শুনে ওর সামনের মেয়েটা একটু একটু করে ওর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। হৃদীতা পিছিয়ে আসছে আর মেয়েটা ওর দিকে এগিয়ে আসছে। হৃদীতা হঠাৎ পেছনে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। পিছিয়ে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। হৃদীতা এবার চোখ বন্ধ করে খুব জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো ওর অজান্তেই মেয়েটা ওর মধ্যেই বিলীন হয়ে গেলো। হৃদীতা হঠাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে ভয়ে বলে উঠলো,
> আমাকে মেরোনা প্লিজ। আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি? আমাকে ছেড়ে দাও।( কান্না করে)
> হৃদীতা কে তোমাকে মারতে চাইছে? চোখ খুঁলে দেখো আমি হৃদয়। তুমি এতরাতে বাগানে কি করছো?
হৃদীতা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। হৃদীতা আর এক মূহুর্ত ও অপেক্ষা না করে হৃদয়ের বুকে লুটিয়ে পড়লো। হৃদয় ওকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত রেখে ভাবছে আবার কি হলো ওর। হৃদীতা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। হৃদয়ের ভীষন চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য। কিন্তু হৃদীতা কিছুই বলছে না। হৃদয় এবার ওকে জোর করে বুক থেকে সরিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
> কি হয়েছে না বললে আমি বুঝবো কেমন করে বলো? আচ্ছা তুমি এখানে কি করছো বলবে? (চিন্তিত হয়ে)
> আমি আমি যখন ওই…
হৃদীতা ফুপানোর জন্য কথা বলতে পারছে না দেখে হৃদয় ওর মুখে হাত রেখে বলল,
> আচ্ছা এখন বলতে হবে না রুমে চলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে ঘুমাবে আর তুমি তো শাড়িটাও চেঞ্জ করোনাই। কি যে করোনা তুমি।
হৃদয় ওকে আর কথা বলার সুযোগ দিলো না। ওকে নিয়ে রুমে চলে আসলো।হৃদীতা ভীষন ভয় পেয়েছে ওর ব্যবহারে তা প্রকাশ পাচ্ছে। ভয়ের জন্য ও বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করতে যেতেও চাইছে না দেখে হৃদয় ওকে বলল,
> তুমি রুমেই চেঞ্জ করো আমি বাইরে অপেক্ষা করছি ঠিক আছে?
> না আপনি যাবেন না। আমি চেঞ্জ করবো না। ও আবার আসবে আর আমাকে নিয়ে যাবে। আপনি আমাকে চলে দিতে চান তাইনা?সেই জন্য ওকে সুযোগ করে দিতে চাইছেন, আমি বুঝেছি সব( কান্না করতে করতে)
> হৃদীতা কি ভুলভাল বকছো বলবে? তোমাকে কেনো যেতে দিবো বলো তো? তোমার কষ্ট হবে শাড়ি পড়ে ঘুমালে তাই বলছি চেঞ্জ করে নিতে। আচ্ছা আমি রুমেই থাকছি তুমি চেঞ্জ করে নাও ওকে?
হৃদয়ের কথায় হৃদীতা এবার মাথা নড়লো। হৃদয় ফোন নিয়ে পেছনে ঘুরে বসলো।বাসাই কাজিনদের বসিয়ে রেখে এসেছে এখনই যে যেতে হবে।। হৃদীতা ফুপাতে ফুপাতে শাড়ি পাল্টে একটা থ্রি পিচ পড়ে নিয়ে হৃদয় কে ডাকলো। হৃদয় এবার ওকে বিছানায় বসিয়ে বলল,
> তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আমাকে এবার যেতে হবে। বাড়িতে মেহমান এসেছে ওরা খুঁজছে আমাকে।
> আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন তাই না?। আচ্ছা চলে যান আর ও এসে আমাকে নিয়ে যাক ভালো হবে।
হৃদীতা রাগ করে বিছানায় গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো। হৃদয় পড়েছে মহা বিপদে। একদিকে কাজিনরা ওর জন্য অপেক্ষা করছে অন্যদিকে বউ রাগ করে মুড অফ করে শুয়ে আছে। এখন কার কাছে যাওয়া উচিৎ সব কিছু ভেবে হৃদয় দরজা বন্ধ করে হৃদীতার পাশে শুয়ে পড়লো। আপাতত এখানেই থাকা ভালো। কাজিনদের কে বুঝিয়ে বলা যাবে আর এই মূহুর্তে হৃদীতাকে ফেলে যাওয়া ও উচিৎ না। মেয়েটা ভয় পেয়েছে অনেক। না জানি আবার কাকে দেখেছে। হৃদয় শুতেই হৃদীতা সরে এসে ওর কোলের মধ্যে ঢুকে পড়লো। হৃদয় অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
> কি হয়েছিল বলবে? এতো ভয় পাবার কি হয়েছে?
