#দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২৩
#কলামে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
হৃদয় চুপ করে গাড়ি ড্রাইভ করছে। হৃদীতা অস্থির হয়ে উঠেছে হাত দুটো খোলার জন্য। হৃদয় মাঝেমাঝে ওর দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাঁকিয়ে দেখছে কিন্তু তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। ওর একদম তর্ক করতে ইচ্ছা করছে না। রাগের সময় তর্ক করে বকাবকি করলে রাগ অনেকটাই কমে যায়। হৃদয় চাইছে না মনের মধ্যে থাকা এই রাগ আর জিদ টা এতো দ্রুত দূর হয়ে যাক। আর যার সাথে যেমন ব্যবহার মানায় তার সাথে তো তেমন টাই করা উচিৎ। যার দৃষ্টিভঙ্গি খারাপ তাকে যতই ভালো করার চেষ্টা করা হয় না কেনো সে তেমনই থাকবে ভালো হবার চান্স খুবই কম। হৃদয় ওর সাথে যদি আবারও ভালো ব্যবহার করে তাহলে ও যে আবারও ওকে ঠকাবে না তার তো কোনো গেরান্টি নেই। আর জোর করে কখনও ভালোবাসা হয়না। যে যাবার সেতো যাবেই তাকে কখনও বেধে বা ভয় দেখিয়ে রাখা যাবে না। আর জোর করে রাখতে সফল হলেও তার মনের অতল গহীনে পৌঁছনো যায় না। হৃদয় ওকে জোর করে আটকে রাখবে না কিন্তু ও এমন টা কেনো করেছে ও তাঁর জবাব চাই। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হৃদয় বাগান বাড়িতে পৌঁছে গেলো। ও গাড়ি থেকে নেমে হৃদীতাকে জোর করে নামিয়ে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে আসলো। এই বাড়িটা দেখাশোনার জন্য মজুমদার নামের একজন লোককে রাখা হয়েছিল কিন্তু দুদিন আগে উনি মারা গেছেন। হঠাৎ কিছু একটা নিয়ে ঝামেলার জন্য উনি আত্মহত্যা করেছেন কারণটা হৃদয়ের জানা নেই। তদন্ত চলছে পরে হয়তো জানা যাবে। আপাতত এই বাড়িতে এখন কেউ থাকে না। মজুমদার এই বাড়িটা নিজের বাড়ির মতোই যত্ন করে রেখেছিল। ভদ্রলোক বেশ রাগী আর একগুঁয়ে টাইপের ছিলেন। হৃদয় উনাকে খুব একটা পছন্দ না করলেও কাজে জন্য উনি বেশ ভালো ছিলেন।। যাইহোক হৃদয় হৃদীতাকে নিয়ে উপরের একটা কক্ষে চলে আসলো। হৃদীতা রাগে ফুলছে। ওকে এখান থেকে চলে যেতে হবে এই রাতের মধ্যেই। আজ না গেলে ও আগামী দুদিন ফিরতে পারবে না কিন্তু এই লোকটিকে ও বোঝাবে কেমন করে। আর সবার সামনে থেকে ওকে এমন করে তুলে নিয়ে আসা হলো, ওরাই বা এমন চুপ করে কেনো ছিল ওর মাথায় ঢুকছে না। হৃদীতা কথা গুলো ভাবছে। ওকে এমন চুপ করে থাকতে দেখে হৃদয় ওকে ভালো করে বিছানায় বসিয়ে ওর পায়ে শিকল দিয়ে বেধে দিলো। বাধা হয়ে গেলে হৃদয় ওর দিকে তাঁকিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। হৃদীতা এখনো অন্যমনা হয়ে আছে। হঠাৎ হৃদয়ের ডাকে ওর ভাবনার অবসান ঘটলো।
> এই যে ভাবুক লতা আপনার ভাবনা শেষ হয়েছে নিশ্চয়ই? নাকি এখনো ভেবেই যাবেন। এমন করে ভাবছেন মনে হচ্ছে দেশ উদ্ধার করে দিবেন।
