ধর্মের দেয়াল পর্বঃ ১

0
1281

#ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১

– রুপ আর আমার বিয়ের ৯ মাস হয়ে
গেছে কিন্তু আমাদের পরিবার ছাড়া
কেউ এই বিয়ের কথা জানেনা। এতে
আমার বিপদ হবে এই জন্য।
.
.
.
– মাঝ রাতে হঠাৎ আমার ঠান্ডা
পানির স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ
মেলে চেয়ে দেখি আমি একটা
সাগরের মাঝখানে সুয়ে আছি। এটা
দেখে গলা ফাটিয়ে রুপ বলে চিৎকার
দিয়ে উঠি।
.
.
.
– রুপ আমার মুখ চিপে ধরে বলে এত্ত ভয়?
– আমি ওর দিকে তাকিয়ে থেকে চুপ
করে আছি। চোখ ২টো দিয়ে জল পড়েই
যাচ্ছে।
.
– এই পাগলি কাঁদছো কেন? আমি আছি
না!
– আমরা এখানে কেন রুপ?
– অনেক কাজ আছে বলে আমাকে
জড়িয়ে ধরে ডুব দিল নোনা সাগরের
পানির মধ্য।
.
.
– আমার তো দম বন্ধ হয়ে আসার পথে।
– রুপ সোজা আমার বুকের বাম সাইডে
হাত দিল এবং ওর হাত দিয়ে দোয়াশা
কিছু বের হল যা আমার ভিতরে প্রবেশ
করাতেই নিস্বাস নিতে আর সমস্যা
হচ্ছিলনা।
.
.
.
– একটা রুমান্টিক মুহুত্ব। আমি ওর বুকে এক
হাত দিয়ে পানির ভিতরে দাড়িয়ে
থাকি অপলক দৃষ্টিতে।
দিল ইবাদত কররাহে ধারকানি মেরি
সোন
তুঝকোমে করনু হাসিল লাগিইহে ধুম
জিন্দেগি কি সখছে কুছ হাছি পালমে
চুন
তুঝকোমে করনু হাসিল লাগিইহে ধুম
যভি যিতনে পাল জিয়ো
ওনে তেরে সাং জিয়ো
যভি কালহো আপ মেরা ওসে তেরে
সাংজিয়ো…..
– রুপ আমার দিকে তাকিয়ে বলল কি
ব্যাপার মাড্যাম আমায় দেখে ক্রাশ
খেয়ে গেলেন তো!
.
.
– আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললাম
ধ্যাত। মোটেও না।
– ও আমাকে হাত ধরে আরো গভীরে
নিয়ে গেল।
– সামনে একটা কুটির দেখতে পেলাম।
ওর ভিতর আমাকে নিয়ে গেল।
.
.
– এটা মোটেও কুটির ছিল না। অনেক বড়
হলরুমের মত।
– এখানে তোমাকে এনেছি কিছু
উদ্দেশ্য। জানিনা তোমার বিপদ
কোথায় লুকিয়ে আছে। তার থেকে
নিজেকে কিভাবে সেভ করে রাখবা
সেটা দেখাবো।
.
.
– দেখ নাফিসা তুমি একটা মানব এবং
পরী থেকে জন্ম নিয়েছো তাই তুমি
পরিপূর্ন শক্তির অধিকারী নও। আস্তে
আস্তে পরিপূর্ন শক্তির অধিকিরী হয়ে
উঠবে। তবে সময় সাপেক্ষে সেটা।
.
.
– রুপের কথা গুলো আমার মাথার উপর
দিয়ে গেল।
– রুপ ওখানে ইশারা করতেই বিশাল
আয়না সামনে আসল এবং আমাকে
আয়নার সামনে দাড় করিয়ে বলল my
queen দেখতো কি দেখতে পাও!
– আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে
দেখলাম আমার পিছনে বিশাল কাঁচের
মত স্বচ্ছ ২ টি ডানা।
.
.