হৃদয় প্রশ্ন করল কিন্তু উত্তর আসলো না দেখে ওর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতা ঘুমিয়ে পড়েছে। হৃদয় বিড়বিড় করে বলল কি ঘুমরে বাবা। কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো।যাইহোক সকালে শুনবো কী হয়েছিল। হৃদয় ও আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লো।। সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে হৃদীতার ঘুম ভাঙলো। হৃদীতা নড়াচড়া করে উঠতে গেলো কিন্তু পারলো না হৃদয় পূর্বের ন্যায় আজও ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। হৃদীতা ভ্রু কুচকে ফেলল এই ছেলেটার কি কোনো আঙ্কেল জ্ঞান নেই। বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ফেলে এখানে ঘুমিয়ে আছে। সবাই কি ভাববে কে জানে। হৃদীতার রাতের কথা গুলো মনে নেই। রাতের অন্ধকার কেটে যাবার সাথে সাথে ওর ভয়টাও কেটে গেছে। হৃদীতার মাথায় হঠাৎ একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো ও হৃদয়ের কানের কাছে মুখ এনে চিৎকার দেওয়ার জন্য মুখ অনতেই নিজেই চমকে উঠলো। কারণ হৃদয় ওর মুখ আটকে ধরে চিৎকার দিতে মানা করলো। হৃদীতা অবাক হয়ে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদয় চোখ বন্ধ করেই আছে। হৃদীতা এবার ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠে পড়তে গেলো কিন্তু পারলো না। হৃদয়ের পা ওকে আটকে রেখেছে। হৃদীতা ভ্রু কুচকে ওর হাতে চিমটি দিয়ে উঠে পড়লো। হৃদয় ও সাথে সাথে হাত ডলতে ডলতে উঠে ওর দিকে ভ্রু কুচকে বলল,
> তোমার জন্য একটু শান্তিতে ঘুমানোও যাবে না। রাতে জ্বালিয়ে হয়নি আবার সকাল সকাল শুরু করেছো। (বিরক্তি নিয়ে )
> আমি আবার কি করলাম? আপনি তো ঘুমাবার ভান করে ছিলেন। আমার দম আটকে আসছিল। আপনার যেই ভারী হাত পা সব তো আমার উপরে ট্রাকের মতো চাপা পড়েছিল। (ভ্রু কুচকে)
> আমি ঘুমিয়েই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ এক চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি তুমি আমার মুখে দিকে মুখ বাড়িয়ে দিচ্ছ প্রথমে ভেবেছিলাম অন্যকিছু করবে তাই চোখ বন্ধ করেই ছিলাম কিন্তু তারপর দেখলাম ওমা এই মেয়ের মাথায় তো দেখি অন্যকিছু চলছে তাই আটকে দিলাম। ভালো বুদ্ধি নেই শুধু বদ বুদ্ধি ঘুরে তোমার মাথায়।
> বাজে কথা বলবেন না। আমার মাথায় সুন্দর সুন্দর ফ্রেস বুদ্ধি ঘুরপাক খাই যেটা আমি কাউকে বলিনা।
> হু সে আমি ভালো করেই জানি। যাইহোক এবার তো বলো রাতে কি হয়েছিল?
হৃদয় কথাটা বলতেই হৃদীতার সব কথা মনে পড়ে গেলো। ও চুপ করে আছে আর ভাবছে এই কথা গুলো বলা কি ঠিক হবে? যদি বিশ্বাস না করে তখন? হৃদীতাকে চুপ করে থাকতে দেখে হৃদয় আবার ও বলল,
> কৈ বলো?