> আপনি আমাকে বেধে কেনো রেখেছেন?খুলে দিন। আমি কি চোর নাকি যে এমন করে বেধে রেখেছেন? (রাগ করে)
> চোর হবা কেনো তুমি মোটেই চোর না। তুমি তো ডাকাত। আমার সাথে অভিনয় করে ডাকাতি করেছো। কি ভেবেছিলে পার পেয়ে যাবে তাইনা? তোমাকে আমি পুলিশে দিবো।( ধমক দিয়ে )
> তাহলে এখুনি দিয়ে দিন। দেরি করবেন না। (অনুরোধ করে)
> মজা করছি আমি তোমার সাথে তাই না? খুন করবো তোমাকে আমি। (হুঙ্কার দিয়ে )
> আরে বাবা আমার অন্যায় টা কি তাই তো বললেন না। পাগলের মতো প্রলাপ বকে চলেছেন।
> আমাকে তোমার এখন পাগল মনে হচ্ছে? আসলে আমারই ভুল ছিল একটা এতিম কাজের মেয়েকে বিয়ে করে রাজরানী করতে চেয়েছিলাম।
> এই যে শুনেন আপনি ভুল বললেন, আমি মোটেই এতিম নয়।আমার আম্মা জানলে আপনার কি হাল করবে ভাবতেই পারছেন না।
> আমি ও তো চাই সে আসুক। আমি দেখতে চাই তোমার এই কর্মকাণ্ডে কে তোমাকে সাহায্য করছে। তুমি জানো পোশাক পরিবর্তন করলেই কিন্তু মানুষ পরিবর্তন হয়না। এতো দামী দামী পোশাক আর আরাম আয়েশ নিশ্চয়ই তোমাকে কেউ এমনি দেয়নি। আবার কাকে ফাঁসিয়েছো বলো?
> উফফ আপনার সাথে কথায় আর বলবো না। ভুলভাল বকে যাচ্ছেন।আমার রাগ উঠলে কিন্তু নিজেকে কন্টোল করতে পারবো না তখন বুঝবেন। আমি জেনে বুঝে কাউকে আঘাত করতে চাইনা তাই আপনি বেঁচে গেছেন। হাতটা ছেড়ে দেখান।
> আবার নতুন করে আঘাত করার সুযোগ তুমি পেলে তবে তো করবে। মানুষের হৃদয় নিয়ে খেলা করা তোমার মতো মেয়েদের স্বভাব তাই না?
> সুযোগ না দিলে কেউ কি সুযোগের ব্যবহার করে বলুন? কার দোষ কাকে দিচ্ছেন আমি জানি না।
> জানবে আমি সব জানাবো। থাপ্পড় খেলেই বুঝবে।
কথাটা বলতে বলতে হৃদয় বাইরে চলে আসলো। শুনসান নির্জন বাড়িটাকে মনে হচ্ছে কোনো রাক্ষসপুরী। হৃদয় লাইট গুলো জ্বালিয়ে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে আসলো। মজুমদার লোকটা এখানেই থাকতো তাই ও নিজের রান্না নিজেই করে খেতো। ওর জন্য এই বাড়িতে অন্যকিছু না পাওয়া গেলেও চা টা অন্তত পাওয়া যায়। হৃদয় চা তৈরী করতে করতে ভাবলো মানুষের জীবনের কোনো গেরান্টি নাই। কখন মৃত্যু হবে কেউ বলতে পারেনা। আজ আছি হয়তো কাল থাকবো না। দুদিন আগেও মজুমদার এই বাড়িতেই ছিল কিন্তু এখন নেই। ওর জন্য প্রচণ্ড খারাপ লাগছে হৃদয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও দিলো না। উপরে হৃদীতা বাধা অবস্থায় আছে ওর তো চা অনেক প্রিয়। ওকে রেখে চা খাওয়া টা কেমন হবে মনে মধ্যে কেমন খচখচ করছে। তাই ও চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখলো। ভাবলো না চা আর খাওয়া যাবে না। ও দু কাপ চা ও উপরে নিয়ে যেতেই পারতো কিন্তু নিবে না। মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। ভুল করলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। হৃদয় কথা