– আমার ঘাড়ের কাছে রুপ ওর মুখটা এনে
বলল দেখছো তোমারও আমার মত পাখা
আছে কিন্তু অদৃশ্য তাই তুমি পরিপূর্ন নও।
তবে এর একটা ফায়দা আছে তুমি যে
একটা শ্বেতপরী বা জ্বীন জাতির কেউ
সেটা কারও বুঝার শক্তি নেই। এই
অজানা শক্তিটি তুমি শত্রুর সামনে
প্রয়োগ করতে পারবে। তুমি একদম
স্বাভাবিক মানুষ হয়ে থাকবা।
.
.
.
– আরো অনেক কিছু ও দেখিয়ে দিল
এবং বলল চল বাসায় ফিরতে হবে। আজ
থেকে তোমাকে সব কাজ বুঝে শুনে
করতে হবে। কাউকে বিশ্বাস করবা না
বুঝলা?
– রুপ! তোমাকেও বিশ্বাস করব না?
– রুপ আমার কথা সুনে চুপ করে কিছুক্ষন
থাকার পর বলল সেটা তোমার ইচ্ছা।
আমি কিছুতে জোড় করবনা।
.
.
– আমি আর রুপ বাসায় চলে আসলাম ভোর
বেলায়।
– আমারতো সেই ঘুম পাইছে তাই
বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম।
.
.
.
– রোজ সকাল ৯ টার দিকে এসে রুপের
রুমে নক করে।
– দরজা খোলায় আছে ভিতরে আয়।
– রোজ ভিতরে ঢুকে বলল ও ওঠেনি
এখনও! ভার্সিটি তে কি যাবে না?
– ওকে আজ যেতে হবেনা তুই রেডী
হয়ে নে একসাথে যাব বলেই রুপ
ওয়াশরুমে চলে গেল।
.
.
.
-হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখি রুপ রেডী
হচ্ছে।
-এই তুমি কই যাচ্ছো?
– ভার্সিটি তে। জলদি উঠে ফ্রেস হয়ে
নাও এবং নাস্তা করে রেডী হও।
– আমি ওর দিকে চেয়ে আছি গভীর
ভাবে।
– নাফিসা what happen!
-এই তুমি এতো সাজুগুজো কেন করেছো
হুম?
– what nonsense! মেয়েরা সাজুগুজো করে
ছেলারা নয়।
– ঐ যাই হোক! তুমি সিম্পল ভাবে যাবে
বলেই এসে ওর গোছানো চুলগুলো
এলোমেলো করে দিলাম।
.
.
.
– রুপ মুচকি হেসে বলল এখনো পাগলামি
তোমারর গেল না!
– না মাশাই……. আপনি যান আমি এখন
ঘুমাবো বলে আবার সুয়ে পড়লাম।
– রুপ এক ঝটকায় আমাকে কোলে তুলে
নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল এবং
শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিয়ে
শাওয়ার চালু করে দিয়ে চলে গেল।
পানিতে পুরো শরীর ভিজে গেল।

– -উমহহহহহ্ রুপ এটা তুমি কি করলা?
– তুমি যে অলস এটা করা ছাড়া আর
কোন উপায় নেই sweetheart……
– আমারও সময় আসবে তখন এর দ্বিগুণ শোধ
ওঠাবো বলে সাওয়ার নিয়ে বের
হইলাম। রেডী হয়ে নিচে গিয়ে
শুনলাম রুপ আগেই বের হয়ে গেছে।
– আমি নাস্তা করে রোজ কে নিয়ে
ভার্সিটি তে চলে আসলাম।
– আমরা এভাবেই রেগুলার আলাদা
যাই।
..
.
.
– আজ এত দেরি করলি কেন রে
নাফিসা! ক্লাসে দেরী হয়ে গেলনা,
তুই কি ভাবছিস ভাইয়া ক্লাসে ডুকতে
দিবে?
– সেটা পরে দেখা যাবে। চলতো এখন!
– সত্যিই ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।
.
.
.
– sir আসতে পারি?
– রুপ আমাদের দিকে তাকিয়ে রেগে
গিয়ে বলল ১০ মিনিট লেট তাই আজ
আপনাদের ক্লাসে ঢোকার অনুমতি
নেই।
– রোজ অনেক কাকুতি মিনতির পর
আমাদের ঢুকতে দিল কিন্তু শাস্তি
হিসেবে ১৫ মিনিট দাড়াই থাকতে
হল।
– কারন প্রায় আমরা এরকম করতাম।
– ২৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে
ওভাবে দাড়িয়ে থাকা বেশ লজ্জা
জনক।
.