> তেমন কিছু না। আমি ভয় পেয়েছিলাম আগের সেই ব্যপার টা নিয়ে তারপর আবার কালরাতে হঠাৎ একটা ছায়া দেখে ভয় পেয়েছি। আপনি বাইরে যাবেন না? সবাই উঠে পড়লে কিন্তু সমস্যা হবে।
> আহা আগে বলবে না। এই আমি আসছি নয়তো সম্মান নিয়ে টানাটানি বেধে যাবে। (উঠে দাঁড়িয়ে )
> হুম।
হৃদয় তড়িঘড়ি করে উঠে দরজা পযর্ন্ত চলে এসে আবার পেছনে তাকিয়ে বলল,
> রাতে দেখা হচ্ছে। অপেক্ষায় থাকবো।( হাসি মুখে)
> হুম আমিও।
হৃদয় দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। ওর চলে যেতেই হৃদীতা দরজা বন্ধ করে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে বসলো। ও এক দৃষ্টিতে তাকিতে আছে আয়নার দিকে। আয়নাতে দেখা চিরচেনা এই অবয়ব টা আজ ওর বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে। হৃদীতা নিজের মুখে চোখে হাত বুলাতে থাকলো। কেনো এমন মনে হচ্ছে ভাবতে ও। আজ ওর নিজের মধ্যে অন্য একটা অচেনা অস্তিত্বের সন্ধান পাচ্ছে। দৃষ্টির অগোচরে যাকে কেউ কখন দেখেনি সে ওর চেহারায় ফুটে উঠছে। হৃদীতা চোখ বন্ধ করে ফেলে মনে মনে বলে উঠল,
> কি সব আজগুবি কথা ভেবে চলেছি আমি। আজ আমার বিয়ের দিন আমার উচিৎ হৃদয় কে নিয়ে ভাবা,ওর পরিবার কে নিয়ে ভাবা তা না আমি নিজের অস্তিত্বের সন্ধান করছি? আমি হৃদীতা আমার পরিচয় আমি হৃদয়ের স্ত্রী এই বাড়ির বউ। অন্যকিছু নিয়ে ভাবার আমার আমার সময় নেই।বাইরে থেকে চিৎকারের শব্দে হৃদীতার ভাবনার অবসান ঘটলো। তন্ময়া ওকে ডাকছে। হৃদীতা দ্রুত উঠে দরজা খুলে হাসি মুখে বলল,
> শুভ সকাল।
> শূভসকাল। কখন থেকে ডাকছি উঠছো না কেনো?আজকের দিনটা কি তুমি ভুলে গেলে?
> ভুলবো কেনো উঠতে দেরী হলো। যাইহোক ডাকছিলে কেনো?
> আজ ও বাড়িতেই খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কুসুম অনেক ব্যস্ত আছে খাবার আনতে পারবে না। আমাদের খেয়ে আসতে বলেছে। চলো সবাই উঠে গেছে।
> হুম তুমি যাও আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
হৃদীতা বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে তন্ময়ার সাথে চলে আসলো। বাড়িতে অনেক লোকজন বিয়ে বাড়ি বলে কথা। বাচ্চারা বাড়ির সামনে দৌড়াদৌড়ি করছে। হৃদীতা দেখতে দেখতে ভেতরে আসলো। ভেতরে এসে হৃদীতা অবাক হলো একদিনের মধ্যেই সব কিছুর ভোল পাল্টে গেছে। সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে অন্যরকম করা হয়েছে। সোফা থেকে শুরু করে সব কিছুই নতুন মনে হচ্ছে। হৃদীতার নিজেকে আজ ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে। এতো সুখ ওর কাপালে ছিল কখনও ভাবেনি। হৃদীতা হাসিমুখে দীলারা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো। দীলারা বেগম ও ওকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে
কন্ঠে বললেন,
> হঠাৎ কি হলো আমার মায়ের?
> আপনি অনেক ভালো আম্মু। আমি আপনাকে ভীষন ভালোবাসি।
> ভালাবেসে আপনি বলা হচ্ছে এটা কিন্তু আমার পছন্দ হচ্ছে না।
> সরি আম্মু আর হবে না।
> হুম কিন্তু এখন তো ছাড়তে হবে অনেক কাজ বাকি আছে যে।
> তুমি বসো আমি সবাইকে খাবার দিয়ে দিবো।
> একদম না। আমি আছি আরও অনেকেই আছে কাজের জন্য। তুই ওদের সাথে গিয়ে খেয়ে দ্রুত তন্ময়ার সাথে চলে যা। নয়তো কিন্তু সবাই মজা করবে।
হৃদীতা হাসি মুখে মাথা নাড়িয়ে খাবার টেবিলে এসে বসলো। তন্ময়া খাচ্ছে আর বকবক করছে কেমন করে মেকআপ করবে কি ড্রেস পড়বে এইসব নিয়ে। তনুজা চুপ করে আছে ও সেদিনের পর থেকে আর তেমন কিছু নিয়েই কথা বলেনি। হৃদয় কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। শাফিন এসেছিল হয়তো ওর সাথেই আছে। হৃদীতা আশেপাশের তাকিয়ে ওকে পেলো না। খাবার খাওয়া শেষে ওরা চলে আসলো।