গুলো ভেবে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে উপরে আসার জন্য সিঁড়ির কাছে আসতেই চারদিকে অন্ধকার নেমে আসলো। হৃদয় পড়লো মহাস বিপদে চারদিকে কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকার। মনে হচ্ছে সামনে এগোলে কিছুতে বেধে ও পড়ে যাবে। হৃদয় পকেট থেকে ফোন টা নিয়ে টর্চ অন করে ভেতরে আসলো। হৃদীতা খাটে হেলাল দিয়ে বসে আছে। হৃদয় ভেতরে আসতেই ও উঠে বসলো,
> আপনি ওকে দেখেছেন? বাইরে যাবেন না এখন প্লীজ। (চিন্তিত হয়ে)
> কার কথা বলছো?( ভ্রু কুচকে)
> আরে ওই যে, এই বাড়িতে যে থাকতো ও তো মারা গেছে। লোকটা আত্মহত্যা করেছিল পাওনাদারদের জন্য। আপনি তো কিছুই জানতেন না। ওর সাথে যে জ্বীন ছিল ও খুব দুষ্ট। ও আপনার পেছনে পড়েছে আপনাকে ও ভয় দেখাতে চাইছে। আপনি এখান থেকে যাবেন না।
হৃদয়ের এবার প্রচণ্ড রাগ হলো। ও ভাবছে এই মেয়েটা কি পরিমাণ চালাক তা ওর কথাতেই প্রমাণ হয়। এখানে ওর একা থাকতে ভয় করছে তাই ও এমন ভুলভাল কথা বলছে। হৃদয় দাঁতে দাঁত লাগিয়ে হৃদীতার গলা চেপে ধরে চিৎকার করে বলল,
> মিথ্যা বলাটাও দেখছি খুব সুন্দর করে শিখে গেছো। আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা তোমার তাই না? চলে গিয়েছিলে কেনো এতোই যদি চিন্তা হয়? একটা কথাও আর বলবে না।তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
হৃদয় ওর গলা ছেড়ে দিয়ে সোফায় এসে বসে পড়লো। ওর এমন করাতে হৃদীতা মোটেই অবাক হলো না। ওর ধারণা এই লোকটা উন্মাদ টাইপে তবে খারাপ না ভালো। এই বাড়িতে ও একটা খারাপ শক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করেছিল আসার সময় তবে এখন শিউর হয়েছে। তাই ও হৃদয় কে সাবধান করতে চাইছিল কিন্তু লোকটা তো উন্মাদ হৃদীতা চুপ করে ভাবছে। আর এদিকে হৃদয়ের মাথায় নতুন প্লান আসলো ও এই রুমে হৃদীতাকে একা রেখে চলে যাবে। বুঝবে কেমন লাগে। তাই ভেবে ও বাইরে চলে আসলো। হৃদয় টর্চের আলোতে বাইরে ড্রয়িং রুমে এসে বসলো। ভেতরে ও আর যাবেনা। ইচ্ছা করলে ও ফিরে যেতে পারতো আগে মতো কিন্তু এই বাড়ি থেকে ও যেতে পারবে না। সেবারের মতো ভুল ও আর করতে চাইনা। পাশে ফোনটা রেখে হৃদয় সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। মাঝরাত এখন, হয়তো কয়েক প্রহর বাদেই সকাল হবে।ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো কিন্তু হঠাৎ কেমন খুটখুট শব্দে ওর ঘুম ভাঙলো। হৃদয় চোখ ডলতে ডলতে উঠে দেখলো রান্না ঘরে আলো জ্বলছে। হৃদয় অবাক হলো এতো রাতে রান্না ঘরে আবার কে। ও একপা দুপা করে এগিয়ে গিয়ে দেখলো মজুমদার গভীর মনোযোগ দিয়ে চা তৈরী করছে। হৃদয় ওকে দেখেই ভয় পেলো। মৃত মানুষ এখানে কেমন করে। হৃদয়ের পায়ের শব্দে মজুমদার মাথা তুলে তাঁকিয়ে হেসে বলল,