.
– রোজ আমার উপর ভিষন রেগে আছে ওর
মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
– পুরো ক্লাস চুপ। যে শিক্ষক নিজের
বোন কে ছাড় দেয়না সে কিকরে
অন্যদের ছাড় দিবে এই ভেবে সবাই চুপ।
.
.
.
– ক্লাস শেষ হলে সবাই বের হয়ে গেল
আমি আর রোজ বসে আছি। এখন অন্তত
লজ্জার কারনে বাহিরে যাচ্ছি না
তাছাড়া আমার শরীরটা ভিষন খারাপ
লাগছে।
– রোজ এসে বলল এবার তোর শান্তি
হইছে! এত মানুষের ভিতর লজ্জা পেতে
হল।
– আমি ওর দিকে মুচকি হাসি দিয়ে
কিছু কথা বলতে গিয়ে আর পারলাম না
ওখানেই পড়ে গেলাম।
.
.
.
– রোজ চমকে গেল নাফিসাকে
ওভাবে পড়ে যেতে গিয়ে। দৌড়ে
কাছে এসে ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখল
প্রচুর জ্বর এবং ঙ্গান হারিয়ে ফেলে
দিছে।
– রোজ নাফিসাকে উঠিয়ে রুপ কে কল
দিল কিন্তু রুপ বার বার কেটে দিচ্ছে
দেখে ও ক্লাস রুমের বাহিরে চলে
আসল।
সামনে আকাশ কে দেখে বলল আকাশ
একটু রুমে যা তো নাফিসা অসুস্থ আমি
এখনি আসছি বলে রুপের কাছে গেল।
– অফিস কক্ষে গার্ড ঢুকতে দিচ্ছেনা
রোজ কে।
– রোজ আপনাকে এবং নাফিসাকে
রুমে ঢুকতে নিষেধ করছে রুপ স্যার তাই
ঢুকতে দিতে পারবোনা।
– এবার রোজের রাগ যেন বেড়ে গেল।
ভাইয়ার সমস্যা কি! ওর বউ মরতে বসেছে
আর ও এসব আইন করে রেখেছে।
– রোজ আর ওখানে দেরী না করে
ক্লাস রুমে চলে আসল কিন্তু
নাফিসাকে কোথাও পেলনা বা
আকাশকেও না……
.
.
.
– রোজ হন্তদন্ত হয়ে বাইরে ছুটে এসে
দেখল আকাশকে।
– এই তুই এখানে নাফিসা কই?
-আরে ওর বড় ভাই আছেনা! যাকে
তোদের সেদিনের পার্টিতে
একসাথে দেখছিলাম উনি এসে নিয়ে
গেল ওকে।
– আজগড়!
– আসার সময় অনেকে রোজকে
জিঙ্গাসা করল, নাফিসার কি হইছে!
– রোজ বলল ও অসুস্থ একটু বলেই বাহিরে
চলে আসল।
– এমন সময় আজগড়ের মেসেজ, জলদি
বাসায় যেতে বলল।
– আজগড় নাফিসাকে নিয়ে রুপদের
বাসায় নিয়ে আসল।
– সিড ওকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে
বলল ওর কি হইছে?
– জানিনা আঙ্কেল আপনি একটু দেখেন।
অনেক চেষ্টা করলাম ঙ্গান ফিরাতে
পারছিনা।
– ওকে রুমে নিয়ে যাও আমি আসছি।
.
.
.
– সিড বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছে
কিন্তু ঙ্গান ফিরে আসছেনা
নাফিসার।
– সিড দ্রুত রুপ কে কল দিয়ে বাসায়
আসতে বলে জলদি।
.
.
– প্রায় আধাঘন্টা পর রুপ বাসায় আসে।
– ডাইনিং রুমে রোজ কে দেখে বলল
কি হয়েছে রে?