পার্লার থেকে কয়েকজন কে আনা হয়েছে সবাইকে সাজানোর জন্য। তন্ময়া ভাগ করে দিলো কে কখন সাজবে আর কাকে কে সাজাবে। ও হৃদীতার জন্য দুজন কে বলে রাখলো ওরা শুধু হৃদীতাকেই সাজাবে। লাল টুকটুকে সুন্দর একখানা বেনারসি শাড়িতে হৃদীতাকে পরীর মতো লাগছে। ওর দিক থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। তন্ময়া ওকে দেখে ভীষন খুশি হলো। এমন সুন্দর একটা মেয়েকেই তো ও নিজের ভাবী হিসেবে চেয়েছিল। সন্ধ্যার পরে বিয়ের অনুষ্ঠান। আবার নতুন করে ওদের কাবিন হবে। হৃদীতা বউ সেজে বসে আছে আর ওর চারপাশে সবাই ঘিরে গল্প করছে। হৃদীতার সে সব দিকে নজর নেই। ওর কানের কাছে সেই ফিসফিস শব্দ টা এখন আর আগের মতো নেই। মনে হচ্ছে কেউ ওর পাশে বসে কথা বলছে। ওকে বারবার বলছে,
>হৃদীতা আমাদের সাথে চলো। তোমাকে আমাদের অনেক প্রয়োজন। তুমি তো মানুষ নও তাহলে কেনো এমন মানুষের মতো সেজে গুজে বিয়ের পিড়িতে বসেছো?।
এক কথা শুনতে শুনতে হৃদীতার অসহ্য লাগছে। ও হাত দিয়ে নিজের কানটা বন্ধ করে রাখলো তবুও শুনতে পাচ্ছে। এমন করেই ওকে বিয়ের জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। হৃদীতাকে নিয়ে হৃদয়ের পাশে বসানো হলো। হৃদয় আড়চোখে বারবার ওকে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। শাফিন সেলফি নিয়ে ব্যস্ত। হাসি আনন্দের মধ্যেমে বিয়ে টা শেষ হলো। বিয়ে শেষ হতেই আত্মীয় স্বজন যারা এসেছিল সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে নতুন দম্পতি কে দোয়া করে ফিরে গেলো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেলো। সব শেষে হৃদীতাকে তন্ময়া নিয়ে গিয়ে হৃদয়ের রুমে বসিয়ে রেখে আসলো। হৃদয় ওর কাজিনদের সাথে আড্ডা দিয়ে ঘরে ফিরে আসতে আসতে প্রায় মাঝরাত হয়ে গেলো। হৃদয় রুমে প্রবেশ করতেই কিছু একটা ওর গায়ে ঝাপটে এসে পড়লো। হৃদয় কাপড় ঝেড়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতা ঘোমটা টেনে বসে আছে। হৃদয় বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খাটে এসে বসলো। হৃদয়ের আজ প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। হঠাৎ ওর এতো ঘুম কেনো আসছে ও বুঝতেই পারছে না। অন্যদিন তো এমন হয়না। হৃদয় ঘুম ঘুম চোখে হৃদীতাকে বলল,
> আমার হঠাৎ আজ প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে ।জানি না কেনো এমন হচ্ছে। হৃদীতা তুমি এই সাজটা খুলো না প্লীজ।আমি একটু ঘুমিয়ে নেই তারপর তোমাকে দেখবো।
হৃদীতা কোনো কথা বললো না শুধু মাথা নাড়ালো। হৃদয় ওর পাশে শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে গেলো। ভোর রাতে হৃদয়ের ঘুম ভেঙে গেলো। চারদিকে গোলাপ রজনীগন্ধা ফুলের সুগন্ধে মৌ মৌ করছে। করবেই বা না কেনো সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো আছে ঘরটা। হৃদয় চোখ খুলেই দ্রুত উঠে বসলো। তারপর নিজের মাথায় একটা থাপ্পড় দিয়ে ভাবলো একদম ঠিক হয়নি। কতোকিছু প্লান করা ছিল কোনো কিছুই তো হলো না। হৃদীতাকে ভালো করে দেখাটা পযর্ন্ত হলো না।মেয়েটাকে কতো সুন্দর দেখতে লাগছিল। ভালোবাসি বলতেও তো পারলাম না। যাইহোক এখনো সময় আছে বলতে হবে ভেবে হৃদয় পাশে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতা নেই। হৃদয় ভ্রু কুচকে ভাবলো হয়তো বাথরুমে আছে তাই ও উঠে রুমের লাইট অন করে মেঝেতে তাঁকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। কারণ নিচে হৃদীতার বিয়ের গহনা শাড়ি সব কিছুই খোলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। হৃদয়ের বুকের মধ্যে কেমন কেঁপে উঠলো। ও আলতো হাতে সব কিছু কুঁড়িয়ে নিয়ে বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। হৃদীতা নেই বাথরুমে। তাহলে ও কোথায় আছে? হৃদয় বারান্দায় গিয়ে দেখলো ওখানেও নেই। এতো রাতে ও কোথায় যেতে পারে হৃদয়ের মাথাতেই আসছে না। ও আবার বাইরে চলে যাইনি তো?
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।এটা ভৌতিক কাল্পনিক গল্প তাই বাস্তবের সাথে মিল নাই।