> সাহেব চা খাবেন খুবই মজাদার চা।
মজুমদারের সরা শরীর বেয়ে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। হৃদয়ের মন বলছে এখান থেকে পালাতে কিন্তু ওতো নড়তেই পারছে না। কেমন অথর্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অন্যদিকে মজুমদার চায়ের কাপ নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। হৃদয় আর অপেক্ষা করতে পারলো না। ও দৌঁড় দিলো উপরের দিকে। মজুমদার যেনো হাওয়াতে ভাসছে। হৃদয় ওর সাথে পারছে না দৌড়ে। ওকে প্রায় ধরে ফেলবে এমন মূহুর্তে হৃদয় রুমের মধ্যে চলে এসে দরজা বন্ধ করলো। মজুমদার বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে প্রচণ্ড শব্দ করে। হৃদয় হাপাতে হাপাতে সোফায় বসে পড়লো। ওকে এমন করতে দেখে হৃদীতা মিষ্টি হেসে বলে উঠলো,
> আগেই বলেছিলাম ও তোমার পেছনে পড়েছে। বাইরে যেওনা আমার কথা শুনলে এমন হতো না।
> সর্বজানতা শমসের আপনার মুখটা আপাতত চুপ রাখলে খুশি হবো। (হাপাতে হাপাতে )
> ওকে আমি আর বলছি না। খুব তো সাহস আপনার তো খেয়ে দেখতেন ভুতের দেওয়া চা কেমন লাগে খেতে। {উচ্চস্বরে হেসে উঠে}
হৃদয় ওর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো দেখে ও চুপ করলো। হৃদয় মনে মনে ঠিক করলো সকাল হলেই এখান থেকে চলে যাবে। কি ভয়ানক দৃশ্য রে বাবা। কিন্তু এই মেয়েটা আগে থেকেই কেমন করে জানলো? হয়তো না জেনেই বলেছে আর পরে ওটা মিলে গেছে। বাকি রাত ওদের এমন বসে থেকেই কাটলো। হৃদীতা হেলান দিয়ে শুয়ে আছে আর হৃদয় ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। হৃদয় ওকে ভালো করে লক্ষ্য করছে। আগে দেখতে ওকে একদম পিচ্চি পিচ্চি লাগতো কিন্তু এখন অন্যরকম লাগে তবে ও আগের থেকে ও সুন্দর হয়ে গেছে। সেই হৃদীতা আর এই হৃদীতার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে হৃদীতা হলে এতোক্ষন কান্নাকাটি করে একাকার করে ফেলতো কিন্তু এই হৃদীতার মুখে হাসি লেগেই আছে। আগে যেমন সাধারণ ছিল এখন মোটেও তেমন সাধারণ নেই এটা ও ভালো করেই বুঝেছে।। নাকি অনেক দিন দূরে থাকার জন্যই এমন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে?,কি জানি হৃদয় বুঝতে পারলো না। হৃদয় ভাবলো বাড়িতে ফোন দিতে হবে মায়ের এমন অসুস্থতার জন্য বাবা ভয় পেয়ে আছেন। উনাকে আর টেনশন দেওয়া ঠিক হবে না।। হৃদয় চারদিকে আলো ফুটলে ওর বাবাকে ফোন দিলো। একবার ফোন বাজতেই উনি ফোন ধরে বলে উঠলেন,
> হৃদয় কোথায় তুই?এভাবে ফোন বন্ধ রেখেছিস আমার তো চিন্তা হচ্ছে।
> আব্বু আমি বাসাই ফিরছি টেনশন করো না। আচ্ছা আব্বু তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তো? (শান্ত গলায়)