– রোজ ছলছল চোখে বলল রুমে যা তোর।
– রুপের আর বুঝতে বাকি রইলনা কি হতে
পারে! এক নিমিষেই ওর রুমে হাজির।
– নাফিসার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে আর
পাশে আজগড় বসে আছে। কারন এরা
ভ্যাম্পায় কি করতে কি করে বসে তাই
রুপের পরিবারের কেউ নেই।
– রুপ জলদি এসে নাফিসাকে চেকাপ
করতে লাগল।
– রুপ কি হয়েছে ওর?
– বুঝতে পারছিনা আজগড় প্লিজ তুমি
একটু বাহিরে যাবে!
– আজগড় বাহিরে যেতেই রুপ দরজা বন্ধ
করে ওর ড্রেস চেঞ্জ করে দেয় এবং রক্ত
গুলো মুছে দিয়ে ঐ অবস্থায় জাপটে
জড়িয়ে ধরে এবং মুখ দিয়ে নীল
ধোয়া বের করে যা নাফিসার মুখের
ভিতর প্রবেশ করে।
.
.
– রোজ আজগড়কে বলল ওর কি হইছে?
– জানিনা তবে রুপ ওর কিছু ব্যবস্থা
করতে পারবে তাই টেনশন নিও না।
নাফিসার যত security আছে সব রুপ জানে
তাই সমস্যা হওয়ার কথা না বলেই আজগড়
চলে গেল।
.
.
– রোজ আজগড়ের চলে যাওয়ার দিকে
তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলল শশুর
বাড়ি কিন্তু একটু বসার সুযোগও নেই ওর।
কবে যে সব সমাধান হবে!
– গভীর রাত নিজেকে রুপের বুকের মধ্য
আবিষ্কার করলাম। আহ্ কি শান্তি……
এটাই পৃথিবীর মধ্য আমার জন্য একটুকরো
স্বর্গ।
– আমি রুপকে আরও জড়িয়ে ধরলাম।
– ক্লাসে ঐ ব্যবহারের জন্য কি রাগ
করেছেন mam?
– এই কথা শুনে চরচর করে আমার মাথায়
রাগ উঠে গেল। ওকে ছেড়ে দিয়ে পাশ
ফিরতে যাব ওমনি এক টানে আবার ওর
বুকের কাছে এনে বলল হুম বুঝলাম বউ একটু
বেশিই রাগ করেছে…..
– আমি কোন কথা না বলে বুকের লোম
ধরে টান দিলাম।
– ও আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
– বান্দরনীর একটু বেশিই রাগ হইছে বলে
আমাকে এলোপাথারি কিস করতে
লাগল।
– ছাড়ুন বলছি উউমহহহহহ্ দিনের বেলায়
সবার সামনে অপমান করবে আর রাতে
আদর!
– রুপ চট করে ছেড়ে দিল।
– আমি আরও রেগে গেলাম রুপ আমায়
একটুও ভালবাসেনা তাহলে এভাবে
ছেড়ে দিতোনা।
– রুপ আবার জড়িয়ে ধরেই বলল ইশ্ কত্ত
কাঠখুড় পুরিয়ে একখান বউ পাইছি
তারে এমনি ছেড়ে দেওয়ার জন্য!
আমার বউকে জড়িয়ে ধরব নাতো
কাকে ধরব হুম। এটাতো আমার মিষ্টি
সুন্দর বারন্দরনী বউ। যার কথা শুনলে হৃদয়
জুড়িয়ে যায়।
– আমি কথা বলতে যাব ওমনি রুপ ওর ঠোট
দিয়ে আমার ঠোট টাকে জড়িয়ে নিল
ওর ঠোটের মধ্য।
– আমি ওর বুকে কিল মারছি তবুও পেরে
উঠছিনা। যত মারছি আর ছাড়ানোর
চেষ্ট করছি ততই বুকের সাথে চেপে
ধরছে। শেষে বাধ্য হয়ে ওর কাছে
আত্বসমর্পন করতেই হলো।
.
সত্যি কারের ভালবাসা কখনও কম
হয়না। সম্পর্কের মধ্য ভুলবোঝা বুঝি হবেই
কিন্তু সেটা আরো একদম বুকের কাছে
আনতে বাধ্য করে……
চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here