দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব_২৬

0
1393

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_২৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। এখনও টুপটুপ বৃষ্টি হচ্ছে।
হালকা ঠান্ডাও পড়ছে। বৃষ্টি জানান দিচ্ছে শীত এসে গেছে। ফারহান ব্লেজার পরা। তবুও ঠান্ডার ভাবটা যাচ্ছে না। পরক্ষণেই মনে পড়ে তার, গাড়িতে তো এসি চলছে। ইদানীং বড্ড বেখেয়ালি হয়ে পড়েছে সে। এসি অফ করতে ভুলে গেছে সে।
দুপুরের পর অয়নন্দিতার সঙ্গে কথা হয়েছিল একবার। আর বিকেলে দুই একটা মেসেজ। অয়নন্দিতার কন্ঠস্বর শুনে ফারহানের মনে হয়, হয়তো মেয়েটার ঠান্ডা লেগেছে। কন্ঠটা কেমন যেন বসা ছিল। ফারহান জিজ্ঞেসও করেছিল কয়েকবার। কিছু হয়নি, একটু ঠান্ডা লেগেছে। এর বেশি কিছু না — এইটুকুই বলেছিল অয়নন্দিতা।
ফারহান ভাবছে, এতদিন আমাদের বাড়ি ছিল কিছুই হয়নি। যেই না মামা বাড়ি গেল ওমনি অসুস্থ হয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই আবার ভাবনায় পরিবর্তন আসে তার। বিয়ের আগে তো মামা বাড়িই ছিল। হয়তো আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য ঠান্ডা লেগেছে। অতিরিক্ত চিন্তা করাতেই এসব উল্টাপাল্টা ভাবনা আসছে তার মাথায়।
একবার যাবে নাকি অয়নন্দিতার মামা বাড়ি, ভাবছে ফারহান। গাড়িটা ইউ টার্ন নিয়ে যাওয়া যেতেই পারে। ঘড়ি দেখে। ঘড়িতে এখন রাত নয়টা বেজে বিশ মিনিট। বেশি রাত হয়নি। যাওয়া যেতেই পারে। ফারহান গাড়ি ঘোরাবে এমন সময় ফোন বেজে ওঠে। ফারহান একপাশে গাড়ি দাঁড় করায়। বাবার ফোন পেয়ে ফারহান ফোন রিসিভ করে।
‘হ্যালো বাবা।’
‘ফারহান, তুমি কি বাড়ি আসতেছ?’
বাড়িতে তো সে এখন যাবে না। সে তো যাবে অয়নন্দিতার মামার বাড়ি। কিন্তু বাবাকে কি বলা ঠিক হবে। তাই কথাটা লুকিয়ে ফেলে।
‘হ্যাঁ। বাসাতেই আসছি। কেন?’
‘অয়নন্দিতার তো অনেক ঠান্ডা লেগেছে। গলা তো প্রায় বসে গেছে। ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না।’
ফারহানের কপালে ভাজ পড়ে। দুপুরের পরেই তো কথা বলেছিল। এতটাও তো খারাপ ছিল না। মেসেজেও কিছু বলেনি। কিন্তু অয়নন্দিতার অসুস্থতার খবর তার বাবা জানল কীভাবে? তার বাবা কি অয়নন্দিতার মামার বাসায়?
ছেলের কথা না শুনতে পেয়ে রমজান সাহেব গলা ছেড়ে শব্দ করেন।
‘হ্যালো। ফারহান, শুনতে পাচ্ছ?’
ধ্যান ভাঙ্গে ফারহানের।
‘হ্যাঁ। শুনতে পাচ্ছি৷ ডক্টর আংকেলকে অ্যাড্রেস বললেই তো তিনি অয়নন্দিতার মামার বাসায় চলে যেতে পারেন।’
‘কেন, তিনি অয়নন্দিতার মামার যাবেন কেন?’
‘অয়নন্দিতা তো তার মামার বাসায় তাই না?’
‘নাহ। অয়নন্দিতা সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি ফিরেছে। সে আসার পরই তোমার মা বুঝতে পারে তার শরীর ভালো নেই। আর তোমার ডক্টর আংকেল এসেছিলেন। অয়নন্দিতাকে দেখেও গেছেন। প্রেসক্রিপশনের কপি পাঠাচ্ছি। মেডিসিনগুলো নিয়ে এসো। এইজন্যই ফোন করা তোমায়।’
ফারহান চমকে যায়। অয়নন্দিতা বাড়ি চলে এসেছে। কই, একবারও তো তাকে বলেনি যে সে চলে আসবে। মেয়েটার মনে যে কখন কী চলে বোঝা বড়ো দায়। অতিরিক্ত ভেবে নার্ভ দুর্বল করার কোনো মানে হয় না। ফারহান গাড়ি স্টার্ট দেয়। আপাতত ফার্মেসিতে যাবে। মেডিসিন নেবে। এরপর সোজা বাড়ি যাবে।