> তোকে বিশ্বাস করবো না তো কাকে করবো বল? আমি জানি আমার ছেলে ভিষন রাগী কিন্তু সে তো খারাপ না। সে কখনও কোনো অন্যায় করতেই পারেনা। চলে আই বাবা।
> আমি যাকে নিয়ে ফিরবো হয়তো তাঁকে তোমার পছন্দ হবে না। তোমার কেনো আম্মুর ও হবে না। তবুও তোমাকে আমার পাশে চাই। আম্মু কে বোঝাতে হবে প্লীজ। (অনুরোধ করে)
> আরে আবা সবটা না বললে বুঝবো কেমন করে? আচ্ছা আগে তুই বাড়িতে আই পরে আমি দেখছি। তবে এমন কিছুই করবি না যেটাতে তোর ক্ষতি হয়। আমার ছেলের থেকে প্রিয় আমার কাছে আর কিছুই নেই।
> Love you আব্বু।
> love you too . দেখা হচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ।
> আল্লাহ হাফেজ।
হৃদয় ফোনটা রেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। বাবা ওর পাশে থাকলে মা কেও পাশে পাওয়া যাবে। হৃদীতাকে দেখলে সবাই অনেক রাগ করবে ওর জানা আজে। আগের সেই পরিবেশ টা এখন আর নেই। হৃদীতা চলে যাবার পর সবাই ওদের অনেক অপমান করেছিল। সমাজে নানা রকম খারাপ খারাপ কথা রটেছিল। এখন বাড়িতে কেউ আর হৃদীতাকে একসেপ্ট করতে চাইবে না। কিন্তু হৃদয়ের মন তো মানছে না। হৃদীতাকে ও ফিরিয়ে নিয়ে যাবে নিজের কাছে। ভেবেছিল ওকে আর আটকাবে না কিন্তু মন তো মানছে না। ভালোবাসলে তো এমনি হয়। ভালোবাসার মানুষের শত আঘাতেও মনে হয় মানিয়ে নিবো তবুও তাঁকে ছেড়ে দিবো না। হৃদয় বারবার দুর্বল হয়ে পড়ছে আবার নিজেকে শক্ত করছে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হৃদয় ওর বাধন গুলো খুলে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসলো বাইরে। হৃদীতা ওকে এমন টানতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,
> টানছো কেনো?আমি এমনিতে ও দুদিন ফিরতে পারবো না। দুদিন তোমার সাথেই থাকবো। তারপর পালানোর প্লান করবো।( মন খারাপ করে)
> আমার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পযর্ন্ত আমার সাথেই তোমার থাকতে হবে। (গম্ভীর ভাবে)
> আবার?
> হুম।
হৃদয় ওকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলে দিয়ে গেট লক করলো। হৃদীতা চুপ করে বসে জানালা দিয়ে দেখছে এই বাড়িটাকে। ওর কেনো জানি খুব পরিচিত মনে হচ্ছে এই বাড়িটা। হয়তো এর আগেও ও এসেছিল এখানে কিন্তু মনে পড়ছে না। হৃদয় ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। গাড়ি চলছে কিন্তু হৃদীতার নজর ওই বাড়িটার দিকেই আছে। যতদূর চোখ যায় ও তাঁকিয়েই থাকলো। ওকে এমন করে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে হৃদয় গম্ভীর ভাবে প্রশ্ন করলো,
> মিস করছো নাকি , রেখে আসবো?
> মনে হচ্ছে ওই বাড়িটা খুব চেনা আমার কিন্তু আমি তো আগে কখনও আসিনি।
> এই দুদিন দেখে ওই বাড়িটা তোমার এতো চেনা মনে হচ্ছে অথচ আমাকে কতবার দেখেছো সেই আমাকেই চিনছো না। বাংলা সিনেমার মতো স্মৃতি হারানোর নাটক চলছে তাই না?
