#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩৯
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
আজ পনেরো দিন পর অয়নন্দিতা এখন মোটামুটি হাঁটাচলা করতে পারছে। তবে হাঁটতে গেলে এখনও একটু টান অনুভব করে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলাফেরা করে। অয়নন্দিতার জন্য ভীষণ মায়া হয় ফারহানের। ভাবে আরেকবার ডক্টর দেখাবে। পা টা আরও একবার এক্স-রে করাবে। দেখবে আর কোনো সমস্যা আছে কি না পায়ে। অয়নন্দিতা এই কয়েকদিনে ফারহানকে খুব কাছ থেকে অবজারভ করেছে। সারাদিনে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার ঘন্টা অফিসে থাকত ফারহান। এরপরই চলে আসত বাসায়। এসে অয়নন্দিতার আশেপাশেই থাকত। কখন কী লাগবে তদারকি করত। সব মিলিয়ে ফারহান যেন অয়নন্দিতার ছায়া হয়েছিল এই কয়েকটা দিন।
ফারহান অফিসে যাওয়ার পর এই ঘরটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগে। অয়নন্দিতারও ভালো লাগে না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডায়াল করে ফারহানের নাম্বারে।
পর পর তিন বার কল হয়ে যাওয়ার পরেও ফোন রিসিভ হয়নি। অয়নন্দিতাও আর ফোন দেয়নি। এতবার ফোন দেওয়া ঠিক হবে না ভেবেই মোবাইলটা রেখে দেয় সে। মোবাইল রেখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোন বেজে ওঠে। ফারহান কল ব্যাক করেছে। অয়নন্দিতাও ফোন রিসিভ করে।
‘হ্যালো।’
‘হ্যালো। ফোন করেছিলে তুমি। আমি মিটিংয়ে ছিলাম। মাত্রই বের হলাম। বের হয়ে দেখি বেশিক্ষণ হয়নি যে তুমি ফোন দিয়েছ৷’
‘ভালো লাগছিল না তাই ফোন দিয়েছি।’
‘ভালো না লাগার কারণটা জানতে পারি কি?’
‘স্পেসিফিক কোনো কারণ নেই। তবে ভালো লাগছে না।’
‘ঘুরতে যাবে?’
‘মন চাইছে খুব।’
‘আস্তে আস্তে রেডি হও। আমি দুপুরের পর পরই আসছি।কেমন?’
‘কোথায় যাব আমরা?’
‘অনেক দূরে।’
‘অনেক দূরে বলতে, কতটা দূরে?’
‘যতটা দূরে গেলে আমরা দু’জন একা থাকব।’
অয়নন্দিতার হাসিটা ফারহানের কানে লাগতেই যেন তার মনটা আরও সতেজ হয়ে গেল। বাকি কথা শেষ করে ফোন রেখে দেয় ফারহান। হাতে অল্প কিছু কাজ আছে। কাজগুলো শেষ করেই বের হয়ে যাবে৷
সবুজ রঙটায় অয়নন্দিতাকে বেশ মানায়। সে সবুজ রঙের সালোয়ার স্যুট হোক কিংবা সবুজ রঙের শাড়ি হোক৷ আজ অয়নন্দিতা সবুজ রঙের একটা শাড়ি পরেছে। আয়নায় নিজেকে দেখছে। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে চেহারাটা তার মলিন হয়ে গেছে। তবুও হালকা মেক-আপে তাকে খারাপ লাগছে না। ন্যুড কালারের লিপস্টিক তার বরাবরের প্রিয়। এই ধরনের লিপস্টিক দিলে তার ঠোঁট জোড়া যেন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। গলায় সরু চেইন আর কানে এক জোড়া ঝুমকো যাতে সবুজ রঙের স্টোন বসানো আছে। সাজটা সম্পূর্ণ হলেও চুলগুলো নিয়ে বিপাকে পড়ে সে। খোলা রাখবে নাকি খোঁপা করবে বুঝতে পারছে না। একবার ভাবছে খোলা রাখবে আবার ভাবছে নাহ খোঁপা করবে। সাজ শেষে চুল নিয়ে এই দোটানায় পড়া অয়নন্দিতার আগের অভ্যাস।
‘চুলের ডিজাইনে তোমায় একেক সময় একেক রকম লাগে। কখনও খোলা চুলে বেশ ভালো লাগে আবার কখনও খোঁপায় দারুণ লাগে। আজ বরং খোঁপা করো। ভালো লাগবে।’
কথাটা শুনে দরজার দিকে তাকালে দেখতে পায় সেখানে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। ব্ল্যাক জিন্স আর হোয়াইট শার্টে ফারহানকেও বেশ সুদর্শন লাগছে। অয়নন্দিতা ফারহানকে দেখে হালকা হেসে বলে,
‘তুমি কখন এলে?’
