ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২) পর্বঃ ২

0
699

#ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২

– সকালে বাসায় আমার শাশু মার
চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
– রুপ আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমাচ্ছে।
– রুপ!
– কোন কথা নাই। কয়েক বার ডাকতেই ও
চোখ মেলে তাকালো।
– দেখ মা চিৎকার করে কাকে যেন
বকছে। আমাকে ছেড়ে দাও আমি
গিয়ে দেখে আসি।
– রুপ আমাকে সহ নিয়ে অন্য পাশ ফিরে
বলল রুপম মনে হয় দুষ্টমি করেছে তাই mom
বকা দিচ্ছে বলেই চোখ বন্ধ করল।
.
.
– ধ্যাত কিছু শুনতেই চায় না।
– এবার যখন চিৎকারের শব্দ আরও বেড়ে
গেল তখন রুপ আমাকে ছেড়ে দিয়ে
উঠে বসল।
– আমি বললাম তুমি থাকো আমি দেখে
আসছি।
.
.
– আমি রুম থেকে বের হয়ে নিচে
ডাইনিং রুমে এসে দেখলাম রোজ কে
বকছে আমার শাশুমা।
– আমি গিয়ে বললাম কি হয়েছে মা?
– শাশুমা যেভাবে আমার দিকে
তাকালো মনে হয় আমায় একদম কাচাই
আস্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। আমি
একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম।
.
– রোজ আমার কাছে এসে বলল চুপ করে
বকা গুলো হজম করে নে। আমার আর
আজগড়ের ব্যাপার জেনে গেছে তাই
বকা গুলো চুপ করে শুনে নে। কথা বলিস
না।
– নাফিসা! মনে হচ্ছে এবার আমাদের
উপর আইলা,সিডর,ফনী, সাইক্লোন সব এক
সাথে আঘাত হানবেরে…….
.
.
.
– রোজের কথা শুনে পুরো শরীর আমার
কাঁপছে। কারন রুপ যদি জানতে পারে
তার অজান্তে এত কিছু হচ্ছে তাও তার
সাথে আমি জড়িত তাহলে আমায় আর
আস্ত রাখবেনা। ও আগেই বলেছে
আমাদের ভিতর যেন কোন গোপন কথা
না থাকে।
.
.
.
-মা আমাকে জিঙ্গাসা করে বলল
নাফিসা তুমি এই ব্যাপারে আগে
থেকেই জানো?
– আমি কি বলব আমার হাত পা কেপেই
যাচ্ছে।
– কি হল কথার জবাব কেন দিচ্ছ না!
– না মানে……… কি বলবো ভেবে
পাচ্ছিনা।
-শাশুমা একসাথে বাসার সবাই কে
ডাকল।
.
.
-.
– এই ফাঁকে রোজ কে বললাম শাকচুন্নি,
তেতুল গাছের প্রেত্নী কোথাকার
তোর বুদ্ধীসম্পূর্ন ঙ্গানী মা কেমনে
জানল এই কথা?
– ফোনে কথা বলার সময় mom শুনতে
পাইছে।
– শয়তান মেয়ে কোথাকার এবার
ঠেলা সামলা তোর আমার ২জনের
সংসার এবার বুঝি আর রক্ষা করা
যাবেনা।
.
.
.
– রুপ, সিড ওরা ডাইনিং রুমে উপস্থিত।
– রুপ আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা
করে বলল কি হইছে?
– রুপের ইশারায় কথা বলা দেখে গলা
আমার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
– দৌড়ে গিয়ে ফ্রীজ থেকে পানি
খেয়ে নিলাম।
– আমার কান্ড দেখে বাসার সবাই
অবাক।
– ধুরররর্ যে যা ভাবুক আমার তাতে যায়
আসেনা। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
.
.
.- এবার শাশুমায়ের মুখ খুলল যা ভয় করে
ছিলাম সেটাই হলো।
.
.
.- সব কথা শুনে রুপ রোজ কে গিয়ে
ঠাশশশশ্ করে চড় মেরে দেয়।
– রোজ টাল সামলাতে না পেরে পড়ে
যায়।
– আমি গিয়ে রোজকে উঠাই।
– এত্তবড় মেয়েকে কি কেউ মারে?
– রুপ আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে
সোজা রোজের কাছে গিয়ে বলল তুই
কি জানিস না এর ভয়াভয় পরিনাম কি
হবে!
– ওরা আমাদের কতবড় শত্রু?
তুই কিভাবে কাউকে না জানিয়ে এই
কাজটি করলি?
.
.
.- মিনা চিৎকার দিয়ে বলে উঠল তোর
wife এর সাথে জড়িত। কেন তোকে কিছু
বলেনি! শাস্তি শুধু রোজ কেন একা
পাবে তোর সাধের গুনধর wife…… সে
কেন পাবেনা।
.
.
.
– এইরে সেরেছে! ভাবছিলাম উনি
ভাল হয়ে গেছেন কিন্তু এখন দেখছি
খোলা হাটে আমার ঢোলক বেজেই
যাচ্ছেন।
– এবার আমি চুপ করে মাথা নিচু করে
দাড়িয়ে গেলাম।
.
.
– রুপের চেহারা দেখার মত। এক ঝটকায়
এসে আমাকে দেয়ালে হাত দিয়ে
চেপে ধরে বলল mom যেটা বলছে ঠিক!
-…………………..?
-Answer me dammit…….
– আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম এবং
চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল।
– রোজ এসে রুপকে ধরে টানতে লাগল
আর বলল ওর কোন দোষ নেই ভাইয়া ওকে
ছেড়ে দে………
.
.
.
– রুপ আমায় ছেড়ে দিয়ে বলল সব
বিশ্বাস ঘাতক। বলেই বাহিরে চলে
গেল।
.
.
.
– আমি বরাবর ঘামছি আর কেঁদেই চলছি।
– সিড রোজকে ইশারা করল
নাফিসাকে রুমে নিয়ে যেতে।
.
.
.
– রুমে এসেই বসে পড়লাম। কি করব এখন
ভেবেই কান্না পাচ্ছে।
– রোজ আমাকে কান্না থামতে বলল। ঐ
কান্না বন্ধ করবি না আমিও ২ টা
লাগাব। এমনি টেনশনে মরে যাচ্ছি
ভাইয়া বাহিরে চলে গেল আগজড় কে
কিছু বলে কিনা বুঝতে পারছিনা। আর
এই সময় মরা কান্না জুড়িয়ে দিছে।
.
.
.
.
– পুরো দিন রুপ বাসায় আসল না। যতবার
কল দেয় ততবারই কেটে দেয়।
– কত যে মেসেজ করলাম কোন রিপ্লাই
ও নেই। আমি মনে হয় ওকে একটু বেশিই
কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
– শরীর খুব দুর্বল লাগছে পুরো দিন কিছু
খাওয়া হয়নি হয়ত এই জন্য। কেমনেই বা
খাই। খুব কষ্ট হচ্ছে বুকের মাঝে।