অয়নন্দিতা শাল জড়িয়ে ইজি চেয়ারে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই রওশন বেগম এসে লিকার দিয়ে গেছে। গলার ব্যথাটা বেড়েছে তার। বিকেলে ফারহানের সঙ্গে মেসেজ করার পর মনকে আর আটকে রাখতে পারেনি। দু’দিন হয়ে গেছে সে ফারহানকে দেখেনি। এদিকে অয়নন্দিতা শিওর ছিল যে ফারহান মামার বাসায় আসবে না। তার থেকে বরং চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। আবার ভাবে, যদি ফারহান প্রশ্ন করে তাহলে বলে দিবে বেড়ানো শেষ তাই চলে এসেছি। ফারহানকে তো আর বলা যাবে না যে, সে ফারহানকে খুব মিস করছিল তাই চলে এসেছে। দুপুর থেকেই শরীর ভালো লাগছিল না তার। তবুও ভেবেছিল ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু এখানে আসার পর পরই শরীর আরও খারাপ হয়ে গেছে তার। জ্বর টর এলে বিরাট সমস্যায় পড়ে যাবে। এমনিতে সহসা তার জ্বর হয় না। কিন্তু যখন হয় তখন দিন দুনিয়া সব ভুলে যায়।
ফারহান ঘরে ঢুকেই দেখে অয়নন্দিতা ইজি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। ফারহানের ভেতর থেকে একটা ঠান্ডা নিঃশ্বাস বের হয়ে আসে। নিঃশ্বাসটা যে শিতল এটা নিয়ে ফারহানের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এমন শিতল নিঃশ্বাস বহুদিন পরে বের হলো তার অন্তর থেকে। আজ দু’দিন পর সে অয়নন্দিতাকে দেখছে। তার ঘরটা যেই শূন্যতা বুকে নিয়ে গত দু’দিন ধরে পড়েছিল সেই ঘরটা আজ আলো হয়ে আছে এমনটাই মনে করছে ফারহান।
ফারহান এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে অয়নন্দিতাকে। মেরুন রঙের শালটা বেশ মানিয়েছে। অসুস্থ অবস্থাতেও অয়নন্দিতাকে দেখতে সুন্দর লাগছে। নাকের ডগাটা সামান্য লাল হয়ে আছে। ফারহান পা টিপে টিপে আরেকটু কাছে এগিয়ে যায়। প্রবল গাঢ় একটা স্মেল নাকে লাগে ফারহানের। আরেকটু কাছে গেলেই বুঝতে পারে স্মেলটা বাম এর। অয়নন্দিতা হয়তো তার মাথার দুই সাইডে বাম লাগিয়েছে। ভালো করে খেয়াল করলে বুঝতে পারে অয়নন্দিতার চোখের ল্যাশগুলোতে পানি জমে আছে। বুঝতে পারে সামান্য বাম চোখেও লাগিয়েছে। যার কারণে চোখ জোড়া বন্ধ করে আছে। ফারহান বুঝতে পারে তার বউয়ের শরীর আসলেই খারাপ।
খুব সাবধানতার সাথে ফারহান দু’পা পিছিয়ে যায়। এবং খুব সাবধানেই সে বাকি কাজগুলো করে। সাবধানে না করলেও প্রবলেম ছিল না কারণ অয়নন্দিতা ওই সময়ে ঘুমে ছিল। গভীর ঘুমে। ইজি চেয়ারে দুলতে দুলতে ফারহানের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে যায় তার। আর তারপরই গভীর ঘুম।
ফারহান ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে অয়নন্দিতা এখনও সেই আগের পজিশনেই ঘুমিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ফারহান আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি। অয়নন্দিতার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। কপালে হাত রাখে। কপালে হাত রাখতেই বুঝতে পারে অয়নন্দিতার শরীরের তাপমাত্রা হাই। বুঝতে আর বাকি নেই যে অয়নন্দিতার জ্বর এসেছে।
নিজের শরীরে কারও স্পর্শ বুঝতে পেরেই অয়নন্দিতা চোখ খোলে। চোখ খুলে পাশে ফারহানকে দেখতে পাবে এতটাও আশা করেনি সে। অয়নন্দিতা তাড়াহুড়ো না করে শান্ত স্বরেই বলে,
‘আপনি! কখন এলেন?’
অয়নন্দিতা পূর্বের ন্যায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে ইজি চেয়ারে। ফারহান তার সামনে বিছানায় বসে। হালকা হেসে বলে,
‘পঁয়তাল্লিশ মিনিট হবে।’
‘আমি তো টেরই পাইনি।’
‘ঘুমে ছিলে তুমি। টের পাবে কী করে?’
‘এতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি!’
অয়নন্দিতার বিস্ময় প্রকাশের ভঙ্গিমা দেখে ফারহান একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। অয়নন্দিতার কন্ঠস্বরটা বসে গেছে। কথাগুলো কেমন অস্পষ্ট শোনাচ্ছে। তবুও কেন যেন এই কন্ঠস্বরটা ফারহানের ভীষণ ভালো লাগছে। ফারহানের অয়নন্দিতার কথা শুনতে ভালো লাগছে। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে অয়নন্দিতাকে তার মামা বাড়ির গল্প শোনাতে বলে। বোকা অয়নন্দিতা এই বসা গলা নিয়েই মামা বাড়ির আদর মাখা স্মৃতিগুলো ফারহানকে বলতে শুরু করে। আর ফারহান গালে হাত দিয়ে পলকহীন চোখে অয়নন্দিতাকে দেখতে থাকে।

চলবে……………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here