‘যখন তুমি চিরুনি আর চুল নিয়ে বিড়ম্বনায় ছিলে তখন।’
‘বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে বাঁধবো এদের।’
‘খোঁপা করো। ভালো লাগবে।’
ফারহানের কথানুযায়ী চুলে খোঁপা করে আর্টিফিশিয়াল গাজরা বেঁধে দেয়। নিজেকে আয়নায় দেখে মনে মনে বলতে থাকে, হ্যাঁ এখন একদম ঠিকঠাক লাগছে। সবুজ শাড়ির সঙ্গে খোঁপা। সব মিলিয়ে পারফেক্ট।
তবুও আরও একবার ফারহানকে জিজ্ঞেস করে,
‘কেমন লাগছে আমায়?’
ফারহান অয়নন্দিতার সামনে এসে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতার দুই গালে নিজের হাত রাখে। আলতো স্পর্শে আরেকটু কাছে টেনে নেয় অয়নন্দিতাকে। কপালে চুমু দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘অপূর্ব।’
চারটা বেজে গেছে। মিডিয়াম স্পিডে গাড়ি চলছে। অয়নন্দিতা গাড়ির জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখছে। চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। আমরা কোথায় যাচ্ছি– এই কথাটা কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর ফারহান উত্তর দেয়,
‘ফার্ম হাউজে যাচ্ছি।’
‘ফার্ম হাউজ! কাদের ফার্ম হাউজ?’
‘আগে পৌঁছই৷ এরপর সব বলব। তুমি কিছু খাবে?’
‘ফুচকা খেতে মন চাচ্ছে।’
‘আমারই ভুল হয়েছে। আমি কেন জিজ্ঞেস করলাম। আমার বোঝা উচিত ছিল অয়নন্দিতা ম্যাডাম ফুচকা পছন্দ করে।’
ফারহানের কথা শুনে অয়নন্দিতাও না হেসে থাকতে পারেনি। মাঝে মাঝে ফারহান এত মজা করে কথা বলে যে, না হেসে উপায় নেই।
আরও ত্রিশ মিনিট পর ফারহান তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। গাড়ি থামিয়ে অয়নন্দিতাকে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামায় সে। গাড়ি থেকে নেমে অয়নন্দিতা অবাক নয়নে চারপাশটা দেখতে থাকে। এ যেন ছবির মতোই সুন্দর। যেন রুপকথার গল্পে পড়া কোনো এক ছোটো গ্রাম। অথচ মাঝখানে কেবল একটি বিল্ডিং। আর চারপাশে পুরো গ্রামের মতো।
তাদের দেখে কয়েকজন লোক এগিয়ে এলো। এদের মধ্যে দু’জন মহিলাও আছেন। দু’জনই মোটামুটি বয়স্ক৷ আর দু’জন পুরুষ তারাও বয়স্ক। বাকি তিনজনের বয়স মোটামুটি পঁচিশ থেকে ত্রিশের মতো হবে৷ তারা সবাই এগিয়ে আসতেই ফারহান বয়স্ক সবাইকে সালাম দেয়। এরপর পরিচয় করিয়ে দেয় অয়নন্দিতাকে। অয়নন্দিতাও ফারহানের মতো তাদের সবাইকে সালাম দেয়। সালামের জবাব নিয়ে বয়স্ক একজন মহিলা বলে,
‘ফারহান বাবা, আসো। ঘরে আসো৷ তোমরা আসবা শুইনা সব ব্যবস্থা কইরা রাখছি।’
ফারহান ওই বয়স্ক মহিলার কথার জবাবে বলে,
‘ফুফু, আপনাদের বউমা কিন্তু একটু অসুস্থ৷ তাকে একটু যত্ন করতে হবে।’
‘তোমার মা ফোন দিয়া সব বইলা দিছে। সব ব্যবস্থা কইরা রাখছি। আসো, ঘরে আসো তোমরা।’
ফারহান অয়নন্দিতাকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার সময় অয়নন্দিতা প্রশ্ন করে,
‘তোমাদের ফার্ম হাউজ এটা?’
ফারহান রহস্যময় নজরে তাকিয়ে মুচকি হেসে জবাব দেয়,
‘হ্যাঁ। আমার ফার্ম হাউজ এটা।’
চলবে………………………..