– সন্ধা গড়িয়ে রাত হয়ে গেল তবুও
আসার কোন নাম নেই রুপের। কি করব
ভেবে পাচ্ছিনা।
.
.
– আমি রাত ৯ টার দিকে রোজের রুমের
দিকে গেলাম।
সেখান থেকে অনেক আওয়াজ আসছে।
– রুমের কাছে যেতেই রুপের গলা শুনতে
পেলাম।
– রুপ বাসায় আছে অথচ আমি একবারও
জানলাম না। সেখানে সবাই উপস্থিত
শুধু আমি ছাড়া। আজ নিজেকে বড্ড
একা লাগছে। আমাকে ছাড়াই সবাই
আলোচনা করছে। আমি বুঝি এই বাসার
কেউ না। ওখান থেকে নিজের রুমে
চলে আসলাম।
.
.
.
– মিনা চিল্লায় বলছে রোজ তুই এটা
কিভাবে করলি। নিজের পরিবারের
কথা একবারও ভাবলি না!
– সব থেকে বড় দোষ নাফিসার ওর জন্য
আজগড় বাসায় ঢুকতে পারছে আর তার
জন্য এত বড় সর্বনাশ হয়ে গেল।
– তুমি চুপ করবা! মেয়াটা এই কথা শুনতে
পেলে কতটা কষ্ট পাবে!
– কষ্ট মাই ফুট। তোমাকে বার বার
এখানে আসতে নিষেধ করেছি। না
উনি ওনার বন্ধু ধর্মের ঋন শোধ করতে
আসছে। এখন দেখ এর ভয়াভয় পরিনাম।
জানিনা আমাদের সামনে কি বিপদ
না আসছেই।
.
.
-সিড আমরা পুরো পরিবার নিয়ে
কানাডায় ব্যাক করব। আর রোজ যা হবার
হয়ে গেছে সব ভুলে যা।
– রোজ শুধু মাথা নিচু করে অঝোরে
চোখের পানি ফেলছে।
.
.
.
– আমার কিছু ভাল লাগছিল না তাই
ছাদের দিকে পা বাড়ালাম। রুপ
হাজার বার নিষেধ করেছে ছাদে
আসতে। আপতত সেটা কানে
নিচ্ছিনা।
.
.
.
.
– দোলনায় বসে আছি। আকাশে চেয়ে
দেখি কোন তারা নেই। তার মানে
পুরো আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন।
– মনে হয় মিনিট তিনেকের মধ্য ছমছম
করে খুব জোড়ে অঝোর ভাবে বৃষ্টি
নেমে আসলো। ভালয় হলো চোখের
জল কষ্ট করে মুছতে হবে না।
– আমি উঠে দাড়ালাম। একদম ছাদের
কিনারায় রেলিং এ এসে
দাড়াতেই ভয়ে আমার শরীর শিউরে
উঠল। আল্লাহ্ আমি নিচে কি
দেখলাম।
.
.
.
.
– সেই লোকটা যাকে আমি ছাদে
আসলেই দুর থেকে এভাবে দেখতে
পাই।
– কিন্তু আশ্চর্য এই অন্ধকারের ভিতরও
দিনের মত আমি তাকে দেখতে
পাচ্ছি।
– লোকটি দাড়িয়ে সেই তাচ্ছিল্য
ভঙ্গিতে হাসছে।
– আরও অবাক হলাম এত্ত বৃষ্টি হচ্ছে তবুও
একফোটা বৃষ্টির পানিও তার গায়ে
স্পর্শ করছেনা। পুরো শরীর শুকনো।
.
.
.
– রুপের কথা না শুনার মাসুল যে
এভাবে দিতে হবে আমি নিজেও
ভাবতে পারিনি।
– লোকটি আস্তে আস্তে আমার দিকে
এগিয়ে আসছে।
– আমার শরীর পুরোপুরি জমে যাওয়ার
মত। আমার ঙ্গান শক্তি লোপ পেয়ে
গেল। লোকটি হয়ত আমার পুরো মস্তিষ্ক
ওনার কন্টলে নিয়ে নিছে।
– আমায় অদৃশ্য মায়া শক্তির আহ্ববান
করছে। আমি সেদিকেই যাচ্ছি। কোন
ফিলিংস কাজ করছেনা।
– প্রথমে রেলিং এর উপর উঠলাম এবং
কিছু না ভেবেই ঝাপ দিলাম নিচে।
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here