> হুম যতসব বাজে কথা। আচ্ছা আবার কোথায় নিয়ে চলেছেন যদি একটু বলতেন ভালো হতো।
> জাহান্নামের চৌরাস্তায়। কথা বলবে না আমার রাগ হচ্ছে।
হৃদীতা চুপ করলো। এই লোকটাকে রাগিয়ে কোনো কাজ নেই। দুদিন এর কাছেই ওকে থাকতে হবে। আর এমনিতেও ওর ভালোলাগছে এর কাছে থাকতে। লোকটা রাগী তবে মন ভালো। হৃদীতা হাসি মুখে কথা গুলো ভাবছে। হৃদয় বাড়িতে এসে হৃদীতাকে নামিয়ে ওর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। কুসুম দরজা খুলে অথর্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে ওদের দেখে। ভেতর থেকে দীলারা বেগম চিৎকার করে বলছে কে এসেছে কিন্তু কুসুম কোনো শব্দ করছে না। এতক্ষণ দীলারা বেগম তনুজার সাথে বসে গহনা আর শাড়ির ডিজাইন দেখছিলেন। হৃদয় চুপ করে হৃদীতার হাত ধরে দীলারা বেগমের সামনে এসে দাঁড়ালো। উনি চোখ তুলে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তনুজার উঠে দাড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ও বসে আছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীলারা বেগম মুখ কঠিন করে বলে উঠলেন,
> হৃদয় ওকে আমার বাড়িতে আবার কেনো ফিরিয়ে এনেছিস? আমার নাক কেটে ওর শান্তি হয়নি এবার গলা কাটতে এনেছিস? আমি ওর মুখ দেখতেও চাইনা। (চিৎকার করে)
> আম্মু ওকে আমি আবার ফিরিয়ে দিয়ে আসবো কিন্তু ওর থেকে আমার কিছু কথা জানার আছে। তুমি শান্ত হও প্লীজ। (অনুরোধ করে)
> আমি ওকে এখুনি চলে যেতে বলছি কিন্তু।
> কিন্তু আম্মু…
হৃদয় কথা বলতেই পারছে না। দীলারা বেগম চিৎকার করছে। বাড়িতে হঠাৎ এমন চিৎকার চেচামেচি শুনে হৃদয়ের বাবা রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন। উনি দীলারা বেগমের কাছে গিয়ে বোঝালেন এমন না করতে। তারপর উনি শান্ত হলেন। হৃদয় হৃদীতার হাত ধরে নিজের রুমে এনে ছেড়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। হৃদীতা এখানে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু এখানে সবার মনে কি চলছে ও বেশ ভালো করেই বুঝেছে। এই বাড়িতে ও আগেও এসেছিল এটার প্রমাণ ও পেয়েছে। কিন্তু কবে আর কখনও সব কিছু কেমন গুলিয়ে ফেলেছে। হৃদীতা চোখ বন্ধ করে বিছানায় বসে কিছু মনে করার চেষ্টা করলো। ওর চোখের সামনে লাল একটা বিয়ের বেনারসি আর কিছু চুড়ি ভেসে উঠছে। হৃদীতা দ্রুত চোখ খুলে ফেলল। ওকে কেউ বাধা দিচ্ছে তাই ও আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। হৃদীতার কাছে সব কিছুই কেমন রহস্য মনে হচ্ছে। ও এই রহস্যর সমাধান অবশ্যই করবে।
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।এটা একটি ভৌতিক কাল্পনিক গল্প।যারা পড়বেন গল্পটাকে গল্পের মতোই দেখবেন,আশাকরি বাস্তবের সাথে মেলাতে যাবেন না। আর খারাপ লাগলে বাজে মন্তব্য না করে ইগনোর করুন। ।